Amar Sangbad
ঢাকা শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪,

হিজড়াদের কর্মসংস্থানের সুযোগ ও সম্ভাবনা

গোলাম মোরশেদ

ফেব্রুয়ারি ২৭, ২০২১, ১১:২৫ এএম


হিজড়াদের কর্মসংস্থানের সুযোগ ও সম্ভাবনা

বাংলাদেশে নারী-পুরুষ লিঙ্গীয় পরিচয়ের পাশাপাশি আরেক লিঙ্গীয় পরিচয়ের মানুষের বসবাস রয়েছে, যাদের তৃতীয় লিঙ্গ, ট্রান্সজেন্ডার বা হিজড়া সম্বোধন করা হয়। কিন্তু এই লিঙ্গের মানুষদের কী সম্বোধন করা উচিত তা নিয়ে মতদ্বৈধতা রয়েছে। এই লেখায় সেই বিতর্কে না ঢুকে তাদের কর্মসংস্থানের ওপর জোরারোপ করা হবে। 

তবে এখানে তাদের ‘হিজড়া সমপ্রদায়’ বলেই সম্বোধন করা হলো। কারণ, তারা কথোপকথনে নিজেদের হিজড়া বলেই পরিচয় দিয়ে থাকে। সমাজের নানাবিধ বৈষম্যমূলক আচরণের শিকার হওয়া হিজড়া সমপ্রদায়ের ওপর পরিচালিত প্রাপ্ত গবেষণা ও প্রতিবেদনে জানা যায়, তাদের প্রায় শতভাগ অপ্রাতিষ্ঠানিক ও ঝুঁকিপূর্ণ কর্মে জড়িত। কিন্তু সঠিক উদ্যোগ ও পরিকল্পনা বাস্তবায়নের মাধ্যমে পিছিয়ে পড়া এই জনগোষ্ঠীর ঝুঁকিপূর্ণ কর্মসংস্থান থেকে একটি সুসংগঠিত ব্যবস্থায় রূপান্তর সম্ভব। 

তবে এক্ষেত্রে প্রাথমিক পর্যায়ে প্রধান যে প্রতিবন্ধকতা রয়েছে তা হলো— বাংলাদেশে হিজড়া জনগোষ্ঠী নিয়ে বিশদ তথ্য-উপাত্ত সংবলিত গবেষণার সংখ্যা সীমিত। তাদের জীবনযাপন নিয়ে কিছু প্রতিবেদনমূলক লেখালেখি পাওয়া গেলেও কর্মসংস্থান নিয়ে বিস্তারিত গবেষণা পাওয়া যায় না। 

পৃথক লিঙ্গীয় পরিচয়ের কারণে হিজড়ারা মূলধারা থেকে বিচ্ছিন্ন জীবনযাপন করতে বাধ্য হয়। পরিবারের কাছে তারা কোনো সম্পদ হিসেবে বিবেচিত হয় না। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে নিজ পরিবার তাদের বিচ্ছিন্ন করে দেয়। 

তাছাড়া পরিবার থেকে বিচ্ছিন্নতার পাশাপাশি পারিবারিক সম্পত্তির ওপর তাদের কোনো অংশীদারিত্ব দেয়া হয় না। সাধারণত সম্পত্তির উত্তরাধিকার নির্ধারণ বা সম্পত্তি ভাগ-বাটোয়ারার ক্ষেত্রে দেশে ধর্মীয় উত্তরাধিকার আইন অনুসরণ করা হয়। 

কিন্তু এক্ষেত্রে দেশের প্রধান দু’টি ধর্মের কোনোটাতেই হিজড়াদের উত্তরাধিকার ব্যবস্থা নিয়ে কোনো স্পষ্ট ব্যাখ্যা না থাকায় বেশির ভাগ ক্ষেত্রে পরিবারের সদস্যরা তাদের বঞ্চিত করছে। বাংলাদেশে হিজড়াদের প্রকৃত সংখ্যা নিয়ে রয়েছে অস্পষ্টতা। 

সমাজকল্যাণ অধিদপ্তরের ২০১৩ সালের হিসাব অনুযায়ী দেশে সরকারিভাবে নথিভুক্ত হিজড়া সংখ্যা প্রায় ১০ হাজার, তবে বেসরকারি হিসেবে হিজড়াদের প্রকৃত সংখ্যা প্রায় পাঁচ লাখ। সামাজিক বিধিনিষেধ, মূল্যবোধ ও ডাক্তারি নিরীক্ষা জটিলতার কারণে অনেক হিজড়াই নিজেদের সরকারিভাবে নথিভুক্ত করেনি। 

এছাড়া এমন অনেকে রয়েছে যারা সমাজে নারী বা পুরুষ পরিচয়ে জীবনযাপন করলেও নিজেদের হিজড়া হিসেবে প্রকাশ করতে চায় না। কারণ, অনেকেই হিজড়াদের ‘অভিশপ্ত’, ‘অস্বাভাবিক’ এবং ‘বিকৃত শরীর ও মনের মানুষ’ হিসেবে দেখে।

বাংলাদেশে হিজড়াদের দীর্ঘদিনের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে ১৩ নভেম্বর ২০১৩ তারিখে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত কেবিনেট সভায় নারী-পুরুষের পাশাপাশি হিজড়াদের পৃথক লিঙ্গীয় স্বীকৃতি দেয়া হয় এবং উল্লেখ করা হয় যে, তারা শিক্ষাসহ অন্যান্য সকল মৌলিক অধিকারে অগ্রাধিকার পাবে। 

পরবর্তীতে ২৬ জানুয়ারি ২০১৪ তারিখে এক গেজেটে বলা হয় ‘সরকার বাংলাদেশের হিজড়া জনগোষ্ঠীকে হিজড়া লিঙ্গ (ঐরলৎধ) হিসেবে চিহ্নিত করিয়া স্বীকৃতি প্রদান করিল’। আর ২০১৯ সালে হিজড়ারা স্বতন্ত্র লিঙ্গীয় পরিচয়ে ভোটাধিকার লাভ করে। 

বর্তমানে তারা পাসপোর্ট কিংবা জাতীয় পরিচয়পত্রে লিঙ্গীয় পরিচয় হিসেবে হিজড়া যুক্ত করতে পারে। হিজড়ারা রাষ্ট্রীয়ভাবে লিঙ্গীয় স্বীকৃতি লাভ করলেও তারা এখন পর্যন্ত সমাজের পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠী। এমনকি এখন পর্যন্ত সরকারি-বেসরকারি জরিপগুলোতে নারী-পুরুষের শতকরা হিসাব আলাদা হলেও হিজড়াদের পরিসংখ্যান আলাদা করা হয় না। 

অথচ কোনো জনগোষ্ঠীর উন্নতির জন্য রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতির পাশাপাশি বিভিন্ন খাতে অংশগ্রহণের পরিসংখ্যান উপস্থাপন জরুরি। হিজড়ারা শারীরিকভাবে আরেকজন নারী কিংবা পুরুষের মতোই সকল কাজে সক্ষম হলেও তাদের মূলধারার কর্মসংস্থানে অন্তর্ভুক্ত করা সম্ভব হয়ে ওঠেনি। 

উপার্জনের উপায় হিসেবে তাদের যে চর্চাগুলো সাধারণত দেখা যায় তা হলো রাস্তাঘাটে, গণপরিবহনে, বাজারে কিংবা বাসায় ঘুরে ঘুরে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে চাঁদা আদায় করা। কোনো বাড়িতে নতুন শিশু জন্মগ্রহণ করলে অভিভাবকদের কাছে তারা উপহার হিসেবে অর্থ-সামগ্রী দাবি করে। হিজড়াদের কিছু দল রয়েছে যারা গ্রামগঞ্জে পালাগানের মাধ্যমে অর্থ উপার্জন করে। 

এছাড়া কেউ কেউ যৌনকর্মী হিসেবে কাজ করে, যার সংখ্যা ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ বলে জানা যায়। মূলত এরকম কিছু নির্দিষ্ট উপায়ে তারা জীবিকা নির্বাহ করে, যা ঝুঁকিপূর্ণ এবং অনিশ্চয়তায় ঘেরা। একই সঙ্গে জীবিকা নির্বাহের এই উপায়সমূহ সমাজে বিতর্কিত। 

রাস্তাঘাটে, বাজারে কিংবা বাসাবাড়িতে চাঁদা উত্তোলনকে অনেকেই অনৈতিক, বেআইনি কিংবা সন্ত্রাসমূলক কার্যক্রম হিসেবে দেখে। এ নিয়ে সাধারণ মানুষের সঙ্গে বাগবিতণ্ডা কিংবা সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটেছে। কিছু হিজড়া সদস্য বিভিন্ন ধরনের সন্ত্রাসী কার্যকলাপের (যেমন শিশু ছিনতাই, সংঘর্ষ, হত্যা ইত্যাদি) সঙ্গে জড়িত হয়েছিল বলেও বিভিন্ন সময়ে জাতীয় দৈনিকসমূহে প্রকাশিত হয়েছে।

অথচ সারা পৃথিবীতেই হিজড়ারাও অন্য লিঙ্গের মানুষের মতোই এগিয়ে যাচ্ছে। যেমন— ২০১৫ সালে ভারতে হিজড়া সদস্য কলেজের প্রিন্সিপাল হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি আবেদন ফরমে তৃতীয় লিঙ্গের জন্য পৃথক কলাম রেখেছে। 

বাংলাদেশেও কিছু কিছু হিজড়া সদস্য বিভিন্ন ধরনের প্রাতিষ্ঠানিক কর্মসংস্থানের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে। যেমন— ২০১৮ সালে প্রথম হিজড়া সদস্য হিসেবে তানিশা ইয়াসমিন চৈতি জাতীয় মানবাধিকার কমিশনে কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন। 

ট্রাফিক পুলিশ, গণবিশ্ববিদ্যালয়, স্কয়ার হাসপাতাল, আইসিডিডিআরবি ও বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে হিজড়াদের নিয়োগের খবর পাওয়া যায়। আবার কেউ কেউ উদ্যোক্তা হিসেবে বিউটি পার্লার কিংবা পোশাকের বিপণন কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করেছে।

 এমনকি ২০১৯ সালে আটজন হিজড়া সদস্য জাতীয় সংসদের সংরক্ষিত আসনের আবেদনপত্র সংগ্রহ করেছিলেন। কিন্তু সংবিধান অনুযায়ী, সংরক্ষিত আসনে তৃতীয় লিঙ্গের কাউকে নির্বাচিত করার সুযোগ নেই উল্লেখ করে তা বাতিল করা হয়।

বাংলাদেশ সরকার হিজড়াদের কর্মসংস্থানের লক্ষ্যে ২০১২-১৩ অর্থবছরে হিজড়া, বেদে ও অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়ন কর্মসূচি হাতে নিয়েছিল। এই প্রকল্পের অধীন স্কুলগামী হিজড়া শিক্ষার্থীদের মাসিক উপবৃত্তি; ৫০ বছর বা তদূর্ধ্ব বয়সের অক্ষম ও অসচ্ছল হিজড়াদের বিশেষ ভাতা; কর্মক্ষম হিজড়া জনগোষ্ঠীর দক্ষতা বৃদ্ধি ও আয়বর্ধনমূলক কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ত করতে বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ এবং প্রশিক্ষণোত্তর আর্থিক সহায়তা চালু করা হয়। 

সমাজে বৈষম্যমূলক আচরণের শিকার এ জনগোষ্ঠীর পারিবারিক, আর্থসামাজিক, শিক্ষা ব্যবস্থা, বাসস্থান, স্বাস্থ্যগত উন্নয়ন এবং সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে সমাজের মূলধারায় যুক্ত করে দেশের সার্বিক উন্নয়নে সরকার এ কর্মসূচি গ্রহণ করেছিল। 

২০১২-১৩ অর্থবছরে ৭২ কোটি ১৭ লাখ টাকা বরাদ্দে পাইলট কর্মসূচি হিসেবে দেশের সাতটি জেলায় (ঢাকা, চট্টগ্রাম, দিনাজপুর, পটুয়াখালী, খুলনা, বগুড়া এবং সিলেট) প্রথম হিজড়া জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়ন কর্মসূচি শুরু হয়। 

২০১৩-১৪ অর্থবছরে নতুন ১৪টি জেলাসহ মোট ২১টি জেলায় এ কর্মসূচি বাস্তবায়িত হয়েছে। ২০১৩-১৪ অর্থবছরে বরাদ্দ ছিলো চার কোটি সাত লাখ টাকা। ২০১৪-১৫ অর্থবছরের কর্মসূচির বরাদ্দ চার কোটি ৫৮ লাখ টাকা। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ৬৪ জেলায় সমপ্রসারণ করা হয়েছে। 

২০১৮-১৯ অর্থবছরে ৬৪ জেলায় বরাদ্দকৃত অর্থের পরিমাণ ১১ কোটি ৪০ লাখ টাকা। ২০১৯-২০ অর্থবছরে মোট বরাদ্দকৃত অর্থের পরিমাণ পাঁচ কোটি ৫৬ লাখ টাকা। সমাজসেবা কার্যালয়ে হিজড়া জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়নে ৫০ দিনব্যাপী এ কর্মসূচি হাতে নিয়েছিল। চলতি জীবনধারা থেকে মূলধারায় ফিরিয়ে আনতে হিজড়া জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়ন প্রকল্প কর্মসূচির অধীনে এই ধরনের প্রশিক্ষণ কার্যক্রম শুরু হয়। 

এছাড়া হিজড়াদের কল্যাণ ও পুনর্বাসনের অংশ হিসেবে ২০১৪ সালে সমাজসেবা দপ্তরের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কর্মসংস্থানের উদ্দেশ্যে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ হয়েছিল এবং এতে সারা দেশের ৪০ জন স্নাতক/স্নাতকোত্তর পাসকৃত আবেদনও করেছিল। কিন্তু ডাক্তারি পরীক্ষা জটিলতায় তা স্থগিত করা হয়।

সমাজসেবা কার্যালয়ের এক কর্মকর্তার সাক্ষাৎকারে জানা যায়, এই প্রকল্পগুলো আশানুরূপ সফলতার মুখ দেখেনি। কারণ, হিসেবে জানানো হয়— বেশির ভাগ হিজড়াই তাদের বর্তমান পেশা ছাড়তে আগ্রহী নয়। এ জন্য অনেকেই প্রশিক্ষণ কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করলেও প্রশিক্ষণ শেষে আবারো আগের পেশায় ফিরে যায়। 

সমাজের অনেকেই মনে করেন, হিজড়ারা নিজেরাই মূলধারার কর্মসংস্থানে ফিরতে চায় না। তারা যেভাবে উপার্জন করছে তাতেই তারা সন্তুষ্ট। তবে গবেষকরা মনে করেন, হিজড়াদের মূলধারার সংস্কৃতিতে অন্তর্ভুক্ত করতে এখন পর্যন্ত যেই উন্নয়ন প্রকল্পগুলো গ্রহণ করা হয়েছে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই তার কৌশলগুলো ত্রুটিপূর্ণ ছিলো।

 এক্ষেত্রে প্রধান সমস্যা হলো সরকার বা দাতা সংস্থাগুলো এই প্রকল্পগুলোতে উপকারভোগী জনগোষ্ঠীর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করে না। কী ধরনের প্রকল্প চালু করলে অনুমিত উপকারভোগীরা উপকৃত হবে সেই সিদ্ধান্তটি উপকারভোগীর মতামতের ভিত্তিতে গ্রহণ করা হয় না। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে এই সিদ্ধান্তসমূহ গ্রহণ করে দাতাপক্ষ। এ কারণে বেশির ভাগ উন্নয়ন প্রকল্প লক্ষ্য অর্জনে ব্যর্থ হচ্ছে। 

হিজড়াদের কর্মসংস্থানের উদ্দেশ্যে যেকোনো প্রকল্প গ্রহণের আগে সারা দেশের হিজড়াদের একটি সুসংগঠিত ডাটাবেজ তৈরি করতে হবে। কর্মসংস্থানের লক্ষ্যে প্রকল্প গ্রহণ আগে অবশ্যই নিবিড় গবেষণা প্রয়োজন। 

প্রকল্পগুলো কোনোভাবেই শুধু দাতা পক্ষের নিজেদের প্রস্তাবিত কৌশলসমূহ অনুসরণ না করে একটা দীর্ঘমেয়াদি প্রকল্পের আওতায় বিশেষজ্ঞ ও উপকারভোগীদের মতামতের ভিত্তিতে যৌথভাবে বাস্তবায়ন করতে হবে। পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নে হিজড়াদের মতামত এবং অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা বাঞ্ছনীয়।

 বর্তমান বিশ্বের প্রতিটি উন্নয়ন প্রকল্পেই উপকারভোগীদের যুক্ত করা হয়। তাদের কাছ থেকে জানা হয় কোন প্রক্রিয়ায় তাদের উন্নয়ন করা হলে তারা সর্বোচ্চ উপকৃত হবে এবং এই প্রকল্পগুলো টেকসই হবে। এ কারণে এখন পর্যন্ত হিজড়াদের জন্য কোনো বিশেষায়িত কর্মসংস্থান খাত তৈরি সম্ভব হয়নি। প্রকল্পের প্রস্তুতি হিসেবে হিজড়া জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধিদের সঙ্গে প্রকল্পের উদ্দেশ্য, কার্যক্রম ও প্রক্রিয়া নিয়ে আলোচনা করতে হবে। 

প্রস্তাবিত কর্মসংস্থানের ধরন ও অন্যান্য দিক সম্পর্কে তাদের অবগত করা এবং মতামত গ্রহণ জরুরি। হিজড়াদের মূলধারার কর্মসংস্থানের অন্তর্ভুক্ত করতে প্রথমেই পরিবার থেকে বিচ্ছিন্নতা ঠেকাতে হবে। পরিবার থেকে বিচ্ছিন্নতা ঠেকাতে পারলে সকল প্রকার বৈষম্যের অনেকাংশই প্রতিরোধ করা সম্ভব হবে। সমাজে হিজড়াদের সকল প্রকার লিঙ্গীয় বৈষম্য হ্রাস করতে তাদের শতভাগ শিক্ষা নিশ্চিত করতে হবে। 

সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোতে কোটা ব্যবস্থার পাশাপাশি নিয়োগে হিজড়াদের অগ্রাধিকার দিতে হবে। হিজড়া প্রার্থীদের অংশগ্রহণকে উৎসাহিত করতে চাকরির বিজ্ঞাপনের বিবরণে উল্লেখ করতে হবে। 

যেহেতু এখন পর্যন্ত তাদের শিক্ষার হার অতিসামান্য (২ শতাংশ), এ জন্য শিক্ষাগত ও অন্যান্য যোগ্যতা অনুযায়ী যথাযথ পদে চাকরির সুযোগ দিতে হবে। বিভিন্ন হাসপাতাল, ক্লিনিকসহ সেবামূলক প্রতিষ্ঠানগুলোতে বিভিন্ন পদে (যেমন— অফিস সহকারী, রাঁধুনী, কম্পিউটার অপারেটর, ইত্যাদি) স্বল্পশিক্ষিত হিজড়াদের নিয়োগ দিতে হবে। তাদের জন্য লিঙ্গবান্ধব কর্মপরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে। 

পুনর্বাসনের ব্যবস্থা আরও সুসংগঠিত করতে হবে, বিশেষত যৌনকর্মীদের ক্ষেত্রে। একই সঙ্গে একজন হিজড়া সহকর্মীর সাথে কেমন আচরণ করতে হবে আর কোন আচরণ করা যাবে না এ বিষয়ে অন্য লিঙ্গের (নারী ও পুরুষ) কর্মীদেরও পাঠগ্রহণ দরকার। 

সমাজে চর্চিত সকল প্রকার বৈষম্যমূলক দৃষ্টিভঙ্গি ও আচরণের পরিবর্তন আনতে হবে। কেননা, সমাজে হিজড়ারা প্রতিনিয়ত বিভিন্ন ধরনের সামাজিক প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হয়। যেমন— হাসপাতালে তারা নারী কেবিনে থাকবে নাকি পুরুষ কেবিনে থাকবে, পাবলিক টয়লেটে তারা কোন টয়লেট ব্যবহার করবে ইত্যাদি নিয়ে জটিলতা দেখা দেয়। 

এরূপ সামাজিক-সাংস্কৃতিক প্রতিবন্ধকতাগুলো দূরীকরণে আরও বেশি তৎপর হতে হবে। নারী-পুরুষের মতোই হিজড়ারাও তাদের সৃজনশীলতা ও পারদর্শিতা দিয়ে কর্মক্ষেত্রে সাফল্য অর্জন করতে সক্ষম বলে গবেষকরা মনে করে।

লেখক : গবেষক, পিজ্যান্ট অ্যান্ড লেবার ডিভিশন, বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব সোস্যাল রিসার্চ (বিআইএসআর) ট্রাস্ট।

আমারসংবাদ/এআই