Amar Sangbad
ঢাকা শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪,

নারী দিবস পালন করা মানে নারীদেরকে দুর্বল ভাবা!

মার্চ ৮, ২০২১, ০৮:০৫ এএম


নারী দিবস পালন করা মানে নারীদেরকে দুর্বল ভাবা!

২০২০ সালের ৮ই মার্চ মানে আজকের দিনে বাংলাদেশে সর্বপ্রথম করোনা রোগী ধরা পড়ে। আশ্চর্যজনকভাবে ৮ই মার্চ "বিশ্ব নারী দিবস"। আমি নারীদেরকে দোষারোপ করছিনা করোনার জন্য, শুধু বলতে চাই,এসব দিবসের কোন ভ্যাল্যু নাই, শুধু শুধু আলাদা করে নারী দিবস পালন করা মানে নারীদেরকে দুর্বল স্বীকার করে নেয়া।

এতে আরও ডিসক্রিমিনেশান স্পষ্ট হয়। নারীদেরকে " নারী" পুরুষদের "পুরুষ" বলে আলাদা না করে সবাইকে মানুষ বলে জেনারালাইজ করা যায়না?

আলাদা আলাদা ডেফিনিশন দেয়ার ফলে সোসাইটিতে মেয়েরা এক্সট্রা সিমপ্যাথি পায় যা ইকুয়ালিটি ব্রেক করে। এই এক্সট্রা সিমপ্যাথি দিয়ে কিছু মেয়ে সেটার অপব্যবহার করে আবার আড়ালে কিছু মেয়ে একটু সিম্প্যাথি ত দূর সাহায্যের অভাবে অবহেলিত হচ্ছে। যেটা মোটেও কাম্য নয়।আবার এই এক্সট্রা সিমপ্যাথি সিকিংয়ের সুযোগ নিয়ে লুজ ক্যারেক্টার ছেলেরাও সেটার ফায়দা নিতে দুইবার ভাবছে না।

একটা মেয়ে আরেকটা মেয়েকে জানেন এটেনশান সিকিংয়ের জন্য সহ্য করতে পারেনা। সব মেয়েই চায় তার বান্ধবীর চেয়ে বেশি এটেনশান সে পেতে। কিন্তু ছেলেদের ক্ষেত্রে এই বিষয়টা আপনি লক্ষ করবেন না।

সবচেয়ে বড় কথা একটা মেয়ে ঘরর বউ থাকতে যেরকম দৃষ্টিভঙ্গি প্রদর্শন করে শ্বাশুড়ি হওয়ার পর পুরা ১৮০ ডিগ্রী পল্টি নেয়। নারী নির্যাতনের পেছনে কিন্তু এসব নারীদের অবদান অনস্বীকার্য।

যেই মা তার ছেলের বিয়েতে ঘর সাজানোর আসবাব চায়, সেই একই মা নিজের মেয়ের বেলায় যোগী আদিত্যনাথের মত দুইদিনের ধার্মিক সেজে যৌতুকের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়।

বংশের প্রদীপ জ্বালানোর স্বার্থে ছেলের পেছনে লাখ লাখ টাকা খরচ করে শিক্ষিত বানাবেন, আর মেয়ে ইন্টার পাশ করলে বিয়ে দেয়ার জন্য পাগল হয়ে যান, বাবার চেয়ে মা বেশী পাগল থাকেন মেয়ের বিয়ে দেয়ার জন্য। 

ছেলে চাইলে মোবাইল, গাড়ী, ট্যুর কোনো কিছুতে মানা করবেন না যদি টাকা থাকে, কিন্তু মেয়ের বেলায়? খাবার টেবিলে মায়েরাই কিন্তু মাছের মাথা মুরগির রান তার ছেলের পাতে তুলে দিয়ে নিজের মেয়েকে নিজেই তুচ্ছ করে আসছে।

চাকরি প্রমোশানের ক্ষেত্রে একটা ছেলের চেয়ে একটা মেয়ে ১০০ গুণ বেশি অগ্রাধিকার পায়, অথচ এই অগ্রাধিকার যে তার স্বকীয়তা ধ্বংস করছে সেটা সে ভাববেনা একবারের জন্য। 

একটা মেয়ে তার জীবন সঙ্গিনী হিসেবে কেন সবসময় নিজের চেয়ে বয়ষে বড়, নিজের চেয়ে বেশী যোগ্যতাসম্পন্ন ক্যরিয়ার স্যটেলড ছেলে খুঁজবে?  কয়টা মেয়ে দেখাতে পারবেন যে কিনা নিজের চেয়ে বয়ষ ছোট রানিং স্টুডেন্ট অথবা একটা সমবয়ষী বেকার ছেলের দায়িত্ব নিয়ে বিয়ে করেছে?

কাউন্টার হিসেবে অনেকেই হয়ত বলবেন মেয়েদেরকে সংসারের দায়িত্ব নেয়া লাগে, বাচ্চা মানুষ করা লাগে ব্লা ব্লা।তো আপনি কি আশা করেন?  একটা ছেলে ঘরে বসিয়ে আপনাকে বিয়ে করে খাওয়াবে প্লাস ঘরের কাজও সে করিয়ে নিবে?

ইকোনোমিক্যলি ইকুয়াল কন্ট্রিবিউশান যদি একটা মেয়ে সংসারে রাখে তাহলে তার এই কাজগুলা করা লাগেনা। এরকম এক্সাম্পল আপনি দেখাতে পারবেন না যে একটা মেয়ে চাকরি করে ফ্যামিলিতে কন্ট্রিবিউট করছে আবার টর্চারের স্বীকার হচ্ছে। রেয়ার কেস থাকতে পারে তখন তার স্বামীকে অমানুষ বলা ছাড়া কোন শব্দ থাকবে না।

এটা ঠিক এখন পর্যন্ত দেশের ৭০ শতাংশ নারীই শত বঞ্চনার পরেও তার সংসার টিকিয়ে রাখতে জীবন দিয়ে সংগ্রাম  করে যায়।আমার কাছে এরকম নারীর উদাহরণ আছে যারা স্বামী মারা যাওয়ার পর বা ডিভোর্সের পর সিঙ্গেল মাদার হয়ে দ্বিতীয় বিয়ে না করে সন্তানদের মানুষ করেছেন।

কিন্তু এরকম পুরুষ লাখেও একটা বের হয় কিনা সন্দেহ যার বৌ মারা যাওয়ার পর বা ডিভোর্সের পর নতুন বিয়ে করেনায়। এইজন্য নারীরা সত্যিই হ্যটস অফের দাবি রাখে। 

কিন্তু হালের তথাকথিত প্রগতিশীল কিছু নারীদের জন্য তাদের অবদান ফিকে হয়ে যাচ্ছে। একটু ইনকাম করতে শিখলেই হাজবেন্ডকে ইগনোর করা শুরু করে, যার জন্য ওভারঅল নারীদের উপর একটা বিতৃষ্ণা জন্মায় যা মোটেও কাম্য নয়।

আর এটা হচ্ছে কিন্তু মেয়েদের ই সৃষ্টি করা "ফ্যামিনিজম" থিওরীর জন্য। নারী পুরুষ আলাদা করে নিজেদের নারীবাদকে জানান দেয় বলেই একটা নারীর দোষ সকল নারীর বহন করা লাগে।

ডিপার্ট্মেন্টের সিনিয়র ভাইয়া এত এত জুনিয়র থাকতে তোমাকেই কেন এক্সট্রা কেয়ার করবে? নোটস দিবে? তার উদ্দেশ্য কি? ভিক্টিমাইজ হয়ে ত পরে গোটা পুরুষজাতির দোষ দিবা। তার আগেই এসব লুচ্চা সিনিয়র এভয়েড করা উচিত না?

মনে রাখতে হবে- নারী হেসে উঠার আগে পুরুষ ছিল সন্যাসী, পৃথিবী ছিল মরুভূমি। নারীর সঙ্গ লাভের আগে পুরুষ ছিল হৃদয়হীন, মানুষ করিতে নারী তাকে দিয়েছিল আধেক হৃদয় ঋণ। এখন নারীদেরকে বুঝতে হবে কোনটাতে আপনার ভালো কোনটাতে আপনার খারাপ।

শাড়ী পড়লে নারী দেবীত্ব লাভ করে, সেই নারী যদি প্রগতিশীলতার ঝান্ডা উঁচু করার জন্য শার্ট প্যান্ট পড়ে, বিশ্বাস করেন তারে কাজী মারুফের চেয়ে খারাপ লাগে। কেন নিজে নিজে সার্কাস হবেন?

বড় চুলে নারীর সৌন্দর্য, সেখানে ছেলেদের মত চুল কেটে ফেললেই সমাজে নারী অধিকার প্রতিষ্ঠা হয়ে যাবে?

রাস্তায় চুমু খেলে, ইচ্ছামত সেক্স করলেই ডিসক্রিমিনেশন বন্ধ হয়ে যাবে? ইফ ইউ ডোন্ট লাইক এনি রুলস, ফলো দ্যা রুলস, রিচ ইন দ্যা টপ এন্ড চেইঞ্জ দ্যা রুলস। রুলস চেইঞ্জ করার জন্য ও যোগ্যতা অর্জন করা লাগে। বামাতিদের মত ভন্ডামি করে বিপ্লবের গান গাইলে সমাজ পরিবর্তন হবে না।

মার্কস, লেনিন কেউ বলেনায় রাস্তায় চুম্মাচাটি করে দুনিয়া উদ্ধার করো তাইলেই সমাজে অমূল পরিবর্তন আসবে।রাস্তায় সিগারেট খাওয়াকে ভালো বলবে এমন কোন সুস্থ ব্যক্তি দেশে পাওয়া যাবেনা।

তো একটা ছেলে এগুলা করলে আপনি পারলে নিষেধ করবেন, আপনাকেও কেন করা  লাগবে? একটা ছেলে চুরি করলে আপনাকেও চুরি করা লাগবে? কে কি বলছে আর কে কি করছে সেটা না দেখে নিজের ভালোটা বুঝার চেষ্টা করো, নিজেরি লাভ।

তাই, সবশেষে একটা কথা বলব আমাদেরকে সবার আগে "নারী" বা " পুরুষ" এই পরিচয় থেকে বেড়িয়ে আসতে হবে। "মানুষ" পরিচয়ে বাঁচতে হবে। শারীরীক গঠনের জন্য কিছু পার্থক্য থাকবেই, সেটা মেনে নিয়েই পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধের চর্চা করতে হবেে।

৫০ কেজি চালের বস্তা যেমন একটা মেয়েকে দিয়ে তিনতলায় তুলতে বলা বোকামি,ঠিক একইভাবে মাতৃস্নেহ পুরুষের কাছে আশা করা মূর্খতা। মা হওয়ার যোগ্যতা শুধু নারীর ই আছে, ঠিক তেমনি পুরুষ বাবা না হলে নারীর মা হওয়াও সম্ভব না।

নারী-পুরুষ একে অপরের পরিপূরক। কেউ কাউকে আগ্রাহ্য করতে চাইলেই সামাজিক শান্তি বিনষ্ট হবে। নিজের মত করে নিজের যোগ্যতা অর্জন করতে হবে। 

আমি নারী, এইজন্য আলাদা সিমপ্যাথির আশা করে বসে নিজের স্বকীয়তা নষ্ট করা যাবে না। সকল মাতা ভগ্নিকে আন্তর্জাতিক নারী দিবসের শুভেচ্ছা। 

লেখক- সাকলাইন আফ্রিদি দুর্জয়  (শিক্ষার্থী, খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়-কুয়েট)