Amar Sangbad
ঢাকা বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪,

৭ মার্চ ঐতিহাসিক দিবস ঘোষণা: প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা

মো. কামরুল আহসান তালুকদার পিএএ

মার্চ ১৮, ২০২১, ০৫:০০ এএম


৭ মার্চ ঐতিহাসিক দিবস ঘোষণা: প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা

১৯৫২ থেকে শুরু করে ১৯৬২, ৬৬, ৬৯-এর আন্দোলন এবং সবশেষে ১৯৭০ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নিরঙ্কুশ বিজয়ের পরও পশ্চিম পাকিস্তানের ষড়যন্ত্রে সারাদেশ যখন উত্তাল, সেই অস্থির সময়ে বঙ্গবন্ধু জানালেন তার স্থির ও দূরদর্শী সিদ্ধান্ত, যা ছিলো হাজার বছরের বাঙালির প্রাণের স্বপ্ন।

বঙ্গবন্ধুর সেই ৭ মার্চের ভাষণ আমাদের স্বাধীনতার অমোঘমন্ত্র, বাঙালি জাতির শ্রেষ্ঠতম কবিতা। ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ মাত্র ১৯ মিনিটের এই কালজয়ী ভাষণে বঙ্গবন্ধু সারা দেশের মানুষকে এক সুতোয় গেঁথে দিয়েছিলেন। 

তার সেই আবেগতপ্ত ভাষণ বাঙালি জাতির মর্মমূলে ছড়িয়ে দিয়েছিল মুক্তির স্বপ্ন, সংগ্রামের সুদৃঢ় প্রতিজ্ঞা। এই স্বপ্ন ও সাহস বুকে নিয়েই বাংলার স্বাধীনতাকামী মানুষ জীবন-রক্ত-সম্ভ্রম দিয়ে স্বাধীন করেছেন দেশ। 

বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ তাই বাংলাদেশ রাষ্ট্রে ভিত্তিমূল, উজ্জ্বল প্রেরণাভূমি। কিন্তু ১৯৭৫-পরবর্তী বাংলাদেশে বারবার ইতিহাসের বিকৃতি ঘটেছে। নতুন প্রজন্মের কাছে প্রকৃত ইতিহাস লুকিয়ে রেখে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে তারা ধূলিসাৎ করার ঘৃণ্য অপচেষ্টা চালিয়েছে।

অপচেষ্টা প্রতিরোধ করার জন্য প্রয়োজন দেশের সর্বস্তরে বিশেষত নতুন প্রজন্মের সামনে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা তুলে ধরা। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বাংলাদেশ গড়তে হলে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় প্রজন্ম গড়ে তুলতে হবে। চেতনার এই অবকাঠামো নির্মাণ যত দৃঢ় হবে উন্নয়নের অবকাঠামো তত টেকসই হবে। আর এ ক্ষেত্রে ৭ মার্চের ভাষণের চর্চা ও সমপ্রসারণ এক অনিবার্য প্রসঙ্গ।

বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ চর্চার মাধ্যমে নতুন প্রজন্মকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিকশিত করার লক্ষে ২০১৭ সালে ময়মনসিংহের ভালুকায় ৭ মার্চের ভাষণ নিয়ে ভাষণ উৎসবের আয়োজন করা হয়। চার শতাধিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ৭ মার্চের ভাষণের সিডি ও মুদ্রিত পাঠ বিতরণ করা হয়। 

একইসাথে জেলা প্রশাসক, ময়মনসিংহ বরাবর যথাযথ কর্তৃপক্ষ কর্তৃক অনুমোদনের লক্ষে ৭ মার্চের ভাষণকে ‘জাতীয় ভাষণ’ এবং ৭ মার্চকে ‘জাতীয় ভাষণ দিবস’ ঘোষণা করার অনুরোধ সম্বলিত চিঠি প্রেরণ করা হয়। ইউনেস্কো কর্তৃক ২০১৭ সালের ৩০ অক্টোবর বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণকে ‘বিশ্ব ঐতিহ্যের দলিল’ হিসেবে স্বীকৃতি দেয়ার ১০ মাস আগে এ অনুরোধপত্র প্রেরণ করা হয়েছিল। 

বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ লক্ষাধিক শিক্ষার্থীর চর্চা করার সুযোগ সৃষ্টি, বঙ্গবন্ধুর অনুকরণে ভাষণ দেয়ার চেষ্টা, প্রতিবছর ৭ মার্চের ভাষণ উৎসবের আয়োজন প্রশাসনের পৃষ্ঠপোষকতায় বাংলাদেশে প্রথম আয়োজন। 

বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ নিয়মিত চর্চা, হাজারো শিক্ষার্থীর ১৯ মিনিটের ভাষণ পুরোপুরি মুখস্থ বলতে পারা এবং বিশেষ করে ছাত্রীরা যেভাবে ভাষণটি চর্চা করেছে এবং ভাষণ উৎসবে প্রথম হয়েছে তা সারা বাংলাদেশে দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। 

ভালুকার ৭ মার্চের ভাষণ উৎসবে শিশু-কিশোর এবং যুবকরা যেভাবে সাড়া দিয়েছিল তা নজিরবিহীন। অভিভাবকরা যেভাবে সহযোগিতা করেছেন তা ছিলো অতুলনীয়। রাজনৈতিক নেতা কিংবা জনপ্রতিনিধি ৭ মার্চের ভাষণকে প্রতিটি শিক্ষার্থীর হূদয়ে গ্রোথিত করতে অদম্য স্পৃহা নিয়ে কাজ করেছেন। 

ছাত্রছাত্রী নির্বিশেষে সব প্রতিযোগীকে মুজিব কোট পরিধান কিংবা বঙ্গবন্ধুর চশমা পরার বাসনা সবাইকে উদ্বেলিত করেছে। শিশু হূদয়ে মুজিব হওয়ার প্রচেষ্টা সবাইকে আবেগী করেছে। একজন রিকশাওয়ালা অথবা দিনমজুর সারা দিনের উপার্জন দিয়ে তার সন্তানকে একটি মুজিব কোট কিনে দিয়েছেন, যাতে কোনো কষ্ট ছিলো না, ছিলো উচ্ছ্বাস আর আবেগ। 

৭ মার্চের ভাষণ চর্চা শিশু হূদয়তো বটেই একজন পরিপক্ব মানুষকে যেভাবে বদলে দিয়েছে তা অকল্পনীয়। ৭ মার্চের ভাষণের প্রতিটি অক্ষর, শব্দ ও বাক্য মানুষের ধমনীতে বয়ে যাওয়া রক্ত দিয়ে প্রবাহিত হয়। শিক্ষার্থীদের আগামী প্রজন্মের ডিজিটাল বাংলাদেশের যোগ্য প্রতিনিধি হিসেবে গড়ে তুলতে এ ভাষণ চর্চার বিকল্প কিছুই নেই। অনন্য এ উদ্যোগের জন্য ২০১৮ সালে তৎকালীন উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. কামরুল আহসান তালুকদার ব্যক্তিগত শ্রেণিতে জাতীয় জনপ্রশাসন পদক লাভ করেন।

১৫ অক্টোবর, ২০২০ তারিখে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের ৬২৫ নং স্মারকের মাধ্যমে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কর্তৃক ১৯৭১ সালের ৭ মার্চে প্রদত্ত ভাষণের দিনটিকে ঐতিহাসিক দিবস হিসেবে ঘোষণা এবং দিবসটিকে ‘ক’ শ্রেণীভুক্ত হিসেবে ঘোষণা করে। দূরদর্শী এ সিদ্ধান্তের জন্য প্রধানমন্ত্রীকে জানাই আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা।

বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ যেমন সেকালের বাঙালিকে আবেগে-সংগ্রামে-সাহসে প্লাবিত করেছে, তেমনি আজো এই ভাষণ যেকোনো অন্যায়ের প্রতিবাদে সোচ্চার করে তোলে। 

বিশ্বের যেকোনো দেশের মুক্তি সংগ্রামে এই ভাষণ তাই প্রেরণার অনির্বাণ শিখা। আর এ কারণেই ৭ মার্চের স্বীকৃতি পরম আনন্দের এবং গর্বের। ভালুকার পাঁচ লাখ মানুষ আর লক্ষাধিক ছাত্রছাত্রীর হূদয়ের গহ্বরে লুকায়িত স্বপ্ন এবং প্রত্যাশার বাস্তবায়নের জন্য ভালুকার সর্বস্তরের জনগণের পক্ষ থেকে বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রীর প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা।

৭ মার্চের ভাষণ অনুশীলন ছড়িয়ে পড়ুক দিগন্ত থেকে দিগন্তে। মহাকালের তর্জনীর ইশারায় আজও আমরা সকল রক্তচক্ষুকে মোকাবিলার শক্তি, সাহস সঞ্চয় করি। ৭ মার্চ আমাদের অনন্ত প্রেরণার বসন্ত বাতাস। 

লেখক : উপসচিব, পানিসম্পদ উপমন্ত্রীর একান্ত সচিব

আমারসংবাদ/এআই