মার্চ ২৩, ২০২১, ০১:৪৫ পিএম
করোনাভাইরাস এ পৃথিবীর চাল-চিত্রকে বদলে দিয়েছে তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। একটা টালমাটাল পরিস্থিতিতে ২০২০ সালে মানুষের জনজীবন থমকে গিয়েছিল। করোনা আতংক প্রতিনিয়ত তাড়া করছে প্রত্যেকে। যার ঘরে এ রোগ প্রবেশ করেছে সে বুঝে এর ভয়াবহতা কতটা কঠিন।
এ অবস্থায় ২০২১ সালে সারা দুনিয়া ঘুরে দাঁড়াতে চেষ্টা করছে।একই সাথে কোভিড -১৯ এর ভ্যাকসিন আশার আলো দেখাতে শুরু করলেও করোনা ভাইরাস কিন্তু পৃথিবী ছেড়ে যায়নি এখন অবধি। বরং নতুন রূপে নানা দেশে হানা দিয়েছে এ ভাইরাস।
কোভিড -১৯ মানব সৃষ্ট না প্রকৃতির কোন অভিশাপ তা এখনো বিতর্কিত। সে যাই হোক না কেন করোনা আক্রান্ত বিশ্ব মানুষের কাছে শিক্ষনীয় হবে বলে এটাই প্রত্যাশা ছিল সবার কাছে। তবে যে ভাইরাস মানুষের মধ্যে সামাজিকভাবে দূরত্ব তৈরি করলেও মানসিকভাবে মেলবন্ধন আরও সুদৃঢ় করার আশা ছিল তা কিন্তু ঘটেনি আদতে।
লকডাউনের কালে মানুষকে ঘরবন্দি করে প্রকৃতি তার আপনরূপের প্রকাশ ঘটিয়ে প্রমাণ করেছিল মানুষ বৈশ্বিক সবুজকে বিনষ্ট করে কতটা অবিচার করছে। এ বিশ্বের সবকিছু তার আপনগতিতে চলে তা যেন মানুষ মানতে নারাজ। আর সেক্ষেত্রে প্রকৃতির কাছে মাত্রাতিরিক্ত বাড়াবাড়ি যে সহনীয় নয় তার প্রমাণ হলো লকডাউনের সময়।
ঘরবন্দি মানুষ বিবেকের তাড়ানায় তখন উপলদ্ধি করেছিল হিংসা, বিদ্বেষ ,অনিয়ম, দুর্নীতি, অসত্যের পথে চলতে গিয়ে এ সমাজকে তারা নিজেরাই নষ্ট করে দিচ্ছে। ক্ষমতার দাম্ভিকতা কিংবা অর্থের প্রতিপত্তি কতটা তুচ্ছ প্রকৃতির বিধানের কাছে তা বুঝিয়ে দিয়েছে ক্ষুদ্র একটা অদৃশ্য ভাইরাস। তখন অসহায় মানুষ কেবল বাঁচার আশায় নিজেকে সংশোধনের বানী শুনালেও তা ভুলে গেছে করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবার সাথে সাথে।
বোধ করি এটাই মানুষের স্বভাব। বিপদে পড়লে পাপের ক্ষমা চায়। আর অনুকূল পরিবেশ পেলেই ভুলে যায় সব। নিজের ভেতরে লুকিয়ে থাকা কু-রিপুগুলো সাপের মত ফনা তুলে ছোবল দিতে শুরু করে তার হিংসা, বিদ্বেষ আর অন্যায়, অবিচার অনিয়ম, দুর্নীতি দিয়ে। তাই আজ এ কথা সত্যি যে এ পৃথিবীতে মানুষের প্রতি মানুষের নেতিবাচক মনোভাব বদলাতে পারবে না কোনকিছু।
করোনার বিষে মানুষের মনের বিষের ক্ষয় হয়নি বলেই বিশ্ব রাজনীতিতে দ্বন্দ্ব চলছে দেশে দেশে। মানবতার জয়গান পরাজিত হয়ে যায় মানুষের হিংসাত্মক মনোভাবের কারণে। লকডাউনের লোকসান পুষিয়ে নিতে মরিয়া হয়ে একে অপরের সাথে অমানবিক আচরণ করতে দ্বিধা বোধ করে না। সবখানে অস্থিরতা। মুহূর্তে ভুলে গেছে ২০২০ সালে হাসপাতালের সেসব দুঃসহ স্মৃতি। মানুষ আসলেই অদ্ভুত এক প্রাণী। নিজের মন থেকে বিদ্বেষের বিষ নষ্ট করতে এরা নিজেরাই চায় না।তাই হয়তো একটা শান্তির পৃথিবী আজও গড়ে সম্ভব হয়নি।
দেশে আবার করোনা ভাইরাস বাড়ছে। নেই সচেতনতা। সরকারি বেসরকারিভাবে যদিও বা বলা হচ্ছে হাসপাতালগুলো মহামারি মোকাবেলাতে প্রস্তুত আছে। তবে বাস্তবে তা কতটা ভূমিকা রাখবে তা দেখার জন্য অপেক্ষা করতে হবে। সব কিছুর উপর যে বিষয়টি নিশ্চিত করা প্রয়োজন তা হলো, ২০২০ সালের মত যেন সেবার নামে অনিয়ম, দুর্নীতি না হয়।করোনা ভাইরাস প্রতিরোধের নামে ব্যবসার বেসাতি গড়ার মানসিকতা বদল করতে হবে।
ভুলে গেলে চলবে না করোনার বিষের চেয়ে আরো বেশি ক্ষতিকর হলো মানুষের মনের কু রিপু। যার দংশনে নষ্ট হয় ব্যক্তির নৈতিকতা ও আদর্শ। করোনা থেকে হয়তো ওষুধ দিয়ে পরিত্রাণ পাওয়া যায় কিন্তু মনের বিষের ক্ষয় হবে না যদি না আত্মসংশোধন না ঘটে।
লেখক: হাসিনা আকতার নিগার, কলামিস্ট
আমারসংবাদ/এআই