Amar Sangbad
ঢাকা শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪,

আমাদের মনের লকডাউন না হোক

এপ্রিল ১০, ২০২১, ০২:১৫ পিএম


আমাদের মনের লকডাউন না হোক

ত্যাগ, মহিমা আর মানবতার বার্তা নিয়ে গুটি কয়েক রাত পোহালেই পুরো বিশ্বের মুসলিম উম্মাহের দোড়গোড়ায় হাজির হচ্ছে মাহে রমজান। রমজান মাস আরবি মাস সমূহের মধ্যে সবচেয়ে বরকতময় ও মর্যাদাপূর্ণ মাস। এ মাসের গুরুত্ব ও বৈশিষ্ট্য অপরিসীম। অনেকেই ভেবে থাকেন সুবেহ-সাদিক হতে সূর্যাস্ত পর্যন্ত সকল প্রকার পানাহার থেকে বিরত থাকাই বুঝি রমজান। 

সারাদিন রোজা রেখে পরিবার নিয়ে ইফতারে হাজারটা খাবার আয়োজন করে তৃপ্তির সাথে খাওয়াই বুঝি রমজান। আসলেই কি রমজানের প্রকৃত উদ্দেশ্য তাই? নিশ্চয়ই নয়। রমজান মাস প্রকৃত পক্ষে ত্যাগ আর মানবতা দেখানোর বড় সুযোগ তৈরি করে। 

অনেকেই আমরা এটা মুখে স্বিকার করলেও সে অনুযায়ী কাজ করি না। কিন্তু রমজান যে আসে মুক্তি নিয়ে, মানবতা নিয়ে, আত্মশুদ্ধি নিয়ে এটা হৃদয়ে ধারণ ও সে অনুযায়ী কাজ করাই প্রকৃত উদ্দেশ্য রমজান মাসের।

পড়াশোনার জন্য গত পাচঁ বছর ধরে ঢাকায় থাকা হচ্ছে আমার। রমজান মাসেও ঢাকাতেই থাকা হয়। যখন গ্রামে ছিলাম রমজান আসলে মাকে দেখতাম আমাদের পরিবারের ৫ সদস্যের জন্য যতটুকু ইফতার প্রয়োজন তারচেয়ে দ্বিগুন ইফতার বানাতেন। 

ইফতারের আগে মা প্লেটে করে বুট,মুড়ি,পেয়াজি,খেজুর,আপেল ইত্যাদি যতটুকু আমাদের সার্মথ্যে ছিল তা দিয়ে আমাকে আর ছোট ভাইকে আমাদের বাড়ির পাশের যাদের আর্থিক অবস্থা কিছুটা কম বা যাদের সার্মথ্য নেই প্রতিদিন ইফতার করার তাদের বাসায় পাঠাতেন। 

তখন ছোট ছিলাম বেশি দূর নিয়ে যেতে রাজী হতাম না ভাবতাম যদি আমার ইফতারই মিস হয়ে যায়! আম্মু এখনো এমনটা করেন ,আর অসহায়দের দোড়গোড়ায় ইফতার নিয়ে যায় আমার ছোট ভাই।

মা বলতেন যারা গরীব তাদেরও তো রোজা রাখতে কষ্ট হয়। আর রমজান মানেই তো একে অন্যেরে সাথে ভাগাভাগি করে খাওয়া। যদিও এই বিষয়টা আমার পরিবারে একান্ত গোপনীয়,তবুও অনুপ্রেরনা দেয়ার উদ্দেশ্যে বলা।

আমি প্রায় শুনতাম কিছু মানুষের কাছে যে যাদের ঘরে কেউ রোজা রাখে না তাদের ঘরে আবার কিসের ইফতার পাঠাবো। কিন্তু আমি এর ঘোর বিরোধী। আমি চাই যেন সবাই খাবার টা ভাগ করে খাই। হোক সে রোজাদার কিংবা বেরোজাদার, হোক সে মুসলিম কিংবা অন্য কোন ধর্মের। কারন রমজান আমাদের শিক্ষা দেয় মানবতা।

'দানশীলতা' মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকেই একটি মহৎ গুণ। আর ইসলামি দৃষ্টিকোণ থেকে তো কথাই নেই। কুরআন এবং হাদিসে দান-সদকার বহু আকর্ষিক ফজিলত রয়েছে। হাদিস শরীফে বলা হয়েছে, "দানশীলতা জান্নাতের একটি বৃক্ষ। যা তাকে জান্নাতে পৌঁছে দিবে" (মিশকাত শরীফ)। এই ফজিলত হচ্ছে সাধারণভাবে। রমজানে দান-সদকার জন্য রয়েছে বিশেষ ফজিলত। 

যা ধর্মপ্রাণ এবং আর্থিক সামর্থ্যবান মুসলমানদের জন্য সুখকর সংবাদ। হজরত আনাস (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহকে (সা.) জিজ্ঞাসা করা হলো সবচেয়ে উত্তম সদকাহ কী? তিনি বললেন, রমজান মাসের সদকা। হজরত ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত রাসুলুল্লাহ (সা.) পবিত্র রমজান মাসে বিপুল পরিমাণে দান করতেন।  (তিরমিজি: ২৩৫১)

করোনাকালিন এ সময়ে সকল শ্রেনির মানুষের আয় কমেছে। যারা একেবারে অসহায় তাদের হয়তো সবাই সাহায্য করে কিন্তু এমন অনেক পরিবার আছে ঘরে খাবার নেই কিন্তু মধ্যবিত্ত বলে কারো কাছে লোক লজ্জার ভয়ে কিছু চাইতেও পারে না। আমরা যারা ধনী, যাদের আর্থিক সার্মথ্য আছে তারা ত্যাগের এই রমজান মাসে অন্যের প্রতি সদয় হোন। 

অসহায় হতদরিদ্র মানুষের সাথে মধ্যবিত্ত অনাহারি পরিবারের দিকেও একটু নজর দেই।  আপনার যতটুুকুই সার্মথ্য আছে আশে পাশের মানুষদের সাহায্য করুন। প্রয়োজনে এক গ্লাস পানি এগিয়ে দিয়ে জিগ্যেস করুন ঘরে খাবার আসে কি না। 

জিগ্যেস করুন ইফতার ঠিক মতো হচ্ছে কি না। প্রয়োজনে গোপনে খুজঁ নিন। সেহেরিতে আপনি মাছ,মুরগি, নানান খাবার খেলেন আর আপনার পাশের ঘরের চাচা-চাচি,ভাই বন্ধু সেহেরিতে শুধু সাদা ভাত কাচাঁ লংকা আর পেয়াঁজ দিয়ে খাচ্ছেন এটা ইসলামের শিক্ষা নয়। বরং ছোট একটা বাটিতে গোপনে তার বাসায় আপনার পাত থেকে তুলে একটু খাবার দিয়ে আসুন। দেখবেন এর চেয়ে বেশি খুশি হয়তো তারা আর কখনো হবে না।

অন্তত, রমজান মাসে আমাদের মনের দরজা খুলে যাক। একটু মানবিক হয়ে উঠি। অনাহারের মুখে আহার তুলে দেই। পরম যত্নে অসহায়ের খুজঁ রাখি। লোক দেখানো হোক তবুও একটু মানবিক হওয়া চাই্। সর্বোপরি রমজান মাসে আমার আপনার মনের লক ডাউন না হোক।

লেখক: শিক্ষার্থী ও গণমাধ্যমকর্মী

আমারসংবাদ/এআই