Amar Sangbad
ঢাকা শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪,

ছাত্রনেতারা নিজ ক্যাম্পাসে চাকরি চাচ্ছে কেন!

মে ১১, ২০২১, ০১:৪৫ পিএম


ছাত্রনেতারা নিজ ক্যাম্পাসে চাকরি চাচ্ছে কেন!

প্রথম বর্ষে ভর্তি হওয়া একজন সাধারণ ছাত্র নিজের নেতৃত্বগুন ও রাজনৈতিক মেধার জোরে একসময় হয়ে উঠে ছাত্র নেতা। পরিণত হয় শত শত ছাত্রছাত্রীর অলিখিত অভিভাবক। শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন অধিকার ও দাবী নিয়ে তারা কথা বলে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তাদের গুরুত্ব দেয়। তাদের হাত করতে চায়। 

কিন্তু পুরো ক্যাম্পাসে ছাত্র নেতা শুধু একজন না। বেশ কয়েকজন হয়। তাদের মতের বিরোধ থাকে। তারা বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সমর্থক হন। কিংবা একই রাজনৈতিক দলের ভিন্ন ভিন্ন নেতার রাজনীতি করেন। বিভিন্নভাবে একে অপরের থেকে নিজেকে শক্তিশালী প্রমাণ করতে চান। ( নিজের হলকে শক্তিশালী দেখাতে কিংবা একই হলের ব্লকের নিজের আয়ত্তে সিট সংখ্যা পরিমাণ দেখিয়ে মারামারি কিংবা ঝামেলায় জড়িয়ে যায়।)

গোলোযোগ পাকিয়ে যায় সেখানেই। শক্তিশালী প্রমাণ করতে গিয়ে তারা ছাত্র রাজনীতি থেকে অনেকটা ছিটকে গিয়ে শিক্ষক রাজনীতিতে প্রবেশ করে। তারা (ছাত্রনেতারা) শিক্ষক সংগঠন সমূহের ব্রাহ্মা অস্থ হয়ে যায়। ছাত্রদের অধিকার আদায়ের কথা ভুলে নিজের অধিকার আদায়ে মগ্ন হয়ে যায়। সাধারণ শিক্ষার্থীর অধিকার আদায়ে কাজ করলেও নাম কামানোর ধান্ধাবাজি তো থাকেই। 

ঠিক তখনই তাদের ব্যবহার করে, রোদ-বৃষ্টিতে ভিজিয়ে বিক্ষোভ, মিছিল, মিটিং, সভা-সমাবেশ করিয়ে ফায়দা লুটতে থাকে শিক্ষক সমাজ। কখনো শুধুমাত্র মিছিল মিটিংয়ে তারা সীমাবদ্ধ থাকে না। তারা এক শিক্ষকদের কথায় অন্য শিক্ষকদের হুমকি-ধামকি, গায়ে হাত তোলা থেকে শুরু করে আরো নিকৃষ্টতর কাজে জড়িয়ে যায়। তারা পরিনত হয় শিক্ষক সংগঠনের বড় বড় মাথার অধ্যাপকদের নোংরা রাজনীতির খেলার পুতুল। 

এসবের বিনিময়ে তাদের মিলছে নাম-জোস, দাপট। (স্যারের সাথে একই গাড়িতে ঘোরাফেরা, ছবি তোলা)। এই নাম-জোস-দাপট যেটা অনেকাংশেই ক্যাম্পাসেই সীমাবদ্ধ। মিলে সামান্য টাকা পয়শাও। 

তবে বেশির ভাগ টাকা আসে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন অবকাঠামো নির্মানের ঠিকাদারের পকেট থেকে, বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরিক্ষা কার্যক্রমে হতে কিংবা বিভিন্ন জাতীয় দিবসের বরাদ্ধের কিছু অংশ হতে। 

যার বেশিরভাগই যায় জুনিয়রদের চা সিগারেটের বিলে, বাইকের তেলে কিংবা মিছিল মিটিংয়ে শেষে মিষ্টিমুখের ছলে। বাকীটা শীতে শীতবস্ত্র, বৃক্ষরোপন ও মানুষ দেখানো কিছু কাজের মাধ্যমে সংবাদের শিরোনাম হওয়ায়। 

কি কারনে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে আসা? পড়াশোনা! সেটা বাদে সবই হয়। দেখা যায় মিছিলের সামনে ব্যানার হাতে, মিটিংয়ের মধ্যমনি হতে, শিক্ষকদের সভা-সেমিনারে অডিটোরিয়ামের সামনের সিটে আর সুযোগ মিললে বজ্রকন্ঠে জোড়ালো বক্তব্য দিতে। 

দেখা যায় ঘন্টার পর ঘন্টা ফুল হাতে রাস্তার পাশে অপেক্ষা করতে। কারন নেতার এসি গাড়ি আসবে কয়েক মিনিটের জন্যে কালো কাচ নামিয়ে হাসি হাসি মুখে দুইটা কথা বলবে। নতুবা দেখা মেলে ফুল হাতে বিভিন্ন জাতীয় দিবসে সম্মান জানাতে। এবং চা সিগারেটের আড্ডায়।

এগুলো সামনা সামনি হলেও ছোট ভাই ব্রাদারদের মেয়ালি ভেজাল, চাদাবাজী, ছিনতাই, ঈর্ষার মিটমাটে ছাত্র জীবন পার হয়ে যায়। পড়াশোনা শেষ হলেই হয়ে পরে উঠতি ছাত্রনেতাদের ভার (বোঝা)। তার হাত ধরে রাজনীতিতে আসা ছেলেটা তার নামে দুর্গন্ধ ছাড়াতে ব্যস্ত হয়। "ভাই ভাই" বলে থু থু আটায় পরিণত করা ছেলেটা এড়িয়ে যেতে চেষ্টা করে। জুনিয়ররা ভাবে সিট টা ছাড়লেই আমাকে আর গণরুমে থাকতে হয় না। হুদায় পরে আছে। গড়ে প্রায় ৫ শতাংশ ছাত্রনেতা দামি সার্টিফিকেট অর্জন করতে পারলেও বাকী দের অবস্থা খুব একটা ভালো হয় না। বলা চলে শোচনীয়। 

এদিকে চাকরির পড়াশোনাটাও ঠিক ভাবে করা হয়ে উঠে না। কিন্তু চাকরি তো লাগবেই। পরে যায় ব্যাকফুটে। হারিয়ে ফেলে নিজের আত্মবিশ্বাস। ভুলে যায় এক সময় সে হাইস্কুল টপার ছিল। ফলে তারা শিক্ষকদের দেয়া টোপ টা গিলে ফেলে। নো চাদাবাজী। বন্ধ করো উশৃংখল আচারন। বিনিময়ে পাবে চাকরি। ক্যাম্পাসের পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে তাদের নির্দেশ অনুযায়ী চলতে হবে।

যদি টোপ না গিলে তবে অন্য কোথাও যোগ্যতার প্রমাণ দিয়ে চাকরি পেতে হলে, সেই ইন্টারমিডিয়েট পড়ুয়া সোনার ছেলেটা হতে হবে। বছর খানেক তো তাতেই যাবে। পড়াশোনা শেষ করে পরিবার থেকে টাকা নিয়ে বছর খানেক পড়াটা সবার হয়ে উঠবে না। পারিবারিক চাপ, হতাশা, লেজ কাটা শিয়ালের রুপে নিজেকে মিলানো টা খুবই কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। 

এক সময়ের ভরপুর কমেন্ট বক্স শুন্য হয়ে পরবে। এসব ভাবতেই বুকটা ধুকপুক করে উঠে। সব কিছু হারানোর থেকে নিজেকে বিকিয়ে দিয়ে একটা দশম গ্রেটের চাকরি কি ভালো না! (সেকশন অফিসার, একাউন্টেন্স) ক্যাম্পাসেই থাকা হলো, জুনিয়রদের জুনিয়র করে বসে রাখা গেল। কিছুদিন পরে বিয়ে করে কোয়ার্টার এ উঠে বিন্দাস লাইফ।

তবে এই পরিস্থিতির শিকার হয়ে চাকরির টোপ টা গিলে ফেলে নিজেকে কতটা ছোট করে ফেলে সেটা তাদের চোখের দিকে তাকালেই বুঝতে পারা যায়। দূর থেকে আঙুল উচিয়ে যখন কোনো জুনিয়র বলে, এই সেই যে ভিসির দালালি করে চাকরি পেয়েছে। গত ভিসির দালাল।" খুব ইচ্ছে হয় তাদের জিজ্ঞাসা করতে কেমন লাগে তখন?

তার উত্তরে হয়ত এটা হবে, আমি গ্রাজুয়েশন করেছি। আমার যোগ্যতা আছে। আমি আবেদন করেছি। আমার চাকরি হয়েছে। আমি ছাত্রনেতা কিংবা সাংবাদিক বলে কি আবেদন করতে পারব না? এটা কেমন নিয়ম! 

ভুল বলেনি এটাও ঠিক। তারা ও আবেদন করাতে পারে। চাকরী পেতে পারে।  আবার যদি চাকরি হবে হবে করে না হয়? ভিসির মেয়াদ শেষের দিকে তারাই ভিসিকে চাপ দেয়। বাসভবনে তালা লাগায়। মধ্য রাতে তখন ভিসিকে বাসভবন ছাড়তে হয়। লিয়াজু অফিস থেকে ক্যাম্পাস চালাতে হয়।

এসবের পিছনে ছাত্রদের যতটা না ক্ষমতা আর দাপটের লোভ দায়ী তার থেকে শিক্ষক সমাজ বেশি দায়ী। ১ম বর্ষে বড় ভাইয়ের র‍্যাগের মুখে কান্না করে দেওয়া ছেলেটা ৪ বছরে কি এত বড় হয়ে যায় যে শিক্ষকের গায়ে হাত তোলার মত দুঃসাহস দেখায়? প্রশাসনিক ভবনে তালা লাগায়। একজন ভিসি, একজন রেজিস্ট্রার, একজন প্রক্টর, একজন প্রফেসর যতক্ষণ নিজের সাঙপাঙ আসা করবে না। ততক্ষণ চাকরী প্রত্যাশী কেউ জন্ম নিবে না। তারা তাদের সেই পথে হাটায় তবেই তারা হাটে। 

তবে ছাত্রনেতা শুধু না সাংবাদিক নেতারাও একই পথে হাটছে। সর্বক্ষন এক পক্ষের গুনগান করে অন্য পক্ষ্যকে ফাদে ফেলে চাকরির নেশায় নিজের স্বত্তাকে ভুলে যাচ্ছে। কলংকিত করছে সাংবাদিকতার মত মহান পেশাকে। 

এর ব্যাতিক্রম ও হয়। মাঝে মধ্যে ছাত্র নেতারা জোরপূর্বক চাকরি চেয়ে বসে। তাদের চাপের মুখে চাকরি দিতে ইচ্ছাপোষণ করতে হয়। এরকম হলে সেই প্রশাসনের কর্তার অযোগ্যতা ফুটে উঠে। এটার জন্যও সেই শিক্ষক সমাজেই দায়ী।

[কিন্তু সব ছাত্র নেতা এমন করেন না। তারা নিজের যোগ্যতা দেশের বিভিন্ন নামকরা জায়গায় চাকরির সুযোগ পায়। নিজের জাত চিনিয়ে তবেই বিশ্রামে যায় এমনও আছেন ]

লেখক : সোয়াদুজ্জামান সোয়াদ (শিক্ষার্থী, হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়)।

আমারসংবাদ/এআই