Amar Sangbad
ঢাকা শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪,

ক্যাম্পাসে ফিরতে চাই 

সুমাইয়া সুলতানা অন্তু

মে ২৬, ২০২১, ০২:৪৫ পিএম


ক্যাম্পাসে ফিরতে চাই 

পুরো পৃথিবী যেন থমকে গেছে করোনা নামক মহামারীর আগমনে। তবে আপাতভাবে এটা মনে হলেও থমকে নেই কোন আর্থিক, সামাজিক প্রতিষ্ঠানসমূহ, ব্যবসা বাণিজ্য, যোগাযোগ ব্যবস্থা, যানবাহন। কোন দেশের মানুষও থমকে নেই সেই দেশে, বরং বিভিন্ন পেশাগত কাজে তারা পাড়ি দিতে পারছে অন্য দেশে। থমকে আছে শুধু পড়াশোনা, বিশ্ববিদ্যালয়, থমকে আছে শিক্ষার্থীরা। 

দীর্ঘ এক বছরেরও বেশি সময় ধরে স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ। সেই সাথে পড়াশোনাও বন্ধ শিক্ষার্থীদের। যদিও ভার্চুয়াল ভাবে পড়শোনা করানো হচ্ছে, তবে এই পড়াশোনা কারো কাজে আসছে বলে মনে হয় না। অনলাইন ক্লাস থেকে আমরা সেরকমভাবে উপকৃত হতে পারিনি এখনও। শিক্ষার্থীদের অনেকের-ই প্রায় গ্রামে বাড়ি। আর গ্রামের নেটওয়ার্ক সম্পর্কে আলাদাভাবে বলার কিছুই নাই। যার ফলে চাইলেও তারা অনলাইন ক্লাসে উপস্থিত হতে পারে না। আমাদের অনলাইন ক্লাস চলাকালীন আমরা মাঝে মাঝে কারো ভিডিও অন হয়ে গেলে দেখতে পাই, তারা গাছের উপর উঠে কোনো মতে নেটওয়ার্কের আওতায় এসে ক্লাস এ জয়েন হয়ে আছে। খুবই কষ্ট লাগে, একটা শিক্ষার্থী কত কষ্ট করে ক্লাসে জয়েন হয় কিন্তু সে কি আদৌ তার মনটা ক্লাস এ দিতে পারে?

তার উপর আছে ইন্টারনেট এর উচ্চমূল্যতা। অনেক গরীব শিক্ষার্থী প্রয়োজনীয় ইন্টারনেট কিনতে অক্ষম, যার ফলে পড়াশোনা তো দূর তারা ক্লাস ও করতে পারে না ঠিকমতো। 

যতদিন বিশ্ববিদ্যালয় না খুলছে আমরা স্বাভাবিক পড়াশোনায় ফিরতে পারছি না। মেয়েরা শিক্ষার দিক থেকে করোনায় আরও ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। এই এক বছরে আমার কত বান্ধবীর দেখলাম বিয়ে হয়ে গেলো, যাদের দু’চোখ ভরা স্বপ্ন ছিল পড়াশোনা শেষ করে মানুষের মতো মানুষ হওয়ার। আজ বিশ্ববিদ্যালয় খোলা থাকলে হয়তো তাদের জীবন টা অন্যরকম হতে পারতো। 

বাবা-মায়েরা তো চায় সন্তানেরা পড়াশোনা করে কষ্টের সংসারের একটু হলেও হাল ধরুক কিন্তু এদিকে দিনের পর দিন আমরা বাড়িতে বসে আছি।

তবে করোনা কি শুধু বিশ্ববিদ্যালয়ে? 
যেসব শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাস বন্ধ বলে বাড়িতে অবস্থান করছে তারা মোটেও বন্দিদশায় বসে নেই। প্রয়োজনের তাগিদে তারা হাট বাজার, টিউশনি করানো, ঘুরাঘুরি, খেলাধুলা সবই করছে, শুধু যেতে পারছে না বিশ্ববিদ্যালয়ে। এদিকে কারো বয়স কিন্তু থেমে নেই বিশ্ববিদ্যালয় এর মতো। চাকরির বয়স কমে যাচ্ছে কিন্তু থেমে নেই কোন চাকরির নিয়োগ পরীক্ষা। প্রত্যেকটা শিক্ষার্থীর জীবন থেকে হারিয়ে যাচ্ছে মূল্যবান একটা বছর। হতাশায় নিমজ্জিত মধ্যবিত্ত ও নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবার, কেননা এখন ও বিশ্ববিদ্যালয় খোলার কোন আশায় তারা দেখতে পাচ্ছেন না।

আমরা নবীন শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয় কি জিনিস এটাই এখনও বুঝে উঠতে পারিনি। হাতে গোনা এক মাস মতো ছিলাম প্রাণের ক্যাম্পাসে। অভিজ্ঞতা, পড়াশোনা যাই বলি না কেন সবদিক থেকে আমরাই সব থেকে পিছিয়ে। অনলাইন ক্লাস চললেও ল্যাব ক্লাস কি সেটাও আজ অবধি দেখিনি। ক্যাম্পাসের অলিগলি ও এখন অবধি দেখা হয়নি ঠিকমতো। বন্ধুবান্ধব একে অপরকে কেউ এখন ও ঠিকমতো চিনে উঠতে পারেনি, কতজন এর সাথে দেখায় হয়নি, তার আগেই করোনা হানা দিয়েছে আমাদের জীবনে। আমরা এখন বাড়ির চার দেয়ালে আটকে আছি, পড়াশোনা থেকে বিচ্ছিন্ন। কবে খুলবে বিশ্ববিদ্যালয়? কখন করবো পড়াশোনা? আর আদৌ কি করতে পারবো পড়াশোনা শেষ? এসব ই এখন শিক্ষার্থীদের প্রশ্ন।

লেখক: সুমাইয়া সুলতানা অন্তু, শিক্ষার্থী, হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়। 

আমারসংবাদ/কেএস