Amar Sangbad
ঢাকা শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪,

সাত কলেজ: আমাদের কেবলই দেরি হয়ে যায়!

আগস্ট ৮, ২০২১, ১০:৪৫ এএম


সাত কলেজ: আমাদের কেবলই দেরি হয়ে যায়!

দশম শ্রেণিতে থাকাকালীন সময়ে আমার স্কুলের ইংরেজি শিক্ষক বলেছিলেন, ‘স্কুলে এত আনন্দের দরকার নেই, বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হও দেখবে আনন্দ আর পড়াশোনায় কত মজা’। স্যারের বাস্তব অভিজ্ঞতা থেকে হয়তো ভুল বলেননি। কারণ বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের বড় আনন্দই হচ্ছে পড়াশোনা, ক্যারিয়ার গড়ার সুযোগের পথ খুঁজে পাওয়া। স্যারের সেই বক্তব্য বর্তমান পরিবেশ পরিস্থিতি একেবারেই ভুল প্রমাণ করে দিয়েছে। বিশেষ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত কলেজ গুলোতে ভর্তি হওয়ার পর। পড়াশোনা ছাড়াও অন্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সুযোগ সুবিধার ছিঁটেফোটাও মিলে না এখানে। সাত কলেজের সব কিছুতে কেবলই দেরি হয়ে যায়। ভর্তি হতে দেরি, পরীক্ষা অনলাইনে না স্বশরীরে সেই সিদ্ধান্ত নিতে দেরি, ফলাফল পেতে দেরি, টিকা পাবে কিনা তা নিয়ে খবর দিতেও দেরি। আমাদের কেবলই দেরি হয়ে যায়! কেবলই দেরি হয়ে যায়! 

২০১৭ সালে সাত কলেজকে ঢাবি অধিভুক্ত করার পর থেকে এইযে বিড়ম্বনা শুরু হয়ে তার অদ্যবধি চলছেই। সাত কলেজে একাডেমিক কার্যক্রম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় দেখভাল করলেও সাত কলেজ রয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনে। যার ফলে সাত কলেজকে নিয়ে এক প্রকার সমন্বয়হীনতাও স্পষ্ট। সাত কলেজের সমস্যা সমাধানে নানান উদ্যোগ নিলেও ফলাফল তেমন একটা সুফল বয়ে আনেনি। বর্তমান করোনাকালীন পরিস্থিতিতেও অন্যান্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে অনলাইনে একাডেমিক কার্যক্রমে তাল মিলিয়ে চলতে পারিনি সাত কলেজ। দেশের বেশ কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ে অনলাইনে পরীক্ষা নিয়ে নেয়ার সিদ্ধান্তও নেয়া হয়েছে। অথচ ঢাবি অধিভুক্ত হয়েও সাত কলেজ নিয়ে এখন পর্যন্ত কোন সিদ্ধান্তেই পৌঁছাতে পারেনি ঢাবি ও সাত কলেজ প্রশাসন। 

র্দীঘ সময় পর অনলাইনে পরীক্ষা নেয়ার সক্ষমতা আছে কি না সে বিষয়ে যাচাই করা শুরু করেছে সাত কলেজ প্রশাসন। আহা! কেবলই আমাদের দেরি হয়ে যায়। শুধু একাডেমিক কার্যক্রমই নয় এখন পর্যন্ত অজানা রয়েছে সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের টিকা পাওয়া নিয়ে। তবে সাত কলেজের প্রশাসনের জন্য স্বস্তির বিষয় হলো বর্তমান সরকার ১৮ বছরের উপরের সবাইকে গণহারে টিকার আওতায় আনার পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। যাক একদিকে তো টিকার বিষয়টির সমাধান কিছুটা হচ্ছেই। 

তারপরও রয়ে যায় চলমান সেশনজট নিয়ে ঝামেলা। সেশনজট নিরসনে শিক্ষাবর্ষ নির্দিষ্ট সময়ের আগেই শেষ করার পরিকল্পনার কথা গত এপ্রিল মাসে জানিয়েছিলেন ঢাকা কলেজের অধ্যক্ষ ও সাত কলেজের সমন্বয়ক অধ্যাপক আই কে সেলিম উল্লাহ খোন্দকার। স্নাতকের এক বছরের সেশন আট মাসে শেষ করার কথা থাকলেও এখন পর্যন্ত এই পরিকল্পনার অগ্রগতি নেই। আদৌ পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হবে কি না বা হলে কিভাবে সময় সংক্ষিপ্ত করে সেশন সম্পন্ন করা হবে সে বিষয়েও সাধারণ শিক্ষার্থীরা জানে না কিছুই।

করোনাকালীন এ দুঃসময়ে সাত কলেজ সবচেয়ে পিছিয়ে। পুরো শিক্ষাব্যবস্থা স্থবির হয়ে আছে। কোনো বিভাগের পরীক্ষা হচ্ছে না। একই বর্ষে শিক্ষার্থীরা আটকে আছে বছরের পর বছর ধরে । ২০১৭-১৮ সেশনের শিক্ষার্থীদের ২০২১ সালে অনার্স শেষ হয়ে যাওয়ার কথা, কিন্তু দ্বিতীয় বর্ষ শেষ করে তৃতীয় বর্ষেই আটকে আছে। এ বিষয়ে ঢাবির কোনো উত্তর নেই। নেই পরিকল্পনা।

করোনাকালে ৯০ শতাংশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী চায় অ্যাসাইনমেন্ট অথবা অনলাইনে তাদের পরীক্ষা হোক। অন্তত তাদের বর্ষ পরিবর্তন হোক। যেখানে এসএসসি-এইচএসসির মতো গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষাগুলো অটোপ্রমোশন দেওয়া যায়, সেখানে অনার্সে একজন শিক্ষার্থী কেন আটকে থাকবে? বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা তো অটোপ্রমোশন চায় না চায় পরীক্ষা হোক। যেহেতু বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের যাচাই করার জন্য আরোও কয়েকটি বর্ষ হাতে আছেই শিক্ষকদের কাছে তাই করোনাকালীন সময়ে সাময়িক ছাড় দেয়া উচিত বলেই মনে হয়। সাত কলেজ প্রশাসনের উচিত দ্রুত এমন কিছু সিদ্ধান্ত নেয়া যাতে বলতে না হয়, কেবলই আমাদের দেরি হয়ে যায়!

আমারসংবাদ/জেআই