Amar Sangbad
ঢাকা শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪,

বাবা হারানোর ১ বছর

মহিউদ্দিন পাঠান

আগস্ট ২০, ২০২১, ১২:৩০ পিএম


বাবা হারানোর ১ বছর

বাবাহীন একজন ছেলের জীবন যে কতটা বিয়োগান্ত হয়, তা হয়তো যাদের বাবা বেঁচে আছেন তারা কখনোই বুঝতে পারবে না। প্রতিটি মুহূর্তে মনে হয় সত্যি আমি বড়ই একা। একটু ভালোবাসা দেওয়ার, সান্ত্বনা দিয়ে সামনে চলার প্রেরণা জোগানোর মানুষটি আজ বেঁচে নেই। বাবাকে ছাড়া বাঁচতে পারব এ কখনো কল্পনা করিনি। কিন্তু বাস্তবতা বড়ই কঠিন। আমার বাবা হাফেজ আব্দুল মালেক গত বছট ১০ মহররম দিবাগত রাতে ইন্তেকাল করেন। জন্মঃ হাফেজ আব্দুল মালেক পাঠান ১৯৬৫ সালে পাঠান বংশে মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। পিতা মোঃ আবদুল লতিফ পাঠান ও মাতা সবুরা বেগম।

শৈশবকালঃ তার বয়স যখন তিন মাস তখন তিনি বাবাকে হারান। ছোট বেলা থেকে তিনি তার মামা হাফেজ মাওলানা শফিউল্লা এবং তার খালাও খালুর আদর যত্নে বড় হন। পরে পবিত্র কুরআনে হাফেজ হন। তারপর তিনি ঢাকা একটা মাদ্রাসা থেকে দাখিল ( এসএসসি) পরিক্ষায় ১ম বিভাগে উত্তীর্ণ হন, পরে আলিম (এইসএসসি) শ্রেনীতে ভর্তি হয়ে কিছুদিন ক্লাস করার পর খবর যায় উনার মা অসুস্থ তখন মায়ের সেবা করার জন্য বাড়িতে চলে আসে, পরে আর পড়ালেখা করা সম্ভব হয় না। কিছুদিন পর তিনি মা জননী কে ও হারান। তিনি ২৫ বছর বয়সে মরহুম মাওলানা আবদুল খালেক মিয়াজির ২য় মেয়েকে বিয়ে করেন এবং তিনি স্থানীয় একটি মসজিদে ২৮ বছর জুমার ইমামতি করেন। এছাড়া মৃত্যুর আগ পর্যন্ত নিজ বাড়ির পাঞ্জেগানা মসজিদে নামাজের ইমামতি করছেন।

১৯৯৮ সাল থেকে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত নওহাটা ফাজিল (ডিগ্রি) মাদ্রাসায় চাকরি করছেন। মৃত্যুর ৮ দিন আগে হঠাৎ তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। তারপর তাকে ঢাকা মেডিকেল হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। ওখানে ৬ দিন থাকার পর শারীরিক অবস্থা অবনতির দিকে গেলে ঢাকা মেডিকেল হাসপাতালের বিভাগীয় প্রধানের নির্দেশক্রমে আইসিইউ-তে ভর্তি করানো হয় এবং সেখানে তিনি ১ ঘন্টা ১০ মিনিট থাকার পর মহররমের ১০ তারিখ ইন্তেকাল করেন ইন্না-লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহী রাজীউন।

তিনি হাসপাতালে থাকা অবস্থায় আমাদেরকে বলতেন রাত ২ টার সময় তাহাজ্জুদের নামাজ পড়ার জন্য উঠিয়ে দিতে। এমনকি তিনি মৃত্যুর ১০ মিনিট আগেও আইসিইউ-তে পানি চাইছিল তাহাজ্জুদ নামাজ পড়ার জন্য, মৃত্যুর আগে বাবাকে প্রশ্ন করলাম বাবা এখানকার ডাক্তাররা আপনার খুব প্রশংসা করে। তারা বলে আপনার বাবার যে রিপোর্ট এই রিপোর্টে তো মানুষ বাঁচে না, কিন্তু আপনার বাবা হাটতে পারে, খাইতে পারে, নামাজ পড়তে পারে নিশ্চয় আপনার বাবা খুব ভালো মানুষ। পরে আমি বাবাকে বললাম আপনি আমল করছেন এরকম দুই একটা আমলের কথা আমাদেরকে বলুন, বাবা উত্তর দিলেন আমি বুঝ হওয়ার পর থেকে এক ওয়াক্ত নামাজ ও ছাড়িনি এবং মাগরিবের নামাজের পরে ৬ রাকাত আউয়াবিন নামাজও কখনো ছাড়িনি। তিনি মৃত্যুকালে চার ছেলে এক মেয়ে এবং স্ত্রী সহ অনেক গুণিজন রেখে গেছেন, মৃত্যুকালে তার বয়স ছিলো ৫৬ বছর।

লেখকঃ মহিউদ্দিন পাঠান, সহকারী শিক্ষক, চাঁদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়।

আমার সংবাদ/রাহা