Amar Sangbad
ঢাকা বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪,

সাইবার বুলিং প্রতিরোধে চাই সচেতনতা

মেহেদী হাসান

আগস্ট ২৮, ২০২১, ০৬:৩৫ এএম


সাইবার বুলিং প্রতিরোধে চাই সচেতনতা

বর্তমান সময়ে সাইবার বুলিং মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। বিশেষত কোন সেলিব্রিটি কিংবা সমাজের পরিচিত মানুষেরা যখন তার ব্যক্তিগত ওয়ালে কোন কিছু লিখে কিংবা কোন ছবি পোস্ট করে, তখন একটি নির্দিষ্ট সংখ্যক ব্যবহারকারি সেখানে হুমড়ি খেয়ে পড়েন নানারকম আপত্তিকর মন্তব্য করার জন্য। কখনও কখনও সেসব মন্তব্য হয়ে যায় ব্যক্তিগত আক্রমণ, আবার কখনওবা বাড়াবাড়ি। বেশিরভাগ সময় মধ্যবয়স্ক নারী এবং কিশোরীরা এই পরিস্থিতির শিকার হয়ে থাকেন। কিন্তু তারা লোক লজ্জা এবং আত্মসম্মানের ভয়ে বিষয়টি চেপে যান। 

মজার ছলে কিংবা কাউকে হেয় করার জন্য প্রতিনিয়ত বাড়ছে সাইবার বুলিং ভিক্টিমদের সংখ্যা। সম্প্রতি বাংলাদেশি একজন অভিনেতা তার বিয়ের ছবি ফেসবুকে শেয়ার দেওয়ার সাথে সাথে কমেন্টস বক্সে শুরু হয় জঘন্য ভাষায় মন্তব্য, একসময় এসব মন্তব্যের বিরুদ্ধে মুখ খুলতে বাধ্য হন তিনি। এরপর ক্রিকেটার তাসকিনও যখন সমুদ্র সৈকতে তার স্ত্রীর সাথে তোলা একটা ছবি শেয়ার দিলেন, সেখানেও একই রূপ দেখা গেল, সাইবার ক্রাইমের সাথে জড়িতরা হুমড়ি খেয়ে পড়লো সেখানে। বেশিরভাগ সময়ে ভিক্টিমরা সাইবার বুলিংয়ের ব্যাপারে চুপ থাকেন, এজন্য যারা এই অপরাধের সাথে জড়িত থাকেন, তারা আরও সাহস পেয়ে যায়, ক্রমেই বাড়তে থাকে তাদের এই অপরাধ। 

ইন্টারনেটের সহজলভ্যতার কারণে এখন প্রত্যেক ঘরে ঘরে ঢুকে পড়েছে প্রযুক্তির ছোঁয়া। প্রতিদিন বাড়ছে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা। শখে কিংবা প্রয়োজনে, এখন সবাই ইন্টারনেট ব্যবহার করতে বাধ্য। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এখন কমবেশি সবার বিচরণ, শহর থেকে শুরু করে প্রত্যন্ত অঞ্চল, সবখানেই এখন ইন্টারনেট ব্যবহারকারিদের জয়জয়কার। অথচ কয়েকবছর আগেও এমন অবস্থা ছিল না। ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা এত বেশি ছিল না। 

বাংলাদেশসহ এশিয়ার কয়েকটি দেশের ওপর চালানো এক জরিপের বরাত দিয়ে ২০১৭ সালে বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়- এসব দেশে সাইবার বুলিংয়ের ঝুঁকি উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে। সম্প্রতি অনলাইনে যেসব নারীরা হয়রানির শিকার হয়ে থাকেন, তাদের অভিযোগ গ্রহণের জন্য পুলিশের সদর দপ্তর থেকে “পুলিশ সাইবার সাপোর্ট ফর উইমেন” নামে একটা পেজ চালু করা হয়েছে। পুলিশের তথ্য বলছে, গত বছর ফেসবুক পেজটি চালু হওয়ার পর আট মাসে ১০ হাজারের বেশি অভিযোগ এসেছে। তাদের হটলাইনে কল আসে প্রায় ১৬ হাজার। ই-মেইল আসে তিন শতাধিক। এ থেকেই একটা ধারণা নেওয়া যায় প্রতিদিন কি পরিমাণ নারীরা সাইবার বুলিংয়ের শিকার হচ্ছেন। 

পরিসংখ্যান বলছে বর্তমান পৃথিবীর ৫১ শতাংশ মানুষ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে থাকেন, এবং এর মধ্যে ৬০ শতাংশ মানুষ বিভিন্ন সময় সাইবার বুলিংয়ের শিকার হয়ে থাকেন। বাংলাদেশ পুলিশের সেন্ট্রাল ডেটাবেজ ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমের (সিডিএমএস) তথ্যমতে, ২০১৮ সালে ডিএমপিসহ সারা দেশে সাইবার বুলিং-সংক্রান্ত ১ হাজার ১৬৫টি মামলা হয়। ২০১৯ সালে মামলা বেড়ে দাঁড়ায় ১ হাজার ৫০৭-এ। ২০২০ সালে মামলা হয়েছে ১ হাজার ৪৫৯টি। করোনার কারণে চলাচলে বিধিনিষেধ থাকায় মামলা একটু কম হলেও অনলাইনে অভিযোগ পড়েছে অনেক বেশি। অফলাইনে অভিযোগ ৩৬ শতাংশ কমলেও অনলাইনে বেড়েছে ১৬ শতাংশ।

সময়ের সাথে পাল্লা দিয়ে সাইবার ক্রাইমের মাত্রা বেড়ে চলেছে, সাইবার বুলিং মারাত্মক আকার ধারণ করেছে, অনেকে সাইবার বুলিংয়ে যন্ত্রণা সহ্য না করতে পেরে আত্মহত্যার পথ পর্যন্ত বেছে নিচ্ছেন। তাই যারা সাইবার বুলিংয়ের শিকার হচ্ছেন তাদের উচিৎ মুখ বুঝে সহ্য না করে এর প্রতিবাদ করা, আইনের সহায়তা নেওয়া। যারা মানসিক অবসাদে ভোগছেন অথবা হীনমন্যতায় ভোগছেন এমন লোকজনকেই বেশিরভাগ সময় এই অপরাধের সাথে জড়িয়ে পড়তে দেখা যায়। তাই পরিবারের সাপোর্টও এক্ষেত্রে বেশ জরুরি। এজন্য অভিভাবকদের উচিৎ সবসময় খেয়াল রাখা তাদের সন্তান অনলাইনে কি করছে, কোন কারণে তার মধ্যে পরিবর্তন আসছে কি না। ভিক্টিমকে সাপোর্ট করুন, তাহলে এই অপরাধ কিছুটা হলেও লাগব করা সম্ভব হবে।

মেহেদী হাসান তালহা, গণমাধ্যমকর্মী। 

আমারসংবাদ/এমএস