আরিফুল ইসলাম
অক্টোবর ৮, ২০২১, ০৫:৫৫ এএম
আমাদের শিক্ষার পুরো সিস্টেমটাই যেন কেমন অদ্ভুত! যার বর্তমান আছে বললেও ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত। একুশ শতকের জ্ঞানভিত্তিক পৃথিবী যেখানে গবেষণা, আবিষ্কার আর সফলতার প্রতিযোগিতায় ব্যস্ত, তখন এদেশে কী ঘটছে?
বিজ্ঞানের ছাত্র হয়েও সব ছাত্র-ছাত্রীর উদ্দেশ্য বিজ্ঞানের প্রয়োগ থাকুক আর না থাকুক সেটা গুরুত্বপূর্ণ নয়, গুরুত্বপূর্ণ হলো ভালো বেতনের একটি চাকরি জুটানো, গবেষণা তো আর ভবিষ্যতের নিশ্চয়তা দেয়না! গবেষণা তো সফল হতেও পারে; নাও পারে। জাতির শিক্ষার উদ্দেশ্য যখন এমন কুৎসিত সেখানে সে জাতির ভবিষ্যৎ তো অনিশ্চিত অন্ধকার হবেই।
যারা সবচেয়ে বুদ্ধিজীবী জাতির পথপ্রদর্শক আজ তারাও ভুল পথে। শিক্ষকের চিন্তা চাকরির পাশাপাশি কীভাবে আরও প্রাইভেট সেক্টরে বা অন্য কোনোভাবে টাকা উপার্জন করা যায়। কীভাবে পকেট ভারি করা যায়। গবেষণার প্রযুক্তি নিয়ে গবেষণাতে অহেতুক সময় অপচয় করতে তারা রাজি নন বরং এই সময়টাই কীভাবে বাকি জীবনটা ভালোভাবে আরাম আয়েশে বিলাসিতায় কাটানো যায় তার গবেষণা করতে করতেই সময় চলে যায়। আর চাকরি তো পেয়েই গেছি এত চাপ নিয়ে কী হবে! নিজে গবেষণা করতে হবে ছাত্রদের গবেষণায় আগ্রহী করে সাহায্য করেই বা কী হবে? তাতেও কী লাভ? সরকার তো এর জন্য আলাদাভাবে পারিশ্রমিক দিবে না। ভালো কিছু করে ইতিহাসের পাতায় স্বর্ণাক্ষরে নাম লিখানোর চেয়ে কিছু অর্থ সম্পদ বেশি মূল্যবান এটাই এই নির্বোধ জাতির ভাবনায়।
এ জাতি কি আসলেই মেধাবী নয়? নাকি জাতির মেধার সঠিক ব্যবহার হচ্ছে না? আসলে মেধা বিকাশের ব্যবহারিক হাতে কলমে জ্ঞানার্জন, দক্ষতা ও সৃজনশীলতা প্রকাশের বিষয়গুলোকে কৌশলে এড়িয়ে যাওয়া হচ্ছে।
একজন বিজ্ঞানের ছাত্রকে ল্যাব এবং গবেষণাগারে ব্যস্ত থেকে নিজেকে দক্ষ করে নিজের সৃজনশীলতা কাজে লাগিয়ে নতুন কিছু উদ্ভাবনের চেয়ে বই গলাধঃকরণ করে নিয়মের ক্লাস আর পরীক্ষা দিয়ে শেষে যেকোনো সেক্টরের একটা ভলো বেতনের চাকরির আশায় ছুটছে। যে জাতি নিজেই চায় না কিছু করতে সেখানে কিছু হবে কি করে!
অতঃপর ফলাফল আমরা গবেষণায় উদ্ভাবন, প্রযুক্তি, পারমানবিক শক্তি, মেডিসিন, মেডিকেল সাইন্স সবকিছুতে পিছিয়ে পড়েছি। মোবাইল, ল্যাপটপ, বাইক, মটরস ইঞ্জিন, পার্টস, শিল্পপ্রতিষ্ঠানের মেশিনার, কাঁচামাল, ঔষধ, উন্নত চিকিৎসা সহায়ক রোগ নির্ণায়ক যন্ত্রপাতি ইত্যাদি সব কিছুর জন্য উন্নত প্রযুক্তিতে এগিয়ে যাওয়া দেশগুলোর উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ছি। প্রতিনিয়ত আমদানি করে দেশের অর্থনীতিকে পঙ্গু করে দিচ্ছি।
প্রযুক্তির কল্যাণে অন্যান্য দেশ কী পরিমাণ অর্থ দেশ থেকে প্রতিনিয়ত নিয়ে যাচ্ছে তা কতজনই বা ভাবে? আপাতত ভালো আছি এটাই ভাবছে, কিন্তু দিনদিন অন্যের প্রতি বেশি নির্ভরশীল হওয়াতে পুরো জাতি নিজের পঙ্গুত্বের পরিচয় দিচ্ছে। অর্থনৈতিক শোষণের স্বীকার হচ্ছে পুরো জাতি তথা দেশ।
কী আছে আমাদের?
সব কিছুর জন্যই তো অন্যের উপর নির্ভরশীল। একুশ শতকের জ্ঞানভিত্তিক তথ্য ও প্রযুক্তি এমন একটা বিষয় যার মাধ্যমে পুরো পৃথিবীর সামরিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক ও সংস্কৃতিকে পর্যন্ত নিয়ন্ত্রণ করা যায়। আর তাই করছে উন্নত রাষ্ট্রগুলো, অন্যদিকে আমরা অদৃশ্য এক পরাধীনতা স্বীকার করতে বাধ্য হয়েছি, বিষয়টা এমন যে সিস্টেমে পড়ে গিয়েছি কিছু করার নাই!
আসলে করার অনেক কিছুই ছিলো এখনো আছে কোথা থেকে শুরু করতে হবে? কী করতে হবে? আমরা সবাই বুঝি কিন্তু তা নিয়ে আমাদের ভাবার সময় নাই, কারণ আমরা অতি চালাক জাতি।
আমাদের মনুষত্বের বিকাশ তথা দেশ ও জাতিকে নিয়ে ভাবতে হবে এটা সবাই ভুলেই গিয়েছি। এটা কখনো ভাবি না যে, চেষ্টা করেই দেখি না মানুষ যুগের সাথে তাল মিলিয়ে যেখানে দৌঁড়াচ্ছে সেখানে আমরা হাঁটতে তো পারি।
আমাদের মনে রাখতে হবে উন্নত রাষ্ট্র প্রযুক্তি ও গবেষণাখাতে উদ্যোগ নিয়েছিল বলেই আজ তারা এত সফল। যখন সফলতার সাথে আবিষ্কার করতে পেরেছে অসাধ্যকে সাধন করতে পেরেছে তারপর আর পিছু ফিরে তাকাতে হয়নি তাদের। আজ তারা পৃথিবীকে নিয়ন্ত্রণ করছে পৃথিবীর অর্থনীতি, সামরিক, সামাজিক ও সংস্কৃতিকে। তাদের দেশের অর্থনীতিতে তথা মাথাপিছু আয় ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা দিন দিন আরও কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে তা হয়তো আমাদের ভাবনার বাইরে। চীন, জাপান, কোরিয়া,আমেরিকা, রাশিয়া সব দিক থেকে এগিয়ে গিয়েছে।
এখনো সময় আছে রাস্তার উন্নয়ন আর সাক্ষরতার হার না বাড়িয়ে দক্ষ, সৃজনশীল ও সম্ভাবনাময় জাতি গঠনের। নয়তো অদৃশ্যভাবে শোষিত হতেই থাকবে এ জাতির বর্তমান ও ভবিষ্যৎ প্রজন্ম।
লেখা: আরিফুল ইসলাম।
শিক্ষার্থী, রসায়ন বিভাগ, সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ, ঢাকা।
আমারসংবাদ/এমএস