Amar Sangbad
ঢাকা শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪,

জাতির পিতার উন্নয়ন দর্শন

প্রফেসর ড. এম. কামরুজ্জামান

প্রফেসর ড. এম. কামরুজ্জামান

মে ২৪, ২০২২, ০১:৪১ পিএম


জাতির পিতার উন্নয়ন দর্শন

আধুনিক যুগে যে ক’জন মহান বাঙালি তাদের মেধার উৎকর্ষতা, প্রজ্ঞা, সময়োপযোগী ও গতিশীল নেতৃত্বে এবং সুনিপুণ চিন্তা-ভাবনরার আলোকচ্ছাটায় বাঙালি জাতিকে ঐক্যবন্ধ করে অধিকার আদায়ের নিরবচ্ছিন্ন প্রেরণা যুগিয়েছেন, তাদের মধ্যে শীর্ষে অবস্থান করছেন শত-সহস্র বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি, বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধের স্থপতি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। ঔপনিবেশিক ও সাম্রাজ্যবাদী শক্তির বেড়াজাল ছিন্ন করে তিনি বাঙালি জাতিকে শুধু একটি দেশই উপহার দেননি; সদ্য স্বাধীন হওয়া একটি বঙ্গুর অর্থনীতির রাষ্ট্রের অর্থনৈতিক, সামাজিক, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কাঠামো কেমন হবে-তারও একটি যুগোপযোগী রূপরেখা প্রণয়ন করেছিলেন বঙ্গবন্ধু। বঙ্গবন্ধু উন্নয়ন ভাবনার ব্যাপ্তি ছিল সর্বত্র এবং তা ছিল সার্বজনীন, অব্যর্থ ও কালজয়ী।

মানবিক বঙ্গবন্ধু মুজিব ১৯৪৮ সালের ১১ মার্চ ভাষার আন্দোলনে সক্রিয় অবদান রাখার মধ্য দিয়ে স্বাধীন স্বার্বভৌম বাংলাদেশ রচনার যে ভিত্তি স্থাপন করেছিলেন সেই ভিত্তিকে ধারণ করেই ১৯৫৪ সালের যুক্তফ্রন্ট নির্বাচন, ১৯৬২ এর শিক্ষা আন্দোলন, ১৯৬৬ এর ৬ দফা, ১৯৬৯ এর গণঅভ্যুথান, ১৯৭০ এর নির্বাচন, ১৯৭১ এর ৭ মার্চেও ঐতিহাসিক ভাষণ, ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চেও স্বাধীনতা ঘোষণার পথপরিক্রমায় নয় মাসের মহান মুক্তিযুদ্ধেও মাধ্যমে ১৭৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশ বিজয় অর্জন করে। বঙ্গবন্ধু মুজিব আবির্ভুত হন জাতির পিতা হিসেবে।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীন সার্বভৌম গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ এর প্রথম রাষ্ট্রপতি। ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ জাতির পিতার বঙ্গবন্ধু শেক মুজিবুর রহমান কর্তৃক স্বাধীনতা ঘোষণার পর ১০ এপ্রিল ১৯৭১ এর মেহেরপুর জেলার বৈদ্যনাথতলা গ্রামে মুজিবনগর সরকার গঠিত হয়। ১৯৭১ সালের ১০ এপ্রিল আওয়ামী লীগের এমএনএ এবং এমপিএ অংশগ্রহণ কুষ্টিয়া জেলার সীমান্তে অনুষ্ঠিত অধিবেশনে সর্বসম্মিতিক্রমে মুক্তিযুদ্ধ ও সরকার পরিচালনার জন্য মন্ত্রিপরিষদ গঠিত হয়। এই মন্ত্রিপরিষদ এবং এমএনএ ও এমপিএ-গণ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু মেখ মুজিবুর রহমানকে মহামান্য রাষ্ট্রপতি করে স্বাধীন সার্বভৌম গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ ঘোষণা করে। পরবর্তীতে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বও ঐতিহাসিক বিজয়ের মাধ্যমে ১০ জানুয়ারি ১৯৭১ স্বদেশ প্রত্যাবর্তন করেন বাঙালি জাতির অবিসংবাদিত নেতা, বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। স্বদেশ প্রত্যাবর্তন করেই বঙ্গবন্ধু তার স্বপ্নের সোনার বাংলা বিনির্মাণে মনোনিবেশ করেন। একটি স্বাধীন দেশের উপযোগী শাসনতন্ত্র রচনা করার উদ্যোগ গ্রহণের পাশাপাশি রাষ্ট্রের উন্নয়ন কাঠামো তৈরিতে আত্মনিয়োগ করেন বঙ্গবন্ধু।

বঙ্গবন্ধু বৈষম্যহীন সমাজ ও কল্যাণ রাষ্ট্র ব্যবস্থা প্রবর্তনের বিশেষভাবে আগ্রহী ছিলেন। তিনি অসাম্প্রদায়িক সমাজ ব্যবস্থার দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করতেন। তিনি দুর্নীতির বিরুদ্ধে আজীবন লড়াই করে গেছেন। বিশ্ববিখ্যাত আইজীবি ও নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ী সন ম্যাকব্রাইড বলেছিলেন, “শেখ মুজিবুর বুঝতে পেরেছিলেন, স্বাধীনতা শুধু পতাকা পরিবর্তন ও দেশের নতুন নামকরণ বোঝায় না, তার দৃষ্টিতে স্বাধীনতার অর্থ হলো সাংস্কৃতিক স্বাতন্ত্র্য ও নীতিবোধ সম্পন্ন আদর্শবাদ।”

১৯ আগস্ট ১৯৭২ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ছাত্রলীগের জাতীয় সম্মেলনে বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, “স্বাধীনতা পেয়েছি, কিন্তু মুক্তি পেয়েছি কি-না জানি না। রাজনৈতিক স্বাধীনতা পেয়েছি। কিন্তু অর্থনৈতিক স্বাধীনতা পেয়েছি কি? বলা বাহুল্য, বাংলার অর্থনৈতিক কাঠামো বেঙ্গে চুরমার কের দেয়া হয়েছিল। অর্থনৈতিক মুক্তি না আসা পর্যন্ত জনগণের মুক্তি নিরর্থক। সেজন্য আমি আগেই বলেছি, সংগ্রাম করে স্বাধীন হয়েছি। কিন্তু আজও অর্থনৈতিক স্বাধীনতা আমরা পাই নাই। যতদিন এদশের দুঃখী মানুষ পেট ভরে খেতে না পারে, যতদিন অত্যাচার ও অবিচারের হাত থেকে তারা না বাঁচতে, যতদিন না শোষণমুক্ত সমাজ হবে, ততাদন সত্যিকারের স্বাধীনতা আসতে পারে না। রাজনৈতিক স্বাধীনতা আনতে বড় ত্যাগের প্রয়োজন, অর্থনৈতিক স্বাধীনতা আনতে তার চেয়ে বেশি কঠোর পরিশ্রমের প্রয়োজন। রাতারাতি হয় না। কোনোদিন হয়নি। বস্তুত এর কোনো সোজা পথ নেই। ধীর পদক্ষেপ এগুতে হবে। এর জন্য অনেক ত্যাগের প্রয়োজন, অনেক ধৈর্য্যের প্রয়োজন। একদিন হয় না। আমার রাজনৈতিক জীবনে আমি এ সত্য বহুবার উপলদ্ধি করেছি।’

তিনি আরো বলেছিলেন, ছোট ভাইয়েরা-বোনেরা আমার, সারাদিন কি করলে তা রাত্রে শোবার সময় একবার হিসাব-নিকাশ করো। আজ ভালো-মন্দ এর হিসাব রাখলে পরের দিন এটা কাজে লাগবে। তাই বলি, তোমরা আত্মসংযম অভ্যাস কর; আত্মসমালেচনা কর, আত্মশুদ্ধি কর। তারপর পথে নামো। মানুষ শুনবে, মানুষ দেখবে, মানুষ শিখবে, কাজ করবে, ভালোবাসবে। মানুষও উৎসাহী হয়ে তোমার সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করবে। কেউ কোনোদিন বলপ্রয়োগে ভালো কিছু করতে পারে নাই।
বঙ্গবন্ধু উপলব্ধি করেন আদর্শবান নাগরিকের মাধ্যমইে রাষ্ট্রীয় উন্নয়ন কাঠামো তৈরী করতে হবে, রাষ্ট্রকে এগিয়ে নিতে হবে। পাশাপাশি তিনি উপলব্ধি করেছিলেন নির্ভরযোগ্য তথ্য-উপাত্তের সমন্বয়ে রাষ্ট্রের উন্নয়ন কাঠামো হতে হবে পরিকল্পিত। স্বাধীনতা লাভের অব্যবহিত পরেই বিষয়টি ত্বরান্বিত করার জন্য আর্ন্তজাতিকভাবে প্রখ্যাত পরিকল্পনাবিদদের সম্বয়য়ে উচ্চ পর্যায়ের পেশাদারী প্রতিষ্ঠানের মর্যাদা। পরিকল্পনা মন্ত্রী পদাধিকার বলে কমিশনের চেয়ারম্যান নিযুক্ত হন। দৈনন্দিন কার্যাবলী পরিচালনার জন্য এবং নির্বাহী ক্ষমতা প্রয়োগের জন্য মন্ত্রীর পদমর্যাদা সম্পন্ন একজন ডেপুটি চেয়ারম্যান নিযুক্ত হন। কশিমনের  অন্যান্য সদস্যগণ ছিলেন প্রতিমন্ত্রীর পদমর্যাদা সম্পন্ন। সচিব পদমর্যাদান “প্রধান” এর অধীনে মোট ১০টি বিভাগ সৃষ্টি করা হয়; বিভাগসহ হচ্ছে- সাধারণ অর্থনীতি, কার্যক্রম ও মূল্যায়ন, কৃষি ,শিল্প, পানি সম্পদ, পল্লী প্রতিষ্ঠান, ভৌত কাঠামো, আর্থ-সামাজিক অবকাঠামো, বহিঃসম্পদ এবং প্রশাসন। কমিশনকে তিনি সরকারি সরকার প্রধানের নিয়ন্ত্রণে ন্যস্ত করেন। 

যেহেতু সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশে পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের কোন কাঠামো ছিল না সেহেতু প্রখ্যাত অর্থনীতিবিদ জনাব মো. ইুরুল ইসলামকে ডেপুটি চেয়ারম্যান কওে বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ পরিকল্পনা কমিশনকে গঠন করেন এবং প্রথম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা প্রণয়নের দায়িত্ব প্রদান করেন। দেশের উন্নয়ন কাঠামোতে অর্থনীতির কোন কোন খাতকে অগ্রাধিকার দিতে হবে, কোন কোন খাতের সমন্বয়ে একটি সদ্য স্বাধীন ভঙ্গুর অর্থনীতিকে পরিকল্পিত কাঠামো মধ্যে নিয়ে আসা সম্ভব হবে এ সকল বিষয়াদি বিবেচনায় নিয়ে দেড় বছরেরও কম সময়ের মধ্যে দেশের প্রথম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা প্রণয়ন করা হয় ১৯৭৩ সালের নভেম্বর মাসে। পরিকল্পনা প্রণয়নে আর্থ-সামাজিক ও রাজনৈতিক অঙ্গীকারকে প্রাধান্য দেয়া হয়েছে। বিনিয়োগ কৌশল, বঞ্চনা থেকে উল্টরণেবে প্রাাধান্য দেয়া, উন্নয়ন প্রক্রিয়ায় জনগণের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা, রাজনৈতিক নেতৃত্বকে অগ্রাধিকবার দিয়ে ক্যাডার ভিত্তিক প্রশাসনিক ব্যবস্থার গড়ে তোলা ইত্যাদি সামাজিক- রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটকে বিবেচনায় নিয়েই প্রথম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা প্রণয়ন করা হয়েছে। সাধারণ জনগণের ভোট প্রয়োজনীয়তাকে এবং কর্মসংস্থানকে প্রাধান্য দিয়ে বিনিয়োগ কৌশল নির্ধারণ করা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে শ্রম-ঘন বিনিয়োগ কৌশল এবং শ্রমিক স্থানান্তর প্রক্রিয়াকে বিশেষ বিবেচনায় নেয়া হয়েছে। বিনিয়োগ কৌশলে বাঙালি জাতীয়তাবোধের চেতনায় উজ্জীবীত হয়ে বিদেশী সম্পদেও উপর নির্ভরশীলতা ক্রমান্বয়ে হ্রাস করে স্বনির্ভও অর্থরীতি গড়ে তোলার উপর বিশেষ গুরুত্ব প্রদান করা হয়েছে।

২৫ জানুয়ারি ১৯৭৫ জাতীয় সয়ষদেও বঙ্গবন্ধু বলেছেন, আমাদের করতে হবে, স্বয়সম্পূর্ণ হতে হবে। যে মানুষ ভিক্ষা করে যেমন ইজ্জত থাকে না, যে জাতি ভিক্ষা করে, তাদেরও তেমনি ইজ্জত থাকে না। ভিক্ষুক জাতির নেতৃত্ব করতে আমি চাই না। আমি চাই আমার দেশ স্বয়সম্পূর্ণ হোক এবং সেজন্য কঠোর পরিশ্রম করতে হবে। শৃঙ্খলা আনতে হবে এবং শৃঙ্খলা দেশের মধ্যে অক্ষুন্ন রাখতে হবে। ছাত্র-সমাজকে লেখাপড়া করতে হবে, লেখা-পড়া করে মানুষ হতে হবে, জনগণ টাকা দেয় মানুষ হওয়ার জন্য। সেই মানুষ হতে হবে।    
                        
উৎপন্নশীল কার্যক্রমকে কোনভাবেই বাধ্যগ্রস্ত না করে বৈষম্যহীন সমাজব্যবস্থা গড়ে তোলার লক্ষকে প্রাধান্য দেয়া হয়েছে কৌশলপত্রে। যুদ্ধবিদ্ধস্ত ভঙ্গুর অর্থনীতিকে এশটি শক্তিশালী ভিত্তির উপর দাঁড় করানোর মানসে কৃষি খাতের ভূমি সংস্কার এবং সমবয় ভিত্তিক কৃষি ব্যবস্থা গড়ে তোলার মাধ্যমে ক্ষুদ্র এবং ভূমিহীন কৃষকের স্বার্থ সংরক্ষণের বিষয়টিকে বিশেষ গুরুত্ব প্রদান করা হয়েছে। শিল্পখাতে বৃহৎ শিল্প প্রতিষ্ঠানকে রাষ্ট্রীয় মালিকানায় রেখে ক্ষুদ্র এবং কুটির শিল্পকে ব্যক্তি মালিকানায় প্রতিষ্ঠা করার নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে। আন্তর্জাতিক বানিজ্যের ক্ষেত্রে রাষ্ট্রীয় এবং সমব্য় মালিকানাধীন এন্টারপ্রইজ সমুহকে বিশেষ প্রাধান্য দিয়ে ক্ষুদ্র ব্যবসাকে ব্যক্তি মালিানাধীনে পরিচালনা করার উপর গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। 

সাধারণ জনগনের নিকট কিছু নিত্য প্রয়োজনীয় ভোগ্যপণ্য সরবরাহ নিশ্চিত করার লক্ষে  কনজুমার সাপ্লাই করপোরেশন গঠনের বিধান রাখা হয়েছে। শুধু তাই নয় সরকারের উন্নয়ন কার্যক্রমে ক্যাডারভিত্তিক  প্রশাসনের সাথে রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের পারস্পারিক সর্ম্পকের ধরন কি হবে সে বিষয়ে স্বচ্চ ধারণার অবতারণা করা হয়েছে পরিকল্পিত উন্নয়ন ভাবনায়। নির্দেশনা দেয়া হয়েছে রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব মাঠ পর্যায়ে উন্নয়ন কার্যক্রম পরিচালনার ক্ষেত্রে বিদ্যমান সমস্যা সমূহ চিহ্নিত কওে স্থানীয় পর্যায়ে বিদ্যমান প্রতিষ্ঠানিক এবং প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের সাথে সমন্বয় করে উন্নয়ন কার্যক্রম পরিচালনা করবে। 

উপরক্ত জাতির পিতার উন্নয়ন ভাবনা প্রথম পঞ্চবার্ষিকী পরিকলপনায় উদ্দেশ্যসমূহ নিম্নে বর্ণিত ভাবে বিধৃত হয়েছে:
১. পরিকল্পনা ভাবনায় প্রথম উদ্দেশ্য ছিল দরিদ্রতা হ্রাস করা। সেই লক্ষে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টির মাধ্যমে বেকারত্ব এবং অর্ধবেকারত্ব দুর করার কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা। এছাড়াও জাতীয় আয়ের প্রবৃদ্ধি গতিশীল করা এবং সমতা ভিত্তিক বণ্টনের জন্য কার্যকর রাজস্ব নীতি এবং মূলনীতি প্রবর্তনের কথা বলা হয়েছে। 

২. চলমান পুনর্গঠনের কাজ সম্পাদনের মাধ্যমে অর্থনীতির প্রধান খাতসমূহের বিশেষ করে কৃষি এবং শিল্পের উৎপাদন বাড়াতে হবে।

৩. জনসংখ্যা বৃদ্ধির হারের চেয়ে (শতকরা ৩) অধিক হাওে জিডিপির প্রবৃদ্ধি (শতকর ৫.৫) বাড়াতে হবে।বিশেষ করে সেই সময়কার শ্রমশক্তির প্রাপ্যতা অনুযায়ী প্রায় ৪১ লক্ষ জনশক্তির কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করা হবে, সেই সাথে অর্ধ-বেকারত্ব দুর করা হবে। মানব সম্পদ এবং আর্থিক সম্পদ এর সুষ্ঠু ব্যবহার করে উন্নয়নমুখী স্থানীয় প্রশাসন ব্যবস্থা গড়ে তোলার মাধ্যমে স্থানীয় পর্যায়ে প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো শক্তিশালী করা হবে।                                                                                 

৪. জনসাধারণের ভোগের চাহিদা পুরণের জন্য নিত্যপ্রয়োজনীয় ভোগ্যপণ্যে উৎপাদন বাড়াতে হবে। বিশেষ করে খাদ্য, বস্ত্র, ভোজ্যতেল, কেরোসিন (জ্বালানি) এবং চিনির উৎপাদন বাড়াতে হবে। দরিদ্র মানুষের কর্মসংস্থানের এবংআয় বৃদ্ধি তখনই অর্তবহ হবে যদি নিত্যপ্রয়োজনীয় ভোগ্যপণ্য বাজারে ন্যায্যমূল্যে এবং স্থিতিশীল মূল্যে সরবরাহ করা যায়।

৫. নিত্যপণ্যের সাধারণ মূল্যস্তরের বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে নিত্যপণের মূল্য জনসাধারণের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখা। 

৬. মাথাপিছু আয়ের বাৎসরিক প্রবৃদ্ধি ২.৫ শতাংশে স্থিতিশীল রাখা। বন্টননীতি এমনভাবে তৈরী করা হবে যাতে করে দরিদ্র শ্রেণীর মানুষের মাথাপিছু আয়ের এবংভোগের পরিমান বৃদ্ধি পায় এবং অপেক্ষাকৃত ধনিক শ্রেণীর মাথাপিছু আয় ও ভোগের পরিমান যাতে যুক্তিসংগতভাবে কমে আসে।

৭. নগর এবং পল্লি এলাকায় আতœকর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টির মাধ্যমে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের বিস্তার ঘটানো।সামাজিক ও রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গীর পরিবর্তনের সাথে খাপ খাইয়ে অর্থীতির প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোর পরিবর্তন ঘটানো হবে।

৮. আভ্যন্তরীন সম্পদ সংগ্রহের মাধ্যমে আত্মনির্ভরশীলতা বৃদ্ধির মাধ্যমে বৈদেশিক সাহায্যের উপর নির্ভরশীলতা কমাতে হবে বিশেষ করে সার, সিমেন্ট, স্টিলের মতো গুরুত্বপূর্ণ দ্রব্যাদির অনিশ্চিত সরবরাহ নিয়ন্ত্রণ করার লক্ষে আমদানি নির্ভশীলতা কমিয়ে আনতে হবে।

৯. কৃষি খাতের প্রাতিষ্ঠানিক এবং প্রযুক্তিগত ভিত্তি রূপান্তরের মাধ্যমে খাদ্যশস্যে স্বনির্ভরতা আনয়ন, শহরে শ্রমশক্তির প্রবাহ নিরুৎসাহিত করার লক্ষ্যে কৃষি খাতে কর্মসংস্থানের সুযোগ সম্প্রসারিত করা হবে।

১০. প্রথাগতভাবে অবহেলিত শিক্ষা ও স্বাস্থ্য ব্যবস্থার উন্নয়ন, গ্রামীন আবাসন সুবিধা সম্প্রসারণের মাধ্যমে কর্মদক্ষতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে উন্নয়ন খাতে ব্যয় ক্রমাগতভাবে বৃদ্ধি করা হয়।

১১. সার্বিক উন্নয়ন স্থানগত বৈষম্য দুরীকরণ করে গৃহীত প্রকল্প ও কর্মসূচিসমূহ এমন ভাবে গ্রহণ করা হবে যাতে করে অর্থনৈতিক দক্ষতা নিশ্চিত করণের মাধ্যমে সারাদেশের মানুষের আয় এবং কর্মসংস্থানের মধ্যে ভারসাম্য বজায় থাকে। উপরন্ত যে সকল এলাকায় অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড অধিকতর গতিশীল সে সকল এলাকায় শ্রমের গতিশীলতা বজায় রাখা হবে।

জাতির পিতার উন্নয়ন ভাবনায় সাধারন উদ্দেশ্যের  পাশাপাশির খাত ভিত্তিক উন্নয়ন রুপরেখাও প্রণয়ন করা হয়েছে। বিশেষ করে, কৃষি ক্ষেত্রে উন্নয়ন দর্শন ছিল স্থিতিশীল প্রবৃদ্ধি অর্জনের লক্ষ্যে প্রথাগত কৃষিকে ঢেলে সাজিয়ে আধুনিক কৃষিতে রুপান্তর করা। ফলশ্রুতে কৃষি খাতে আয় বৃদ্ধি পাবে, ক্রমবর্ধমান গ্রামীন জনগোষ্ঠী ও কর্মসংস্থান বৃদ্ধি পাবে। গ্রামীন দরিদ্রতা হ্রাসের মাধ্যমে আয় বন্টনে সমতা আনয়ন ত্বরান্বিত হবে। দেশিয় কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধির মাধ্যমে রপ্তানি আয় বৃদ্ধি পাবে ফলশ্রুতে বৈদেশিক মুদ্রা মজুদ পরিস্থিতির উন্নতি হবে এবং শস্য, মাছ প্রাণিজাত দ্রব্য, ফল, সবজি উৎপাদন বৃদ্ধির মাধ্যমে পুষ্টি পরিস্থিতির উন্নতি ঘটানো হবে।

শিল্প খাতের উন্নয়নে পরিকল্পিত বিনিয়োগের উপর গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। বিশেষ করে খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, চিকিৎসা সেবা, শিক্ষা, পরিবহন এবং অন্যান্য মৌলিক চাহিদা পুরণকল্পে বিনিয়োগ পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে।

এ পরিকল্পনার মাধ্যে রয়েছে:

১. গার, পাওয়ার পাম্প, টিউবয়েল, পেস্টিসাইট, পাওয়ার টিলার ইত্যাদির সরবরাহ বৃদ্ধি করা।

২. দেশীয় সম্পদ বিশেষ করে পাট, আখ, তামাক, মৎস্য, চামড়া, কাঠ, গ্যাস ক্লে, চুনাপাথর, ফল, সব্জি, মৎস্য এবং প্রাণিজাত খাবার ইত্যাদির ব্যবহার বৃদ্ধি করা।

৩. পরিবহন, মেশিনারী ইত্যাদি খাতের জন্য উপকরণ সরবরাহের লক্ষ্যে ক্রমান্বয়ে মূলধনী দ্রব্যেও জন্য শিল্প কারখানা তৈরিতে উৎসাহ প্রদান করা। 

৪. গবেষণার মাধ্যমে দেশীয় প্রযুক্তির আধুনিকায়ন করা।

৫. ব্যক্তিখাতে বিনিয়োগ ত্বরান্বিত করার লক্ষ্যে ক্ষুদ্র শিল্প, কুটির শিল্প এবং গ্রামীন শিল্প প্রতিষ্ঠাকে উৎসাহিত করা।

৬. অর্থনৈতিক স্বয়ম্ভরতা অর্জনের লক্ষ্যে রপ্তানীমুখী এবং আমদানী বিকল্প শিল্প কারখানা তৈরিতে উৎসাহিত করা। 

৭. আয় এবং কর্মসংস্থান বৈষম্য দুরীকরনের লক্ষে ভৌগলিক ভারসাম্য বজায় রেখে শিল্প কারখানা তৈরি করা।

বিদ্যুৎ খাতের উন্নয়নে নানা মুখী পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছিল জাতির পিতার শাসনামলে। বিশেষ কওে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বিদ্যুৎ সরবরাহের ঘাটতি কমিয়ে আনা, বিদ্যুৎ উৎপাদন এবং বন্টনের মধ্যে ব্যবধান কমিয়ে আনা, অর্থনীতির উৎপাদনশীল খাতে বিদ্যুৎ সরবরাহ বুদ্ধিও মাধ্যেমে স্থিতিশীল অর্থনীতিক প্রবৃদ্ধি নিশ্চিত করা, পল্লী বিদ্যুৎ ব্যবস্থা প্রবর্তনের মাধ্যেমে সেচ এবং কুটির শিল্পের জন্য প্রয়োজনীয় বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করা, শিল্প খাতের উন্নয়ননে বিদ্যুৎ সরবরাহের গুণগতমান নিশ্চিত করার জন্য অর্থনীতির চাকা সচল রাখার সুদুপ্রসারি পরিকল্পনা প্রণয়ন করা হয়েছিল বঙ্গবন্ধুর রাষ্ট্র পরিচালনায় দর্শনে।

প্রাকুতিক সম্পদেও সুষ্ঠু ব্যবহারের উপর জাতির পিতা গুরুত্বারোপ করেছিলেন, বিশেষ করে জামালগঞ্জের কয়লা, জামালগঞ্জে-জয়পুরহাট. টেকেরঘাট ও সেন্টমার্টিন আইল্যান্ডের চুনাপাথর, বিজয়পুরের হোয়াইট ক্লে, শাহজিবাজার-নয়াপারায় গ্লাস স্যান্ড, রানিপুকুরের হার্ড রকস, কক্সবাজারের বিচ স্যান্ড ব্যবহারের সুদুপ্রসারি পরিকল্পনা নিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু। এছাড়াও তেল ও প্রাকৃতিক গ্যাস আহরণের উপরও বিশেষ পরিকল্পনা নিয়েছিলেন তিনি। পরিবহন খাতের উন্নয়ন, নগর এবয় পল্লী এলাকায় বসবাসরত নাগরিকদের জন্য আবাসন ব্যবস্থা নিশ্চিত করণ, স্যাটেলাইটসহ টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নের মাধ্যমে তারহীন যোগাযোগ ব্যবস্থা সম্প্রসারণ, সকল নাগরিকের উপযোগী ব্যবস্থা গড়ে তোলা, বিশেষ কওে গ্রাম এবং শহরের মাঝে চিকিৎসা ব্যবস্থায় ভারসাম্য পূর্ণ ব্যবস্থা আনয়নের সুদুপ্রসারিত লক্ষ্যে স্থিও করা হয়েছে জাতির পিতার উন্নয়ন ভাবনায়। সুদক্ষ শিক্ষা গড়ে তোলার লক্ষ্যে প্রাথমিক শিক্ষা, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা, কারিগরিক শিক্ষা, বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে শিক্ষা ব্যবস্থাকে আধুনিকায়নের উপর গুরুত্বারোপ করেছিলেন। 

শিক্ষা ব্যবস্থা আধুনিকায়নে নিম্নেবর্ণিত উদ্দেশ্যসমূহ বিবেচনায় নেয়া হয়েছিল বঙ্গবন্ধুর উন্নয়ন ভাবনায়:
১. জাতির সুনিদিষ্ঠ প্রয়োজনীয়তার ভিত্তিতে শিক্ষা ব্যভস্থা গড়ে তোলা হবে, বিশেষ কওে ভবিষ্যত জীববনযাত্রাকে বিবেচনায় নিয়ে উৎপাদনমীল জনশক্তি তৈরি করাই হবে মূল লক্ষ্য।

২. আনুষ্ঠানিক কিংবা অ-আনুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যবস্থার মাধ্যমে দেশের উন্নয়নে অবদান রাখতে সক্ষম দক্ষ মানবসম্পদ তৈরী করা।

৩. ঊয়স নির্বিশেষে দেশের সকল নাগরিকের নূন্যতম শিক্ষার অধিকার নিশ্চিত করা।

৪. গ্রামেই হোক আর নগরেই হোক, সরকারিই হোক কিংবা বেসরকারি হোক শিক্ষার সকল প্রতিষ্ঠানে নূন্যতম সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করা।

৫. নাগরিকদের সাংস্কৃতিক মূল্যরোধকে বিবেচনায় নিয়ে একমুখী শিক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তোলা।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুমেখ মুজিবুর রহমান তার উন্নয়ন ভাবনায় অর্থনীতির প্রতিটি খাতকে যথাযথ গুরুত্ব সহকাওে বিবেচনায় নিয়েছেন, উন্নয়ন পরিকল্পনা প্রণয়ন করেছেন, শুধুমাত্র উন্নয়ন পরিকল্পনা প্রণয়ন করেই ক্ষাত হননি তিনি মানুষকে প্রতিনিয়ত উদ্ধুদ্ধ করেছেন প্রণীত পরিকল্পনার সুদক্ষ বাস্তবায়নের মাধ্যেমে রাষ্ট্রেীয় উন্নয়নে অবদান রাখার জন্য।

১৫ জানুয়ারি ১৯৭৫ প্রথম পুলিশ সপ্তাহের ভাষণে বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন ‘জীবন অত্যন্ত ক্ষণস্থায়ী-এই কথা মনে রাখতে হবে। আমি বা আপনারা সবাই মৃত্যুও পর সামান্য কয়েক গজ কাপড় ছাড়া সঙ্গে আর কিছুই নিয়ে যাবে না। তবে কেন আপনারা মানুষকে শোষণ করবেন, মানুষের উপর অত্যাচার করবেন? গরিবের উপর অত্যাচার করলে আল্লাহর কাছে তার জবাব দিতে হবে। তাই, শুধু আপনাদেও নয়, সমস্ত সরকারি কর্মচারিকেই আসি অনুরোধ করি, যাদেও অর্থে আমাদেও সংসার চলে তাদেও সেবা করুন। যাদের জন্য, যাদের অর্থে আজকে আমরা চলছি, তাদেও যাতে কষ্ট না হয়, তার দিকে খেয়াল রাখন।’

বিজয় দিবস উপলক্ষে ১৫ ডিসেম্বর ১৯৭৪ এর ভাষণে বঙ্গবন্ধু তার উন্নয়ন ভাবনা তুলে ধরেছিলেন এভাবে ‘মদ্রাস্ফীতি তথা বিশ্বে অর্থনৈতিক সংকটের চক্রে অন্যান্য উন্নয়নকামী দেশের ন্যায় বাংলাদেশের রফতানি পণ্য উপযুক্ত মূল্য পাচ্ছে না। তাই দেশ-বিদেশের মুদ্রাস্ফীতির মোকাবেলায় উৎপাদন বুদ্ধি, মিতব্যয়িতা ও মুদ্রা সরবরাহ কমিয়ে আনা, ওয়েজ আর্নার স্কিমে পণ্য আমদানি তথা পণ্য সরবরাহ বুদ্ধি ও সুষ্ঠু বিলি বন্টনসহ বিভিন্ন ব্যবস্থা গ্রহণের চেষ্টা আমরা করছি। খাদ্য আমদানি ব্যয় হ্রাসের জন্যও ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। ঘাটতি পূরণের জন্য অভ্যন্তরীণ খাদ্য সংগ্রহনের নতি আমরা গস্খহণ করেছি-একথা আপনারা নিশ্চিয়ই জানেন্ দেশের খাদ্য দেশে মজুত কওে দুঃসময়ে মূল্যে সরবরাহই এর প্রধান উদ্ধেশ্য। কুষক ভায়েরা এ ব্যাপারে যাতে সরকার নির্ধারিত মূল্য পান এবং কোন হয়রানির সম্মুখীন তাদের না হতে হয় তার প্রতি নজর রাখা হচ্ছে। প্রাকৃতিক গ্যাসের সাহায্যে একাধিক ফার্টিলাইজার ফ্যাক্টরি স্থাপনের উদ্দেশ্যে বিভিন্ন দেশের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা আমরা চালিয়ে যাচ্ছি। এই কারখানাসমূহে যে সার উৎপাদন হবে, তা দিয়ে শুধু দেশেই খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে না, আমরা তা বিদেশেও রফতানি করতে পারবো। আমাদেও দেশেই উপকূলীয় এলাকায় তেলের সন্ধান লাভের উজ্জ্বল সম্ভবনা রয়েছে। আমরা সকলে মিলে কঠোর পরিশ্রম কওে কলে-কারখান, ক্ষেত্রে-খামারে উৎপাদন বৃদ্ধি করতে পারি, তবে ইনশাল্লাহ আমাদেও ভাবী বংশধরদেও শোষণমুক্ত সুখী ও সমৃদ্ধিশালী এক ভবিষ্যত আমরা উপহার দিতে পারবো।’

জাতির পিতা সর্বদাই বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তি নিয়ে ভাবতেন। তার ভাবনায় ছিল সোনার বাংলা বির্নিমাণ, ভাবনায় ছিল উন্নত সমৃদ্ধ বাংলাদেশ। সেই ভাবনা থেকেই দক্ষ মানব সম্পদ তৈরিতে গুনুত্ব দিয়েছিলেন তিনি যা প্রথম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় বিস্তারিতভাবে তুলে ধরা হয়েছে। দক্ষ মানবসম্পাদ উন্নয়নেই যাতে সাধারণ মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনে অবদান রাখতে পারে সেই বিষয়েও তিনি নির্দেশনা দিয়েছিলেন।

২৫ জানুয়ারি ১৯৭৫ জাতীয় সংসদে বঙ্গবন্ধ বলেছেন’ “স্পীকার সাহেব, আমরা আমাদেও কতটুকু কর্তব্য পালন করেছি-আজ আমরা যারা শিক্কিু, এম.এ.পাস করেছি. ডব.এ পাস করেছি? স্পীকার সাহেব, আপনি জানেন, এই দুখী বাংলার গ্রামের জনসাধারণ আমাদেও এই অর্থ দিয়েছে লেখাপড়া শেখার জন্য। আপনি যে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে লেখাপড়া পাস করেছেন, আমি যে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে পাস করেছি- আজ যারা লেখাপড়া শিখেছে, তাদেও লেখাপড়ার খরচের অংশ দেয় কে? আমার বাপ-দাদা নয়, দেয় বাংলার দুখী জনগণ। কী আমি তাদের ফেরত দিয়েছি? তাদেও শুধা করেছিঠ কতটুকু? তাদের প্রতি কতটুকু কর্তব্যপালন করেছি? এাঁ আজকের আমাদেও আত্মসমালোচনার প্রয়োজন”।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব উন্নয়ন পরিকল্পনা যেমন গস্খহণ করেছিলেন তেমনি সেই পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য নানামুখি উদ্যোগ গ্রহণ করেছিলেন উপরন্ত জনসাধারণকে উদ্ধুদ্ধ করেছিলেন উন্নয়ন কার্যক্রমে সম্পৃক্ত হওয়ার জন্য, সোনার বাংলা বির্নিমাণে সক্রিয় অংশীদার হওয়ার জন্য। তারই ধারাবাহিকার অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি আয়নের বাস্তবতার তিনি অর্থনৈতিক কাঠামো একটি শক্তিশালী ভিত্তির উপর দাঁড় করানো নানামুখী পদক্ষেপ গস্খহণ করেছিলেন। সফলতাও পেয়েছিলেন তিনি। সেই সফলতার কিছু অংশ সারণী ১ এ বর্ণিত হলো-

সারণী ১. অর্থনৈতিক চলকের গতি-প্রকৃতি (১৯৭১-১৯৭৫) অর্থনৈতিক চালক ১৯৭১, ১৯৭২, ১৯৭৩, ১৯৭৪, ১৯৭৫ মাথাপিছু জিডিপির প্রবৃদ্ধি -৭.৩৫, -১৫.৩৯, ৭.৮৩, -৫.৯০। জিডিপির প্রবৃদ্ধি-৫.৪৫, -১৩.৯৭, ৩.৩৩, ৯.৫৯, ৪.০৮। জনসংখ্যার বৃদ্ধিও হার(%)২.০০, ১.৬৬, ১.৫১, ১.৬২, ১.৯১। ম্যানুফ্যকচারিং এ মূল্য সংযোগ (শতকরা বৃদ্ধি) -১৬.২৮, -৪৫.৫৪, ৬৪.৯৬, ৪২.৫৯, -১০.৯২। ম্যনুফ্যকঢ়ারিং এ মূল্য মংযোজন (জিডিপির %) ৫.৪৯, ৩.৯৮, ৮.৫২, ৯.২৫, ৭.০৪। শিল্পের মূল্য সংযোজন (জিডিপির) ৭.৬৮-৬.০৬, ১২.১১, ১৩.৩৭, ১১.৬১। কৃষি জমির শতকরা হার ৭৪.৪৮, ৭৬.৭৫, ৭৬.৭৪, ৭৬.৮৫। সূত্র: বিশ্বে ব্যাংক ওপেন এক্সেসড ডাটাবেজ ২০২০।

সারণী ১ থেকে আমরা দেখতে পাই মাথাপিছু জিডিপির প্রবৃদ্ধি ১৯৭১ সালে যেখানে ছিল ঋনাত্মক ৭.৩৫ সেখানে যুদ্ধ বিধস্ত বাংলাদেশে ১৯৭২ সালে জিডিপির প্রবৃদ্ধি আরো হ্রাস পেয়ে হয়েছে ঋনাত্মক ১৫.৩৯। পরবর্তীতে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কর্তৃক উন্নয়ন পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের ফলে ১৯৭৩ সালে জিডিপির প্রবৃদ্ধি ঋনাত্মক ১৫৮.৩৯ থেকে বেড়ে হয়েছে ধনাত্মক ১.৭৩। 

জাতির পিতা উন্নয়ন ভাবনাকে ধারণ করেই তারই রক্ত এবং আদর্শের উত্তরসূরি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা বাংলাদেশকে জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নিয়ে যাচ্ছে এক অনন্য উচ্চতায়, বাংলাদেশ আজ বিশ্বের অনেক রাষ্ট্রের জন্য অনুকরণীয় হিসেবে আবির্ভুত হয়েছে, বাংলাদেশকে আজ বিশ্ববাসী সম্মান করে, বাংলাদেশ আজ স্বপ্ন দেখে চতুর্থ শিল্প বিপ্লব বিশ্বকে নেতৃত্ব দেয়ার। মুজিব শর্তবর্ষ এবং স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্ত্রীর এই ঐতিহাসিক মাহেন্দ্রক্ষণে আমরা বলতে পারি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ নিশ্টয়ই ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নয়ন সমৃদ্ধ বাংলাদেশ হিসেবে বিশ্বের বুকে মাথা উচুঁ করে দাড়াঁবে, জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলা পতাকা আত্মমর্যাদায় বলীয়ান হয়ে উড়বে বিশ্বের বুকে।

ভাইস-চ্যান্সেলর, হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, দিনাজপুর।

আমারসংবাদ/কেএস 

Link copied!