Amar Sangbad
ঢাকা শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪,

শোভন-রাব্বানীর জঞ্জাল দূর করতে জয়-লেখকের সময় পার

রফিকুল ইসলাম

মে ১১, ২০২০, ০৮:৩৪ এএম


শোভন-রাব্বানীর জঞ্জাল দূর করতে জয়-লেখকের সময় পার

# নেত্রী চাইলে যেকোনো মুহূর্তেই সম্মেলন- আল নাহিয়ান খান জয়
# বিতর্কমুক্ত করায় আমাদের প্রধান লক্ষ্য- লেখক ভট্টাচার্য

বাংলাদেশ ছাত্রলীগের বর্তমান কমিটির মেয়াদ পূর্ন হচ্ছে আজ। নানা নাটকীয়তার মধ্য দিয়েই অতিবাহিত নেতৃত্ব ব্যক্তিগত কর্মের দায়ে পদ হারিয়েছেন দুই শীর্ষ নেতা। এক সঙ্গে দুই নেতার পদ হারানো অতীত ছাত্রলীগের ইতিহাসে নেই বললেই চলে। এরপর সাংগঠনিক নেত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে নতুন নেতৃত্ব আসে সংগঠনে।

শীর্ষ নেতৃত্বে টাল-মাতালের কারণে বর্তমান মেয়াদে গতি পায়নি তৃনমূল। অনেক স্থানে মেয়াদউত্তীর্ন কমিটি দিয়ে চলছে ঢিলেঢালা কার্যক্রম।

তথ্যমতে, ২০১৮ সালের আজকের এই দিনে রাজধানীর ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে অনুষ্ঠিত হয় দেশের বৃহত্তম প্রাচীন ছাত্র সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের ২৯তম জাতীয় সম্মেলন। ওই সম্মেলনের দ্বিতীয় অধিবেশনের পর কমিটি ঘোষণার নিয়ম থাকলেও শীর্ষ পদের নেতৃত্ব বাছাইয়ে সময় নেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদপ্রত্যাশী ৩২৩ জনের জীবনবৃত্তান্ত বিভিন্ন মাধ্যমে যাচাই-বাছাইয়ের পর এসব নেতার অনেককেই গণভবনে ডাকেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

এর দুই মাস পর রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভনকে সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানীর নাম ঘোষণা করেন ক্ষমতাসীন দলটি। নতুন সভাপতি-সম্পাদকের দায়িত্বগ্রহণের ১০ মাস পর ৩০১ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করেন সাবেক সভাপতি সাধারণ সম্পাদক শোভন-রাব্বানী। এর পর বিতর্কিত কর্মান্ডের সাথে যুক্ত থাকায় নিজ পদ থেকে সরে দাঁড়ান শোভন রাব্বানী।

ছাত্রলীগ সূত্রে, রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন ও গোলাম রাব্বানী ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সভাপতি-সম্পাদকের দায়িত্ব পাওয়ার পর থেকে তাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন বিতর্কিত কর্মকান্ডের সাথে যুক্ত থাকার অভিযোগ উঠতে থাকে।

বিশেষ করে, পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করার পর সংগঠনটিতে ব্যাপক বিশৃঙ্খলা তৈরি হয়। এসয়ম সাবেক এই দুই নেতার বিরুদ্ধে সংগঠনে সমন্বয়হীনতা, পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে বিতর্কিতদের স্থান দেওয়া, মধুর ক্যান্টিনে সময় কম দেওয়া, দপ্তর সেল, পদবঞ্চিতদের মারধর করা, দুর্নীতি, চাঁদাবাজীসহ বিভিন্ন বিতর্কিত কর্মকান্ডের সাথে যুক্ত থাকার অভিযোগ ওঠে।

শুধু তাই নয়, ছাত্রলীগের নেতৃত্বের বিরুদ্ধে পোস্টার ছাপানোর ধরন নিয়েও অভিযোগ রয়েছে। গত বছর আগস্টে বঙ্গবন্ধুর শাহাদতবার্ষিকী উপলক্ষে কুরআন খতম ও দোয়া মাহফিলের আয়োজনের পোস্টারটিতে কোথাও জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি ব্যবহার করা হয়নি। যা নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিষয়টি ব্যাপক সমালোচিত হয়।

এছাড়াও বিভিন্ন অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত অতিথি হিসেবে আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতা বা মন্ত্রীরা উপস্থিত হয়ে গেলেও তাদের পরে উপস্থিতি অসন্তোষের মাত্রা বাড়িয়ে দেন। যা নিয়ে গণভবনে শোভন-রাব্বানীর নেতৃত্ব নিয়ে আলোচনা ও ক্ষোভ প্রকাশ করে আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা।

এরপর গত বছরের সেপ্টেম্বরে রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন ও সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানীকে সংগঠনের নেতৃত্ব থেকে সরিয়ে দেন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। একই সঙ্গে সংগঠনটির ১ নম্বর সহসভাপতি আল নাহিয়ান খান জয়কে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও ১ নম্বর যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্যকে ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব দেওয়া হয়। এর পরপরই শোভন ও রাব্বানী পদত্যাগ করেন।

এরপর চলতি বছরে রাজধানীর ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যাগে ছাত্রলীগের ৭২তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানের আয়োজন করা আল নাহিয়ান খান জয় ও লখক ভট্টাচার্য। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

সংগঠনের দায়িত্ব পাওয়ার সাড়ে তিন মাসের মাথায় ছাত্রলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় ও ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্যকে ভারমুক্ত করনে বঙ্গবন্ধুকন্যা। সেসময় তিনি বলেন, আজ ছাত্রলীগকে ভারমুক্ত করে দিলাম।

এর আগে সংগঠনের দায়িত্ব পাওয়ার পর সারাদেশে সংগঠনের প্রতিটি ইউনিটিকে এগিয়ে নিতে নানা উদ্যোগ গ্রহন করেন জয়-লেখক। বহিষ্কার করেন নানা অভিযোগে অভিযুক্ত ও গঠনতন্ত্রবহির্ভূত কর্মকান্ডে জড়িত সহসভাপতি তানজিল ভূঁইয়া, আরেফিন সিদ্দিক, আতিকুর রহমান খান, বরকত হোসেন হাওলাদার, শাহরিয়ার কবির, সাদিক খান, সোহানী হাসান, মুনমুন নাহার, আবু সাঈদ, রুহুল আমিন, রাকিব উদ্দিন, সোহেল রানা, ইসমাইল হোসেন, দপ্তর সম্পাদক আহসান হাবীব, ধর্মবিষয়ক সম্পাদক তাজ উদ্দীন, উপদপ্তর সম্পাদক মমিন শাহরিয়ার ও মাহমুদ আবদুল্লাহ বিন মুন্সী, সংস্কৃতিবিষয়ক উপসম্পাদক বি এম লিপি আক্তার ও আফরিন লাবণী, সহসম্পাদক সামিয়া সরকার ও রনিকে।

এছাড়া যে কোনো সময় বিতর্কিত কর্মকান্ডের অভিযোগে বহিষ্কার করেন বেশকজন ছাত্র নেতাকে।

সূত্র বলছে, পূর্ণ দায়িত্ব পাওয়ার পর নতুন কোনো জেলা কমিটির সম্মেলন করতে না পারলেও সাবেক সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন ও সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানীর সম্মেলন করে রেখে যাওয়া বেশকিছু জেলা, মহানগর ও উপজেলার পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করেছেন জয়-লেখক।

যোগাযোগ বাড়িয়ে দিয়েছেন জেলা, মহানগর, উপজেলা সহ প্রতিটি ইউনিটির নেতাকর্মীদের সাথে। সংগঠনের যে কোনো শাখার নেতাকর্মীদের মাঝে সমস্যা দেখা দিলেই করে দিচ্ছেন তাৎখনিক সমাধান।

এছাড়াও দেশ ও দেশের মানুষের স্বার্থে ঐক্যবদ্ধ করেছেন ছাত্রলীগের প্রতিটি ইউনিটিকে। জয়-লেখকের এমন কর্মকাণ্ডের জন্য প্রসংশা করেছেন আওয়ামী লীগের সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

দায়িত্বগ্রহণের অল্প সময়ে সংগঠনের অধিক কাজ সম্পন্ন করলেও নতুন এই সভাপতি-সম্পাদক ঘোষণা করতে পারেনি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, ইডেন মহিলা কলেজ, কবি নজরুল সরকারি কলেজ শাখা ছাত্রলীগের নতুন কমিটি।

গত বছরের ২০, ২৫ এবং ২৭ জুলাই পর্যাক্রমে এই তিনটি শাখার সম্মেলন করেন শোভন-রাব্বানী। তবে তাদের দাবি, ক্লিন ইমেজ ও বিতর্কিতমুক্ত নেতাদের দায়িত্ব দেয়ার জন্য যাচাই-বাছাই প্রক্রিয়াতে রয়েছে পদপ্রত্যাশীরা। তাদের বিষয়ে নেয়া হচ্ছে খোজ-খবর।

এ বিষয়ে ছাত্রলীগের সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় বলেন, কোনো বিতর্কিত নেতাদের স্থান ছাত্রলীগে হবে না। সেজন্য আমরা কাজ করে যাচ্ছি।

তিনি বলেন, করোনায় এই পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে এই সকল শাখার কমিটি ঘোষণা করা হবে।

আল নাহিয়ান খান জয় আমার সংবাদকে আরও বলেন, আওয়ামী লীগের সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যে বিশ্বাস ও আস্থা রেখে আমাদের দায়িত্ব দিয়েছেন। সেই ভাবেই আমরা কাজ করছি।

এরই মধ্যে সংগঠনের বেশকজন নেতাকে বহিষ্কার করেছি। তিনি আরও বলেন, আমাদের অভিবাবক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চাইলে যে কোনো মুহুর্তে সম্মেলনের জন্য প্রস্তুত আছি।

ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য আমার সংবাদকে বলেন, আওয়ামী লীগের সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাদের যখন সংগঠনের দায়িত্ব দিয়েছিলেন, তখন ছাত্রলীগ নিয়ে অনেক বিতর্ক ছিলো। সেই বিতর্ক থেকে ছাত্রলীগকে মুক্ত করার জন্যই আমরা কাজ করে যাচ্ছি। এই কাজের ধারা আগামীতে অব্যহত থাকবে।

তিনি আরও বলেন, করোনাভাইরাসের কারণে আমাদের সাংগঠনিক কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। বর্তমানের ছাত্রলীগের প্রতিটি ইউনিটির নেতাকর্মীরা দেশ ও দেশের মানুষের জন্য কাজ করছেন।

করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলেই সম্মেলন শেষ হওয়া শাখা গুলোর কমিটি ঘোষণা করা হবে।

আমারসংবাদ/জেডআই