Amar Sangbad
ঢাকা শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪,

না ফেরার দেশে মোহাম্মদ নাসিম

নিজস্ব প্রতিবেদক

জুন ১৩, ২০২০, ০৫:৩০ এএম


না ফেরার দেশে মোহাম্মদ নাসিম

না ফেরার দেশে চলে গেলেন আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য, কেন্দ্রীয় ১৪ দলের মুখপাত্র ও সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম।

চিকিৎসাধীন অবস্থায় শনিবার (১৩ জুন) সকালে তার মৃত্যু হয়েছে।

নাসিমের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন নাসিমের ছেলে তানভীর শাকিল জয়। এছাড়া আওয়ামী লীগের উপ-দপ্তর সম্পাদক সায়েম খানও এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য নাসিমের বয়স হয়েছিল ৭২ বছর। তিনি স্ত্রী ও তিন সন্তান রেখে গেছেন।

বাংলাদেশ স্পেশালাইজড হাসপাতালের সিইও আল ইমরান নাসিমের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করে গণমাধ্যমকে বলেন, সকাল ১১টা ১০ মিনিতে তিনি (নাসিম) শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছেন।”

গত ১ জুন জ্বর-কাশিসহ করোনাভাইরাসের লক্ষণ নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন মোহাম্মদ নাসিম। রাতে করোনা পরীক্ষার ফল পজিটিভ আসে।

গেলো শুক্রবার ভোর সাড়ে ৫টায় মোহাম্মদ নাসিমের ব্রেন স্ট্রোক হয়। হাসপাতালের নিউরোসার্জন অধ্যাপক রাজিউল হকের নেতৃত্বে কয়েক ঘণ্টায় তার অস্ত্রোপচার সফল হয়। সফল অস্ত্রোপচার হলেও তার মাথার ভেতরে বেশ কিছু রক্ত জমাট বেঁধে ছিল।

অস্ত্রোপচারের পর মোহাম্মদ নাসিম ভেন্টিলেশন সাপোর্টে ছিলেন। গত আটদিন ভেন্টিলেশন সাপোর্টে থাকার পরও তার চেতনা ফেরেনি।

এরই মধ্যে পরপর দুইবার করোনা পরীক্ষায় নেগেটিভ রেজাল্ট এলে উন্নত চিকিৎসার জন্য দেশের বাইরে নেয়ার বিষয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়য়ের পক্ষ থেকে সিঙ্গাপুরের সঙ্গে যোগাযোগও করা হয়।

তবে নাসিমের শারীরিক অবস্থা সংকটাপন্ন হওয়ায় দেশের বাইরে স্থানান্তরের ঝুঁকি নিতে চাইছেন না তার পরিবারের সদস্যরা। ফলে মেডিকেল বোর্ডের চিকিৎসকদের পরামর্শ অনুযায়ী নাসিমের চিকিৎসা চলছিল।

এদিকে তার মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ।

শোকবার্তায় প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বাবার (জাতীয় চার নেতার অন্যতম ক্যাপ্টেন এম মনসুর আলী) মতোই মোহাম্মদ নাসিম আমৃত্যু জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আর্দশকে ধারণ করে দেশ ও জাতির কল্যাণে কাজ করে গেছেন। সব ঘাত-প্রতিঘাত উপেক্ষা করে মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ ও অসাম্প্রদায়িক চেতনা প্রতিষ্ঠায় তিনি অনন্য অবদান রেখেছেন।’

শেখ হাসিনা আরও বলেন, ‘মোহাম্মদ নাসিমের মৃত্যুতে বাংলাদেশ একজন দেশপ্রেমিক ও জনমানুষের নেতাকে হারালো। আমি হারালাম একজন বিশ্বস্ত সহযোদ্ধাকে।’ প্রধানমন্ত্রী তার বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করে শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।

শোকবার্তায় রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘আমাদের মুক্তি সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধসহ দেশের সব গণতান্ত্রিক আন্দোলনে মোহাম্মদ নাসিম ছিলেন নির্ভীক যোদ্ধা। তিনি জনগণের প্রিয় নেতা ছিলেন বলেই পাঁচ বার সংসদ সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হয়েছিলেন। তার মৃত্যু বাংলাদেশর জাতীয় রাজনীতিতে এক অপূরণীয় ক্ষতি। দেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে মোহাম্মদ নাসিমের নাম চির ভাস্বর হয়ে থাকবেন।’

তিনি আরও বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর অন্যতম ঘনিষ্ঠ সহচর জাতীয় চার নেতার অন্যতম ক্যাপ্টেন এম মনসুর আলীর ছেলে মোহাম্মদ নাসিম গণতন্ত্র, দেশ, দল, জনগণসহ মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিকাশে যে অবদান রেখেছেন জাতি তা চিরদিন শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করবে।’

রাষ্ট্রপতি শোক বার্তায় মোহাম্মদ নাসিমের আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন এবং তার শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।

এছাড়া নাসিমের মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা ও দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও সাবেক এলজিআরডি প্রতিমন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানকও।

উল্লেখ্য, ১৯৭৫ সালের ৩ নভেম্বর কারাগারে নিহত জাতীয় চার নেতার একজন এম মনসুর আলীর ছেলে নাসিম সংসদে পঞ্চমবারের মতো সিরাজগঞ্জের মানুষের প্রতিনিধিত্ব করছিলেন।

এবার মন্ত্রিত্ব না পেলেও দলের সভাপতিমণ্ডলীতে থাকার পাশাপাশি ১৪ দলীয় জোটের মুখপাত্রের দায়িত্ব পালন করছিলেন নাসিম।

২০১৪ সালের নির্বাচনের পর আওয়ামী লীগ সরকারের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পান তিনি। এর আগে ১৯৯৬–২০০১ সালের আওয়ামী লীগ সরকারের সময় একাধিক মন্ত্রণালয়ে দায়িত্ব পালন করেন তিনি।

আমারসংবাদ/এআই