Amar Sangbad
ঢাকা বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪,

অস্ত্র হাতে ফেসবুকে এমপি, মুহুর্তেই ভাইরাল!

বগুড়া প্রতিনিধি

অক্টোবর ১০, ২০২০, ০৫:০৮ এএম


অস্ত্র হাতে ফেসবুকে এমপি, মুহুর্তেই ভাইরাল!

বগুড়া-৭ আসনের সংসদ সদস্য রেজাউল করিম বাবলু ওরফে শওকত আলী গোলবাগী তার ফেসবুকে অস্ত্র হাতে একটি ছবি পোস্ট করেছেন। যা মুহুর্তেই ভাইরাল হয়ে যায়।

এদিকে ছবিটি ফেসবুকে আসার সঙ্গে সঙ্গে শুরু হয় আলোচনা-সমালোচনা। তবে এমপির দাবি, সাংবাদিকসহ বিভিন্ন পেশার মানুষ তার সাথে শত্রুতা করছেন, তাই নিরাপত্তার জন্য এ আগ্নেয়াস্ত্র কিনেছেন।

আরও জানা গেছে, গত কয়েকদিন ধরে অস্ত্র হাতে এমপি বাবলুর একটি ছবি ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে। যা স্থানীয় জনগণের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়। তবে শুক্রবার থেকে এমপির প্রোফাইলে ছবিটি আর নেই।

এই প্রসঙ্গে এটিএন নিউজের উত্তরাঞ্চলীয় ব্যুরো প্রধান চপল সাহা বলেন, ‘বগুড়া-৭ আসনের সংসদ সদস্য রেজাউল করিম বাবলু গতকাল তার ফেসবুকে অস্ত্রসহ ছবি পোস্ট করেন। ছবিটি আমি ডাউনলোড করে রেখেছি। একজন আইন প্রণেতা হয়ে তিনি যে কাজটি করেছেন; তা আইনের চোখে বড় অপরাধ।’

চপল সাহা বলেন, তবে ছবিটি নিয়ে সমালোচনা শুরু হলে পরে তিনি তা সরিয়ে নেন।

বগুড়া সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (মিডিয়া) সনাতন চক্রবর্তী জানান, আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স প্রদানের শর্তে স্পষ্ট উল্লেখ আছে, বিনা প্রয়োজনে অস্ত্র প্রদর্শন করা যাবে না। এমপি সাহেব অনেক আগেই আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্সের জন্য আবেদন করেন। এ ব্যাপারে পুলিশ ক্লিয়ারেন্স দেওয়া হয়েছে।

বগুড়ার পাবলিক প্রসিকিউটর আবদুল মতিন জানান, কোনো কারণ ছাড়া আগ্নেয়াস্ত্র প্রদর্শন করা যাবে না। আগ্নেয়াস্ত্র ধরে ছবি তুলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেওয়া লাইসেন্সের বরখেলাপ।

এদিকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হওয়া ছবিটি দেখে অনেকেই বিরূপ মন্তব্য করে বলেন, একজন সংসদ কখনোই তার বৈধ বা অবৈধ অস্ত্র সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে দিতে পারেন না। এটা নিয়ে মানুষের মাঝে ভীতি সৃষ্টি হয়েছে।

তাছাড়া আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স প্রদান, নবায়ন ও ব্যবহার নীতিমালা-২০১৬ এর অনুচ্ছেদ ২৫ এর (ক) তে স্পষ্ট উল্লেখ আছে, ‘কোনো ব্যক্তি তার লাইসেন্স করা অস্ত্র আত্মরক্ষার জন্য বহন বা ব্যবহার করতে পারবেন। তবে, অন্যের ভীতি বা বিরক্তির কারণ হতে পারে, এমনভাবে প্রদর্শন করতে পারবেন না। এই নির্দেশনা অমান্যকারী ব্যক্তির বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক প্রজ্ঞাপনেও বলা হয়েছে।

ফেসবুকে পিস্তল হাতে ছবি দেওয়া প্রসঙ্গে বগুড়া-৭ আসনের সংসদ সদস্য রেজাউল করিম বাবলু ওরফে শওকত আলী গোলবাগী বলেন, আসলে এমপি হওয়ার পর আমার শত্রু বেড়ে গেছে। সাংবাদিকসহ বিভিন্ন পেশার মানুষ আমার সাথে শত্রুতা করছে। করোনাকালে সাংবাদিকদের ফলমূল ও লাখ লাখ টাকা দেওয়া হয়েছে। এরপরও সিনিয়র সাংবাদিকরা আমার বিপক্ষে। সরকার থেকে এখনও বডিগার্ড দেওয়া হয়নি। তাই নিরাপত্তার জন্য ঢাকার একটি দোকান থেকে ৭৫ হাজার টাকা দিয়ে পিস্তলটি কিনেছি। কেনার সময় আমার সাথে ১৫-২০ জন ছিল। তাদের কেউ হয়ত ছবিটি তুলে ফেসবুকে শেয়ার দিয়েছে।

এদিকে তার ফেসবুক প্রোফাইলে ছবিটি দেখা যাওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ওই ছবি আমার আইডিতে ছিল না।

প্রসঙ্গত, ২০১৮ সালের ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচনে বগুড়া-৭ (গাবতলী-শাজাহানপুর) আসনে বিএনপি প্রার্থী মোরশেদ মিল্টন নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে ব্যর্থ হন।

অন্যদিকে, আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন জোট আসনটি তাদের শরীক জাতীয় পার্টিকে ছেড়ে দেয়। তবে মরহুম আওয়ামী লীগ নেতা আজম খানের স্ত্রী ফেরদৌস আরা খান ওই স্বতন্ত্র প্রার্থী হলে আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতাকর্মীরা তাকে সমর্থন দেয়।

নির্বাচনে রেজাউল করিম বাবলু ট্রাক মার্কা প্রতীক নিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী ছিলেন।

যেহেতু আসনটি বিএনপি শূন্য তাই দলটি বাবলুকে সমর্থন দেয়। এতে আওয়ামী নেতৃত্বাধীন জোট জাপা প্রার্থীর (রেজাউল করিম বাবলু) কাছে বিপুল ভোটে পরাজিত হয়।

নির্বাচনের সময় দেওয়া হলফনামায় তথ্য গোপনের অভিযোগ উঠে এমপি বাবলুর বিরুদ্ধে। নির্বাচনী হলফনামায় তিনি বার্ষিক আয় পাঁচ হাজার টাকা দেখান। অস্থাবর সম্পত্তি হিসেবে দেখান একটি পুরাতন মোটর সাইকেল যাতে তিনি চলাফেরা করেন। কিন্তু এমপি নির্বাচিত হওয়ার দু’মাসের মাথায় ৩৪ লাখ টাকায় প্রাইভেট গাড়ি কেনেন। তখন এমপি বাবলু দাবি করেছিলেন, গাড়িটি তার বন্ধুরা উপহার দিয়েছেন।

তবে অভিযোগ রয়েছে, স্থানীয় অবৈধভাবে গড়ে তোলা ইটভাটার মালিকরা তাদের ভাটা রক্ষায় এমপিকে গাড়িটি কিনে দেন। বিষয়টি নিয়ে লেখালেখি হলেও তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়নি কেউই।

আমারসংবাদ/জেডআই