Amar Sangbad
ঢাকা শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪,

আচরণবিধির তোয়াক্কা না করে প্রচারণা চালাচ্ছে প্রার্থীরা

এপ্রিল ২৩, ২০১৫, ০৫:৪৮ এএম


আচরণবিধির তোয়াক্কা না করে  প্রচারণা চালাচ্ছে প্রার্থীরা

 আসন্ন সিটি করপোরেশন নির্বাচনে কমিশনের দেয়া আচরণবিধি লঙ্ঘন করেই প্রার্থীরা তাদের প্রচারণা চালাচ্ছে। প্রচারণার ক্ষেত্রে প্রার্থীরা আচরণবিধির কোন তোয়াক্কা করছে না। নির্বাচনী আচরণবিধিতে দেয়ালে পোস্টার লাগানো,রঙ্গিন পোস্টার বা প্রচারপত্র করা, নির্বাচনী প্রচার অফিসে টিভি বা এজাতীয় কিছু ব্যবহার, প্রচার সামগ্রি আকারে বড়,রাত ৯ টার পর মাইক ব্যবহার করা,পথ সভা করার সময়ে জনগণের পথ চলায় বাধাঁ প্রদানে নিষিদ্ধ থাকলেও প্রার্থীরা এসবের তোয়াক্কা না করে চালিয়ে যাচ্ছে প্রচারণা। অন্যদিকে নির্বাচন কমিশনের আচরণ বিধির ১৪ নং অনুচ্ছেদে সরকারি সুবিধাভোগী কতিপয় ব্যক্তির নির্বাচনী প্রচারণা এবং সরকারি সুযোগ-সুবিধা সংক্রান্ত বাধা নিষেধ সংক্রান্ত বিধির ক ধারায় বলা হয়েছে, ‘জাতীয় সংসদের স্পীকার, ডেপুটি স্পীকার, চীপ হুইপ, হুইপ এবং সরকারের কোন মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, উপমন্ত্রী বা তাঁহাদের সমমর্যাদার সরকারি সুবিধাভোগী কোন ব্যক্তি, নির্বাচনপূর্ব সময়ে নির্বাচনী প্রচারণায় বা নির্বাচনী কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করিতে পারিবেন না বলে উল্লেখ থাকলেও কেউ কেউ এর তোয়াক্কা না করেই তার নিজ প্রার্থীদের পক্ষে প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন।

গতকাল রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে এসব দৃশ্য চোখে পড়ে। গত রোববার বিধি লঙ্ঘনের কারণে ঢাকা দক্ষিণের আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী সাঈদ খোকসহ ১৫ জনকে বিভিন্ন ধরনের জরিমানা করেছে ভ্রাম্যমাণ আদালত। কিন্তু এর পরও থেমে যায় নি তাদের আচরণবিধি লঙ্ঘন। গতকাল পুরান ঢাকার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায় সাঈদ খোকনের রঙ্গিন প্রচরণাপত্র যা আচরণ বিধির লঙ্ঘন। অন্যদিকে দেয়ালে পোস্টার লাগানো আচরণবিধির লঙ্ঘন থাকলেও অধিকাংশ প্রার্থীরাই এই  অন্যায়ের সঙ্গে জড়িত। এমনকি বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের দেয়ালসহ ঢাকার অধিকাংশ দেয়ালগুলোই এখন প্রার্থীদের পোস্টারের দখলে। অন্যদিকে পুরান ঢাকা দক্ষিণের ৩৪ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী মামুনের নির্বাচনী অফিসে একটি টেলিভিশন রয়েছে। এবং গত রাত সাড়ে দশটার দিকে নবাবপুর রোডে মাইকে তার পক্ষে প্রচারণা চালাতে দেখা গেছে। এছাড়াও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের জাতীয় পার্টি সমর্থিত প্রার্থী সাইফুদ্দিন আহমেদ মিলনের পক্ষে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ আচরণবিধির তোয়াক্কা না করে প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছে। প্রচারণায় অংশ না নিতে প্রধানমন্ত্রীর মন্ত্রী পদমর্যাদার বিশেষ এ দূতকে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) পক্ষ থেকে অনুরোধ জানানো হলেও তিনি তা রক্ষা করেননি। দল সমর্থিত প্রার্থীদের পক্ষে প্রচারণা করছেন তিনি। আগামী শুক্রবার পর্যন্ত জাপা চেয়ারম্যান নির্বাচনী মাঠে থাকবেন বলে দল সূত্রে জানা গেছে।

 গত রোববার রাতে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচনের রিটার্নিং অফিসার মিহির সারওয়ার স্বাক্ষরিত একটি চিঠিতে এরশাদকে প্রচারণা না চালানোর অনুরোধ জানানো হয়। এর আগে শুক্রবার বিকেলে রাজধানীর উত্তর জুরাইন মুন্সীবাড়ী শাহাদাত হোসেন রোডে জাতীয় পার্টি শ্যামপুর-কমদতলী থানা আয়োজিত কর্মী সভায় নিজেকে আচরণবিধির ঊর্ধ্বে ঘোষণা করেছিলেন এরশাদ। এরপরই নির্বাচন কমিশন এরশাদকে চিঠি দেয়।কিন্তু চিঠি পাওয়ার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আবারও ঢাকা মহানগর দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে জাতীয় পার্টি সমর্থিত মেয়র প্রার্থী হাজী সাইফুদ্দিন আহমেদ মিলনের পক্ষে প্রচারণায় অংশ নিলেন এরশাদ। রাজধানীর মৌচাক এলাকা থেকে গত মঙ্গলবার বিকেল সাড়ে ৩টায় প্রচারণা শুরু করেন এরশাদ। আচরণবিধি লঙ্গনের দায়ে এর পূর্বেও মিলনকে ইসি শোকজ করে ছিল। পরবর্তীতে তিনি চলতি মাসের ৫ তারিখ বিকেল ৩টায় স্বশরীরে উপস্থিত হয়ে শোকজের জবাব দিয়ে ছিলেন।

অন্যদিকে গত রোববার আচরণবিধি লঙ্ঘন করে প্রচারণার দায়ে ঢাকা দক্ষিণে আওয়ামী লীগসমর্থিত মেয়র প্রার্থী সাঈদ খোকনসহ ১৫ জনকে জরিমানা করে ছিলেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। পোস্টার লাগানো ও নির্ধারিত সময়ের বাইরে মাইকে প্রচারণার দায়ে জরিমানা করা হয়। গত রোববার ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে দুজন ম্যাজিস্ট্রেট ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে আচরণবিধি লঙ্ঘনের দায়ে চার জনকে ১৬ হাজার টাকা জরিমানা করেন। এদের মধ্যে আওয়ামী লীগ সমর্থিত মেয়র প্রার্থী সাঈদ খোকনকে ৮ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছিল। অন্যরা হলেন- মো. সেলিম, মো. খলিলুর রহমান ও মো. শহিদুল ইসলাম।একইসঙ্গে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলর প্রার্থী মশিউর রহমানকে সতর্ক করেন এবং তার মিছিল ছত্রভঙ্গ করা হয়ে ছিল। ঢাকা উত্তর সিটিতে গত সোমবার তিনজন ম্যাজিস্ট্রেট ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে সফিকুল ইসলাম ও সুলতান জিসান উদ্দিন নামের দুই ব্যক্তিকে যথাক্রমে ৩ হাজার ও ৫শ টাকা জরিমানা করা হয়ে ছিল। এসমস্ত জরিমানার পরও গতকাল ঢাকার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী সাঈদ খোকনের রঙ্গিন প্রচারণাপত্র দেখা যায়।

 অন্যদিকে সিটি করপোরেশনের কর্মপরিধির বাইরে গিয়ে প্রতিশ্রুতির ফুলঝুরি ছরিয়ে দিচ্ছেন ঢাকা দক্ষিণ ও উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র প্রার্থীরা। ৬ দফা,১০, ১২ দফাসহ বিভিন্ন দফায় প্রতিশ্রুতি কতটা বাস্তবায়নযোগ্য সেটাই এখন বড় বিষয়। প্রায় অভিন্ন কথামালায় সাজানো ইশতেহারগুলোতে যেসব কর্মপরিকল্পনা তুলে ধরেছেন প্রার্থীরা, তার অধিকাংশই সিটি মেয়রের কর্মপরিধির মধ্যেই পড়ে না। সেই সঙ্গে স্থানীয় সরকার বিকেন্দ্রীকরণ না হওয়ার ফলশ্রুতিতে তার চাইলেও প্রতিশ্রুতি মোতাবেক নিজেদের কাজ করতে পারবেন না। মেয়রপ্রার্থীদের দাবি-সদিচ্ছা থাকলেই কর্মপরিধির বাইরে হওয়া সত্ত্বেও সিটি করপোরেশনের কাজ করা সম্ভব। তবে স্থানীয় সরকার ও রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, কোনোভাবেই মেয়র প্রার্থীদের আকাশকুসুম কল্পনাকে বাস্তবায়ন করা সম্ভব নয়। অন্যদিকে নির্বাচনী প্রচারণার নামে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া অপতৎপরতার মাধ্যমে সিটি নির্বাচনের উৎসবমুখর পরিবেশ যাতে নষ্ট না হয় সে বিষয়ে নির্বাচন কমিশনকে ব্যবস্থা গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছে আওয়ামী লীগ। এছাড়াও বিএনপি সমর্থিত প্রার্থীদের পক্ষে প্রচারণার সময়  বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া আচরণবিধি লঙ্ঘন করেছেন বলেও অভিযোগ করেছেন আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের মন্ত্রী ও নেতরা।