Amar Sangbad
ঢাকা শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪,

কাল ভোট, প্রস্তুতি সম্পন্ন

এপ্রিল ২৭, ২০১৫, ০৬:৫৮ এএম


কাল ভোট, প্রস্তুতি সম্পন্ন


 ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন ও চট্রগ্রাম সিটি করপোরেশন’র ভোট গ্রহণ আগামীকাল। সকাল ৮টা থেকে শুরু হয়ে ভোট গ্রহণ বিরতীহীন ভাবে চলবে বিকেল ৫টা পর্যন্ত। নানান অভিযোগ, শঙ্কা থাকলেও মঙ্গলবারের ভোটে উৎসবের আমেজ থাকবে। কেননা দীর্ঘদিন পর সিটি করপোরেশন’র ভোট দেয়ার সুযোগ পাচ্ছেন ভোটাররা। তাছাড়া বি এনপিসহ বিভিন্ন দল এ নির্বাচনে অংশ নেয়ায় জমে ইঠেছে এ নির্বাচন।

 এদিকে নির্বাচনে প্রার্থীদের প্রচার-প্রচারণা গতকাল রোববার মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। শেষ দিনে সিটি করপোরেশনের মেয়র ও কাউন্সিলর পদপ্রার্থীরা ব্যস্ত সময় কাটান। সকাল থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত তাঁরা নগরের অলিগলি চষে বেড়ান। তাঁদের পক্ষে নেতা-কর্মী-সমর্থকেরাও প্রচারণা চালান। গত ৭ এপ্রিল থেকে মেয়র, কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত কাউন্সিলর প্রার্থীদের আনুষ্ঠানিক প্রচার শুরু হয়। এরইমধ্যে নির্বাচনের সব প্রস্তুতি শেষ করেছে নির্বাচন কমিশন। ব্যালট পেপারসহ সংশ্লিষ্ট সব মালামাল শনিবারই রিটানিং অফিসারদের বুঝিয়ে দিয়েছে ইসি। শনিবার বিজি প্রেস থেকে ঢাকা দক্ষিণের রিটানিং অফিসাকে ব্যালটসহ মালামাল বুঝিয়ে দেয়া হয়। আর দুপুরে দেয়া হয় উত্তরের রিটানিং অফিসারকে। তবে এর আগে শুক্রবার চট্রগ্রাম সিটির মালামাল রিটানিং অফিসারের কার্যালয়ে পাঠিয়েছে ইসি। আজ এসব মালামাল কেন্দ্রে পাঠিয়ে দেয়া হবে।

 ঢাকার দুই সিটি ও চট্রগ্রামের সিটি করপোরেশনের জন্য ১ কোটি ৮১ লাখেরও বেশি ব্যালট পেপার ছাপানো হয়েছে। তবে এই তিন সিটি করপোরেশনে মেয়র, সাধারণ কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদের জন্য ব্যালট ছাপানো হয়েছে। মেয়র পদের ব্যালটে প্রার্থীর নাম এবং প্রতীক থাকবে। তবে কাউন্সিলদের জন্য শুধু প্রতীক থাকবে। আর নির্বাচনকালীন নিরাপত্তা ব্যবস্থা হিসেবে পুলিশ, র‌্যাব ও আনসার সদস্যদের পাশাপাশি বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) ৭০ প্লাটুন সদস্য গতকাল রাতে রাজধানী ও চট্টগ্রামে মোতায়েন করা হয়। চট্টগ্রামে মাঠে নেমেছে ৩০ প্লাটুন বিজিবি সদস্য। এছাড়া ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ এবং চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে মাঠে থাকবে র‌্যাবের ৫ হাজার সদস্য।

এদিকে ঢাকা শহরে দুই সিটি করপোরেশনে দুই ধরনের কেন্দ্র চিহিৃত করা হয়েছে। একটি একক কেন্দ্র অন্যটি পুঞ্জিবিত কেন্দ্র। মোট ১৯৮২টি কেন্দ্র রয়েছে। এর মধ্যে ৫৫৩টি সাধারণ এবং ১৪২৯টি গুরুত্বপূর্ন বা ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্র হিসাবে দেখা হচ্ছে। এছাড়া নির্বাচনের দিন র‌্যাবের ১৩৪টি মোটরসাইকেল টহল টিম মাঠে কাজ করবে। প্রতিটি ওয়ার্ডে দুটি টহল টিম, একজন কর্মকর্তা, দুটি মোটরসাইকেল টহল দল, গোয়েন্দা নজরদারি ও স্ট্রাইকিং রিজার্ভ ফোর্স থাকবে। এ ছাড়া একটি করে মনিটরিং সেন্টার থাকবে। সদর দফতর থেকেও মনিটরিং করা হবে বলে র‌্যাবের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। নির্বাচনের নিরাপত্তা সম্পর্কে ডিএমপির কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, নির্বাচনকে নিরপেক্ষ অবাধ ও আনন্দ মুখর করতে নির্বাচন কমিশনের নির্দেশনার অনুযায়ী নিরাপত্তাকে তিন ভাগে ভাগ করা হয়েছে। একটা হচ্ছে নির্বাচন পূর্ব নিরাপত্তা ও নির্বাচন চলাকালিন নিরাপত্তা এবং নির্বাচন পরবর্তী নিরাপত্তা।

তিন সিটির রিটার্নিং কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, শনিবার রাত থেকেই রাজধানী ঢাকা ও বন্দরনগরী চট্টগ্রামে বহিরাগতদের অবস্থানের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। একইভাবে শনিবার মধ্যরাত থেকে ২৯ এপ্রিল সকাল ৬টা পর্যন্ত এ দুই মহানগরীতে বন্ধ থাকবে মোটরসাইকেল চলাচল। ২৭ এপ্রিল মধ্যরাত থেকে ২৮ এপ্রিল রাত ১২টা পর্যন্ত ১২ ধরনের যানবাহন চলাচলের ওপরও নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। সুষ্ঠুভাবে ভোট গ্রহণের স্বার্থে নির্বাচন কমিশন ব্যাপক প্রস্তুতি সম্পন্ন নিয়েছে বলে আমার সংবাদকে জানিয়েছেন ইসি কার্যালয়ের সচিব মো. সিরাজুল ইসলাম। তিনি বলেন, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্বে তিন সিটিতে প্রায় ৮২ হাজার নিরাপত্তাকর্মী নিয়োজিত থাকবেন। তিন ব্যাটালিয়ন সেনাসদস্যকে প্রস্তুত রাখার পাশাপাশি দেশের সব বাহিনীর সদস্যরাই নিয়োজিত থাকবেন নিরাপত্তার দায়িত্বে। নির্বাচন পর্যবেক্ষণে মাঠে থাকবেন যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ বিভিন্ন বিদেশি দূতাবাসের প্রতিনিধিরা। এ ছাড়া সাড়ে তিন হাজারের বেশি দেশি পর্যবেক্ষক ও সাংবাদিককে নির্বাচন পর্যবেক্ষণের অনুমতি দিয়েছে ইসি।

এবারের ঢাকা উত্তর, দক্ষিণ ও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মোট ৪৮ মেয়র প্রার্থী, ২৪৮ সংরক্ষিত কাউন্সিলর, ৮৮৪ জন সাধারণ কাউন্সিলরসহ মোট এক হাজার ১৮০ প্রার্থী এবার প্রতিদ্বন্ধিতা করছেন। এর মধ্যে ঢাকা উত্তরে ১৬ মেয়র প্রার্থী, ৮৯ সংরক্ষিত কাউন্সিলর প্রার্থী, ২৮১ জন সাধারণ কাউন্সিলর প্রার্থী; ঢাকা দক্ষিণে ২০ মেয়র প্রার্থী, ৯৭ সংরক্ষিত কাউন্সিলর প্রার্থী ও ৩৯০ জন সাধারণ কাউন্সিলর প্রার্থী অংশ নিচ্ছেন। চট্টগ্রামে ১২ মেয়র প্রার্থী, ৬২ সংরক্ষিত কাউন্সিলর প্রার্থী ও ২১৩ জন সাধারণ কাউন্সিলর প্রার্থী অংশ নিচ্ছেন। এবার সবচেয়ে বেশি প্রার্থী নির্বাচনে প্রতিদ্বদ্বিতা করছেন। যে কারণে মেয়র, কাউন্সিলর প্রার্থীদের জন্য করতে হয়েছে অতিরিক্ত প্রতীক বরাদ্দ। নির্বাচনে একজন ভোটারকে তিনটি ব্যালটে সিল মারতে হবে।

ভোটকেন্দ্র, কক্ষ ও ভোটার: তিন সিটিতে মোট ভোটকেন্দ্র দুই হাজার ৭০১টি। ভোটকক্ষ ১৫ হাজার ৫৪৪টি। মোট ভোটার ৬০ লাখ ২৯ হাজার ৫৭৬ জন। এর মধ্যে ঢাকা উত্তরে ভোটকেন্দ্র এক হাজার ৯৩টি। ভোটকক্ষ পাঁচ হাজার ৮৯২টি। ভোটার ২৩ লাখ ৪৫ হাজার ৩৭৪ জন। দক্ষিণ সিটিতে ভোটকেন্দ্র ৮৮৯টি। ভোটকক্ষ চার হাজার ৭৪৬টি। ভোটার ১৮ লাখ ৭০ হাজার ৭৫৩ জন। চট্টগ্রামে ভোটকেন্দ্র ৭১৯টি। ভোটকক্ষ চার হাজার ৯০৬টি। ভোটার ১৮ লাখ ১৩ হাজার ৪৪৯ জন।

সেনা মোতায়েনে ইসির ব্যাখ্য : ইসি কার্যালয় থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, সিটি নির্বাচনে সেনা মোতায়েনের বিষয়ে গণমাধ্যমে বিভ্রান্তিকর খবর প্রচার করা হচ্ছে। ইসির পরিচালক (জনসংযোগ) এস এম আসাদুজ্জামান স্বাক্ষরিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ২০০১ এবং ২০০৮ সালে অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় সেনাবাহিনীকে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য হিসেবে নির্বাচনে মোতায়েন করা হয়েছিল। উল্লিখিত সময় ছাড়া আর কখনই সেনাবাহিনী অন্যান্য বাহিনীর সঙ্গে রাস্তায় টহল দেয়নি। সেনাবাহিনী রিজার্ভ ফোর্স হিসেবে অবস্থান নেয় এবং রিটার্নিং কর্মকর্তা ডাকলেই স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে পরিস্থিতি মোকাবেলা করেছে। বর্তমান কমিশনের অধীনে দশম সংসদ এবং উপজেলা নির্বাচন দেশজুড়ে অনুষ্ঠিত হওয়ায় তাদের সুবিধামতো বিভিন্ন স্থানে অস্থায়ী ক্যাম্প করে থাকতে হয়। তারা ক্যাম্পেই রিজার্ভ ফোর্স হিসেবে অবস্থান করে থাকেন। নিরাপত্তায় ৭০ প্লাটুন বিজিবি।

অন্যদিকে ঢাকা দক্ষিণ ও উত্তর সিটি করপোরেশন নির্বাচন নির্বিঘ্নে ও উৎসবমুখর করতে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়েছে ঢাকা মহানগর পুলিশ। নির্বাচনের দিন ৯৩টি ওয়ার্ডে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ১৮৬টি ভ্রাম্যমাণ দল টহল দেবে। তিনটি ভোটকেন্দ্রের জন্য থাকবে একটি স্ট্র্যাইকিং ফোর্স। তাৎক্ষণিক সাজা দিতে থাকবে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে ভ্রাম্যমাণ আদালতও। নির্বাচনে শান্তিপূর্ণ পরিস্থিতি বজায় রাখতে নির্বাচনের আগে, নির্বাচনের দিন ও নির্বাচনের পরে- এই তিন স্তরে নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

শনিবার ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান। সোমবার মধ্যরাত থেকে ভোট গ্রহণের দিন মঙ্গলবার মধ্যরাত পর্যন্ত ঢাকায় অটোরিকশা, ইজিবাইক, ট্যাক্সিক্যাব, মাইক্রোবাস, জিপ, পিকআপ, প্রাইভেটকার, বাস ও ট্রাকসহ সব যানবাহন চলাচলে নিষেধাজ্ঞা থাকবে। শুধু রিটার্নিং কর্মকর্তার অনুমতি সাপেক্ষে নির্বাচনী এজেন্ট, দেশি-বিদেশি পর্যবেক্ষক, দেশি-বিদেশি সাংবাদিক, নির্বাচনী কাজে নিয়োজিত কর্মকর্তা-কর্মচারী, আইন-শৃঙ্খলরক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য, বৈধ পরিদর্শকসহ জরুরি সেবামূলক কাজে নিয়োজিত অ্যাম্বুলেন্স, ফায়ার সার্ভিস, বিদ্যুৎ, গ্যাস, ডাক, টেলিযোগাযোগ কার্যক্রমের ওপরে এ নিষেধাজ্ঞা প্রযোজ্য হবে না। রোববার রাত ১২টা থেকে বৃহস্পতিবার রাত ১২টা পর্যন্ত নির্বাচনী এলাকায় কোনো ধরনের জনসভা, অনুষ্ঠান, মিছিল সংঘটিত করা যাবে না। আগামী শুক্রবার রাত ১২টা পর্যন্ত সব ধরনের আগ্নেয়াস্ত্র বহন ও প্রদর্শনও নিষিদ্ধ করা হয়েছে।