Amar Sangbad
ঢাকা শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪,

মেয়র হচ্ছেন কারা

এপ্রিল ২৮, ২০১৫, ০৪:৪৩ এএম


মেয়র হচ্ছেন কারা

 ঢাকা উত্তর-দক্ষিণ ও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচন আজ। দীর্ঘ দিনের প্রচার প্রচারণার পর প্রার্থীরা এখন তাকিয়ে আছেন ভোটারদের দিকে। ভোটাররাই আজ নির্ধারন করবেন কারা হবেন এবারের নগর পিতা। চলতি মাসের ৭ তারিখ নির্বাচনী প্রচারণা শুরু করে ছিলেন প্রার্থীরা। দীর্ঘ ২১ দিন প্রচারণার পর আজ তাদের ভাগ্য নির্ধারণের পালা। নির্বাচনী প্রচারণায় প্রার্থীরা দিয়েছেন বিভিন্ন ধরনের প্রতিশ্রুতি। বিশেষ করে নগরে জলাবদ্ধতা,পয়োনিষ্কাশন,পানি নিষ্কাশন,পরিস্কার পরিচ্ছন্নতাসহ নানা ধরনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন প্রার্থীরা। প্রার্থীদের প্রচার প্রচারণায় কে বেশি ভোটারদের মন কাড়তে পেরেছেন তা নির্ধারিত করবে ভোটাররা। এবারের নির্বাচনকে ঘিরে নিরাপত্তা ব্যবস্থা সর্বোচ্চ জোরদার করা হয়েছে। অন্যদিকে গতকালই নির্বাচনের সমস্ত কাজ সম্পন্ন করেছেন নির্বাচন কমিশন।

সকল কেন্দ্র্রে নির্বাচনী সরঞ্জাম প্রেরণ : সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ভোটগ্রহণের জন্য গতকাল সোমবার সকাল ১০টা থেকে সকল কেন্দ্রে নির্বাচনী সরঞ্জাম পাঠানো শুরু করে ছিল নির্বাচন কমিশন। ইতোমধ্যেই সকল কেন্দ্রে ভোট গ্রহণের সকল সরঞ্জাম পৌঁছে গেছে। তিন সিটিতে দুই হাজার ৭০১টি কেন্দ্র্রে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে।৩ সিটির নির্ধারিত স্থান থেকে কেন্দ্রের সংশ্লিষ্ট প্রিসাইডিং কর্মকর্তারা স্বচ্ছ ব্যালট বাক্স, ব্যালট পেপার, সিল, স্ট্যাম্প প্যাড, স্টিকার, গার্নি ব্যাগ, অমোচনীয় কালি-কলম, অফিসিয়াল সিল, ব্রাশ সিল ও প্যাড সংগ্রহ করছেন।আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সহয়তায় প্রতিটি কেন্দ্রে নির্বাচনী সরঞ্জাম পৌঁছে দেওয়া হয়েছে।ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. শাহ আলম বলেন,আটটি স্থান থেকে সকাল ১০টা থেকে নির্বাচনী সামগ্রী বিতরণ করা হয়েছে। প্রিসাইডিং কর্মকর্তারা সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তাদের কাছ থেকে ভোটের সামগ্রী বুঝে নিয়েছেন।ঢাকা দক্ষিণের রিটার্নিং কর্মকর্তা মিহির সারওয়ার মোর্শেদ বলেন,সকাল ১০টা থেকে আমাদের সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তারা নির্বাচনের সরঞ্জাম বিতরণ করেছেন।

প্রার্থী, ভোটার ও কেন্দ্রের সংখ্যা : ঢাকা উত্তর সিটিতে ১৬ মেয়র প্রার্থী, ২৮১ সাধারণ কাউন্সিলর প্রার্থী ও ৮৯ সংরক্ষিত সাধারণ কাউন্সিলর প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এ সিটিতে মোট কেন্দ্রের সংখ্যা এক হাজার ৯৩টি। ভোটকক্ষের সংখ্যা পাঁচ হাজার ৮৯২টি। মোট ভোটার ২৩ লাখ ৪৫ হাজার ৩৭৪ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ১২ লাখ ২৪ হাজার ৭০১ জন। নারী ভোটার ১১ লাখ ২০ হাজার ৬৭৩ জন।
উত্তর সিটিতে মোট ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা ১৮ হাজার ৭৬৯ জন। এর মধ্যে প্রিসাইডিং কর্মকর্তা এক হাজার ৯৩ জন, সহকারী প্রিসাইডিং কর্মকর্তা পাঁচ হাজার ৯২ জন ও পোলিং কর্মকর্তা ১১ হাজার ৭৮৪ জন।
দক্ষিণ সিটি করপোরেশন : দক্ষিণ সিটিতে ২০ মেয়র প্রার্থী, ৩৯০ সাধারণ কাউন্সিলর প্রার্থী ও ৭৯ সংরক্ষিত কাউন্সিলর প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এ সিটিতে মোট কেন্দ্রের সংখ্যা ৮৮৯টি। ভোটকক্ষের সংখ্যা চার হাজার ৭৪৬টি। মোট ভোটার ১৮ লাখ ৭০ হাজার ৭৫৩ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ১০ লাখ ৯ হাজার ২৮৬ জন। নারী ভোটার আট লাখ ৬১ হাজার ৪৬৭ জন। এ সিটিতে মোট ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা ১৫ হাজার ১২৭ জন। এর মধ্যে প্রিসাইডিং কর্মকর্তা ৮৮৯ জন, সহকারী প্রিসাইডিং কর্মকর্তা চার হাজার ৭৪৬ জন ও পোলিং অফিসার নয় হাজার ৪৯২ জন।

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন : চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মোট ১২ মেয়র প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এ ছাড়া সাধারণ কাউন্সিলর পদে ২১৩ ও সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে ৬২ প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এখানে মোট কেন্দ্রের সংখ্যা ৭১৯টি। ভোটকক্ষের সংখ্যা চার হাজার ৯০৬টি। মোট ভোটার ১৮ লাখ ১৩ হাজার ৪৪৯ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার নয় লাখ ৩৭ হাজার ৫৩ জন ও নারী ভোটার আট লাখ ৭৬ হাজার ৩৯৬ জন। চট্টগামে মোট ভোটগ্রহণ কর্মকর্তার সংখ্যা ১৫ হাজার ৪৩৭ জন। এর মধ্যে প্রিসাইডিং কর্মকর্তা ৭১৯ জন, সহকারী প্রিসাইডিং কর্মকর্তা চার হাজার ৯০৬ জন ও পোলিং কর্মকর্তা নয় হাজার ৮১২ জন।আজ সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত বিরতিহীনভাবে ভোটগ্রহণ চলবে।

সারাদেশে বিজিবি মোতায়েন: আসন্ন ঢাকা ও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচন উপলক্ষে সারাদেশে গতকাল সোমবার সকাল থেকে ২৮৫ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে। বিজিবির জনসংযোগ কর্মকর্তা মুহম্মদ মোহসিন রেজা এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, রাজধানী ঢাকার উত্তর ও দক্ষিণে ৩৫ প্লাটুনসহ মোট ৭০ প্লাটুন এবং চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন এলাকায় ৩০ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, ঢাকার বাইরে গতকাল সকাল থেকে ২৪ ঘণ্টার জন্য দেশের বিভিন্ন স্থানে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় ১০৩ প্লাটুন এবং মহাসড়কের নিরাপত্তা দিতে ৮২ প্লাটুন বিজিবি সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। এ ছাড়া যে কোনো পরিস্থিতি মোকাবেলায় পর্যাপ্তসংখ্যক বিজিবি সদস্য মোতায়েনের জন্য প্রস্তুত থাকবে বলেও জানান মোহসিন রেজা।

মোবাইল লেনদেনে কড়াকড়ি : ৩ সিটি করপোরেশন নির্বাচনকে সামনে রেখে আজ রাত ১২টা পর্যন্ত মোবাইল ফোনে এক হাজার টাকার বেশি রিচার্জ বা কোনো ধরনের আর্থিক লেনদেন না করার নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। কেন্দ্রীয় ব্যাংক গতকাল সোমবার এ ধরনের প্রজ্ঞাপন জারি করেছে। মোবাইল সার্ভিস প্রোভাইডার, ব্যাংক ও তাদের সাবসিডিয়ারি প্রতিষ্ঠানকে এ নির্দেশনা জানিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক মো. মাহফুজুর রহমান।তিনি বলেন, অনিবার্য কারণবশত আজ রাত ১২টা পর্যন্ত মোবাইল ফিন্যানশিয়াল সার্ভিসে গ্রাহক পর্যায়ে ক্যাশ আউট ও ক্যাশ ইন এবং এজেন্ট ও মার্চেন্ট পেমেন্ট পর্যায়ে এক হাজার টাকার বেশি লেনদেন করা যাবে না। এ ছাড়া কেউ এক হাজার টাকার বেশি মোবাইলে রিচার্জও করতে পারবেন না।

নির্বাচনে সহিংসতার আশঙ্কা :আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সব রকম তৎপরতা সত্ত্বেও সিটি করপোরেশন নির্বাচনকে কেন্দ্র করে এরই মধ্যে বেশ কয়েকটি সহিংস হামলার আক্রমণের ঘটনা। সেই সব ঘটনায় জড়িতদের কাউকেই এখনও পর্যন্ত গ্রেফতার করা হয়নি। পর্যবেক্ষকদের মতে, এসব সহিংস ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করা না হলে নির্বাচনের সময় সন্ত্রাস ও সহিংসতা ভয়াবহ আকার ধারণ করতে পারে। বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াসহ দলীয় প্রার্থীদের অনেকে নির্বাচনি প্রচারণা চালানোর সময় আক্রমণের শিকার হয়েছেন।

 তেজগাঁও ও রমনা থানায় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ দুটি এবং বিএনপি সমর্থকরা দুটি মামলা করেছে। তবে কিন্তু আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কোনও মামলার কোনও আসামিকেই শনাক্ত করতে বা গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়নি।তেজগাঁও থানার উপ-পরিদর্শক এবং খালেদা জিয়ার গাড়িবহরে হামলার মামলার দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মনসুর হোসেন মানিক জানান, তারা অপরাধীদের শনাক্ত করার চেষ্টা করছেন। তিনি বলেন,আমরা অপরাধীদের গ্রেফতার করার সর্বাত্মক চেষ্টা চালাচ্ছি।রামপুরা পুলিশের উপ-পরিদর্শক মোহাম্মদ জুয়েল মিয়াও প্রায় একই রকম বক্তব্য দেন। তিনি বাংলামোটর এলাকায় খালেদা জিয়ার গাড়িবহরে হামলার মামলার দায়িত্বে আছেন।গত রবিবার কল্যাণপুর এলাকায় নির্বাচনি প্রচারণা চালানোর সময় মেয়র প্রার্থী আব্দুল্লাহ আল ক্বাফী ও তার সমর্থকদের ওপর হামলা চালায় আওয়ামী লীগ কর্মীরা। ওই সময় অন্তত ৩০ জন আহত হয়।এর আগে একই দিন মধ্যরাতে বিকল্পধারা বাংলাদেশের প্রার্থী মাহী বি চৌধুরীর উপর আক্রমণ চালায় অজ্ঞাত দুর্বৃত্তরা।এছাড়াও যাত্রাবাড়ীতে যুবলীগের দুই অংশের মধ্যে নির্বাচনি প্রচারণাকে কেন্দ্র করে সংঘটিত সংঘর্ষে অন্তত ৫ জন আহত হয়।

এ প্রসঙ্গে যাত্রাবাড়ী পুলিশের ওসি অবনি শঙ্কর বলেন, ৫০ নম্বর ওয়াডের্র যুব লীগ কর্মীদের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝির কারণে এ সংঘর্ষ ঘটে।এদিকে, চট্টগ্রাম নগরের পলিটেকনিক এলাকায় বিএনপি প্রার্থী এম মঞ্জুর আলমের উপর আওয়ামী লীগ কর্মীদের দ্বারা হামলার অভিযোগ উঠেছে। সে সময় প্রচারণায় বিএনপি ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল নোমান উপস্থিত ছিলেন।এ প্রসঙ্গে পুলিশ ওসি সুকান্ত চক্রবর্তী বলেন, তিনি এই ঘটনা সম্পর্কে জেনেছেন, তবে এই ঘটনায় কেউ থানায় কোনও মামলা বা অভিযোগ করেনি।গত শনিবার রাজধানীর খিলগাঁও এলাকায় অজ্ঞাতপরিচয় কিছু সন্ত্রাসী বিএনপি প্রার্থী মির্জা আব্বাসের নির্বাচনী মিছিলে গুলি চালালে খিলগাঁও বিএনপি প্রেসিডেন্ট আরজু আহত হন।

একই দিন মির্জা আব্বাস ও ২ নম্বর ওয়াডের্র কাউন্সিলর প্রার্থী হাবিবা সুলতানার সমর্থকরা নির্বাচনি মিছিল বের করে। একই সময় ঢাকা দক্ষিণ ছাত্রলীগ প্রেসিডেন্ট আনিসুর রহমান বিপরীত দিক থেকে মিছিল নিয়ে আসলে সংঘষের্র সূচনা হয়।সেইদিন পল্টন এলাকায় কাউন্সিলর প্রার্থী আরজুমান আরা বেগমের নির্বাচনি প্রচারণাও হামলার শিকার হয়।ঢাকা মহানগর পুলিশের কমিশনার আসাদুজ্জামান মিয়া দাবি করেন, নির্বাচনি প্রচারণা শুরু হওয়ার পর তেমন কোনও গুরুতর ঘটনা ঘটেনি।তিনি বলেন,কিছু বিচ্ছিন্ন ঘটনা ঘটেছে। তবে আমরা নির্বাচন যেন সুষ্ঠু ও নিরুপদ্রব হয় সে জন্য নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করেছি।