Amar Sangbad
ঢাকা বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪,

ভোট গ্রহণ সম্পন্ন, গণনা চলছে

এপ্রিল ২৮, ২০১৫, ১০:৫৭ এএম


ভোট গ্রহণ সম্পন্ন, গণনা চলছে

 অনিয়ম ও কারচুপির অভিযোগ তুলে বিএনপির নির্বাচন বর্জনের মধ্য দিয়ে তিন সিটি করপোরেশনের ভোট গ্রহণ শেষ হয়েছে। মঙ্গলবার সকালে ৮টায় ভোটগ্রহণ শুরু হয়ে বিকেল চারটায় শেষ হয়। এখন চলছে ভোট গণনা।

বিভিন্ন অভিযোগে নির্বাচন শুরুর কিছুক্ষণ পর সিটি করপোরেশন নির্বাচন বর্জন করেছে বিএনপি। এ ছাড়াও বিভিন্ন কেন্দ্রে হয়েছে সংঘাত ও সংঘর্ষ। বিভিন্ন কেন্দ্র থেকে জাল ভোট দেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে।বাংলাবাজার সরকারি বালিকা বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রে ভোটের কাজে নিয়োজিত কর্মকর্তারা নিজেরাই জাল ভোট দেওয়ার কাজে অংশ নিয়েছেন। আজ সকাল সাড়ে ১১টার দিকে এমন দৃশ্য দেখা যায়।

এদিকে, পুরান ঢাকার কবি কাজী নজরুল সরকারি কলেজ ভোটকেন্দ্রে আওয়ামী লীগ সমর্থিত মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীর পক্ষে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের প্রকাশ্যে ব্যালটে সিল মারতে দেখা গেছে। আজ মঙ্গলবার দুপুর ১টার দিকে কলেজের দ্বিতীয় তলায় গিয়ে এ দৃশ্য দেখা গেছে। এ সময় পুলিশ ও নির্বাচনী কর্মকর্তাদের নিশ্চুপ থাকতে দেখা যায়।
ঘটনার বিষয়ে জানতে চাইলে কেন্দ্রের প্রিসাইডিং কর্মকর্তা আবুল কালাম আজাদ প্রথমে বলেন, 'কোনো অনিয়ম হচ্ছে না।' এ বিষয়ে আবার এই প্রিসাইডিং কর্মকর্তার দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে কোনো কথা বলতে রাজি হননি তিনি।
এর আগে কেন্দ্রটিতে দুইটি ককটেল বিস্ফোরিত হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ সাময়িকভাবে স্থগিত করা হয়েছে বলে জানায় সেখানে কর্তব্যরত পুলিশ। একপর্যায়ে কেন্দ্রের ভেতরে গিয়ে দেখা যায়, ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা ব্যালটে সিল মারছেন।
কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শীর ভাষ্য, ৪২ নম্বর ওয়ার্ডের কেন্দ্রটিতে দুপুর ১২টার দিকে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী কাউন্সিলর প্রার্থী সেলিম হাজির সমর্থকদের সঙ্গে কলেজের ছাত্রলীগের কর্মীদের সংঘর্ষ হয়। পুলিশ লাঠিপেটা করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এর মিনিট দশেক পর কলেজ প্রাঙ্গণে দুইটি ককটেল বিস্ফোরিত হয়।

নারিন্দায় ভোটারদের বাধা
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে নারিন্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে দরজা বন্ধ করে ভোট চলেছে। কেন্দ্রে যেতে দেওয়া হচ্ছে না বলে অভিযোগ করেছেন স্থানীয় ভোটাররা। ভোটারদের বলা হচ্ছে, 'ভোট দেওয়া হয়ে গেছে।' আশপাশের কয়েকটি কেন্দ্রেও একই অবস্থা দেখা গেছে। ভোটারদের ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না। আওয়ামী লীগ সমর্থিত মেয়র পদপ্রার্থী সাঈদ খোকন ও কাউন্সিলর প্রার্থী সারোয়ার হাসানের এজেন্টরাই কেন্দ্র নিয়ন্ত্রণ করছেন বলে ভোটাররা অভিযোগ করেন।
আজ মঙ্গলবার সকাল পৌনে ১১টার দিকে গিয়ে নারিন্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রে গিয়ে এমন দৃশ্য দেখা যায়। কেন্দ্রের ভেতরে দোতলার একটি ভোটকক্ষের দরজা এই প্রতিবেদকের সামনেই বন্ধ করে দেওয়া হয়। পাশের কয়েকটি কক্ষে ঢাকা দক্ষিণ সিটিতে আওয়ামী লীগ সমর্থিত মেয়রপ্রার্থী সাঈদ খোকন ও আওয়ামী লীগ সমর্থিত ওয়ার্ড কাউন্সিলর প্রার্থী সারোয়ার হাসানের ব্যাজ পরা কয়েকজনকে ব্যালট পেপার নাড়াচাড়া করতে দেখা যায়। এ সময় কক্ষের বাইরে একজন পুলিশ অসহায়ভাবে বসে ছিলেন। ভোটগ্রহণকারী কর্মকর্তারাও অসহায়ভাবে সেখানে বসে ছিলেন।কেন্দ্রে সকাল থেকে সাঈদ খোকন ও সারোয়ার হাসানের বাইরে কোনো প্রার্থীর এজেন্টকে দেখা যায়নি। একজন নারী ভোটার ভোট দিতে কেন্দ্রের ভেতরে যেতে চান। এ সময় তাঁকে ঢুকতে দেওয়া হয়নি বলে তিনি অভিযোগ করেন। তিনি বলেন, 'ভোটকেন্দ্র তো দখল হয়ে গেছে। যাইতে দিচ্ছে না।'একই রকম ক্ষোভ প্রকাশ করেন ভোট দিতে আসা আবুল কালাম। পরিবারের চার সদস্যকে নিয়ে তিনি ভোট দিতে আসেন। কিন্তু নারিন্দার ওই কেন্দ্রে ঢোকার পর তাঁদের বলা হয়, 'ভোট দেওয়া হয়ে গেছে।'

প্রিসাইডিং কর্মকর্তার কক্ষে ব্যালটে সিল
মহাখালীতে প্রিসাইডিং অফিসারের কক্ষে ঢুকে দরজা লাগিয়ে আওয়ামী লীগ সমর্থিত মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীর পক্ষে ব্যালটে সিল মারার অভিযোগ পাওয়া গেছে। দুপুর ১২টা ৪৫ মিনিটের দিকে রাজধানীর ১৯ নম্বর ওয়ার্ডের আবদুল হামিদ দর্জি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে এমন ঘটনা ঘটে।ঘটনার সময় এই প্রতিবেদক প্রিসাইডিং অফিসার মাহফিজুর রহমানের সঙ্গে কথা বলতে চাইলে তিনি কক্ষ থেকে বেরিয়ে আসেন। তিনি অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, 'কক্ষের মধ্যে এমন কিছু ঘটছে না।' এই ঘটনায় একই ওয়ার্ডের আওয়ামী লীগের সমর্থন বঞ্চিত প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে।

সাংবাদিকের ওপর হামলা
রাজধানীর শাজাহানপুরের মাহবুব আলী ইনস্টিটিউট আজ দুপুর দেড়টা থেকে ২টার মধ্যে প্রকাশ্যে ভোটচুরির ঘটনার খবর সংগ্রহ করতে গিয়ে হামলার শিকার হয়েছেন প্রথম আলোর জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক সুজয় মহাজন। এ সময় হামলাকারীরা তাঁর দুইটি মোবাইল ফোন, আইডি কার্ড ও নির্বাচন কমিশন থেকে দেওয়া পরিচয়পত্রও কেড়ে নেয়।
​ওই কেন্দ্রে দায়িত্ব পালনরত নির্বাচনী কর্মকর্তা এবং পুলিশ ও আনসার সদস্যরাও এ ঘটনা প্রত্যক্ষদর্শী ছিলেন। পরে পুলিশের সহায়তার হামলাকারীদের হাত থেকে রক্ষা পান প্রতিবেদক। ঘটনার খবর পেয়ে শাহজাহানপুর থানার ওসিসহ পুলিশের একটি দল উপস্থিত হয়। এ সময় পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা হামলাকারীদের কয়েকজনের সঙ্গে কথা বললে তারা মোবাইল ফোন ফেরত দেবে বলে পুলিশকে জানায়। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলেই প্রতিবেদককে এ বিষয়ে আশ্বস্ত করে। তবে শেষ পর্যন্ত ফোন দুটি উদ্ধার হয়নি। ​

ভোট দিতে পারলেন না কাউন্সিলর প্রার্থী
রাজধানীর রমনা এলাকার সিদ্ধেশ্বরী উচ্চ বালিকা বিদ্যালয় কেন্দ্রে কাউন্সিলর প্রার্থী আবু জুবায়ের নিজের ভোটই দিতে পারলেন না। মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ৮টার দিকে তিনি ভোট দিতে এসে দেখেন তার ভোট দেওয়া হয়ে গেছে।
সকাল ৯টায় এই ভোটকেন্দ্রে সরেজমিন পরিদর্শনে গিয়ে দেখা গেলো, অধিকাংশ বুথের ভোট বাক্স ব্যালটে ভরা। ভোটারদের আনাগোনাও খুব কম।ভোট শুরুর পরই ওই কেন্দ্র থেকে বিরোধী প্রাথীদের এজেন্ট বের করে দিয়েছেন সরকারি দল সমর্থিত মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীর লোকজন। তারা কেন্দ্রের ভেতরে ও বাইরে জটলা করায় অন্য কোনো প্রার্থীর লোকজন ভেতরে প্রবেশ করতে পারছেন না।আবু জুবায়ের প্রিসাইডিং কর্মকর্তার কাছে অভিযোগ করলে তিনি জানিয়েছেন এ বিষয়ে তার কিছুই করার নেই।

সিদ্ধেশ্বরীতে জাল ভোট
রাজধানীর সিদ্ধেশ্বরী উচ্চ বালিকা বিদ্যালয় কেন্দ্রে ব্যালট নিয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সমর্থিত এক কাউন্সিলর প্রার্থীর প্রতীকে সিল মারার ঘটনা ঘটেছে।
এই ঘটনার পর ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ১৯ নম্বর ওয়ার্ডের অপর এক কাউন্সিলর প্রার্থী ভোটগ্রহণ স্থগিত করে পুনঃভোটের আবেদন করেছেন।
ওই কেন্দ্রের প্রিসাইডিং কর্মকর্তা শেখ মো. আরিফুল ইসলাম অবৈধভাবে সিল মারার এই ঘটনার কথা স্বীকার করেছেন।
তিনি বলেন, 'সকাল থেকে ছিলাম। মাঝে একটু ঝামেলা হইছিল। এখন ঠিক হয়ে গেছে।'
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, 'আমি পেয়েছি যে, কিছু ব্যালটে সিল মারা হয়েছে। আমি আমার ঊর্ধ্বতনদের বিষয়টি জানিয়েছি।'
ওই কেন্দ্র থেকে বিএনপি সমর্থিত মেয়র প্রার্থী মির্জা আব্বাসের এজেন্টদের বের করে দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন তার স্ত্রী আফরোজা আব্বাস।আফরোজা বলেন, 'ব্যাপক কারচুপি হচ্ছে। আমি বিভিন্ন কেন্দ্রে গিয়েছি। একই অবস্থা দেখছি। সরকারি দলের লোকজন কেন্দ্রের দখল নিয়ে তাদের প্রার্থীকে ভোট দিচ্ছে।'
সিদ্ধেশ্বরী উচ্চ বালিকা বিদ্যালয় কেন্দ্রের ভোটার দুই কাউন্সিলর প্রার্থীকে দেখিয়ে আফরোজা বলেন, 'এই দুজন কাউন্সিলর প্রার্থী আছেন, তারা নিজের ভোট নিজে দিতে পারেন নাই। প্রত্যেকটা কেন্দ্রেই তারা এ রকম করছে।'
এই কেন্দ্রে ভোট কারচুপির অভিযোগ করেছেন সংরক্ষিত আসনের প্রার্থী শম্পা বসুও। পাশের লুৎফা একাডেমি থেকে তার এজেন্টদের বের করে দেওয়া হয়েছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি।
সিদ্ধেশ্বরী উচ্চ বালিকা বিদ্যালয় কেন্দ্রে ভোট বন্ধের আবেদনকারী কাউন্সিলর প্রার্থী আবু জুবায়ের মো. মিরাতিল্লাহ বলেন, 'আমি নিজের ভোটও দিতে পারি নাই।'তার প্রধান নির্বাচনী এজেন্ট মো. ওয়ালী আল কাদির বলেন, 'সকাল সাড়ে ৭টার দিকে প্রিজাইডিং কর্মকর্তাকে জিম্মি করে সরকারদলীয় কাউন্সিলর প্রার্থীর কর্মীরা তাদের প্রতীকে সিল মারতে থাকে।'

সাংবাদিকদের কর্তব্য পালনে বাধাদানকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থার আশ্বাস
সিটি নির্বাচনে ভোটকেন্দ্রে সাংবাদিকদের কর্তব্য পালনে বাধা দেওয়ার অভিযোগের প্রেক্ষিতে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিলেন নির্বাচন কমিশনার মো. শাহনেওয়াজ।মঙ্গলবার নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, সাংবাদিকরা আগে যেভাবে কাজ করেছেন সেভাবেই কাজ করবেন। তাদের যেন পুলিশ বাধা না দেয় সে জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এরপরও যদি বাধা দেওয়া হয় আমাদেরকে জানাবেন আমরা ব্যবস্থা নেব।এ ছাড়া ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের অধীনে সুরিটোলায় ভোটকেন্দ্র স্থগিতের ব্যাখ্যা দিয়ে তিনি বলেন, রাতে ব্যালট পেপার ছিনতাইয়ের একটা চেষ্টা হয়েছে। এটা নিয়েই একটু গন্ডগোল হচ্ছিল। এ জন্য এটা বন্ধ করা হয়েছে।

অভিযোগ প্রসঙ্গে নির্বাক সিইসি
নির্বাচনের পরিবেশ নিয়ে প্রশ্ন করা হলেও কোনো মন্তব্য করলেন না প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ। ভোটকেন্দ্রে সংঘর্ষ, জালভোট ও এজেন্টদের বের করে দেওয়ার মতো ঘটনা রোধে কী করা হচ্ছে জানতে চাইলে তার কোনো জবাব দেননি সিইসি।'আপনারা দেখান, আপনারা দেখান,' শুধু এটুকু বললেন তিনি।মঙ্গলবার সকালে ভোটগ্রহণ শুরু থেকে শেরেবাংলা নগরে কমিশন কার্যালয়ে নিজের কক্ষে বসে ভোটের খোঁজ-খবর নেন কাজী রকিব। সকাল ১১টার পরে কমিশন থেকে বেরিয়ে ধানমণ্ডির কাকলী উচ্চ বিদ্যালয় ও রেসিডেন্সিয়াল স্কুল-কলেজ কেন্দ্র পরিদর্শনে যান তিনি। ততক্ষণে ঢাকা ও চট্টগ্রামের বিভিন্ন কেন্দ্রে হামলা, ব্যালট বাক্স ভাঙচুর, কেন্দ্র দখল, বোমাবাজি ও জালভোটের খবর চলে আসে গণমাধ্যমে। সার্বিক বিষয়ে জানতে গণমাধ্যমকর্মীরা সিইসিকে প্রশ্ন করলে তার জবাব এড়িয়ে যান তিনি।রেসিডেন্সিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজ কেন্দ্রে গণমাধ্যমকর্মীরা প্রশ্ন নিয়ে সিইসিকে ঘিরে ধরলেও কোনো জবাব দেননি প্রধান নির্বাচন কমিশনার।কাজী রকিব উদ্দিনের কাছে সাংবাদিকরা কোনো বক্তব্য না পাওয়ার কিছুক্ষণের মধ্যেই ঢাকা দক্ষিণ ও উত্তর এবং চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের ভোট বর্জন করে বিএনপি।তবে সিইসি মুখ না খুললেও নির্বাচন কমিশনার মো. শাহনেওয়াজ বলেন, 'আমাদের কাছে সংবাদ রয়েছে- দুয়েকটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়া সুষ্ঠুভাবে নির্বাচন হচ্ছে।'বিএনপি সমর্থিত মেয়র প্রার্থীরা বিভিন্ন অভিযোগে ভোট বর্জনের ঘোষণা দিলেও আইনগতভাবে তার কোনো সুযোগ নেই বলে জানিয়েছেন নির্বাচন কর্মকর্তারা।