নিজস্ব প্রতিবেদক
এপ্রিল ৮, ২০২১, ০২:৫৫ পিএম
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়ামের সদস্য আব্দুর রহমান বলেছেন, রাজাকারের বংশধররা নতুন করে ফণা তুলেছে। তারা স্বাধীনতা বিকিয়ে ধর্মীয় উস্কানি দিয়ে এই ধরনের ঘটনায় লিপ্ত রয়েছে। তাদের বিচার বাংলার মাটিতে করতে হবে। এই ফণা ধরা বিষধর সাপের বিষদাত ভেঙ্গে দিতে হবে।
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের মানুষ জীবন বাজি রেখে মুক্তিযুদ্ধ করেছে এবং স্বাধীনতা ছিনিয়ে এনেছে। এই দেশে আমরা সাম্প্রদায়িক শক্তি দেখতে চাই না। এদের বিরুদ্ধে সকলকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। ঐক্যবদ্ধ প্রতিহত করতে হবে।
বৃহস্পতিবার (৮ এপ্রিল) ফরিদপুরের সালথা উপজেলা পরিষদে স্থানীয় আওয়ামীলীগ আয়োজিত এক সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন। এর আগে গত ৫ এপ্রিল ফরিদপুরের সালথা উপজেলায় লকডাউন কার্যকর করা নিয়ে স্থানীয় জনতার মাঝে গুজব ছড়িয়ে প্রায় চার ঘণ্টা ব্যাপী তাণ্ডব ও ধ্বংসলীলা চলে। এসময় বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার গাড়ি, পেট্রোল পাম্প, সালথা থানা ও কর্মকর্তাদের বাসভবনসহ বেশ কিছু স্থাপনা ভাংচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করা হয়। ক্ষতিগ্রস্ত ওই এলাকায় বৃহস্পতিবার পরিদর্শন করে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সিনিয়র নেতারা।
পরিদর্শনকালে আবদুর রহমান আরও বলেন, আওয়ামী লীগের সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ আজ বিশ্বের বুকে মাথা উচু করে দাঁড়িয়েছে। মানুষের ভাত ও ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠা করেছে। কিন্তু উন্নয়ন অগ্রযাত্রা বাধাগ্রস্ত করতে এক শ্রেনীর ধর্ম ব্যবসায়ী ও স্বাধীনতা বিরোধী শক্তি ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছে। এদের স্থান বাংলার মাটিতে দেয়া যাবে না। এদের সন্ত্রসী কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে। এবং বঙ্গবন্ধুকন্যার নেতৃত্বে বাংলাদেশের উন্নয়ন অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখতে হবে।
প্রেসিডিয়াম সদস্য আব্দুর রহমান স্থানীয় একজন হেফাজত নেতার (মাওলানা আকরাম হোসেন) নাম উল্লেখ করে বলেন, তিনি হেফাজত ও বিএনপি জামাতের স্বার্থ রক্ষার জন্যই এ হামলার নেতৃত্ব দিয়েছেন।
ধর্মের নামে যারা ইসলামকে কুলশিত করবে তাদের প্রতিহত করতে হবে জানিয়ে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কর্ণেল ফারুক খান বলেন, একজন হুজুরকে গ্রেফতারের কেন্দ্র করে একটা সাম্প্রদায়িক শক্তি যে ধরনের কাজ করেছে তা সম্পূর্ণ ইসলাম বিরোধী। ইসলাম শান্তির ধর্ম, ইসলাম ধর্মে ভাঙচুর, মানুষ কে হত্যা, সরকারি স্থাপনা ভাঙচুর সহ কোন অন্যায় সমর্থন করে নাহ।
তিনি আরও বলেন, এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত হবে। আমরা প্রশাসনকে বলেছি ভিডিও ফুটেজ দেখে জড়িতদের চিহ্নিত করুন। কোন নিরীহ কাউকে যেনো হয়রানি করা না হয়। আর জড়িতদের মধ্যে যদি আওয়ামী লীগের কেউও থাকে তাকেও যেনো রেহাই দেয়া না হয়।
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল আলম হানিফ হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, একাত্তরের পরাজিত শক্তি যুদ্ধাপরাধীদের দল জামায়াত। তাদের দোসর বিএনপি আর নব্য রাজাকারের দল হেফাজত ইসলাম তারা একত্র হয়ে এই নারকীয় হামলায় অংশ নিয়েছে। হেফাজত ইসলাম মুক্তিযোদ্ধা বিরোধী, স্বাধীনতা বিরোধী, মুক্তিযোদ্ধা চেতনা বিরোধী। তারা বাংলাদেশের সংবিধান মানতে চায় না, দেশের জাতীয় সংগীত গাইতে চায় না, জাতীয় পতাকারও সম্মান করতে চায় না। এরা বাংলাদেশকে তালেবানী রাষ্ট্র বানাতে চায়। যার কারণে এরা কোন ইস্যু ছাড়াই, কোন কারণ ছাড়াই এ ধরনের হামলা চালিয়েছে। এরা রাষ্ট্রের সম্পদ নষ্ট করেছে। যারা রাষ্ট্রের সম্পদ ধ্বংসের সাথেই জড়িত রয়েছে, জ্বালাও পোড়াও করেছে তাদের প্রত্যেককে খুঁজে খুঁজে বের করে কঠোর আইনের আওতায় আনা হবে। একজনকেও রেহাই দেওয়া হবেনা। আমরা প্রশাসনকে কঠোর ভাবে নির্দেশনা দিয়েছি, যারা সরাসরি হামলায় জড়িত, যারা ইন্ধন দিয়েছে, যারা পরামর্শ দিয়েছে, তারা যে দলেরই হোক, যত শক্তিশালী ব্যক্তিই হোক তাদের বিচার করা হবে। তাদের কঠোর শাস্তি দিয়ে বুঝিয়ে দেওয়া হবে রাষ্ট্রের শক্তির কাছে কোন শক্তিই কাজে আসবে না। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের সময় বিএনপি-জামাত জ্বালাও পোড়াও করে বিচারকে বাঁধাগ্রস্থ করতে চেয়েছিল কিন্তু তারা পারেনি। বর্তমানে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা রাষ্ট্র ক্ষমতায় রয়েছে। তিনি দেশের উন্নয়নের জন্য কাজ করে যাচ্ছেন। যারাই এই উন্নয়ন আর অগ্রগতির পথে বাঁধা হয়ে দাঁড়াবেন তাদের কোন ছাড় দেওয়া হবেনা।
সমাবেশে অন্যদের মধ্যে আরও বক্তব্য রাখেন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আফম বাহাউদ্দিন নাছিম, সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম, এস এম কামাল, দফতর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সুবল সাহা, সহ সভাপতি শামীম হক, সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ মাসুদ হোসেন, কেন্দ্রীয় যুবলীগের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান ফারুক হোসেন, যুগ্ম সম্পাদক ঝর্না হাসান, মহিলা সম্পাদিকা আইভি মাসুদ, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শামসুল হক ভোলা মাস্টার, পৌর মেয়র অমিতাব বোসসহ জেলা ও উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ। পরে নেতৃবৃন্দ ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক অতুল সরকার, পুলিশ সুপার মোঃ আলিমুজ্জামনকে সাথে নিয়ে ক্ষতিগ্রস্থ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়, বাসভবন ও ভূমি অফিস পরিদর্শন করেন।
আমারসংবাদ/আরআই/জেআই