Amar Sangbad
ঢাকা বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল, ২০২৪,

‘খালেদার বিদেশ যাওয়ার বিষয়ে এখনো সিদ্ধান্ত হয়নি, হয়ে যাবে’

নিজস্ব প্রতিবেদক

মে ৭, ২০২১, ০১:৪৫ পিএম


‘খালেদার বিদেশ যাওয়ার বিষয়ে এখনো সিদ্ধান্ত হয়নি, হয়ে যাবে’

আইনমন্ত্রী আনিসুল হক জানিয়েছেন, হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নেওয়ার বিষয়ে তার পরিবারের পক্ষ থেকে যে লিখিত আবেদন করা হয়েছে সে বিষয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।

শুক্রবার (৭ মে) বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে গণমাধ্যমকে তিনি এ কথা বলেন।

মন্ত্রী বলেন, এখনও সিদ্ধান্ত হয়নি। আজকে তো জুমাতুল বিদা। হয়ে যাবে (সিদ্ধান্ত)। খুব শিগগিরই হবে।

এর আগে বুধবার (৫ মে) রাতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের ধানমন্ডির বাসায় আবেদনটি দিয়ে যান খালেদা জিয়ার ছোট ভাই শামীম ইস্কান্দার। এরপর সেটি আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়।

এ বিষয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, খালেদা জিয়ার ছোট ভাই শামীম ইস্কান্দার এসেছিলেন। তিনি জানিয়েছেন, খালেদা জিয়া হাসপাতালে ভর্তি আছেন। চিকিৎসকরা অভিমত দিয়েছেন তাকে বিদেশে নেওয়া প্রয়োজন। যদিও আমরা চিকিৎসকদের কাছে শুনিনি।

আবেদনটি ইতিবাচকভাবে দেখা হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেছেন, আইনে যে পর্যায়ে আছে, কীভাবে কী করা যেতে পারে সেজন্য আবেদন আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। আইন মন্ত্রণালয়ের মতামত এলে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা খালেদা জিয়ার চিকিৎসার জন্য সর্বোচ্চ সুযোগ করে দিয়েছেন উল্লেখ করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আরো বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী এসব বিষয়ে অত্যন্ত মানবিক।

এদিকে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে বিদেশে নেওয়ার ক্ষেত্রে সরকারের অনুমতির বাইরেও বিভিন্ন জটিলতা রয়েছে বলে জানা যাচ্ছে।

তার পরিবারের একজন সদস্য জানিয়েছেন, একদিকে যুক্তরাজ্যসহ বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশিদের যাওয়ার ব্যাপারে নানা বিধিনিষেধ আছে, অন্যদিকে বর্তমান শারীরিক অবস্থায় খালেদা জিয়া দীর্ঘ সময় ধরে বিমানে যেতে পারবেন কিনা- সে ব্যাপারে চিকিৎসকরা এখনও কোন সিদ্ধান্ত দেয়নি।

যদিও তার চিকিৎসক তাকে বিদেশে নিয়ে উন্নত চিকিৎসার পরামর্শ দিয়েছেন।

তবে বিএনপির একজন নেতা জানিয়েছেন, নানামুখী সমস্যা মোকাবিলার চেষ্টা করা হচ্ছে এবং তারা এমন প্রস্তুতি নিচ্ছেন যাতে বাংলাদেশ সরকার অনুমতি দেওয়ার ২৪ বা ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে খালেদা জিয়াকে বিদেশে নেয়া যায়।

এছাড়াও খালেদা জিয়ার পাসপোর্টের মেয়াদ শেষ হয়েছে ২০১৯ সালে এবং এরপর আর এটি নবায়ন করা হয়নি। এখন দু’দিন আগে তার পক্ষে এক আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে কর্তৃপক্ষ পাসপোর্ট নবায়নের প্রক্রিয়া চালাচ্ছে।

বিএনপির একজন নেতা জানান, ই-পাসপোর্ট করানোর জন্য ফিঙ্গার প্রিন্ট, চোখের স্ক্যান এবং ডিজিটাল স্বাক্ষর সরবরাহ করার প্রয়োজন হয়। কিন্তু খালেদা জিয়া বেশ গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকায় তার পক্ষ এগুলো সরবরাহ করা সম্ভব হচ্ছে না।

ফলে তার ক্ষেত্রে এসব শর্ত শিথিল করে কর্তৃপক্ষ খালেদা জিয়াকে পুরনো ধরনের মেশিন রিডেবল পাসপোর্টই নবায়ন করে দিচ্ছে। সেই প্রক্রিয়া শেষ পর্যায়ে বলে তার পরিবারকে জানানো হয়েছে।

জানা গেছে, খালেদা জিয়ার পরিবার তাকে প্রথম লন্ডনে নিতে আগ্রহী।
কিন্তু বাংলাদেশে করোনা ভাইরাস সংক্রমণ পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে যুক্তরাজ্যে সেদেশে বাংলাদেশিদের প্রবেশে বিধিনিষেধ আরোপ করেছে।

তার পরিবারের একজন সদস্য জানিয়েছেন, খালেদা জিয়ার বড় ছেলে এবং বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান লন্ডনে নেয়ার বিষয়ে সেখানে আলোচনা চালাচ্ছেন। লন্ডনের বিকল্প হিসাবে সিঙ্গাপুরে নেওয়ার বিষয়ও পরিবারের চিন্তায় রয়েছে। তবে এরই মধ্যে সিঙ্গাপুর বাংলাদেশ থেকে যাত্রী যাওয়ার ব্যাপারে বিধিনিষেধ আরোপ করেছে।

এখন সৌদি আরব অথবা খালেদা জিয়ার উন্নত চিকিৎসার জন্য সুবিধাজনক কোন দেশ হতে পারে, তেমন বিকল্প দেশের কথাও এখন তার পরিবার এবং দলের মধ্যে আলোচনা হচ্ছে বলে জানা গেছে। তবে কোভিড-১৯ রোগে আক্রান্ত হয়েছিলেন, এমন ব্যক্তির সৌদি আরবে যাওয়ার ক্ষেত্রে কিছু বিধিনিষেধ মানার নিয়ম রয়েছে।

ঢাকায় বিএনপির পক্ষ থেকে যুক্তরাজ্য এবং সিঙ্গাপুরসহ কয়েকটি দেশের কূটনীতিকদের সাথে যোগাযোগ রাখা হচ্ছে বলে দলটির নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে।

বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য বলেন, সাবেক একজন প্রধানমন্ত্রী হিসাবে খালেদা জিয়াকে যুক্তরাজ্য বা সিঙ্গাপুরে নেওয়ার ক্ষেত্রে বিধিনিষেধ কোন সমস্যা হবে না বলে তারা মনে করেন।

খালেদা জিয়ার বয়স এখন ৭৬ বছর এবং তিনি কিছুদিন ধরেই শারীরিক সমস্যায় ভুগছেন। ফলে এখনকার শারীরিক অবস্থায় তিনি বিমানে দীর্ঘ যাত্রা করতে পারবেন কি-না, সে ব্যাপারে চিকিৎসকরা সিদ্ধান্ত দেবেন জানান পরিবারের একজন সদস্য।

তার একজন ব্যক্তিগত চিকিৎসক বলেছেন, খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্য-সংক্রান্ত জটিলতাগুলোর উন্নতি লক্ষনীয়ভাবে ঘটছে না। প্রায় সবক্ষেত্রে অবস্থা আগের মতোই থাকছে। সেজন্য তার বিমানে দীর্ঘ যাত্রা নিয়ে এখনো সংশয় আছে।

লন্ডনের যাওয়ার মতো দূরের যাত্রার সিদ্ধান্ত দেয়ার আগে তারা আবারো সবকিছু পরীক্ষা করে দেখবেন বলে তিনি জানান।

এই চিকিৎসক উল্লেখ করেছেন, খালেদা জিয়ার শারীরিক বিভিন্ন পরীক্ষা এখন চলছে। সেগুলোর রিপোর্ট নিয়ে মেডিকেল বোর্ড আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেবে।

লন্ডনে বা অন্য কোন দেশে নেয়া হলে হাসপাতাল পাওয়া যাবে কি-না, সেই প্রশ্নও রয়েছে। তবে এ বিষয়টিও তারেক রহমান দেখছেন বলে দলের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে।

গত ১১ এপ্রিল খালেদা জিয়ার শরীরে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শনাক্ত হয়। সে সময় সিটি স্ক্যান রিপোর্টে তার ফুসফুসে পাঁচ শতাংশে সংক্রমণ পাওয়া গিয়েছিল।

এরপর গত ২৫ এপ্রিল খালেদা জিয়ার দ্বিতীয়বারের মতো কোভিড-১৯ পরীক্ষা করা হলে সেখানেও তার রিপোর্ট পজিটিভ এসেছিল।

পরে জটিলতা দেখা দেয়ায় গত ২৭ এপ্রিল থেকে ঢাকার এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন খালেদা জিয়া।

আমারসংবাদ/জেআই