Amar Sangbad
ঢাকা বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪,

এখনো শুরু হয়নি বিদেশ যাওয়ার প্রক্রিয়া

নিজস্ব প্রতিবেদক

মে ৮, ২০২১, ০৮:৩৫ এএম


এখনো শুরু হয়নি বিদেশ যাওয়ার প্রক্রিয়া

করোনা ও শ্বাসকষ্টসহ নানা জটিলতায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার বিদেশে যাওয়ার বিষয়টি এখনো বিবেচনা করছে সরকার।

জানা গেছে, রি-ইস্যু করতে দেওয়া তার পুরাতন মেশিন রিডেবল পাসপোর্টটিও (এমআরপি) এখনো হাতে পাননি তিনি।

তবে বিষয়গুলো প্রক্রিয়াধীন থাকা অবস্থায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিএনপির অনেকে দাবি করেন শুক্রবার খালেদা জিয়ার জন্য পাসপোর্ট অফিস খোলা রেখে তার পাসপোর্টটি রি-ইস্যু করে ফেরত দেওয়া হয়েছে। একটি গণমাধ্যমও এ বিষয়ে সংবাদ ছেপেছে। তবে বিষয়টিকে ‌‘মিথ্যা’ বলে উল্লেখ করেছে বাংলাদেশ ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদফতর। 

অধিদফতরের মহাপরিচালক (ডিজি) মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আইয়ুব চৌধুরী বলেন, শুক্রবার অধিদফতর বন্ধ ছিল। বন্ধের দিন খালেদা জিয়ার পাসপোর্ট রি-ইস্যু করে দেওয়ার বিষয়টি মিথ্যা। উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে এমন তথ্য ছড়ানো হয়েছে।

তিনি বলেন, বেগম খালেদা জিয়া মেয়াদউত্তীর্ণ পাসপোর্ট রি-ইস্যুর জন্য আবেদন করেছেন। তার আবেদন এখনো প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।

এদিকে খালেদা জিয়া সরকারের অনুমতি পাওয়ার পর কোন দেশে যাবেন তা নিয়ে এখনো ধোয়াশা কাটেনি। খালেদার চিকিৎসক ও পরিবারের পক্ষ থেকে যুক্তরাজ্য নেওয়ার কথা বললেও তাকে যুক্তরাজ্য নেওয়ার কোনো প্রক্রিয়া শুরু করেনি পরিবার। পাশাপাশি বাংলাদেশিদের যুক্তরাজ্যে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞাও দিয়ে রেখেছে দেশটির সরকার। 

এছাড়াও বাংলাদেশ থেকে চিকিৎসার জন্য জনপ্রিয় তিনটি দেশ হচ্ছে সিঙ্গাপুর, ভারত ও অস্ট্রেলিয়া। এই দেশগুলোর সঙ্গেও বর্তমানে বাংলাদেশের ফ্লাইট চলাচল বন্ধ রয়েছে।

এদিকে বিএনপি কর্মীরা ‘দ্রুত খালেদাকে বিদেশ নেওয়া হচ্ছে’ বললেও এখনো দালিলিক কার্যক্রম শুরু করেনি।

হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের পরিচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেন তৌহিদ-উল আহসান বলেন, আমার কাছে খালেদা জিয়ার বিদেশ যাওয়ার বিষয়ে কোনো আবেদন আসেনি।

শনিবার (৮ মে) দুপুরে আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক আনিসুল হক জানিয়েছেন, করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসাধীন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নেওয়ার বিষয়ে আজকের মধ্যেই আইন মন্ত্রণালয় থেকে মতামত দেওয়া হবে।

মন্ত্রী জানান, খালেদা জিয়ার ভাই শামীম এস্কান্দারের করা আবেদনটি বুধবার ( মে) রাতে স্বরাষ্ট্র থেকে আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হলেও এখনও মতামত বা অভিমত জানাননি। তিনি বলেন, ‘এখনও কিছু হয়নি।’

আইনমন্ত্রী বলেন, আজকের মধ্যে আমি আমার অপিনিয়ন দিয়ে দেব। কিন্তু আজকে যেহেতু শনিবার, কালকে (রোববার) সকালে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ফাইল পৌঁছে যাবে।

শনিবার ছুটির দিন হওয়ায় মন্ত্রণালয়ে নথিটি গ্রহণ করার জন্য কেউ থাকবেন না বলেই রোববার সকালে সেটি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে বলেও জানান আনিসুল হক।

করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য দেশের বাইরে নিতে চায় তার পরিবার ও দল।

এ উদ্দেশ্যে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সরকারি বাসভবনে যান খালেদা জিয়ার বোন সেলিমা ইসলাম ও ভাই ইস্কান্দার মির্জা। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করে তারা খালেদা জিয়াকে বিদেশ পাঠানো অনুমতি দিতে আবেদন জানান। আবেদনপত্র পাওয়ার পর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী তাদেরকে আশ্বাস দেন ‘আইনি বিষয়গুলো’ যাচাই-বাছাই করে এ ব্যাপারে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আবেদনটি গত বৃহস্পতিবার আইন মন্ত্রণালয়ে পৌঁছায়।

বৃহস্পতিবার বিকেলে আইনমন্ত্রী গুলশানের নিজ বাসায় এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, আমরা এই আবেদন সংক্রান্ত প্রয়োজনীয় কাগজপত্র দ্রুত যাচাই-বাছাই করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠাব। তবে আজ সব বন্ধ হয়ে গেছে। আজ আর কোনো সুযোগ নেই। আজ এই বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত হচ্ছে না।

এরপর গতকাল শুক্রবার ছিল সাপ্তাহিক ছুটির দিন। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, আজ শনিবার এ বিষয়ে আইন মন্ত্রণালয় থেকে সিদ্ধান্ত আসবে।

গত ১১ এপ্রিল খালেদা জিয়ার শরীরে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পড়ে। তারপর ব্যক্তিগত চিকিৎসকদের তত্ত্বাবধানে গুলশানের নিজ বাসভবন ফিরোজায় চিকিৎসা নিচ্ছিলেন তিনি। চারদিন পর ১৫ এপ্রিল তাকে নেওয়া হয় এভারকেয়ার হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেসময় চিকিৎসকরা জানান, সিটি স্ক্যানের জন্য তাকে হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। সেই রাতেই বাসায় নিয়ে যাওয়া হয় খালেদা জিয়াকে।

পরে ২৫ এপ্রিল দ্বিতীয় দফায় নমুনা জমা দেওয়ার পর আবারও করোনা পজিটিভ আসে বিএনপি চেয়ারপারসনের। এরপর ২৭ এপ্রিল নিয়মিত পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য তাকে ফের এভারকেয়ার হাসপাতালে নেওয়া হয়৷ পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষ না হওয়ায় তাকে ভর্তিও করা হয় সে রাতে। সেখানে অধ্যাপক শাহাবুদ্দিন তালুকদারের নেতৃত্বে ১০ সদস্যের একটি মেডিকেল বোর্ড খালেদা জিয়ার চিকিৎসা দেখভাল করছেন।

এর মধ্যে খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার অবনতি ও শ্বাসকষ্ট বেড়ে যাওয়ায় গত সোমবার (৩ মে) তাকে এভারকেয়ার হাসপাতালের করোনারি কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) নেওয়া হয়। খালেদা জিয়ার চিকিৎসক দলের সদস্য অধ্যাপক ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন সবশেষ বুধবার রাতে ব্রিফিং করে জানান, তার শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল রয়েছে।

আমারসংবাদ/জেআই