Amar Sangbad
ঢাকা বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪,

বিএনপির সংলাপযাত্রা

নিজস্ব প্রতিবেদক

নিজস্ব প্রতিবেদক

মে ২৫, ২০২২, ০১:১৪ এএম


বিএনপির সংলাপযাত্রা

দ্বাদশ নির্বাচনের দেড় বছর আগে থেকেই সংলাপ যাত্রা শুরু করেছে বিএনপি। গতকাল মঙ্গলবার বিকালে নাগরিক ঐক্যের সাথে সংলাপে বসে বিএনপি। নাগরিক ঐক্যের তোপখানা রোডের কার্যালয়ে বিকেল পাঁচটা থেকে সংলাপ শুরু হয়। এছাড়া আগামী ২৭-২৮ মে বাম দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ শুরু করবে দলটি। জামায়াতের একটি প্রতিনিধি দল গত সোমবার গুলশানে বিএনপি মহাসচিবের সাথে বৈঠক করে বলেও জানা গেছে। 

গতকাল মঙ্গলবার গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলন বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপে বসার সিদ্ধান্তের কথা জানায় বিএনপি। দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, স্থায়ী কমিটির সভায় গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের দাবিতে জাতীয় ঐক্য সৃষ্টির লক্ষ্যে আনুষ্ঠানিকভাবে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা শুরু করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। 

গতকাল বিকেল থেকে এই আলোচনা আমরা শুরু করেছি। আমরা অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে কথা বলব। তাদের সঙ্গে আলোচনার প্রেক্ষিতে আমরা চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেব যে, ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের যে রূপরেখা, সেই রূপরেখা তৈরি করা হবে। মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর     বলেন, সবার সঙ্গেই আলোচনা হবে, অল দ্য পলিটিক্যাল পার্টিসের সঙ্গে। 

জামায়াতের সঙ্গে হবে কি-না জানতে চাইলে তিনি বলেন, কথা তো বলতে হবে। অবশ্যই। তাদের সাথে কথা না বললে কেমন করে হবে। সবার সাথেই তো কথা বলতে হবে।

২০ দলীয় জোট থাকবে কি-না জানতে চাইলে বিএনপি মহাসচিব বলেন,  ২০ দলীয় জোট তো আমরা এখন পর্যন্ত বিলুপ্ত করি নাই। এই জোটের কী হবে সেটা এই আলোচনার মধ্য দিয়ে ফাইনালাইজিড করব। 

গত ২৩ মে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সভাপতিত্বে স্থায়ী কমিটির বৈঠক হয়। বৈঠকের সিদ্ধান্তসমূহ এই সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি মহাসচিব তুলে ধরেন।

সংলাপের উদ্দেশ্য সম্পর্কে মির্জা ফখরুল বলেন, এই আলোচনার মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার এবং এই ফ্যাসিবাদী সরকার- যারা মানুষের সমস্ত অধিকার কেড়ে নিয়েছে, মানুষের ভোটের অধিকার কেড়ে নিয়েছে এবং আজকে অর্থনীতি, দেশের সমস্ত যে প্রতিষ্ঠানগুলো আছে সেগুলোকে ধ্বংস করে ফেলেছে, সেই সব প্রতিষ্ঠানগুলোকে ফিরিয়ে নিয়ে আসা, জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠা করা, ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠা করা— এটাই হচ্ছে আমাদের মূল লক্ষ্য। এজন্য আন্দোলন করতে হবে।আন্দোলন করতে ঐক্য সৃষ্টির লক্ষ্যে এই আলোচনার উদ্যোগ আমরা নিয়েছি। 

তিনি বলেন,  আমাদের মূল যে দাবিগুলো আছে— প্রথম. দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াসহ সমস্ত রাজবন্দির মুক্তির দাবি। দুই. এই সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে, তারা পদত্যাগ করে নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে। তিন. সংসদ বাতিল করতে হবে এবং তারপর পুনর্গঠিত নির্বাচন কমিশনের মাধ্যমে সকলের কাছে গ্রহণযোগ্য একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন করতে হবে। সেই নির্বাচনের মধ্য দিয়ে সংসদ গঠন হবে, সরকার গঠন হবে। 

এ দাবিগুলো আমাদের পক্ষ থেকে থাকবে। এখন অন্যান্য দলগুলোর সঙ্গে এ নিয়ে আলোচনা করব এবং এই আলোচনার মধ্য দিয়ে তাদের অন্যান্য দাবি নিয়ে একক দাবিনামা তৈরি করা হবে। একক দাবির প্রেক্ষিতে আমরা ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন শুরু করব। এই জোটের কী নামকরণ হবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা একে জোট বলছি না, অন্য কোনো কিছু বলছি না। আলোচনা করার মধ্য দিয়ে ফরমেট, ফ্রম নির্ধারিত হবে।

২৬ মে সারা দেশে বিক্ষোভ কর্মসূচি : স্থায়ী কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আগামী ২৬ মে ঢাকা ছাড়া সকল মহানগর ও জেলা সদরে বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনগুলো যৌথভাবে বিভোক্ষ সমাবেশ করবে। বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া ও নোবেল বিজয়ী অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসসহ দেশের সিনিয়র সিটিজেনদের সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অসন্মানজনক বক্তব্যের প্রতিবাদে এই বিক্ষোভ হবে বলে জানান মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

বন্যায় দুর্গতদের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান : মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন,  স্থায়ী কমিটির সভায় দুর্গত এলাকায় সরকারি ত্রাণ তৎপরতা একেবারেই অপ্রতুল হওয়ায় অসন্তোষ প্রকাশ করা হয়। একদিকে যখন বন্যাদুর্গত মানুষ ত্রাণের জন্য আহাজারি করছে, সেই সময় জনৈক মন্ত্রীর ত্রাণ বিতরণের সময় সাহায্যপ্রার্থী হাজার মানুষের ওপর পুলিশি লাঠিচার্জের ঘটনার নিন্দা ও প্রতিবাদ জানানো হয়। বন্যার্তদের ওপর এই আক্রমণ আওয়ামী লীগের স্বভাবজাত অমানবিক ও সন্ত্রাসী কার্যকলাপের প্রতিফলন। সিলেটের বন্যা উপদ্রুত এলাকায় বিএনপির পক্ষ থেকে দুর্গত মানুষের পাশে দাঁড়ানো এবং ত্রাণকার্য পরিচালনার জন্য জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকুকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। বৃহত্তর সিলেট জেলার বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের সকল নেতাকর্মীদের বন্যাদুর্গত মানুষের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানানো হয়।

জানা গেছে, গতকাল বিকেল ৫টায় মাহমুদুর রহমান মান্নার নেতৃত্বাধীন নাগরিক ঐক্যের সঙ্গে সংলাপের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে সংলাপ শুরু করে বিএনপি। দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল পল্টনে নাগরিক ঐক্যের কার্যালয়ে আসেন। বিএনপি চেয়ারপারসনের মিডিয়া উইংয়ের সদস্য শায়রুল কবির খান সংলাপের যাত্রা শুরু হওয়ার খবর নিশ্চিত করেন। বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ করার জন্য পাঁচটি টিম গঠন করা হয়েছে। এসব টিমের নেতৃত্বে একজন করে স্থায়ী কমিটির সদস্য রয়েছেন। 

স্থায়ী কমিটির সদস্যরা হচ্ছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, নজরুল ইসলাম খান, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী ও ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু। আগামী ২৭-২৮ মে বাম দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ শুরু করবে দলটি। আর এ  টিমে থাকবেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী ও ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু। 

এদিকে আরেকটি নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে, জামায়াতের একটি প্রতিনিধি দল গত সোমবার গুলশানে বিএনপি মহাসচিবের সাথে বৈঠক করেন। এতে নেতৃত্ব দেন কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সহকারী সেক্রেটারি অ্যাডভোকেট ড. হেলাল উদ্দিন ও দেলওয়ার হোসাইন।

Link copied!