Amar Sangbad
ঢাকা বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪,

কুমিল্লায় বিএনপির গণসমাবেশ

নয়াপল্টনেই হবে বিএনপির সমাবেশ: মির্জা ফখরুল

মো. মাসুম বিল্লাহ

নভেম্বর ২৬, ২০২২, ০৫:০৯ পিএম


নয়াপল্টনেই হবে বিএনপির সমাবেশ: মির্জা ফখরুল

আগামী ১০ ডিসেম্বর বিএনপির সমাবেশ রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে নয়, নয়া পল্টনে করবো বলে  বলে জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। শনিবার (২৬ নভেম্বর) বিকালে কুমিল্লা টাউন হল মাঠে বিএনপির গণসমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এই কথা জানান তিনি।

সকল রাজনৈতিক দল নিয়ে একটি জাতীয় সরকার গঠনের প্রত্যাশা ব্যক্ত করে মির্জা ফখরুল বলেন, শেখ হাসিনার পদত্যাগের আগে এ দেশে কোনো নির্বাচন হবে না। তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া কোন নির্বাচন হবে না। নির্বাচনের পূর্বে সংসদ ভেঙে দিতে হবে। নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করে সে নির্বাচন কমিশনের অধিনে নির্বাচন হবে।

তিনি বলেন, অবৈধ প্রধানমন্ত্রী, জোর করে দুইবার নির্বাচন করেছে। ’১৪ সালে কেউ ভোট দিতে যায় নাই, নির্বাচনের আগে তাদের ১৫৪ জন জয়ী হয়ে গেছেন। ’১৮-তে রাতেই ভোট শেষ। তিনি নাকি আবার নির্বাচন করবেন। আপনারা কি আবার তা দের ভোট দিবেন? তারাও জানে, ভোট হলে জামানত থাকবে না। তাই আবার আগের কৌশলে যেতে চান। কিন্তু তা হবে না। আপনাদেরকে সাথে নিয়ে আমরা আরো দুর্বার আন্দোলন তৈরি করে সরকারকে পদত্যাগে বাধ্য করবো। এরপর জনগণের একটি সরকার আমরা গঠন করবো।

আওয়ামী লীগের জনসভা প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল বলেন, প্রধানমন্ত্রী যশোরে জনসভা করেছেন, রাষ্ট্রীয় সকল সুযোগ-সুবিধা গ্রহণ করে সেখানে মানুষের কাছে ভোট চেয়েছেন, বলেছেন আবার নৌকায় ভোট দেন। এ কথা শুনে আমার আব্বাস উদ্দিনের গানের কথা মনে পড়ে গেছে ‘আগে জানলে তোর ভাঙ্গা নৌকায় উঠতাম না।’ এ দেশের মানুষও এখন সেই গান গাইতে শুরু করেছেন। ভুলে যান, দেশের মানুষ আর চায় না। সময় থাকতে মানে মানে চলে যান। না হয় পরিণতি ভালো হবে না।

তিনি বলেন, জীবন বাজি রেখে যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করা হয়েছে। স্বাধীনতার ৫০ বছর পর আমাদের ভোটের অধিকারের জন্য লড়াই-সংগ্রাম করে জীবন দিতে হচ্ছে। তারা সরাসরি ভোট দিতে চায় না। কারণ ভোট হলে আমানত থাকবে না। এজন্য ফন্দি ফিকির শুরু করেছে। 

তারা থাকবে ক্ষমতায়, তারা মন্ত্রী-এমপি থাকবে, আর আমরা ভোট দিবে। এজন্য আবার সমস্যা শুরু করেছে। ফের গায়েবী মামলা হয়েছে। পত্রিকায় হেডলাইন হচ্ছে। বলা হচ্ছে ককটেল বিস্ফোরণের কথা। কিন্তু পাবলিক বলছে আমরা শুনিনি। তাদের গন্ডারের মতো চামরা হয়েছে। বেশরম, বেহায়া হয়ে গেছে সরকার।

তিনি বলেন, ঢাকার গণসমাবেশ নস্যাৎ করতে আগে থেকেই মামলা দেওয়া হয়েছে। এসব করে আমাদের সমাবেশ বন্ধ করা যায়নি, যাবেও না। ঢাকা-রাজশাহীতেও সমাবেশ বন্ধ করা যাবে না। আমাদের কথা পরিস্কার। আমরা অধিকার আদায়ের জন্য শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করছি। অগ্নিসন্ত্রাস করে আপনারা বিরোধী দল-বিএনপির নাম দিচ্ছেন। 

চট্টগ্রামেও ছাত্রলীগের আগুন সন্ত্রাসের পর বিএনপির নামে মামলা দেওয়া হয়েছে। কুমিল্লায়ও একই ঘটনা ঘটেছে। কুমিল্লার হিরু-হুমায়ূনকে গুম করা হয়েছে। তাদের সন্তানেরা বাবাকে পায় না। সন্তানদের চোখ ছল ছল করে, আমরা সান্ত¦না দিতে পারি না। সিলেটের ইলিয়াসকে গুম করা হয়েছে।

বিএনপির মহাসচিব বলেন, কিছুদিন আগে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, রিজার্ভ কি আমরা চিবিয়ে খেয়েছি? আমি বলি- রির্জাব আপনারা চিবিয়ে খাননি, গিলেই খেয়ে ফেলেছেন। সব খেয়ে ফেলেছেন, বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার পাচার করে বিদেশে পাঠিয়ে দিয়েছেন। বাংলাদেশ থেকে গত ১০ বছরে হাজার-হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার হয়ে গেছে। বিদ্যুতের জন্য ৭৮ হাজার কোটি টাকা তারা ১ বছরে পাচার করেছে। 

বিদ্যুতের দাম কতো বাড়িয়েছে? দাম দিতে দিতে আমরা দিশেহারা হয়ে গেছি। অকটেন, ডিজেল পেঁয়াজের দাম বাড়িয়েছে। সবকিছুর বাদম বেড়ছে। আয় বাড়েনি। কিন্তু ওদের আয় বাড়ে। তারা ফুলে ফেঁপে যাচ্ছে। একজনের ৪টা বাড়ি থেকে ১০টা বাড়ি হয়েছে। আমাদের সাধারণ মানুষেরা দুবেলা দু মুঠো খেতে পায় না। আমাদের মা-বোনেরা তাদের সন্তানকে একটি ডিমও খাওয়াতে পারছেন না।

বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশনার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমাদের নেতা ৮ হাজার মাইল দুর থেকে ডাক দিয়েছেন ট্যাক-ব্যাক বাংলাদেশ। কোন বাংলাদেশ? যে বাংলাদেশের স্বপ্ন আমরা দেখেছিলাম। যে স্বপ্ন দেখে দেশ স্বাধীন করেছিলাম। আমাদের দেশের মানুষ সুখে-শান্তিতে থাকতে পারে, সেই বাংলাদেশ। কিন্তু এই সরকার কোথাও কিছু রাখেনি। 

ন্যায় বিচার পাওয়া যায় না। মিথ্যা মামলা দিয়ে সাজা দিয়ে দেয়। এখানের উপস্থিত আমাদের নেতাদের বিরুদ্ধে ৫০/৬০টি করে মামলা রয়েছে। আমাদের নেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মিথ্যা মামলায় সাজা দিয়ে আটকে রাখা হয়েছে। সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে মিথ্যা মামলায় সাজা দিয়েছে, তিনি দেশে আসতে পারছেন না।

কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক ও কেন্দ্রীয় ত্রাণ ও পুনর্বাসন সম্পাদক হাজী আমিন উর রশিদ ইয়াছিনের সভাপতিত্বে সমাবেশে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লা বুলু, আন্তর্জাতিক বিষয়ক সহ সম্পাদক এবং সংরক্ষিত নারী আসনের এমপি ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা, কুমিল্লা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মোস্তাক মিয়াসহ কুমিল্লা সাংগঠনিক বিভাগের শীর্ষ নেতৃবৃন্দ।

গণসমাবেশ পরিচালনা করেন কুমিল্লা মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক উদবাতুল বারী আবু এবং সদস্য সচিব ইউসুফ মোল্লা টিপু।

টিএইচ
 

Link copied!