Amar Sangbad
ঢাকা বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪,

ছয় দফা সুপারিশ প্রণিধানযোগ্য

সেপ্টেম্বর ২৩, ২০২১, ০৭:২৫ পিএম


ছয় দফা সুপারিশ প্রণিধানযোগ্য

আগামী প্রজন্মের জন্য টেকসই ভবিষ্যৎ রেখে যাওয়ার উদ্দেশ্যে একটি ‘সার্বিক বৈশ্বিক’ উদ্যোগের মাধ্যমে জরুরি অবস্থা মোকাবিলায় বিশ্ব নেতাদের প্রতি আশু সাহসী ও জোরালো পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। নিউইয়র্কে জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব মোকাবিলাবিষয়ক এক বৈঠকে ছয়টি সুপারিশ পেশ করেছেন তিনি। যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন এবং জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস নিউইয়র্কে যৌথভাবে এ বৈঠকের আয়োজন করেন। শেখ হাসিনা তার প্রস্তাবে বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধি ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে রাখতে প্যারিস চুক্তির যথাযথ প্রয়োগের আহ্বান জানিয়েছেন।

তিনি উন্নত দেশগুলোর কাছ থেকে বার্ষিক ১০০ বিলিয়ন ডলার জলবায়ু তহবিল আদায়ের ওপরও জোর দেন। এ তহবিলের ৫০ শতাংশ জলবায়ু ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোতে অভিযোজন ও স্থিতিস্থাপকতার জন্য ব্যবহার করা হবে। উন্নয়শীল দেশগুলোতে নতুন আর্থিক প্রক্রিয়া ও সবুজ প্রযুক্তি হস্তান্তরের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ক্ষয়ক্ষতি এবং সেই সঙ্গে বৃহৎ আকারের জনসংখ্যার স্থানচ্যুতি মোকাবিলার যে আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী, তা বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ। মহামারি ও দুর্যোগের বিপদ মোকাবিলায় বিশেষত জলবায়ু-সৃষ্ট দুর্যোগে আক্রান্ত সিভিএফ (ক্লাইমেট ভালনারেবল ফোরাম) দেশগুলোর সক্ষমতা বৃদ্ধিতে আন্তর্জাতিক সমপ্রদায়ের সহায়তার গুরুত্বও প্রধানমন্ত্রী তার বক্তৃতায় তুলে ধরেন।

জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক প্রতিটি আন্তর্জাতিক সম্মেলনে অনেক গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা হলেও পরে সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে কাঙ্ক্ষিত অগ্রগতি লক্ষ্য করা যায় না। এ ধারার পরিবর্তন জরুরি। উল্লেখ্য, জলবায়ু ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলো বৈশ্বিক গ্রিন হাউস গ্যাস নির্গমনে সবচেয়ে কম অবদান রাখে; অথচ এসব দেশের জনগণই সবচেয়ে বেশি ক্ষয়ক্ষতির শিকার। জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় বাংলাদেশ সরকার বৈশ্বিক পথিকৃৎ হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। এখন অন্য দেশগুলোর উচিত বৈশ্বিক তাপমাত্রা যাতে কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় নিয়ন্ত্রণ করা যায় সে জন্য যথাযথ পদক্ষেপ নেয়া।

এর ব্যত্যয় ঘটলে বিশ্ববাসীকে ভয়াবহ পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে হবে। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে স্বল্পোন্নত দেশগুলোর প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর ভোগান্তি বেড়েই চলেছে। তাদের জীবনমানের পরিবর্তনে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। যেহেতু জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে এই জনগোষ্ঠীর বংশপরম্পরায় প্রাপ্ত অভিজ্ঞতা অকার্যকর হয়ে যাচ্ছে, তাই জীবনমানের পরিবর্তনে শিল্পোন্নত দেশগুলোকে নিতে হবে বিশেষ উদ্যোগ।

প্যারিস চুক্তির সব ধারাসহ প্রাসঙ্গিক সব বৈশ্বিক চুক্তি সময়মতো বাস্তবায়ন করতে হবে। পরিস্থিতির মারাত্মক রূপ নেয়া ঠেকাতে গৃহীত পদক্ষেপ বাস্তবায়নে সবাইকে দায়িত্বশীল হতে হবে। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সম্মেলনে এ বিষয়ে দীর্ঘমেয়াদি আলোচনা হলেও ক্ষতিগ্রস্তদের প্রকৃত ক্ষতিপূরণ নির্ধারণসহ বিভিন্ন বিষয়ে জটিলতা দেখা দেয়।

দুঃখজনক হলো, বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সম্মেলনে কোনো কোনো প্রভাবশালী দেশ নিজেদের দায় এড়ানোর এবং স্বল্পোন্নত দেশগুলোর ওপর দায়-দায়িত্ব চাপিয়ে দেয়ার চেষ্টা করে। অথচ স্বল্পোন্নত ও উন্নয়নশীল দেশগুলোর উন্নয়ন কর্মকাণ্ড ব্যাহত হলে তাদের অস্তিত্ব রক্ষাই কঠিন হয় পড়বে। শিল্পোন্নত দেশগুলোর উচিত কৌঁসুলি মনোভাব পরিহার করে বিশ্ববাসীর টেকসই ভবিষ্যৎ নির্মাণে অগ্রণী ভূমিকা পালন করা। এসব দেশ স্বতঃস্ফূর্তভাবে দায়িত্ব পালনে এগিয়ে না এলে বর্তমান জটিল পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ আকার ধারণ করবে।