Amar Sangbad
ঢাকা শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪,

বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিপরীক্ষা সমন্বয়হীনতা কাম্য নয়

সেপ্টেম্বর ২৬, ২০২১, ০৭:২৫ পিএম


 বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিপরীক্ষা সমন্বয়হীনতা কাম্য নয়

বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সাথে এখন যুক্ত হয়েছে আরও একটি শব্দ-যুদ্ধ! ঢাল-তলোয়ারের ঝনঝনানি নেই ঠিক। কিন্তু সারা দেশের লাখো শিক্ষার্থীকে যে কঠিন প্রতিযোগিতার মুখোমুখি হতে হয়, তাতে যুদ্ধ শব্দটা বোধ হয় বাড়াবাড়ি নয়। প্রত্যাশার চাপ, সময় ও নিজের আগ্রহের সঙ্গে সমন্বয় রেখে একটা লক্ষ্য নির্ধারণ, পরীক্ষার প্রস্তুতি— সব মিলিয়ে কাজটা সহজ নয়। করোনার কারণে পরীক্ষা ছাড়াই এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের মূল্যায়ন করা হলেও বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ‘গুচ্ছ ভিত্তিতে’ ভর্তিপরীক্ষা নেয়ার পক্ষেই অবস্থান নিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)।

অন্যদিকে এবার সাড়ে ১৩ লাখের বেশি পরীক্ষার্থীর সবাইকে পাস করে দেয়ায় প্রার্থীর সংখ্যাও দাঁড়িয়েছে অনেক। এত বিপুল সংখ্যক শিক্ষার্থী উচ্চশিক্ষায় ভর্তি হতে পারবেন কি-না, এ নিয়ে একটা প্রশ্ন থেকেই যায়।    

কারণ, উচ্চশিক্ষায় ভর্তির জন্য এত আসন নেই। যদিও ইউজিসি ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের কলেজগুলোর হিসাবে আসনের এই তথ্য নিয়ে কিছুটা বিভ্রান্তি আছে। এ রকম পরিস্থিতিতে উচ্চশিক্ষায় ভর্তির বিষয়টি শিক্ষার্থীদের জন্য কঠিনতর হয়ে দাঁড়িয়েছে। ইউজিসি সূত্র মতে, উচ্চশিক্ষায় নিয়োজিত বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে স্নাতক সম্মান, স্নাতক পাস ও সমমান কোর্সে ১৩ লাখ ২০ হাজারের মতো আসন রয়েছে।

এরমধ্যে ৩৯টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ৬০ হাজার ৯৫টি, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে দুই লাখ তিন হাজার ৬৭৫টি, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে আট লাখ ৭২ হাজার ৮১৫টি, ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ে ৬০ হাজার, উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে ৭৭ হাজার ৭৫৬টি, দুটি আন্তর্জাতিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ৪৪০টি এবং মেডিকেল ও ডেন্টাল কলেজে সাড়ে ১০ হাজার আসন রয়েছে।

এছাড়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত সাত কলেজে ২৩ হাজার ৩৩০টি, চারটি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে ৭২০টি, ছয়টি টেক্সটাইল কলেজে ৭২০টি, সরকারি ও বেসরকারি নার্সিং ও মিডওয়াইফারিতে পাঁচ হাজার ৬০০টি, ১৪টি মেরিন অ্যান্ড এরোনটিক্যাল কলেজে ৬৫৪টি, ঢাকা ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে সাড়ে তিন হাজার এবং চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত প্রতিষ্ঠানে ২৯০টি আসন রয়েছে। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির ক্ষেত্রে এতদিন সাধারণত ২০০ নম্বরের ভিত্তিতে শিক্ষার্থী নির্বাচন করা হতো।

এরমধ্যে এসএসসি ও এইচএসসির সনদের ওপর থাকত ৮০ নম্বর। আর পরীক্ষা নেয়া হতো ১২০ নম্বরে। কিন্তু এবার আর সেটা হচ্ছে না। ভর্তিতে সনদের ওপর তেমন কোনো নম্বর রাখতে চাচ্ছে না বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। এবার যেহেতু পরীক্ষা ছাড়াই আগের দুই পরীক্ষার ভিত্তিতে এইচএসসি ও সমমানের ফল প্রকাশ করা হয়েছে, তাই মেধা যাচাইয়ে কঠোর হচ্ছে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো।

ভর্তিতে অনেকটা ‘মিনি ইন্টারমিডিয়েট’ পরীক্ষায় বসতে হবে শিক্ষার্থীদের। স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলাসহ নানা নিয়মের মধ্যে দিয়ে নিয়মিত শিক্ষাকার্যক্রমসহ ভর্তিপরীক্ষার প্রস্তুতি নেয়া প্রয়োজন। দীর্ঘসময় আবাসিক হল ও ক্লাসরুম বন্ধ থাকাতে নানা ধরনের মেরামত ও সংযোজন-বিয়োজন দরকার, সেদিকেও নজর দিতে হবে।

করোনাকালের আগে থেকেই বিগত কয়েক বছর হলো সমন্বিত ভর্তি কার্যক্রমের নানা পরিকল্পনা করা হলেও বিভিন্ন কারণে তা বাস্তবায়ন হয়নি। সমন্বিত ভর্তি কার্যক্রমের মূল উদ্দেশ্য ছিলো শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি কমানো। টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়ার শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে আলাদা আলাদা গিয়ে পরীক্ষা দেবার বিষয়টি এখনো অনেকটাই আগের মতো।

এছাড়া একই দিনে দুটি বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষা দেয়ার মতো বিষয়টিও সামনে চলে আসছে বারবার। করোনাকালে সমন্বিত বিষয়টির প্রয়োজনীয়তা আরও বেশি করে উপলব্ধি করা যাচ্ছে। এ বছরও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত সরকারি সাত কলেজের স্নাতক ভর্তিপরীক্ষার তারিখ একই দিন হওয়ায় বিপাকে পড়েছে সাধারণ শিক্ষার্থীরা।

সাত কলেজের কলা ও সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদ ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের স্নাতক শ্রেণিতে ভর্তিপরীক্ষা একই দিনে অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। অনেক শিক্ষার্থীই রয়েছে যারা এই দুই বিশ্ববিদ্যালয়েই ভর্তির আবেদন করেছে।

তথ্যমতে, আগামী ৩০ অক্টোবর ঢাবি অধিভুক্ত সরকারি সাত কলেজের কলা ও সামাজিক বিজ্ঞান ইউনিটের ভর্তিপরীক্ষা আবার ৩০ ও ৩১ অক্টোবর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘ডি’ ইউনিটের ভর্তিপরীক্ষার তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে।

দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় তাদের নিজ নিজ নিয়মে চলে। তাদের রয়েছে নিজস্ব সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষমতা। কাজেই কোনো সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেয়ার সুযোগ যেমন নেই তেমনি তাদের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপও সমস্যা ডেকে আনতে পারে। সিদ্ধান্ত ও স্বাধীনতার প্রতি সম্মান জানিয়ে আমাদের আশাবাদ, করোনাকালে শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্য নিরাপত্তা ও ভোগান্তির কথা মাথায় রেখে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে সমন্বিত ভর্তি কার্যক্রম, কিংবা সুবিধাজনক আলাদা আলাদা সময়ে কর্মসূচি পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন (ইউজিসি) এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে সহায়তা করতে পারে।