Amar Sangbad
ঢাকা বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪,

প্রবাসফেরত অসহায় নারী শ্রমিক পাশে দাঁড়ানোর বিকল্প নেই

অক্টোবর ২, ২০২১, ০৬:০০ পিএম


 প্রবাসফেরত অসহায় নারী শ্রমিক পাশে দাঁড়ানোর বিকল্প নেই

পরিবারে একটু স্বচ্ছলতা আনার জন্য মাতৃভূমির মায়া ত্যাগ করে, পরিবার-পরিজনকে ছেড়ে অনেক নারীই বিদেশে গেছেন, এখনো অনেকে যাওয়ার প্রক্রিয়ায় আছেন। কিন্তু কষ্টের প্রবাস থেকে ফিরেও জীবনখাতায় কোনো প্রাপ্তি যোগ হয়নি অনেকেরই, বরং সেখানে একই রকম শূন্যতা বিরাজ করছে।

বেসরকারি সংস্থা ব্র্যাকের তথ্য অনুযায়ী, করোনা মাহামারির মধ্যে প্রায় পাঁচ লাখ শ্রমিক দেশে ফিরে এসেছেন। এর মধ্যে ৫০ হাজার নারী শ্রমিক। বিদেশ ফেরত অধিকাংশ শ্রমিক কর্মরত ছিলেন মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে।   

বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব লেবার স্টাডিজ তথা বিলস দেশে ফেরা নারী শ্রমিকদের উপর একটা গবেষণা চালিয়েছে। গবেষণায় দেখা গেছে, বিদেশফেরত ৮৫ ভাগ নারী শ্রমিক হতাশায় ভুগছেন। নতুন করে কাজ জোগাড় করতে ব্যর্থ হয়েছেন ৬০ ভাগ শ্রমিক।

বিলস পরিচালিত গবেষণায় উঠে আসা এই তথ্য আমাদের উদ্বিগ্ন না করে পারে না। আরও উদ্বেগের বিষয়, এসব নারী শ্রমিকের ৬১ শতাংশের মাথায়ই গড়ে ৭৭ হাজার টাকার ঋণের বোঝা রয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে তাদের পাশে দাঁড়ানোর বিকল্প নেই। বস্তুত বিলসের গবেষণায় যেসব তথ্য উঠে এসেছে, তা নিছক বেকারত্ব ও কর্মসংস্থানের বিষয় হতে পারে না। এতে দেখা যাচ্ছে, নারী শ্রমিকদের ৫৫ শতাংশকেই জোর করে ফেরত পাঠানো হয়েছে।

এছাড়া প্রত্যাশিত কাজ ও মজুরি না পাওয়ায় নির্ধারিত সময়ের আগেই দেশে ফিরে আসতে বাধ্য হয়েছেন ২৩ শতাংশ। এসব নারীর প্রায় সবাই বৈধপথে বিদেশে গিয়েছিলেন। সেক্ষেত্রে তারা কর্মাদেশের মাধ্যমেই নিযুক্ত হয়েছিলেন। তাহলে তাদের এভাবে জোর করে ফেরত পাঠানো বা নির্ধারিত মজুরি ও কর্ম থেকে বঞ্চিত করা হবে কেন? তাদের অধিকার ও দাবি নিয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বৈদেশিক কর্মসংস্থান ও প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়সহ সংশ্নিষ্ট দূতাবাসগুলোকে এখনই সক্রিয় হতে হবে।

আমরা জানি, মধ্যপ্রাচ্যে বিশেষত সৌদি  আরবে গৃহকর্মী হিসেবে যাওয়া আমাদের নারী শ্রমিকরা নানা প্রতারণা এবং শারীরিক, মানসিক ও যৌন নির্যাতনের শিকার হন। তাদের বেশির ভাগই যে কাজের জন্য প্রবাসে পাড়ি জামান, অধিকাংশই সেই কাজে নিযুক্ত হতে পারেন না।

বরং অমর্যাদাকর অনেক কাজে জোর করে নিয়োজিত করা হয়। আবার যে পারিশ্রমিক পাওয়ার কথা, তাও মেলে না। সবচেয়ে উদ্বেগ ও বেদনাদায়ক তাদের ওপর নির্বিচার যৌন নির্যাতন। স্বাবলম্বী হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে পরিবার-পরিজন ফেলে পরদেশে গিয়ে দুঃসহ পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়ে অনেকে মানসিক ভারসাম্যও হারিয়ে ফেলেন।

বিলসের জরিপেও তা উঠে এসেছে। এতে দেখা গেছে, ফেরত আসা নারী শ্রমিকদের ৫২ শতাংশ জবরদস্তিমূলক শ্রমের শিকার। যৌন হয়রানির শিকার হয়েছেন ৭ শতাংশ। ৩৮ শতাংশ শারীরিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। এসব নারী শ্রমিকের ৫৫ শতাংশই শারীরিকভাবে এবং ২৯ শতাংশ মানসিকভাবে অসুস্থ। যদিও তাদের ৮৭ শতাংশই কোনো চিকিৎসা পাননি।

এমন পরিস্থিতিতে প্রবাসে তাদের অধিকার ও নির্যাতনের বিচার নিশ্চিত করার পাশাপাশি দেশে যাতে উপযুক্ত চিকিৎসা পান, সেই ব্যবস্থাও করতে হবে। মনে রাখতে হবে, আমাদের সামাজিক বাস্তবতায় প্রবাসফেরত নারী শ্রমিকদের জীবন সহজ নয়।

বিদেশ থেকে অর্থ পাঠানোর সময় পরিবারে যতটুকু সম্মান ও মর্যাদা পায়, ফিরে আসার পর তাও আর থাকে না। এসব নারী যাতে পরিবার ও সমাজের কাছে ‘বোঝা’ না হন, তা দেখতে হবে সরকারকেই। এ ক্ষেত্রে সামাজিক ও উন্নয়ন সংস্থাগুলোকেও এগিয়ে আসতে হবে। ভুলে যাওয়া চলবে না, তারা যেমন অনাকাঙ্ক্ষিত, তেমনই অমানবিক পরিস্থিতির শিকার।

এই পরিস্থিতিতে কর্তৃপক্ষ হাত-পা গুটিয়ে বসে থাকতে পারে না। এও মনে রাখতে হবে, এভাবে দলে দলে নারী-পুরুষ নির্বিশেষে প্রবাসী শ্রমিক মেয়াদপূর্তির আগেই ফিরে আসতে থাকলে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের ক্ষেত্রে। পাশাপাশি সামাজিক ক্ষেত্রেও দেখা দেবে অস্থিরতা।
   
বিদেশ থেকে যে নারী শ্রমিকরা ফিরে আসছেন তাদের পুনর্বাসন এবং প্রশিক্ষণ দিয়ে আবারো বিদেশে পাঠানোর ব্যাপারে যে উদ্যোগ নেয়ার কথা সেটা কিন্তু বাস্তবায়ন হচ্ছে না। ফিরে আসা শ্রমিকদের সমস্যার কথাগুলো আগে জানতে হবে। সে অনুযায়ী দুই দেশের রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে কথা বলে সমস্যার সমাধান করতে হবে।