Amar Sangbad
ঢাকা মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল, ২০২৪,

বাড়ছে কিশোর অপরাধ: দেশে পর্যাপ্ত সংশোধন কেন্দ্র গড়তে হবে

অক্টোবর ৫, ২০২১, ০৭:৩০ পিএম


বাড়ছে কিশোর অপরাধ: দেশে পর্যাপ্ত সংশোধন কেন্দ্র গড়তে হবে

কৈশোরকাল মানুষের ভবিষ্যৎ জীবন গঠনের সময়। এ সময়টাতেই হূদয়ে  আশা ও স্বপ্ন দানা বাঁধতে শুরু করে। কিন্তু ত্রুটিপূর্ণ সমাজব্যবস্থা ও ঝুঁকিপূর্ণ পরিবেশের কারণে অনেক কিশোরের আশা ও স্বপ্ন ধূলিসাৎ হয়ে যায়। ফলে তারা হতাশা আর নৈরাজ্যের অন্ধকারে তলিয়ে যায় ক্রমাগত, এবং এভাবে একসময় তারা অপরাধে জড়িয়ে পড়ে।

কিশোর অপরাধ আগেও ছিলো, বর্তমানেও আছে। তবে দিন যত যাচ্ছে কিশোর অপরাধগুলো ততোই হিংস্র, নৃশংস ও বিভীষিকাপূর্ণ রূপ ধারণ করছে। কোমলমতি কিশোরদের হাতে যেখানে থাকার কথা ছিলো খাতা-কলম, কিংবা ব্যাট-বল, সেখানে তাদের হাতে শোভা পাচ্ছে ধারালো অস্ত্র।

কিশোরদের মধ্যে খুন, ধর্ষণ ও ধর্ষণের পর হত্যার মতো হিংস্র ধরনের অপরাধ করার প্রবণতা উদ্বেগজনকভাবে বেড়ে গেছে। তাদের আছে নিজস্ব গ্যাং। সংঘবদ্ধভাবে প্রকাশ্যে দিনের আলোয় তারা নৃশংসভাবে খুন করছে মানুষ।  

বিভিন্ন জরিপে দেখা গেছে, এদের বয়সসীমা ১২ থেকে ১৭ বছরের মধ্যেই বেশি হয়ে থাকে। সাধারণত প্রতিটি গ্যাংয়ের দৃষ্টি আকর্ষিত হয় এমন একটি নির্দিষ্ট নাম ও লোগো থাকে। গ্যাং সদস্যদের মধ্যে সেই নাম ও লোগো শরীরে ট্যাটু করার অথবা দেয়ালে লিখনের প্রবণতা রয়েছে। তারা নির্দিষ্ট একটি এলাকায় প্রভাব বিস্তার করে এবং সর্বদা আধিপত্য ধরে রাখার চেষ্টা করে।

বর্তমান তথ্যপ্রযুক্তির যুগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে গ্যাংয়ের প্রচার-প্রচারণার নেটওয়ার্ক রয়েছে। তারা গ্যাং সংগঠন নিয়ে গর্ববোধ করে এবং গ্যাং সদস্য হিসাবে পরিচিত হয়ে তৃপ্তি অনুভব করে। ক্ষেত্রবিশেষে গ্যাংয়ে একই রকমের জামাকাপড় পরার স্টাইল দেখা যায় এবং কেউ কেউ অথবা সবাই জুয়েলারি ও অলংকার পরিধান করে থাকে। এ ছাড়া আধিপত্য বিস্তারের জন্য তারা বিভিন্ন অস্ত্র যেমন- ছুরি, রামদা, হকিস্টিক, বন্দুক ইত্যাদি সংগ্রহে রাখে।
 
পুলিশ ও র্যাব সূত্র বলছে, রাজধানীতে এখন অন্তত ৭০ থেকে ৭৫টি কিশোর গ্যাং সক্রিয় রয়েছে। এদের সদস্য সংখ্যা দেড় থেকে দুই হাজার। রাজধানীর উত্তরা, মোহাম্মদপুর, বৃহত্তর মিরপুর, পুরান ঢাকার লালবাগ ও হাজারীবাগ এলাকায়ই মূলত কিশোর গ্যাং ছড়ানো-ছিটানো।

কিশোর উন্নয়ন কেন্দ্রের তথ্যমতে, কেন্দ্রে থাকা কিশোরদের ২০ শতাংশ হত্যা এবং ২৪ শতাংশ নারী ও শিশু নির্যাতন মামলার আসামি। ২০২০ সালের প্রথম ছয় মাসে ৮২১টি মামলায় গ্রেপ্তারের সংখ্যা ১ হাজার ১৯১। সমপ্রতি ঢাকার উত্তরায় ‘অপু ভাই’ নামে খ্যাত টিকটক ভিডিও নির্মাতা একটি রাস্তা অবরোধ করে ৭০-৮০ জন মিলে টিকটক ভিডিও তৈরি করছিল। সে সময় রবিন নামে একজন প্রকৌশলী গাড়ি নিয়ে রাস্তা পার হতে গেলে অপুসহ তার দল মিলে মারধর করে ওই ব্যক্তির মাথা ফাটিয়ে দেয়।

মূলত ২০১৭ সালে উত্তরায় আদনান হত্যাকাণ্ডের মাধ্যমে কিশোর গ্যাংয়ের সহিংসতার নির্মমতা জনসম্মুখে উন্মোচিত হয়। ৬ জানুয়ারি ২০১৭ তারিখে উত্তরার ১৩ নম্বর সেক্টরের ১৭ নম্বর সড়কের উপর আদনান কবিরকে (১৪) সংঘবদ্ধ গ্যাং মারাত্মকভাবে কুপিয়ে হত্যা করে। তখন তিনটি গ্যাংয়ের (ডিসকো বয়েস, বিগবস ও নাইনস্টার) মধ্যে দ্বন্দ্ব চলছিল। এরই ধারাবাহিকতায় আদনানকে ধারালো অস্ত্র ও হকিস্টিক দিয়ে আঘাত করা হয়। ফলে আদনানের মৃত্যু হয়।

কিশোর অপরাধের ভয়াবহ পরিণতি উপলব্ধি করে আমাদের সবার উচিত কিশোরদের অন্ধকার থেকে আলোর জগতে ফিরিয়ে আনা। কিশোর অপরাধ সৃষ্টিতে শুধু কিশোররাই দায়ী নয়। এ জন্য দায়ী আমাদের পরিবর্তনশীল সমাজ ব্যবস্থা, পারিবারিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক অবস্থা। তাই সরকারি প্রচেষ্টা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। কিশোরদের সুষ্ঠু আবেগীয় ও বুদ্ধিবৃত্তিক বিকাশে যত্নবান হতে হবে।

সুবিধাবঞ্চিত ও দরিদ্র শিশু কিশোরদের জন্য সুশিক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে। কিশোরের সুষ্ঠু সামাজিকীকরণের জন্য গঠনমূলক পারিবারিক, সামাজিক ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে। দেশে পর্যাপ্ত কিশোর অপরাধ সংশোধন কেন্দ্র গড়ে তুলতে হবে। এ ক্ষেত্রে শিশুর মানসিক বিকাশের উপযোগী কার্যক্রম ও অনুষ্ঠান পরিচালনা করার জন্য সরকার স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠান ও গণমাধ্যমগুলোকে কাজে লাগাতে পারে।