Amar Sangbad
ঢাকা শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪,

নিত্যপণ্যের মূল্যের ঊর্ধ্বগতি: বাজার নিয়ন্ত্রণে পদক্ষেপ নেয়া জরুরি

অক্টোবর ১০, ২০২১, ০৭:২০ পিএম


নিত্যপণ্যের মূল্যের ঊর্ধ্বগতি: বাজার নিয়ন্ত্রণে পদক্ষেপ নেয়া জরুরি

আমাদের বাজার ব্যবস্থায় এখনো এক ধরনের স্বেচ্ছাচারিতা কাজ করে। অর্থনীতির সাধারণ সূত্রগুলোও এখানে অচল। সুযোগ পেলেই নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বাড়িয়ে দেয়া হয়। যেমন— হঠাৎ করেই বেড়ে গেছে পেঁয়াজের দাম।

সপ্তাহখানেক আগেও যে পেঁয়াজের দাম ছিলো ৪৫ থেকে ৫০ টাকা, গত কয়েকদিনে সেই পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ৭৫ থেকে ৮০ টাকায়। অথচ এ বছর পেঁয়াজ উৎপাদনে রেকর্ড হয়েছে, আগের বছরের চেয়ে উৎপাদন বেড়েছে সাড়ে ছয় লাখ টন। বন্ধ নেই আমদানিও। তার পরও এভাবে দাম বাড়ার কারণ কী? এ বছর ধান উৎপাদনেও রেকর্ড হয়েছে।

আন্তর্জাতিক বাজারে এক বছরে চালের দাম কমেছে ২৪ শতাংশ। কিন্তু আমাদের বাজারে এসবের কোনো প্রভাব নেই। দাম সর্বোচ্চ পর্যায়ে। সপ্তাহের ব্যবধানে ব্রয়লার মুরগির দাম কেজিপ্রতি ২০ টাকা বেড়ে ১৭০ থেকে ১৮০ টাকা হয়েছে। মোটা বা বড় দানার মসুর ডালের কেজি দুই টাকা বেড়ে ৯০ টাকা হয়েছে। নিম্ন আয়ের মানুষ খোলা সয়াবিন তেলই বেশি কেনে।

এক সপ্তাহে খোলা সয়াবিনের দাম কেজিতে তিন টাকা বেড়ে ১৪৫ থেকে ১৪৮ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে। চিনির কেজি ৭৪ টাকা নির্ধারণ করা হলেও বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৭৮ থেকে ৮০ টাকায়। বাজারে গ্রীষ্মকালীন সবজির পাশাপাশি শীতের আগাম সবজিও উঠেছে। ফলে বাজারে সবজির সরবরাহ আগের তুলনায় অনেক বেড়েছে। কিন্তু দাম কমেনি, বরং আরও বেড়েছে। এমন বাজার পরিস্থিতিতে সাধারণ মানুষের মধ্যে রীতিমতো নাভিশ্বাস উঠে গেছে।

আমাদের বাজারে যেমন নিয়ম-নীতি খাটে না, তেমনি নৈতিকতার ঘাটতিও প্রবল। সভ্য সমাজে বিশেষ উপলক্ষ বা উৎসবের আগে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম কমতে দেখা যায় অথবা স্থিতিশীল থাকে। কিন্তু পবিত্র রমজান বা অন্য কোনো উপলক্ষের আগে আগে আমাদের বাজারে দ্রব্যমূল্যের উল্লম্ফন শুরু হয়। দাম বাড়ানোর জন্য অজুহাতেরও কোনো অভাব হয় না। বৃষ্টি-বাদল থেকে শুরু করে হরতাল-অবরোধ পর্যন্ত অনেক কিছুই হতে পারে দাম বাড়ানোর অজুহাত। এমনকি নির্বাচনকেও অনেক সময় অজুহাত করা হয়। আর আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বেড়ে যাওয়ার অজুহাত তো অনেক পুরনো।

বাজারের এমন অস্বাভাবিকতার জন্য সরকারের সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর নিষ্ক্রিয়তাকেই দায়ী করেন বাজার বিশেষজ্ঞরা। বাজারে তদারকির যেমন অভাব রয়েছে, তেমনি অভাব রয়েছে সরকারের হস্তক্ষেপেরও।

টিসিবির ওপেন মার্কেট সেলসহ (ওএমএস) কিছু উদ্যোগ থাকলেও প্রয়োজনের তুলনায় সেগুলো একেবারেই নগণ্য। ভোক্তার অধিকার সংরক্ষণ করার দায়িত্ব সরকারের। মজুদ, সিন্ডিকেট বা কোনো অনৈতিক উপায়ে কেউ যাতে বাজারকে অস্থিতিশীল করতে না পারে সে জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে।

আইন সংশোধন করে এসবের জন্য কঠোর শাস্তির বিধান করতে হবে। দাম নির্ধারণের ক্ষেত্রে ব্যবসায়ীদের দাবিকে প্রাধান্য না দিয়ে সরকারকে সর্বোচ্চ যৌক্তিক অবস্থান নিতে হবে। দাম বাড়ানোর কারণগুলো যথাযথভাবে ভোক্তাদের অবহিত করতে হবে। আমরা আশা করি, বাজার স্থিতিশীল রাখতে সরকার দ্রুত প্রয়োজনীয়  ব্যবস্থা নেবে।