Amar Sangbad
ঢাকা শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪,

লাগামহীন ভোজ্যতেলের মূল্য বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণে ব্যবস্থা নিতে হবে

অক্টোবর ২৩, ২০২১, ০৬:০০ পিএম


লাগামহীন ভোজ্যতেলের মূল্য বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণে ব্যবস্থা নিতে হবে

খোলা ও বোতলজাত উভয় ধরনের সয়াবিনের দাম লিটারে ৭ টাকা বাড়ানো হয়েছে। নতুন দাম অনুযায়ী, এক লিটার খোলা সয়াবিন বাজারে বিক্রি হবে ১৩৬ টাকা। অনুরূপভাবে এক লিটার বোতলজাত সয়াবিন বিক্রি হবে ১৬০ টাকা এবং পাঁচ লিটারের দাম পড়বে ৭৬০ টাকা।

এছাড়া প্রতি লিটার পামওয়েল বিক্রি হবে ১১৮ টাকায়। আন্তর্জাতিক বাজারে মূল্যবৃদ্ধির অজুহাতে গত ফেব্রুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত সাতবার ভোজ্যতেলের দাম বাড়ানো হয়েছে; যা কেবল অস্বাভাবিক নয়, নজিরবিহীন ঘটনা। 

সম্প্রতি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত বৈঠকে বাংলাদেশ কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশনের (ক্যাব) প্রতিনিধি ভোজ্যতেলের দাম বাড়ানোর যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। বাজারে এখন যে তেল মজুত আছে, তাতে তিন মাস চলার কথা। এ অবস্থায় আন্তর্জাতিক বাজারের দোহাই দিয়ে এখনই ভোজ্যতেলের দাম বাড়ানো হবে কেন? ব্যবসায়ীরা যুক্তি দেখিয়েছেন, করোনায় তাদের অনেক ক্ষতি হয়েছে। এখন ক্ষতি না পোষালে তারা টিকে থাকতে পারবেন না। 

যদি আমরা ধরেও নিই যে করোনায় ব্যবসায়ীরা কিছুটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন; কিন্তু তারা কী পরিমাণ লাভ করেছেন, তার পরিসংখ্যানটিও জানা দরকার। বাজারে যদি তিন মাসের ভোজ্যতেল মজুত থাকে; তাহলে ‘ভূতাপেক্ষ নীতিতে’ দাম বাড়ানোর সুযোগ নেই। বাজারে মজুত তেল শেষ হওয়ার পর নতুন আমদানি করা তেলের দাম বাড়ানো যেতে পারে।

এছাড়া ব্যবসায়ীরা বিদেশ থেকে অপরিশোধিত তেল আমদানি করে এখানে পরিশোধন করেন। আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম বাড়লেও পরিশোধন ব্যয় বাড়েনি।

করোনাকালে কেবল ভোজ্যতেলের দাম বাড়েনি; বেড়েছে চালসহ প্রায় সব নিত্যপণ্যের দামও। ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) হিসাবে গত এক বছরে চালের দাম বেড়েছে ৬ দশমিক ৭৮ শতাংশ, আটা ১৩ দশমিক ৫, ময়দা ৩০, সয়াবিন ৪৯, পাম ৫২, চিনি ২৬, মসুর ডাল ২৯, রসুন ৪১ এবং পেঁয়াজ ৪২ শতাংশ। 

এখন ব্যবসায়ীরা দফায় দফায় ভোজ্যতেলের দাম বাড়িয়ে করোনার ‘ক্ষতি’ পুষিয়ে নিতে চাইছেন। কিন্তু ভোক্তাসাধারণ কীভাবে ক্ষতি পুষিয়ে নেবেন? করোনায় তাদের অধিকাংশের আয়-রোজগার কমে গেছে। এর ওপর নিত্যপণ্যের দাম ক্রমাগত বেড়ে যাওয়ায় অসহনীয় অবস্থায় পড়েছেন তারা। সরকার ব্যবসায়ীদের দাবি মেনে ভোজ্যতেলের দাম বাড়িয়েছে। কিন্তু করোনায় রোজগার কমে যাওয়া সীমিত আয়ের মানুষগুলোর সমস্যা দেখার কেউ নেই।

ক্যাবের দাবি অনুযায়ী তিন মাসের মজুত শেষ হওয়ার আগে যাতে কোনোভাবে ভোজ্যতেলের দাম বাড়ানো না হয়। এ ব্যাপারে সরকারকে যত্নবান হতে হবে। চলতি বছরে ইতোমধ্যে সাত দফা দাম বাড়ানো হয়েছে। ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে এই অঙ্গীকারনামা রাখতে হবে যে অদূর ভবিষ্যতে তারা আর দাম বাড়াবেন না। সেই সঙ্গে সরকারকে টিসিবির মাধ্যমে চাল-ডাল-তেল-চিনিসহ নিত্যপণ্য ন্যায্যদামে বিক্রি বাড়াতে হবে। ব্যবসায়ীরা যেন লাগামহীন দাম বাড়াতে না পারে সেজন্য সরকার কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করবে এটাই প্রত্যাশা।