জানুয়ারি ৮, ২০২২, ০৭:২০ পিএম
বৈশ্বিক মহামারি করোনার দাপট আবার বেড়েছে। বাংলাদেশেও এর ঢেউ লেগেছে। ২০২০ সালের ৮ মার্চ দেশে প্রথম করোনা রোগী শনাক্তের কথা জানায় সরকার। করোনার ডেলটা ভ্যারিয়েন্টের দাপটে গত বছরের মাঝামাঝি বাংলাদেশে করোনায় মৃত্যু, রোগী ও শনাক্তের হার বেড়েছিল।
তবে করোনার গণটিকাদান কর্মসূচি শুরু হলে সংক্রমণ কমতে থাকে। গত ডিসেম্বর মাসের প্রথম কয়েক সপ্তাহ করোনায় শনাক্তের হার এক শতাংশে নেমে আসে। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য, কিছুদিন থেকে আবারও সংক্রমণের হার বাড়তে থাকে। এমন পরিস্থিতিতে সরকার আবারও করোনা সংক্রমণ ঠেকাতে টিকা গ্রহণসহ কিছু সামাজিক কর্মপন্থা নির্ধারণ করেছে। পরিস্থিতির অবনতি হলে আবারও লকডাউনের মতো ব্যবস্থা নিতে হতে পারে বলে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক সাবধানবাণী উচ্চারণ করেছেন।
এখন মাস্ক ছাড়া ঘরের বাইরে যাওয়া যাবে না। গণপরিবহনে আগের মতো অর্ধেক আসনে যাতায়াত করতে হবে। তবে সবাইকে মাস্ক পরতে হবে। হোটেল-রেস্তোরাঁয় খেতে হলে মাস্ক পরে যেতে হবে এবং টিকা কার্ড প্রদর্শন করতে হবে। মাস্ক ছাড়া গেলে দোকান মালিক ও যিনি যাবেন— উভয়কেই জরিমানা দিতে হবে। দোকান খোলা রাখার সময়সীমা রাত ১০টার পরিবর্তে ৮টা পর্যন্ত করার প্রস্তাব করা হয়েছে। আশা করা যায়, আগামী কদিনের মধ্যেই এসব নির্দেশনা বাস্তবায়ন করা হবে। পরিস্থিতি অবনতি হলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হবে।
করোনার নতুন ধরন ‘ওমিক্রন’ এখন উদ্বেগের কারণ হয়ে উঠেছে। অতিদ্রুত সংক্রমণে সক্ষম ওমিক্রন বাংলাদেশেও হানা দিয়েছে। গত ১১ ডিসেম্বরে জিম্বাবুয়েফেরত বাংলাদেশ নারী ক্রিকেট দলের দুই সদস্যের ওমিক্রন শনাক্ত হয়। এরপর আরও কজনের শরীরে ওমিক্রনের সংক্রমণ দেখা যায়। প্রতিবেশী দেশ ভারতে ওমিক্রন ছাড়িয়ে পড়েছে। এর বিস্তার রুখতে ভারতের পশ্চিমবঙ্গসহ বেশ কয়েকটি রাজ্যে বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে।
গত ৩ জানুয়ারি থেকে পশ্চিমবঙ্গের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে মানুষের চলাচলেও। সে কারণে বাংলাদেশ সীমান্তের বন্দরগুলোতে কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে এবং কোয়ারেন্টাইনের সময় পুলিশি প্রহরা রাখার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
দেশের অধিকাংশ মানুষকে টিকার আওতায় আনার জন্য সরকার নতুন বছরের প্রথম দিন থেকে ইপিআই কেন্দ্রগুলোর মাধ্যমে টিকাদান কর্মসূচি চালু করেছে। টিকার পাশাপাশি গণসচেতনতাও আবশ্যক। তাই সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলাচলের পরামর্শ দিচ্ছেন চিকিৎসকরা।
করোনার প্রাদুর্ভাব কমে এলে দেশের মানুষ মাস্ক ব্যবহার পরিহার করে এবং নিরাপদ দূরত্ব বজায় না রেখে ইচ্ছেমতো চলাচল করছে। এতে ওমিক্রন সংক্রমণের আশঙ্কা বাড়ছে। তাই নিজেকে নিরাপদ রাখার তাগিদে আবারও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলাচল করা জরুরি হয়ে উঠেছে। নইলে করোনায় মৃত্যু, নতুন রোগী ও পরীক্ষার বিপরীতে রোগী শনাক্তের হার বাড়তেই থাকবে।
তাই জীবন বাঁচাতে সচেতনতার বিকল্প নেই। বিগত দিনের অভিজ্ঞতায় এ কথা বলা ভুল হবে না যে, করোনা শুধু মৃত্যুর তালিকাই দীর্ঘ করেনি, সাথে দেশের সিংহভাগ মানুষের অর্থনৈতিক মেরুদণ্ডও ভেঙে দিয়েছে। বিভীষিকাময় সে দিনগুলো আমরা আর দেখতে চাই না। সুস্থ-সবল দেহে জীবনযুদ্ধে বিজয়ী হতে হবে। তাই আত্মসচেতনতা জরুরি। স্বাস্থ্যবিধি মেনে করোনাকে পরাজিত করে সামনের দিকে সবাই এগিয়ে যাক— এটাই প্রত্যাশা।