Amar Sangbad
ঢাকা শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪,

ব্লগার অভিজিৎ খুনের আলামত সংগ্রহ করলো এফবিআই

মার্চ ৬, ২০১৫, ০৯:২৫ এএম


ব্লগার অভিজিৎ খুনের আলামত সংগ্রহ করলো এফবিআই

 

লেখক ও ব্লগার অভিজিৎ রায় হত্যাকাণ্ডের ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন আমেরিকার কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা ফেডারেল ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (এফবিআই) প্রতিনিধিদলের সদস্যরা।

শুক্রবার দুপুর দুইটার দিকে তারা হত্যাকাণ্ডের ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। এ সময় তারা হত্যাকাণ্ডের আলামত সংগ্রহ করেছেন।

এর আগে বেলা সোয়া একটার দিকে তারা প্রথমে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে প্রবেশ করেন। এখানে কিছুক্ষণ অবস্থান করার পর তারা বাংলা একাডেমিতে চলে যান। এর পর আসেন ঘটনাস্থলে।

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের গণমাধ্যম শাখার সহকারী কমিশনার ইফতেখারুজ্জামান জানান, এফবিআইয়ের সদস্যরা ঘটনাস্থল থেকে তদন্তের জন্য খুনের আলামত সংগ্রহ করেছেন।

অভিজিৎ হত্যার ঘটনায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে মামলা হবে। আর এই মামলা করবে মার্কিন পুলিশ। ঢাকায় তদন্ত সহায়তায় আসা এফবিআই এজেন্টরা একথা জনিয়েছেন বাংলাদেশের শীর্ষ গোয়েন্দাদের।

ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা বিভাগের প্রধান যুগ্ম পুলিশ কমিশনার মনিরুল ইসলাম জানান, অভিজিৎ রায় যেহেতু একই সঙ্গে মার্কিন নাগরিক তাই এই হত্যাকান্ডের ব্যাপারে সেদেশেও মামলা হবে। ঢাকায় আসা এফবিআই এজেন্টরা দেশে ফিরে এই মামলা করবেন। যুক্তরাষ্ট্র তার নাগরিকদের যে আইনি সহায়তা দেয় তার অংশ হিসেবেই এই মামলা। তাদের দেশের নাগরিকরা বিশ্বের যে দেশেই কোন অপরাধের স্বীকার হোক না কেন তাদের দেশে তার জন্য মামলা করাই বিধান।

তিনি বলেন, বাংলাদেশে দায়ের করা মামলা এবং যুক্তরাষ্ট্র পুলিশের মামলার তদন্ত সংশ্লিষ্ট দেশের আইন অনুযায়ী চলবে। এক্ষত্রে তদন্ত সহায়তা এবং তথ্য বিনিময় হবে। তবে বাংলাদেশে এই মামলায় যেসব আসামি আটক বা গ্রেফতার হবে তাদের যুক্তরাষ্ট্র পুলিশের কাছে হস্তান্তরের আইন নেই। কারণ যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশের বন্দি বিনিময় চুক্তি নেই।

তবে নাম প্রকাশ না করে একজন গোয়েন্দা কর্মকর্তা জানান, ‘তাৎক্ষনিক কোনো ব্যবস্থায় যুক্তরাষ্ট্র অনেক সময় তাদের দেশের মামলার আসামি পেতে পারে। অতীতে এর নজীর আছে। আর বাংলাদেশে আটক আসামিদের দূতাবাসের মাধ্যমে জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারে।’

যুগ্ম কমিশনার মনিরুল ইসলাম জানান, এফবিআই’র তদন্ত দলে এক নারীসহ মোট চারজন এজেন্ট আছেন। তাদের মধ্যে প্রযুক্তি এবং ফরেনসিক বিশেষজ্ঞও আছেন। তারা বৃহস্পতিবার গোয়েন্দা কার্যালয়ে বাংলাদেশের শীর্ষ গোয়েন্দা কর্মকর্তাসহ তদন্ত কর্মকর্তা ফজলুল করিমের সঙ্গে টানা চার ঘন্টা বৈঠক করেছেন। তারা ঢাকায় ৩/৪ দিন থাকবেন। এরমধ্যে তারা টিএসসিতে হত্যাকান্ডের ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।

চার ঘন্টার বৈঠকে এফবিআই এজেন্টরা প্রধানত হত্যাকান্ডের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা বলেছেন। জানতে চেয়েছেন এসংক্রান্ত তদন্তের অগ্রগতি। তারা বাংলাদেশের গেয়েন্দা বিভাগের তদন্তে ফরেনসিক এবং তথ্য প্রযুক্তিগত দক্ষতার বিষয়েও তথ্য জেনেছেন।

মনিরুল ইসলাম জানান, ‘এফবিআই এজেন্টরা বাংলাদেশে মামলার তদন্ত করবেন না। তারা তদন্ত কাজে সহায়তা করবেন। বিশেষ করে প্রযুক্তি ও ফরেনসিক তদন্তে তারা সহায়তা করবেন। তাদের সহায়তা প্রয়োজন পড়বে।’

এফবিআই-এর যে চারজন এজেন্ট এসেছেন তাদের মধ্যে অন্তত দু’জন আছেন যারা এর আগেও বাংলাদেশের দু’টি স্পর্শকাতর ঘটনার তদন্তে ঢাকায় এসেছিলেন। ফলে তাদের অতীতের অভিজ্ঞতা এবার কাজে লাগাচ্ছেন।

গোয়েন্দা বিভাগের যুগ্ম কমিশনার জানান, ‘তারা আমাদের তদন্তে কী ধরনের সহায়তা করবেন তা এবার চুড়ান্ত হবে। সেই অনুযায়ী প্রয়োজনে পরে আরো এক্সপার্ট আসতে পারে। অথবা তারা গাইড লাইন অনুযায়ী যুক্তরাষ্ট্র থেকেও সহায়তা করতে পারেন।’

আর যুক্তরাষ্ট্রে যে মামলা হবে তার তদন্তেও প্রয়োজন অনুযায়ী বাংলাদেশের পুলিশ সহায়তা দেবে। যুক্তরাষ্ট্রে মামলা হলে বিচার কোথায় হবে তার কোন জবাব দেননি গোয়েন্দারা। তবে গোয়েন্দারা বলেন, ‘বিচার যেখানেই হোক যুক্তরাষ্ট্র অভিজিৎকে তাদের দেশের নাগরিক হিসেবেই দেখছে। আর তাদের নাগরিক হত্যার তদন্ত ও বিচার নিশ্চিত করতে চায় তারা।’

গত ২৬ ফেব্রুয়ারি রাতে একুশে বইমেলা থেকে ফেরার পথে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি এলাকায় বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক লেখক অভিজিৎ রায় এবং তাঁর স্ত্রী রাফিদা আহমেদ বন্যাকে চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে জখম করে একদল দুর্বৃত্ত। মাত্রাতিরিক্ত রক্তক্ষরণে হাসপাতালে নেওয়ার পথেই মারা যান অভিজিৎ।

পরদিন ২৭ ফেব্রুয়ারি এই হত্যার তদন্তে বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সহযোগিতা করতে আগ্রহ প্রকাশ করে এফবিআই। এ জন্য গোয়েন্দা সংস্থাটির পক্ষ থেকে বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও অভিজিতের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়।

আলোচিত এই হত্যাকাণ্ডের তিন দিন পর ১ মার্চ পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলী সরকারের পক্ষ থেকে অভিজিৎ রায় হত্যাকাণ্ডের তদন্তে এফবিআইর আগ্রহকে স্বাগত জানান।

হত্যাকাণ্ডের এক সপ্তাহ পেরিয়ে গেলেও অভিজিৎ হত্যা মামলার প্রধান সন্দেহভাজন আসামি শফিউর রহমান ফারাবীকে গ্রেফতার ছাড়া তদন্তে আর কোনো অগ্রগতি দেখাতে পারেনি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। গত সোমবার ভোরে রাজধানীর যাত্রাবাড়ী এলাকা থেকে তাঁকে গ্রেফতার করা হয়। পরে মঙ্গলবার ১০ দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয় ফারাবীকে।

এ ছাড়া একই ঘটনায় গুরুতর আহত অভিজিতের স্ত্রী রাফিদা আহমেদ বন্যাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য যুক্তরাষ্ট্রে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। তাঁর চিকিৎসার সব দায়িত্ব নিয়েছে মার্কিন সরকার। এর আগে বাংলাদেশেও বন্যার চিকিৎসার তদারকি করে মার্কিন দূতাবাস।