Amar Sangbad
ঢাকা শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪,

পরিচ্ছন্নকর্মীদের হাতে জিম্মি রাজধানীবাসী

মার্চ ৯, ২০১৫, ০৩:৪৭ পিএম


পরিচ্ছন্নকর্মীদের হাতে জিম্মি রাজধানীবাসী

 

রাজধানীতে মানুষ বাড়ার সাথে সাথে বাড়ছে ময়লা-অবর্জনাও। বাসা-বাড়ি থেকে ময়লা-আবর্জনা সরাতে তাই প্রতিটি পরিবারকেই নির্ভর করতে হয় পরিচ্ছনকর্মীদের উপর। কিন্তু এই পরিচ্ছনকর্মীদের হাতেই জিম্মি হতে হচ্ছে রাজধানীবাসীর। ময়লা-আবর্জনা সারানোর বিনিময়ে পরিচ্ছনকর্মীদেরকে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ বিল পরিশোধ করে নগরবাসী।

কিন্তু ক্রমাগত টাকার পরিমান বাড়িয়ে দেওয়া ছাড়াও পরিবারগুলি নিজ উদ্দ্যোগে ময়লা ফেললেও টাকা দিতে বাধ্য করা হয় বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এছাড়া পরিচ্ছন্নকর্মীরা ময়লা-আবর্জনা সংগ্রহ করতে গিয়ে ফাঁকা বাসা পেয়ে চুরির ঘটনাও ঘটাচ্ছে বলে অভিযোগে উঠে এসছে।

জানা গেছে, রাজধানীতে বাসা-বাড়ি থেকে ময়লা-আবর্জনা সংগ্রহকারী পরিচ্ছনতাকর্মীদের সংখ্যা প্রায় ২০ হাজার। তারা বেশিরভাগই বিহারী সম্প্রদায়ের। ময়লা-আবর্জনা সংগ্রহের জন্য এলাকা ভিত্তিক তাদের ১০-২০ জনের একটি করে গ্রুপ রয়েছে। প্রতিদিন সকালে বাসা-বাড়ি থেকে তারা ময়লা-আবর্জনা সংগ্রহ করে সেগুলি নির্দ্রষ্টি স্থানে রাখা সিটি করপোরেশনের কন্টেইনারে(ডাস্টবিন) রেখে আসে। বিনিময়ে প্রতিটি পরিবারের কাছ থেকে প্রতি মাসে পায় ৩০-৫০ টাকা।

কিন্তু অভিযোগ পাওয়া গেছে, তারা পরিবারগুলির কাছ থেকে বাড়তি টাকা আদায় করছে। জিনিসপত্রের দাম বাড়ানোর অজুহাত দেখিয়ে ৩০-৭০ টাকা বাড়িয়ে দিয়েছে।

সুতরাং বর্তমানে ময়লা-আবর্জনা ফেলার বিনিময়ে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দাদের কাছ থেকে পরিচ্ছনকর্মীরা বিল নিচ্ছে ১০০-১৫০ টাকা।

ধানমন্ডির ২৭ নং এলাকার শান্তিনীড় ভবনের এক ভাড়াটিয়া আব্দুল জলিল বলেন, ‘আমি পরিবার নিয়ে ঢাকায় আসি ২০০৯ সালে। তখন পরিচ্ছনকর্মীকে দিতে হত মাত্র ২০ টাকা। কিন্তু এখন দিতে হয় ১১০ টাকা। কিছুই করার নেই, ময়লা ফেলার সময় পাই না। তাই ওদের উপরই নির্ভর করতে হয়।’ ময়লা ফেলার বিল দিনের পর দিনে কেন বাড়াচ্ছেন এমন প্রশ্ন করা হলে লালবাগের একজন পরিচ্ছনকর্মী বলেন, ‘জিনিসপত্রের দাম অনেক বেশি। দেশের অবস্থা ভাল না, আমাদেরও তো চলতে হবে। এত অল্প বেতনে সংসার চলেনা, তাই বাড়াতে হয়।’ লালবাগের হরমোহনশীল স্ট্রীটের ২০/১ নং বাসায় অবস্থান করে কয়েকজন ছাত্র।

 তারা জানান, ‘আমরা ছাত্র তাই খুব সকালে ঘুম থেকে উঠেই আমাদেরকে বাইরে চলে যেতে হয়। সুতরাং ময়লা ফেলার জন্য ওদের উপরই নির্ভর করি। কিন্তু মাঝে মাঝেই ভোগান্তিতে পড়তে হয়। মাস শেষে ঠিকই নিয়ে যায় ৬০-৭০ টাকা। কিন্তু মাসের ৮-১০ দিনই তারা ময়লা নিতে আসে না। ফলে কয়েকদিনের ময়লা একসাথে জমে যায়। আর ময়লা জমে যাবার কারণে প্রচুর দূর্গন্ধ ছড়ায়। পরে বাধ্য হয়ে আমাদেরকেই ময়লা ডাস্টবিনে রেখে আসতে হয়। পরে আবার এ বিষয়ে ওদেরকে কিছু বলা হলে ওরা উল্টো ময়লা নেয়া বন্ধ করে দেয়। তখন আবারও বিপাকে পড়তে হয় আমাদের। তাই ওরা যা করে সেটাই মেনে নেবার চেষ্টা করি।’

জানা যায়, ময়লা ফেলার বিল এভাবে বাড়ার কারণে কিছু কিছু পরিবার তাদের বাসার ময়লা-আবর্জনা নিজেরাই ডাস্টবিনে রেখে আসে। কিন্তু তাদের মাধ্যমেই ময়লা ডাস্টবিনে ফেলতে হবে বলে জোর প্রদান করে পরিচ্ছনকর্মীরা। তাদের কথা অবাধ্য হয়ে ময়লা নিজ দয়িত্বে ডাস্টবিনে রেখে এলেও বিল দিতে বাধ্য করা হয় বলে জানান তেজগাঁওয়ের নাখালপাড়া এলাকার কয়েকজন বাসিন্দা। তাদের সবারই অভিযোগ, ‘এই এলাকার ময়লা সংগ্রহকারী কালু বলে- ময়লা তার মাধ্যমে ফেললেও বিল দিতে হবে না ফেললেও দিতে হবে।

এভাবেই আমাদেরকে জিম্মি করে টাকা আদায় করছে সে।’ এলাকাবাসী আরও বলেন, ‘এক মাস যেতে না যেতেই সে ময়লার বিলের পরিমাণ বাড়িয়ে দেয়। আমরা তার কাছে অনেকটাই জিম্মি।’

বাসা-বাড়ি থেকে ময়লা সংগ্রহকারীরা ঢাকা সিটি করপোরেশনের(ডিসিসি) দায়িত্বপ্রাত কর্মচারী কিনা জানতে চাইলে দক্ষিন ঢাকা সিটি করপোরেশনের সহকারী প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপক কর্মকর্তা আ. হ. ম আব্দুল্লা হারুন বলেন, ‘এরা আমাদের কোন কর্মচারী নয়। এরা নিজস্ব তত্ত্বাবধানে ময়লা সংগ্রহ করে ডাস্টবিনে রেখে আসে। ডাস্টবিন থেকে ময়লা সংগ্রহ করে যারা ট্রাকে বহন করে নিদ্রিষ্ট স্থানে ফেলে আসে তারাই আমাদের কর্মচারী।’

এদিকে এই সকল পরিচ্ছনকর্মীদের বিরুদ্ধে বাসা-বাড়ি থেকে চুরি করার অভিযোগও পাওয়া গেছে। পুরান ঢাকার লক্ষীবাজারের একটি বাসায় ভাড়া থাকেন সিদ্দিক আল মামুন।

তিনি জানান, কিছুদিন আগে আমি বাসার ময়লা দরজার পাশে রেখে কখন যে ঘুমিয়ে গেছি বুঝতে পারিনি। ময়লা নিতে এসে ময়লাওয়ালা আমার মোবাইলটি টেবিলের উপর থেকে নিয়ে বের হবার সময় হঠাৎ আমার ঘুম ভাঙ্গে। আমি বুঝতে পারি এবং ওকে দ্রুত ধরে ফেলি। আর তখন সঙ্গে সঙ্গেই সে আমার পায়ে ধরে মাফ চায়। আর মোবাইলটি বের করে দেয়।’