Amar Sangbad
ঢাকা বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল, ২০২৪,

ভেজালের কারণে কিডনি রোগী ২ কোটি!

মার্চ ১০, ২০১৫, ০৬:২৪ এএম


ভেজালের কারণে কিডনি রোগী ২ কোটি!

 

প্রিয় পাঠক, পশ্চিম পাকিস্তানীরা ১৯৭১ এ মুক্তি যুদ্ধে যখন বুঝতে পারে যে নির্ঘাত পরাজয় তখন সমাজ বিজ্ঞানীদের দেওয়া ফর্মূলা প্রয়োগের সিদ্ধান্ত নেয়। পাঠক, কী সেই ফর্মূলা জানেন কি? না জানলে জেনে রাখুন-‘কোন জাতীকে ধ্বংস করতে হলে সে জাতীর সংস্কৃতিকে ধ্বংস করে দাও প্রথমে’।

এ জাতীকে ধ্বংস করতে তাই জেনারেল নিয়াজি সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন বুদ্ধিজীবী হত্যার। হত্যা করা হয় ধরে ধরে শিক্ষা-সাহিত্য-সাংস্কৃতিক জগতের তারকা খচিত ব্যাক্তিদেরকে। সেখান থেকে আমরা নিজেদেরকে বের করে আনতে পারলেও পাকিস্তানীদের চেয়েও ভয়ঙ্কর অবস্থার মধ্যে আছি আমরা। পাকিস্তানীরা হত্যা করেছিল বেছে বেছে কিছু বুদ্ধিজীবি; কিন্তু বাঙালি  হয়ে, স্বাধীন দেশের নাগরিক হয়ে কিছু ভেজাল দাতা কয়েক জনকে নয় ইতিমধ্যে ২ কোটি মানুষকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিয়েছে অবলীলায়।

 এছাড়া ভেজাল দ্রব্য খেয়ে কঠিন রোগে আক্রান্ত হওয়ার অপেক্ষায়  আছে বাকি ১৪ কোটি মানুষ। তাহলে সবচেয়ে সহজ একটি প্রশ্ন রাখতে চাই সচেতন মহল এবং দেশবাসীর কাছে- সেটি হলো  সবচেয়ে খারাপ এবং কুখ্যাত খুনী কি পাকিস্তানীরা? নাকি বর্তমানের ভেজাল ব্যাবসায়ীরা? আর এই ভেজাল ব্যবসায়ীরা কি বাঙালি নাকি পাকিস্তানীদের ঔরসে জন্মানো ‘ওয়ার বেবী’ নাকি ‘অবৈধ জারজ সন্তান’। তানা হলে কী ভাবে সম্ভব খাদ্যে ভেজাল মিশিয়ে, ফরমালিন, কেমিকেল মিশিয়ে মানুষকে তিলে তিলে হত্যা করতে? মুক্তিযুদ্ধের সময় আমরা খান সেনা ধরে ধরে পিটিয়ে, পানিতে চুবিয়ে, লাঠি দিয়ে বাড়িয়ে মেরেছি তাতেই আমরা বনে গেছি বীর বাঙালি, বীর মুক্তিযোদ্ধা, বীর সেনানী, বীর উত্তম, বীর প্রতিক।

তাহলে যারা খাদ্যে কেমিকেল, ভেজাল মিশিয়ে সমগ্র জাতিকে তিল তিল করে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিচ্ছে, শিশু হত্যা করছে, মেধাবী ছেলে-মেয়েদেরকে হত্যা করছে, বুদ্ধিজীবী হত্যা করছে, জ্ঞানী-গুণী হত্যা করছে তাদের বিরুদ্ধে কী ধরণের যুদ্ধ শুরু করলে আমরাও এ প্রজন্ম হতে পারি  বীর বাঙালি, বীর প্রতিক, বীর বিক্রম? ভেজাল দাতার জন্য আইন প্রনয়ণ হয়েছে সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যু?  ভয়ংকর কোন শাস্তির ব্যবস্থা করা না গেলে ভেজাল সন্ত্রাস কোনভাবেই বন্ধ করা যাবে না। খুনীর জন্য এত অপেক্ষা কেন দ্রুত বিচারের ব্যবস্থার কোন বিকল্প নেই? কেন প্রয়োজন স্বাক্ষী? আমাদের দেশে যে স্বাক্ষী প্রথা প্রচলিত আছে আইনে তা কি আসলেই যুক্তি  সম্পন্ন? না, কখনই এ দেশের স্বাক্ষী সংক্রান্ত বিধি বিধান সঠিক নহে।

এ জন্যেইতো সাবেক প্রধান বিচারপতি খায়রুল হক বিগত ৮ই নভেম্বর-২০১৪ তারিখে দুঃখ করে বলেছিলেন-“ স্বাক্ষীর পদ্ধতিতে পরিবর্তন আনতে হবে। খাদ্যে ভেজাল গণহত্যার সামিল। একাত্তরে গণহত্যার পক্ষ বিপক্ষ ছিল কিন্তু খাদ্যে ভেজালের পক্ষ বিপক্ষ নাই। রাষ্ট্রকে ভেজাল বন্ধে কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে অবিলম্বে। অন্যথায় ব্যর্থতার দায় নিয়ে রাষ্ট্রকে একদিন আদালতের কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে সরকারকে”।

 মানবাধিকার চর্চা করার নামে এক শ্রেণীর কথিত মানবাধিকার সংগঠনগুলো  অপরাধীর পক্ষ নিয়ে সরাসরি দালালী শুরু করে। এই ধরণের কথিত কিছু দালালদের বিরুদ্ধে আগে ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন।  পুলিশের সাথে দাঙ্গায় নিহত হলেই কথিত দালালরা নেমে পড়েন মাঠে। এবং একটিই সংলাপ- বিনা বিচারে  মানুষ হত্যা মানবাধীকার লঙ্ঘন। এমনতর ভন্ডরা কি আদৌ জানে মানবাধীকার লঙ্ঘন কাকে বলে? হ্যাঁ তারা বুঝতো হাড়ে হাড়ে যদি তাদেরকে হাতপা বেঁধে চোখের সামনে স্ত্রী, বোন বা মেয়েকে ধর্ষণ করে গলা টিপে হত্যা করত কোন সন্ত্রসী! আরো ভাল বুঝতো তাদের ছেলেকে ঘর থেকে ডেকে নিয়ে পাশের বাড়ির যদু-মধু- রহিমরা হত্যা  করতো? আপনি কোন ফরমালিন মেশানো বিক্রেতাকে হাতে নাতে ধরে হাত দুটো ভেঙে দেন দেখবেন মানবাধিকার কর্মীরা সেজেগুজে একটি বিখ্যাত জায়গায় এসে কেমন চৌদ্দ গোষ্ঠী উদ্ধার করে দেয়? শুধু তাই নয় পুলিশ এসে আপনাকে গ্রেফতার করে নিয়ে যাবে, কোর্টে চালান করবে, পুলিশ আপনার বিরুদ্ধে স্বাক্ষী দেবে অপরদিকে ভেজাল তথা ফরমালিন মেশানো শয়তানটাকে ট্রিটমেন্ট করাবে সরকারী খরচে সরকারী হাসপাতালে।

 এরপর কথিত সুবিধাবাদী রাজনৈতিক দল মিছিল বের করে শ্লোগান দিয়ে বলবে এই সরকার খুনী সরকার, এ সরকার মানুষের কল্যাণ চাইনা, এ সরকার সন্ত্রাসী সরকার ইত্যাদি ইত্যাদি। এরপর নেমে পড়বে এক শ্রেণীর সাংবাদিক তারা ভেজালের প্রসঙ্গ এড়িয়ে লিখবে অমানবিকভাবে অজ্ঞাত সন্ত্রসীরা বিশিষ্ট ব্যাবসায়ি যদু-মধু-রহিমকে পিটিয়ে হাত ভেঙে দিয়েছে। এ ব্যাাপারে ব্যবসায়ী রহিমের স্ত্রী বাদী হয়ে থানায় মামলা করেছেন। এখনও পর্যন্ত পুলিশ সন্ত্রাসী রহিমকে আটক করতে পারেনি। এদিকে রাস্তায় নামবে ব্যবসসায়ী তথা ভেজাল ব্যবসায়ী সুয়োরগুলো। ডাকবে হরতাল, চলবে ভাঙচুর, গাড়িতে আগুন। এরপর শ্লোগান দিতে থাকবে  সকল চোরেরা এবং ভেজাল ব্যবসায়ীরা। শ্লোগানের ভাষা হবে এমন- শেখ হাসিনার কালো হাত ভেঙে দাও ভেঙে দাও।

এ দিকে ভেজালের বিষয়টি চলে গেল অনেক আড়ালে। বাবা হাসপাতালে আছে তাই কি। ছেলে আবার ফরমালিন মিশিয়ে চালিয়ে যাচ্ছে ব্যবসা। যার কারণে খাদ্যে ফরমালিন বন্ধ কখনই সম্ভব হচ্ছে না। ফরমালিন ভেজাল বন্ধ না হওয়ার পিছনে আরেকটি বাঁধা মোবাইল কোর্ট।  মোবাইল কোর্ট একবার কাউকে জরিমানা করা মানে ভেজাল দাতার ভয় কেটে যাওয়া এবং কোর্ট চলে যাওয়ার সাথে সাথে আবার যা তাই। তখন ভেজাল ব্যবসায়ী আরো সাহসী হয়ে ওঠে কারণ আপাততঃ আর মোবাইল কোর্ট আসছে না।

 কিন্তু মোবাইল কোর্টের বিচার যদি এমন হতো শতশত মানুষের সামনে নাকে খত দেওয়ানো বা কান ধরে ওঠাবসা করানো, সাথে তাকে নিজ হাতে ভেজাল খাদ্য পন্য নষ্ট করে ফেলানো। এরপর মাথার চুল কেটে অলকাতরা অথবা ভাল প্লাষ্টিক পেইন্ট মাখিয়ে ছেড়ে দেওয়া। তাহলে এমনটি দ্বিতীয়বার আর সে ভেজাল বা কেমিকেল মেশাতো না। যেমনটি করেছিল ১৯৫৮ সালের মার্শাল ল’তে পাক শাসকে। তাতে করে নষ্ট জাতের কুলাঙ্গার অসৎ ব্যবসায়ীরা শতভাগ সোজা হয়ে যেতো।  বেশী না এক দিনের জন্য সরকার অনুমতি দিক, ক্ষমতা দিক ভেজাল উচ্ছেদে দেখবেন কিভাবে এই বাঙালিরা পিটিয়ে পিটিয়ে সোজা করে দেয়। কিছু কিছু বিষয়ে এ্যাগ্রেসিভ না হলে এ  জাতিকে কখনও রক্ষা করা যাবেনা। ভেজালের আগ্রাসন থেকে জাতিকে মুক্ত করতে প্রয়োজন জরুরী বিচার ব্যবস্থা, কঠিন থেকে কঠোর শাস্তির বাস্তবায়ন।

গত ৮ই মার্চ জাতীয় প্রেস ক্লাবে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন কিডনি অ্যাওয়ারনেস মনিটরিং এ্যান্ড প্রিভেনশন সোসাইটি (ক্যাম্পস) আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয় বাংলাদেশে ভেজাল এবং কেমিক্যাল মিশ্রিত খাবার খেয়ে বর্তমানে  ২ কোটি মানুষ কিডনী রোগে আক্রান্ত। এ ছাড়াও বিগত ১৬ই অক্টোবর ২০১৪ তারিখে বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইন্সটিটিউট এর বিজ্ঞানীদের দীর্ঘ গবেষণায় ভেজালের কুফল তুলে ধরে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়-  কেমিক্যাল, ফরমালিন তথা ভেজাল খাদ্যের কারণে যকৃত, প্লিহা, কিডনির সমস্যা, ক্যান্সার, হাঁপানী, অন্ত্রে ব্যাথা, পেটের পীড়া, গর্ভপাত, বন্ধ্যাত্ব, শ্বাসকষ্ট, স্নায়ুর ক্ষতি, ফুসফুসের রোগ, ডায়াবেটিস, প্রজনন অক্ষমতা, মাংসপেশীর সংকোচন, ববি বমি ভাব, মুখে অতিরিক্ত লালা ঝরা, চোখে পানি পড়া, মাথা ব্যাথা, চোখের মণি ছোট হয়ে আসা, ঝাপসা দেখা, দুর্বলতা, তলপেটে ব্যাথা, খিঁচুনি দেখা দেয়। সব মিলিয়ে একটি মানুষের স্বাস্থ্যের যে অবনতি দেখা দেয় তাতে করে তাকে মানব  জীবন বলেনা। যে মানুষ সুস্থ্য নয় তার পক্ষে ভাল কোন কিছুই করা সম্ভব নয়।

বাংলাদেশ কিডনি ফাউন্ডেশনের এক  প্রতিবেদনে বলা হয় রাসায়নিক মিশ্রিত খাবার খেয়ে কিডনি রোগের সংখ্যা প্রতিদিন ১৬ ভাগ বৃদ্ধি হচ্ছে। প্রতিবেদনে আরো বলা হয় দীর্ঘদিন বিষাক্ত খাবার খেলে গর্ভবতী মা ও গর্ভের ভ্রুণ ক্ষতি গ্রস্থ হয়। তাছাড়া গর্ভজাত সন্তানেরও ক্যান্সার ও কিডনি সহ মরণ ব্যাধীতে আক্রান্ত হয়। এ ছাড়াও স্বল্প বুদ্ধি, অল্প বয়সে বৃদ্ধ হয়ে যাওয়ার প্রধানতম কারণ। এছাড়াও প্রতিবন্ধী শিশুর জন্ম হচ্ছে প্রতিনিয়ত।

এছাড়াও প্রতিবেদনে বলা হয়েছে বিষক্রিয়া দেহের ভিতর দীর্ঘদিন জমা থাকে কখনও নিঃশেষ হয়না। ফলে দেহে থাকা বিষ বংশানুক্রমে স্থানান্তর হয়। সুতরাং এ জাতিকে বাঁচাতে এক্ষুনি এই মুহুর্তে প্রয়োজন ভেজাল দাতাকে জনসমক্ষে কঠিন শাস্তি দেওয়া। যা ১৯৫৮ সালের পাকিস্তান সরকারের জারি করা মার্শাল ল’ কেও যেন ছাড়াইয়া যায় এবং রাতারাতি মানুষ সুধরে যায়।

 তাছাড়া আগামী দশ বছরের মধ্যে রোগী ভর্তি করা লাগবে তাবু খাটিয়ে ঢাকা শহরের সব গুলো স্টেডিয়ামে। এটায় কাজী শুভ্র রহমানের ভবিষ্যৎ বাণী। বর্তমানে সবচেয়ে মারাত্মক হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে- লাল টমেটা, তরমুজ, কাাঁঠাল, আনারস, মুড়ি, নকল দুধ, নকল খেজুর গুড়, রঙিন মিষ্টি, রঙিন কেক, রঙিন আইসক্রিম, ব্রয়লার মুরগী, লাল বিদেশী মুরগী, যে কোন মরা মাছ, দামী চাল, অনেক কোম্পানীর জ্যুস, টিপস, চানাচুর, গরমের দিনের যেকোন ডিম, কেক জাতীয় খাবার, মুড়ি, পিয়াজু, বেগুনী, আপেল, কমলা, মাল্টা, তেতুল, পাকা বেল, পাকা পেঁপে, কলা, কামরাঙা, যে কোন শুটকি মাছ ইত্যাদি। প্রিয় পাঠক, ভেজাল পণ্য বর্জন করুন, ভেজাল দাতার সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করুন, ঘৃণা করুন হৃদয় দিয়ে।