Amar Sangbad
ঢাকা বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল, ২০২৪,

আনন্দ উৎসবে উদযাপন হচ্ছে বড়দিন

ডিসেম্বর ২৫, ২০১৪, ০৬:৫০ এএম


আনন্দ উৎসবে উদযাপন হচ্ছে বড়দিন

আজ শুভ বড়দিন। নানা আয়োজন ও ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যের মধ্যদিয়ে উদযাপন হচ্ছে খ্রিষ্ট ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব বড়দিন।

বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন গির্জায় বিশেষ প্রার্থনার মধ্যদিয়ে শুরু হয় এ উৎসবের আনুষ্ঠানিকতা। সকালে তেজগাঁওয়ের জপমালা রাণী গির্জায় শুরু হয় রাজধানীর সবচেয়ে বড় প্রার্থনা। খ্রিষ্টধর্মাবলম্বীদের বিশ্বাস, এই দিনে যিশুখ্রিস্ট পৃথিবীতে এসেছিলেন শান্তির বাণী নিয়ে।

  এবছর যিশুভক্তরা তার দু'হাজার ১৪ তম জন্মোৎসব উদযাপন করছে। যিশু খ্রিষ্টের জন্মদিনে সকাল থেকেই গির্জায় গির্জায় সমবেত হন ছোট বড় নানা বয়স ও শ্রেণি পেশার মানুষ। পাপ মোচনের লক্ষ্যে ঈশ্বরের দরবারে চলে তাদের প্রার্থনা। প্রার্থনা সঙ্গীতে মুখর হয়ে রয়েছে গির্জা প্রাঙ্গণ।

প্রায় দুই হাজার বছর আগে মাতা মেরির (বিবি মরিয়ম) গর্ভে জন্মেছিলেন যিশু। তবে যিশুর জন্ম হয়েছিল অলৌকিকভাবে। মেরি ছিলেন ইসরাইলের নাজারেথবাসী যোসেফের বাগদত্তা। সৎ, ধর্মপ্রাণ ও সাধু এই মানুষটি পেশায় ছিলেন কাঠমিস্ত্রি। একদিন এক স্বর্গদূতের (ফেরেস্তা) কাছ থেকে মরিয়ম জানতে পারেন, মানুষের মুক্তির পথ দেখাতে তাঁর গর্ভে আসছেন ঈশ্বরের পুত্র। দূত শিশুটির নাম যিশু রাখার নির্দেশ দেন।

 বিয়ের আগেই মেরির সন্তান হচ্ছে জেনে ধর্মপ্রাণ যোসেফ খুব চিন্তিত হয়ে পড়েন। তিনি সিদ্ধান্ত নেন গোপনেই ত্যাগ করবেন মেরিকে। কিন্তু সেই স্বর্গদূত এসে যখন ঈশ্বরের পরিকল্পনা যোসেফের কাছে খুলে বলেন, তখন যোসেফ রাজি হয়ে যান মেরিকে স্ত্রী হিসেবে গ্রহণ করতে।

 যোসেফের গ্রাম নাজারেথ ছিল জুদেয়া রাজ্যের একটি শহর। রাজার নির্দেশে তখন রাজ্যজুড়ে চলছে আদমশুমারির কাজ। কর দেওয়া ও নাম লেখানোর জন্য হাজার হাজার মানুষ বেথেলহেমে যান। মেরিকে গাধার পিঠে বসিয়ে যোসেফও রওয়ানা দেন বেথেলহমে। পথেই মেরির গর্ভবেদনা ওঠে। রাজ্যের মানুষের ভিড়ে বেথেলহেমের কোনো সরাইয়ে জায়গা হয় না তাদের। অবশেষে উপায়ন্তর না দেখে সন্তান জন্মদানের জন্য মেরিকে এক গোয়ালঘরে ঠাঁই নিতে হয়। সেখানেই জন্ম নেন যিশু।

 যিশুর জন্মের অনেক বছর পর থেকে খ্রিষ্টানরা এ দিনকে আনন্দ ও মুক্তির দিন হিসেবে পালন করতে শুরু করে। ২৫ ডিসেম্বর বড়দিন পালন করা হয় বলে অনেকের ধারণা এই দিনেই যিশু খ্রিষ্ট জন্মগ্রহণ করেছিলেন। এই ধারণা ঠিক নয়। প্রকৃতরূপে যিশুর জন্মগ্রহণের সঠিক দিন-ক্ষণ পাওয়া যায় না।

 ২০০ খ্রিষ্টাব্দের দিকে মিসরে একদল মানুষ যিশুর জন্মদিন পালন শুরু করে। ২২১ খ্রিষ্টাব্দে মিসরের একটি দিনপঞ্জিতে লেখা হয়েছিল, মা মারিয়া ২৫ মার্চ গর্ভধারণ করেন। এ বিষয়টি রোমান ক্যালেন্ডারেও ছিল। এ ক্যালেন্ডারে সূর্যদেবতার প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনের উৎসবের কথাও রয়েছে। ইতিহাস রয়েছে, ৩৩৬ খ্রিস্টাব্দে রোমে সর্বপ্রথম বড়দিন উৎযাপন শুরু হয়। এরপর তা ছড়িয়ে পড়ে অন্যান্য দেশেও। ৩৫৪ খ্রিষ্টাব্দের রোমান ক্রমপঞ্জিতে ২৫ ডিসেম্বর যিশুর জন্মদিন উল্লেখ করে দিনটিকে যিশুর জন্মদিবস হিসেবে ঘোষণা করা হয়। পরবর্তীতে ৪৪০ সালে পোপ একে স্বীকৃতি দেন।

 মধ্যযুগে বড়দিন উৎসব আরো জনপ্রিয়তা অর্জন করে। ৮০০ খ্রিষ্টাব্দের এই দিনে জার্মানির রাজা রোমান সম্রাট হিসেবে গির্জা কর্তৃক মুকুট ধারণ করেন। ১০০০ খ্রিষ্টাব্দে রাজা সেন্ট স্টিফেন হাঙ্গেরিকে খ্রিষ্টান রাজ্য ঘোষণা করেন। ১০৬৬ খ্রিস্টাব্দে রাজা উইলিয়াম ইংল্যান্ডের মুকুট ধারণ করেন। ক্রিসমাস উৎসব প্রসারে এগুলো বেশ প্রভাব ফেলে। তবে প্রটেষ্টান্ট সংস্কারের সময় একদল লোক বড়দিন পালনের বিরোধিতা শুরু করে। তাদের অভিযোগ, উৎসবটি পৌত্তলিক এবং ধর্মীয়ভাবে এর কোনো তাৎপর্য নেই। এর পরিপ্রেক্ষিতে ইংল্যান্ডের গোঁড়া শাসকরা ১৬৪৭ সালে বড়দিন উৎসব পালন নিষিদ্ধ করে। অবশ্য একটি নির্দিষ্ট সময়ের পর এ নিষেধাজ্ঞা উঠে যায়। বর্তমানে শুধু ক্যাথলিক নয়, প্রটেষ্টান্টরাও এ উৎসব পালন করে।

 বিশ্বের অধিকাংশ দেশে ২৫ ডিসেম্বর বড়দিন পালিত হলেও রাশিয়া, জর্জিয়া, মিসর, আর্মেনিয়া, ইউক্রেন ও সার্বিয়ায় ব্যতিক্রম। জুলিয়ান ক্যালেন্ডারের জন্য এ দেশগুলোতে ক্রিসমাস পালিত হয় ৭ জানুয়ারি। উত্তর ইউরোপীয়রা যখন খ্রিস্টধর্ম গ্রহণ করে তখন পৌত্তলিকতার প্রভাবে ক্রিসমাস শীতকালীন উৎসবের মতো পালন শুরু হয়। ফলে সেখানকার এ উৎসবে শীত উৎসবের অনুষঙ্গও জড়িত হয়েছে। এখন পর্যন্ত স্ক্যান্ডিনেভীয়রা এ দিনটিকে `জুন` উৎসব বলে থাকে। পূর্বদেশ অর্থাৎ এশিয়া মাইনরের দেশগুলোতে ৬ জানুয়ারি এ উৎসব পালন করা হয়। ৬ জানুয়ারি যিশুর ব্যাপ্টিজম বা দীক্ষাস্নান দিবস।

দিনক্ষণ সঠিকভাবে জানা না গেলেও, বড়দিন উদযাপন বর্তমানে এক সার্বজনীন রূপ পেয়েছে। প্রায় দুই হাজার বছর আগে যিশু খ্রিষ্ট মানুষকে দেখিয়েছিলেন মুক্তি ও কল্যাণের পথ। বড়দিনে তাই তাকে গভীরভাবে স্মরণ করে সারা বিশ্বের খ্রিষ্টান সম্প্রদায়।

এদিকে, বড়দিন উপলক্ষে পাচঁতারা হোটেলগুলোতে দিনব্যাপী অনুষ্ঠানের আয়োজন রয়েছে। বড়দিনের উৎসব নির্বিঘ্নে উদযাপন করতে গির্জাগুলোতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতা বাড়ানো হয়েছে।