Amar Sangbad
ঢাকা বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল, ২০২৪,

গাজীপুরের মানুষ মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকিতে

অজয় সরকার ঝুটন, গাজীপুর

অক্টোবর ১৯, ২০১৯, ১২:৪৬ পিএম


গাজীপুরের মানুষ মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকিতে

ধুলায় আচ্ছন্ন গাজীপুর পরিবেশ। মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়েছে এলাকার জনসাধারণ। গাজীপুর এ অবস্থা দীর্ঘদিন থেকে বিরাজমান থাকলেও প্রশাসনের নেই কোনো কার্যকরী পদক্ষেপ।

বর্ষাকালে কাদা আর শুষ্ক মৌসমে ধুলা এ দুই শব্দের সাথে গাজীপুরের মানুষের সাথে যেন মিতালি! শুষ্ক মৌসুম শুরু হওয়ার সাথে সাথে ধুলার নিয়ন্ত্রণে চলে যায় গাজীপুরের পরিবেশ। বর্তমান প্রেক্ষাপটে পুরো গাজীপুরসহ উপজেলা যেন এখন ধুলাময় নগরীতে পরিণত।

সরেজমিন দেখা যায়, গাজীপুরের উল্লেখযোগ্যহারে রাস্তা কাজে ব্যবহৃত বিভিন্ন যানবাহন ও ইটভাটার যানবাহনগুলো গিলে খাচ্ছে রাস্তাঘাট ও সংযুক্ত মহাসড়ক। অতিমাত্রায় ইট বোঝাইকৃত ভারী যানবাহনের কারণে সড়কগুলোর বেহাল অবস্থা। এ সমস্ত সড়কে ইট-পাথর উঠে গিয়ে ধুলোয় একাকার হয়ে যায় চারদিকের পরিবেশ।

গাজীপুর মহাসড়ক হয়ে প্রতিদিন শতশত ট্রাক, পিকআপযোগে বালু সরবরাহ করা হয় ইটভাটা ও রাস্তার সম্প্রসারণের কাজে। এ সব বালু সরবরাহকালে চলন্ত গাড়ি থেকে বালির কণা ধুলো হয়ে চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে। পাশাপাশি মহাসড়কের পাশে ইট ব্যবসায়ীদের রাখা বালু, আধাভাঙা ইট, কংক্রিটের স্তূপ থেকে প্রবাহমান বাতাসে ও দূরপাল্লার ভারী গাড়ির চাকায় পিষ্ট হয়ে প্রচণ্ড ধুলা ছড়িয়ে পড়ে চারপাশে।

গাজীপুর শাখাসড়ক ছাড়াও শুধু মহাসড়কে বিশেষ করে গাজীপুর চৌরাস্তা, কোনাবাড়ি, ভোগড়া বাইপাস, জয়দেবপুর, চন্দ্র চৌরাস্তা, কালিয়াকৈর, এ সমস্ত জায়গায় দূষিত ধুলোর প্রকোপ সবচেয়ে বেশি। এ সড়কে প্রায় ২০টির অধিক স্কুল-কলেজ ও মাদ্রাসা রয়েছে। এতে করে চরম দুর্ভোগের শিকার হচ্ছে এ সমস্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছাত্রছাত্রীরা। ভোগান্তিতে পড়তে দেখা গেছে স্কুলগামী কোমলমতি শিশু থেকে সাধারণ পথচারীদেরকেও।

তাছাড়া গাজীপুর থেকে উত্তরবঙ্গ যাতায়াতরত যাত্রীরা পড়েছেন সীমাহীন দুর্ভোগে। তারা নাকে হাত কিংবা রুমাল চেপে ধুলাবালু থেকে বাঁচার চেষ্টা করেন। অতিমাত্রায় ইটভাটা ও রাস্তার কাজে বালু সরবরাহের যানবাহন চলাচলের ফলে রাস্তাঘাটগুলো ধুলোবালুতে পূর্ণ হয়ে অনেক এলাকায় ধুলার আবরণ কুয়াশার চেয়ে গাঢ়।

সকালে কিংবা সন্ধ্যায় ধুলা আর ধুলা, ধুলার কারণে চোখ মেলে তাকানোর অবস্থা নেই। গাড়ির চাকার সঙ্গে ধুলা ছড়িয়ে পড়ছে চারদিকে। চোখের মধ্যে ঢুখে পড়ছে কচকচে ধুলা। ধুলা থেকে রেহায় পায় না সড়কগুলোর আশ পাশে থাকা দোকানপাট, হোটেল রেস্তোরাঁ, বাজার-মার্কেট। ধুলাবালুতে ঢাকা পড়েছে বির্ভিন্ন সুউচ্চ ভবনের সৌন্দর্য। এমনকি ধুলাবালুর কারণে বাড়িঘরে বসবাসের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে।

এছাড়া সড়কের আশেপাশের সবুজ গাছপালাগুলোর ডালপালায় ধুলা জমে ধূসর গাঢ় হয়ে গেছে যার ফলে ওই সমস্ত গাছপালার ফলন ও স্বাভাবিক বৃদ্ধি ব্যাহত হচ্ছে। ধুলার কারণে চরম স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়ছেন এলাকার জনসাধারণ। ধুলাবালুর কারণে চোখের রোগ, ব্রঙ্কাইটিস, সর্দি, কাশি, যক্ষ্মা, শাসকষ্ট, এলার্জিসহ ভাইরাসজনিত নানারোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে। এমনকি দীর্ঘদিন ধুলাবালুর পরিবেশে থাকার ফলে ফুসফুসে ক্যান্সার ও কিডনিতে সমস্যা হতে পারে বলে জানান স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।

গাজীপুর কোনাবাড়ির এলাকার বাসিন্দা বিশিষ্ট আ.লীগ নেতা আনোয়ার পারভেজ (কণ্ঠশিল্পী) জানান, ইটভাটা ও রাস্তার ধুলার কারণে বাড়ি থেকে বের হওয়া অসম্ভব হয়ে পড়েছে, প্রয়োজনের তাগিদে বের হলেও মাথার কালো চুল সাদা হয়ে যায়, নতুন কাপড় ধূসর রঙের আবরণে ঢেকে যায়, আর বাধ্যতামূলকভাবে চোখের গ্লাস পড়তে হয়।

এ ব্যাপারে জনস্বার্থে সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের দ্রুত হস্তক্ষেপ কামনা করছেন সর্বস্তরের জনসাধারণ।

এমআর