Amar Sangbad
ঢাকা শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪,

চুয়াডাঙ্গায় নির্মিত হলো ‘বীর ঠিকানা’

প্রিন্ট সংস্করণ॥ইসলাম রকিব, চুয়াডাঙ্গা

অক্টোবর ২০, ২০১৯, ০১:০৮ এএম


চুয়াডাঙ্গায় নির্মিত হলো ‘বীর ঠিকানা’

চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে উপজেলা চত্বরে নির্মাণ করা হলো সদর উপজেলার ৫৬৪ জন তালিকাভুক্ত বীর মুক্তিযোদ্ধার নাম খচিত স্মৃতিস্তম্ভ ‘বীর ঠিকানা’। একই সাথে চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার মানচিত্রেও এটি স্থান পেয়েছে।

‘বীর ঠিকানার’ পটভূমিতে উল্লেখ করা হয়েছে, বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধ বিশ্বের বুকে একটি রক্তাক্ত ইতিহাস। স্বাধীনতা অর্জনের জন্য ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ থেকে ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত দীর্ঘ ৯ মাস পশ্চিম পাকিস্তানিদের বিরুদ্ধে বাঙালির রক্তক্ষয়ী সংগ্রাম সংঘটিত হয়। ৩০ লাখ প্রাণ আর ২ লাখ মা-বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে অর্জিত বাংলাদেশের স্বাধীনতা বিশ্বব্যাপী অত্যন্ত মর্যাদার এবং গৌরবের আসনে অধিষ্ঠিত।

১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ মহান মুক্তিযুদ্ধের জন্য সর্বপ্রথম দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় কমান্ড গঠিত হয়েছিল চুয়াডাঙ্গায়। এ জেলা শহরে সর্বপ্রথম
(২ এপ্রিল ১৯৭১) গড়ে তোলা হয় বাংলাদেশের অস্থায়ী রাজধানী। যদিও পরবর্তীতে পাকিস্তানি বিমান বাহিনীর বোমারু বিমানের বোমা হামলায় সরিয়ে নেওয়া হয় মেহেরপুর জেলার মুজিব নগরের বৈদ্যনাথ তলায়।

সর্বপ্রথম সেই অকুতভয়ী চুয়াডাঙ্গার বীর সন্তানরা, যারা মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছিল তাদের নাম স্মরণীয় করে রাখার কোনো ব্যবস্থা ছিলো না। হয়তো বা কালের গর্ভে তাদের নাম একদিন হারিয়ে যেতো। জাতির এ বীর সন্তানদের নামের তালিকা সঠিকভাবে সংরক্ষিত না হলে আগামী প্রজন্মের কাছে তাদের কোনো পরিচিতিই একদিন থাকতো না।

তাই তাদের নামের তালিকা স্থায়ীভাবে ধরে রাখতে চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলা পরিষদ চত্বরে এক বীর মুক্তিযোদ্ধার সন্তান সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ওয়াশীমুল বারীর উদ্যোগে ও পরিকল্পনায় নির্মিত হয়েছে ‘বীর ঠিকানা’ নামক একটি স্মৃতিস্তম্ভ। চুয়াডাঙ্গার সদর উপজেলার মানচিত্রে যে বীর মুক্তিযোদ্ধার বাড়ি যেখানে, তাকে সেখানেই দেখানো হয়েছে। টাইলসে খোদাই করে যে নাম অঙ্কিত হয়েছে, তা দেখে যে কোনো মানুষই সংশ্লিষ্ট বীর মুক্তিযোদ্ধাকে খুঁজে পাবে। দেশের এ সূর্য সন্তানদের নাম আর হারানোর সুযোগ থাকবেনা।

এ উদ্যোগের প্রধান সম্বয়কারী ইউএনও ওয়াশীমুল বারী দৈনিক আমার সংবাদকে বলেন, উদ্যোগটি গ্রহণের মূল লক্ষ্য হচ্ছে- চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার বীর মুক্তিযোদ্ধাদের স্থায়ী নামের তালিকা প্রণয়ন, উপজেলা ম্যাপের মধ্যে ইউনিয়ন ভিত্তিক তাদের নাম খোদাই করে রাখা, আগামী প্রজন্মের সাথে তাদের পরিচিতি লাভের সুযোগ করে দেয়া ও একই স্তম্ভে চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার বীর মুক্তিযোদ্ধাগণকে একীভূত করা।

তিনি আরো বলেন, এ ধরণের ব্যতিক্রমী উদ্যোগ সারা বাংলাদেশের মধ্যে এটাই প্রথম। খুলনা বিভাগের মাননীয় বিভাগীয় কমিশনার লোকমান হোসেন মিয়া গত ১৩ এপ্রিল ২০১৯ তারিখ ‘বীর ঠিকানা’ স্তম্ভের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। সুনিপুন অনুসন্ধানের মাধ্যমে সদর উপজেলার ৫৬৪ জন বীর মুক্তিযোদ্ধার নাম স্তম্ভের ম্যাপে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। স্তম্ভের উচ্চতা ১৪ ফুট ও প্রস্ত ১৬ ফুট।

প্রসঙ্গত, একদিন হয়তো এ প্রজন্মের মানুষ কেউ বেঁচে থাকবেনা, থাকবেনা চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ওয়াশীমুল বারী। কিন্তু অনন্তকালের স্বাক্ষী হয়ে প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে রয়ে যাবে চুয়াডাঙ্গার বীর সেনাদের বীরত্ব গাঁথার ইতিহাস।