Amar Sangbad
ঢাকা মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল, ২০২৪,

শিল্প কারখানার বর্জ্যে বিলিন হওয়ার পথে শীতলক্ষ্যা

মার্চ ১৬, ২০১৫, ০৭:৫৭ এএম


শিল্প কারখানার বর্জ্যে বিলিন হওয়ার পথে শীতলক্ষ্যা

 

পলাশ উপজেলার ঘোড়াশালস্থ শীতলক্ষ্যা নদীর তীর ঘেঁষে বিভিন্ন শিল্প প্রতিষ্ঠান ও কল-কারখানা গড়ে উঠেছে। এসব প্রতিষ্ঠান ধীরে ধীরে নদীর জায়গা দখল করছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এতে করে ছোট হয়ে আসছে নদী। আর শিল্প প্রতিষ্ঠানের দূষণের কবলে পড়ে বিলিন হতে চলছে ঐতিহ্যবাহী শীতলক্ষ্যা নদীটি। এছাড়া মারাত্মক বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে ওই এলাকার পরিবেশ ও জীব বৈচিত্র্য। আর বেকার হয়ে পড়ছে জেলেরা।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, দেশের অন্যতম বৃহৎ শিল্প প্রতিষ্ঠান প্রাণ ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্ক, ঘোড়াশাল সার কারখানা, পলাশ সার কারখানা, দেশবন্ধু সুগার মিল, সেভেন রিংস সিমেন্ট, তাইহিও সিমেন্ট, গাজী সিমেন্ট, সেমরি ডাইং, বাংলাদেশ জুট মিল, জনতা জুট মিল, ফৌজী জুট মিল, ক্যাপিটাল পেপার মিলসহ বিভিন্ন শিল্প প্রতিষ্ঠানের বিষাক্ত বর্জ্য এই নদীতে ফেলা হচ্ছে।

নরসিংদী জেলার পলাশ উপজেলার পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া শীতলক্ষ্যা নদীটি এক সময় ছিল ব্যবসা বাণিজ্যের মূল চালিকা শক্তি। নদী পথে যোগাযোগ ও ব্যবসা বাণিজ্যসহ জীবনযাত্রার মান উন্নয়নে বিরাট ভূমিকা ছিল এই নদীর। নদী পাড়ের কৃষি জমিগুলো ছিল ফসলে ভরা। নদীতে ছিল প্রচুর দেশীয় প্রজাতির মাছ।

তবে দীর্ঘদিন ধরে নদীর দুই পাড়ে অবস্থিত শিল্পকারখানার বিষাক্ত বর্জ্যে শীতলক্ষ্যা নদীর পানি দূষিত হয়ে কালচে হয়ে গেছে। ফলে বিপন্ন হয়ে পড়েছে জীব বৈচিত্র। আর বেকার হয়ে পড়েছে অনেক জেলে পরিবার।

এলাকাবাসীর অভিযোগ থেকে জানা গেছে, প্রাণ গ্রুপ শীতলক্ষ্যা নদীর পাড়ে মাটি ভরাট করে নদী দখল করে কারখানার পরিসর বৃদ্ধি করছে। নদীর অনেকটা অংশ এরই মধ্যে দখল করে ফেলেছে। এসব দখলের সঙ্গে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসন থেকে শুরু করে সন্ত্রাসী বাহিনী সহায়তা করছে। শুধু দখল নয় প্রাণ ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কের বর্জ্য শোধনাগার (ইটিপি) ব্যবহার না করে সরাসরি বর্জ্য ফেলছে এই নদীতে।

এছাড়া শীতলক্ষ্যা দূষণের জন্য প্রাণ গ্রুপ থেকে দফায় দফায় জরিমানাও আদায় করে পরিবেশ অধিদফতর। তারপরও বন্ধ হয়নি তাদের বর্জ্য ফেলা। কথায় বলে চোর নাহি শুনে কোন দিন ধর্মের কাহিনী। প্রাণ গ্রুপের বেলায় ঠিক এটিই ঘটেছে।

স্থানীয় একটি উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক বলেন, ‘শীতলক্ষ্যা নদী এখন উন্নয়নের বলি। নরসিংদী ও গাজীপুরের নদী পাড়ের শিল্পকারখানার সব বর্জ্য ফেলার স্থান হচ্ছে এই নদী।

মাঝি মরন চন্দ্র দাস বলেন, ‘আগে এই নদীতে গোসল করা যেত। মাছ পাওয়া যেত প্রচুর। জেলেরা নদীর মাছ বিক্রি করে সংসার চালাতো। এখন নদীর পানি এতটাই দূষিত হয়েছে যে, এখানে মাছ তো দূরের কথা বিষাক্ত সাপও টেকে না।’

ঘোড়াশাল শিপ্ল এলাকার বাসিন্দা কারিমা বেগমের অভিযোগ, শিল্পপতিরা নদী ধ্বংস করছে। নদীর সঙ্গে শেষ হচ্ছে ক্ষেতের ফসল, মাছ ও এলাকার পরিবেশ। ভবিষ্যতে নদীর পারে মানুষ বসবাস করতে পারবে না।

নদী দূষণের ব্যাপারে জানতে চাইলে প্রাণ কোম্পানীর কর্মকর্তা কামাল হোসেন বলেন, ‘নদী দূষণ যাতে না হয় সেজন্য আমরা বর্জ্য শোধনাগার (ইটিপি) ব্যবহার করি। তবে বিভিন্ন কারণে শতভাগ নদী দূষণ রোধ করা যায় না। আমরা চেষ্টা করছি যাতে শতভাগ নদী দূষণ মুক্ত রাখা যায়।’

এ ব্যাপারে পরিবেশ অধিদপ্তরের নরসিংদী কার্যালয়ের সিনিয়র কেমিস্ট আতাউর রহমান বলেন, একাধিকবার জরিমানা আদায় ও নিষেধাজ্ঞার পরও যদি শিল্প গ্রুপগুলো শীতলক্ষ্যা নদীতে বর্জ্য নিক্ষেপ করা বন্ধ না করে তাহলে পুণরায় তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।