Amar Sangbad
ঢাকা বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪,

৪৩ বছর পর দুই মেয়ে ফিরে পেল মাকে

ডিসেম্বর ২৩, ২০১৪, ০১:৩২ পিএম


৪৩ বছর পর দুই মেয়ে ফিরে পেল মাকে

   সৃষ্টিকর্তার লীলা বোঝা বড় দায়। ৪৩ বছর পর মাকে ফিরে পেল দুই মেয়ে। সৃষ্টি হল বিশ্বের সবচেয়ে সুখময় মুহূর্তের। আনন্দে চোখের জল চিবুক গড়িয়ে ভিজিয়ে দিল শাড়ীর আঁচল।

গত শুক্রবার এমন এক অভূতপূর্ব দৃশ্যের অবতারণা হয় ময়মনসিংহের তারাকান্দায়। ১৯৭১ সালে যুদ্ধের দামামার মধ্যে নিখোঁজ হন গাইবান্ধার বাগচী গ্রামের কৃষকবধূ রাহেলা। এরপর পেরিয়ে গেছে ৪৩টি বছর। কেউ ধারণাও করতে পারেনি সে বেঁচে আছে। গাইবান্ধার সেই রাহেলার সন্ধান মিললো ময়মনসিংহের তারাকান্দা উপজেলার প্রত্যন্ত গ্রাম ধলিরকান্দায়। সে সময়ের মধ্যবয়সী শক্ত-সামর্থ্য রাহেলার বয়স এখন আশির ওপরে। দৃষ্টি ঝাপসা। সেই ঝাপসা দৃষ্টিতে কন্যা-নাতিদের মুখ ভেসে উঠতেই হু হু করে কেঁদে ফেললেন রাহেলা। হারানো মাকে ফিরে পেয়ে আবেগাপ্লুত রাহেলার দুই মেয়ে ও স্বজনরা। মায়ের সংবাদ পেয়ে গত শুক্রবার গাইবান্ধা থেকে রাহেলার দুই মেয়ে, নাতি ও ভাতিজা ময়মনসিংহের তারাকান্দায় আসেন।

 গত শনিবার বিকেলে রাহেলাকে নিয়ে সবাই ফিরে যান গাইবান্ধার সাদুল্লাপুরের কামারপাড়ার কিসামত বাগচী গ্রামে। তারাকান্দা উপজেলার ধলিরকান্দা গ্রামের যুবক জহিরুল ইসলাম খান (৩০) জানান, ১৯৮৮ সালের দিকে রাহেলা এ গ্রামে আসেন। ওঠেন তাদেরই আত্মীয় ডা. নুরুল ইসলামের বাড়িতে। নুরুল ইসলামের বৃদ্ধ মায়ের সঙ্গেই দীর্ঘ সময় কেটেছে রাহেলার। নুরুল ইসলামের মা মারা যাওয়ার পর এ বাড়ি, ও বাড়ি খেয়ে-ঘুমিয়ে দিন কাটত রাহেলার। নিজের বাড়ির ঠিকানা জানতে চাইলে কামারপাড়া নামে একটি রেলস্টেশন ও বাগচী গ্রামের কথা বলতেন। কথা বলতেন রংপুর-গাইবান্ধা এলাকার আঞ্চলিক ভাষায়। সম্প্রতি রাহেলা তার ছেলেমেয়ের কথা খুব বলতেন। কান্নাকাটি করতেন। তাদের কাছে নিয়ে যেতে গ্রামের লোকদের অনুরোধ করতেন।

এরপর জহিরুল অনুমানের ওপর ভিত্তি করে খুলনা, বাগেরহাট, গাইবান্ধাসহ বেশ কয়েকটি এলাকার সাংবাদিক ও এনজিও কর্মীদের কাছে ফোন করেন। এরপর সন্ধান পান গাইবান্ধার সাদুল্লাপুরের কামারপাড়া ইউনিয়নের। ১০-১২ দিন আগে একপর্যায়ে ওই ইউনিয়নের চেয়ারম্যানের সঙ্গে কথা বললে তিনি রাহেলার পরিবারের লোকজনের সন্ধান দেন। এরপরই রাহেলার প্রতীক্ষার প্রহর শেষ হয়।

গত শুক্রবার রাহেলার দুই মেয়ে, ভাতিজা ও নাতি তারাকান্দায় এসে রাহেলার দেখা পান। রাহেলার বড় মেয়ে রাজিয়া (৬০) বলেন, তারা দুই বোন, এক ভাই। ১৯৭১ সালে বাবা দ্বিতীয় বিয়ে করায় তার মা রাহেলা মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েন। একপর্যায়ে নিখোঁজ হয়ে যান। এরপর তারা অনেক খুঁজেছেন। এত দিন পর মাকে ফিরে পেয়ে তাদের আনন্দের ভাষা নেই। ৪৩ বছর পর মেয়েদের দেখা পেয়ে চোখের কোনে আনন্দের জল চিকচিক করে উঠলেও রাহেলার কণ্ঠে অভিমানের সুর। অভিমান ছেলের প্রতি, মেয়ের জামাইদের প্রতি। বলেন, 'আমার ছেলে আইলো না ক্যা? মেয়ের জামাইরা কই? আমার যে খুব মা ডাক শুনবার মন চাইতাছে। তবে ১৯৮৮ সালের আগ পর্যন্ত রাহেলা কোথায় ছিলেন সে উত্তর রাহেলা নিজেও দিতে পারেননি, পারেননি গ্রামের কেউ।