Amar Sangbad
ঢাকা বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪,

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন সংশোধন ও উচ্চশিক্ষার ভবিষ্যৎ

মো. ইমরান চৌধুরী

সেপ্টেম্বর ১৮, ২০২১, ০৬:৩৫ পিএম


বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন সংশোধন ও উচ্চশিক্ষার ভবিষ্যৎ

বাংলাদেশে বর্তমানে শতাধিক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। বিভিন্ন সময় প্রণীত আইনের আওতায় এসব বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। সর্বশেষ ২০১০ সালে নতুন একটি আইন প্রণয়ন করা হয়; যেখানে বলা হয়েছে— বেসরকারিভাবে বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপিত হলে সেখানে উদ্যোক্তাদের সমন্বয়ে স্থাপিত বিশ্ববিদ্যালয়ের নামে একটি ট্রাস্টি বোর্ড গঠন করতে হবে।

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন ২০১০-এ প্রণীত আইনটি সংশোধনের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সদস্য, কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিবের সমন্বয়ে গঠিত একটি কমিটি কাজ করছে। ইতোমধ্যে এ কমিটি খসড়া তৈরি করেছে, যা বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে।

যে খসড়া আইন পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে, সেখানে ট্রাস্টি বোর্ডে ৩৩ জন সদস্য রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে, যার মধ্যে পাঁচজন শিক্ষাবিদ থাকতে হবে। এ ছাড়া উপাচার্য নিয়োগ সরাসরি সরকারি ব্যবস্থাপনায় হবে। উপাচার্যকে সব ধরনের আর্থিক ক্ষমতা দেয়ার বিধান রাখার কথাও বলা হয়েছে। এসব প্রস্তাবনা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যোক্তাদের তাদের স্থাপিত প্রতিষ্ঠানে গুরুত্বহীন করা অথবা বাংলাদেশের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে ধীরে ধীরে বন্ধ করে দেয়ার মতো একটি নেতিবাচক কার্যক্রমের অংশ হিসেবেই ধরা যায়।

২০১০ সালের বিদ্যমান আইনে ট্রাস্টি বোর্ড / উদ্যোক্তাদের তেমন কোনো ক্ষমতা দেয়া হয়নি। এরপরও ট্রাস্টি বোর্ডের হস্তক্ষেপের মাধ্যমেই সব বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালিত হচ্ছে বলে অভিযোগ এবং গুজব রয়েছে। যেমন, উপাচার্যরা ট্রাস্টি বোর্ডের সিদ্ধান্তের বাইরে কিছু করতে পারেন না, ট্রাস্টি বোর্ডের বিভিন্নভাবে আর্থিক সুবিধা গ্রহণের চেষ্টা এবং নিয়োগসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে নানাভাবে তারা হস্তক্ষেপ করে থাকে।  

২০১০ সালে প্রণীত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইনের ভুলের কারণেই এসব অনিয়ম ও অভিযোগের তীর ট্রাস্টি বোর্ডের দিকেই নিক্ষেপ করা হচ্ছে। মূলত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনা বা স্থাপনের জন্য ট্রাস্টি বোর্ড গঠনের সিদ্ধান্তটি ২০১০ সালের আইনের বড় একটি ভুল ছিলো এবং এই ট্রাস্টি বোর্ড গঠনের বিধান রাখার ফলেই এমন সংকট তৈরি হয়েছে। কারণ, ট্রাস্টি বোর্ড এমন একটি প্রতিষ্ঠান যেখান থেকে নিয়ম অনুযায়ী কোনো আর্থিক বা অন্যান্য কোনো ধরনের সুবিধা কেউ গ্রহণ করতে পারবে না।

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতাদের মধ্যে যারা শিল্পপতি, তাদের কথা ভিন্ন হতে পারে; কিন্তু বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে সব বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় শিল্পপতিদের দ্বারা প্রতিষ্ঠিত হয়নি। যারা একটি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করতে গিয়ে নিজেদের সর্বোচ্চ বিনিয়োগ করেছে, কোটি কোটি টাকা ঋণ নিয়েছে, জীবনের মূল্যবান সময়-মেধা ব্যয় করেছে; অথচ তাদের কোনো অধিকার ২০১০ সালের আইনে প্রতিষ্ঠিত হয়নি।

ফলে যখন বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনায় ট্রাস্টি বোর্ড কোনো হস্তক্ষেপ করতে যায়, তখনই সেটা ২০১০ সালের আইনের চোখে অপরাধ বা আইন পরিপন্থি কাজে পরিণত হয়। ট্রাস্টি বোর্ডের নামে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এরকম অভিযোগ ইউজিসি বা সরকারের কাছে রয়েছে।

এসব অভিযোগ বিদ্যমান আইনের ভুলের কারণেই সৃষ্টি হয়েছে। এ ধরনের একটি ভুল আইনের সংশোধনের মাধ্যমে আবারো ট্রাস্টি বোর্ড ব্যবস্থা বিদ্যমান রেখে ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য ও উদ্যোক্তাদের বিভিন্নভাবে আটকানো বা গুরুত্বহীন করার নানাবিধ প্রচেষ্টা মাত্র। এতে আইনের চোখে আরও দ্বিগুণ হারে অভিযোগ ও অপরাধ বৃদ্ধি পাবে এবং বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ধীরে ধীরে বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম হবে বলে মনে করি।

সত্যিকারে উচ্চশিক্ষার মানোন্নয়নের জন্য বাস্তব অবস্থার নিরিখে আইন প্রণয়ন জরুরি। দেশের প্রাইভেট শিক্ষা সেক্টরকে মালয়েশিয়া, ভারতের মতো দেশি-বিদেশি শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের পদচারণে মুখরিত করার জন্য আইনি ব্যবস্থায় অবারিত সুযোগ সৃষ্টি করতে হবে।

যাতে এ খাতেও বিদেশি শ্রমিকদের পাঠানো রেমিট্যান্স বা গার্মেন্ট সেক্টরের মতো অর্থনৈতিক বড় প্রবৃদ্ধি অর্জন করা সম্ভব হয়। এখানে নেতিবাচক চিন্তা করার কোনো সুযোগ নেই; কারণ সময় এখন বদলেছে। এক সময় ইউজিসি বা সরকার দূরশিক্ষণ বা অনলাইন শিক্ষা কোনোভাবেই সমর্থন করতো না।

 কিন্তু বর্তমানে দূরশিক্ষণ বা অনলাইন শিক্ষা সরাসরি সরকার ও ইউজিসির আদেশেই পরিচালিত হচ্ছে। এটাই বাস্তবতা। যেখানে অন্যান্য দেশ তাদের শিক্ষাব্যবস্থাকে সমগ্র বিশ্বের জন্য উন্মুক্ত করে দিচ্ছে, সেখানে আমাদের দেশের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন সংশোধনের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক অঙ্গন তো দূরে থাক, দেশের অভ্যন্তরেই শিক্ষাব্যবস্থাকে সংকীর্ণ রূপদানের পাঁয়তারা চলছে।

পাশের দেশ ভারতে তিন পদ্ধতিতে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করা যায়। এক. বিদ্যমান সোসাইটি অ্যাক্টের আওতায়, ২. বিদ্যমান ট্রাস্টি আইনের আওতায়, ৩. কোম্পানি রেজিস্ট্রেশন আইনের আওতায়। বিশ্বের অন্যান্য দেশেও কোম্পানি বা সংস্থার আওতায় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন ও পরিচালিত হচ্ছে। একমাত্র বাংলাদেশেই ট্রাস্টি বোর্ড গঠন ব্যতীত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন সম্ভব নয়।

কিন্তু কেন? কোম্পানি রেজিস্ট্রেশন বা সংস্থার মাধ্যমে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনার বিষয়টি আইনে অন্তর্ভুক্ত করা জরুরি। এখানে প্রশ্ন আসতে পারে, ‘কোম্পানি রেজিস্ট্রেশন বা সংস্থা কর্তৃক পরিচালিত হলে উদ্যোক্তাদের আর্থিক অনিয়ম বা স্বেচ্ছাচারিতা বাড়বে।’ মোটেই অনিয়ম বা স্বেচ্ছাচারিতা বাড়বে না। যদি আইনের মধ্যেই উদ্যাক্তাদের নিয়মমাফিক আর্থিক সুবিধা বা সম্মানী গ্রহণের ব্যবস্থা থাকে, তাহলে অনিয়মের প্রশ্নই ওঠে না।

তারপরও যদি কেউ অনিয়ম করে, সেক্ষেত্রে প্রচলিত আইনে ব্যবস্থা গ্রহণের নিশ্চয়ই সুযোগ রয়েছে। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইনের সংশোধনী এমনভাবেই হওয়া উচিত যাতে কেউ আইনের ফাঁকফোকর দিয়ে অনিয়ম করার সুযোগ না পায় এবং যুগোপযুগী আইনি কাঠামোর মাধ্যমে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো উচ্চশিক্ষার একটি মজবুত প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়।

বাংলাদেশে স্থাপিত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে সরকারি কোনো সহায়তা প্রদান করা হয় না। পাবলিক বিশ্ববিদ্যায়গুলোকে প্রতি বছর মোটা অঙ্কের অর্থ বরাদ্দ দেয়া হয়, যেখানে শিক্ষার্থীপ্রতি রাষ্ট্রের খরচ প্রায় তিন থেকে পাঁচ হাজার মার্কিন ডলার।

অন্যদিকে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের পেছনে রাষ্ট্রের কোনো খরচ নেই। কিন্তু একটু লক্ষ করলে দেখা যাবে, পাবলিক ও প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিক্ষার মানের খুব বেশি তারতম্য নেই। বাস্তবতা হলো, বেশ কয়েকটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় এখনো ওয়ার্ল্ড র্যাংকিংয়ে দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালগুলো থেকে এগিয়ে আছে।

কয়েকটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ইতোমধ্যেই আন্তর্জাতিক মানের শিক্ষা গবেষণা পরিচালনা শুরু করেছে, সেখানে দেশি-বিদেশি শিক্ষক রয়েছেন, যা দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে নেই। এসব বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের বেতন কাঠামো দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের চেয়ে কয়েকগুণ বেশি। অবকাঠামো, ল্যাব প্রভৃতি ক্ষেত্রেও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এগিয়ে রয়েছে। এসব উন্নয়ন সম্ভব হয়েছে কেবলমাত্র উদ্যোক্তাদের নিরলস ও কঠোর পরিশ্রমের কারণে। তারপরও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ওপর বিভিন্ন সময় নানা প্রতিবন্ধকতা তৈরি করা হয়েছে।

এখন প্রশ্ন হলো— যেসব উদ্যোক্তা বাংলাদেশের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যায়লগুলো স্থাপন করেছেন, তারা যদি এগুলো বন্ধ করে দেন, তাহলে কি সরকার দায়িত্ব নেবে? অথবা যদি নতুন সংশোধনী আইনের কারণে উদ্যোক্তারা বিশ্ববিদ্যালয়গুলো বন্ধ করে দিতে বাধ্য হন, তাহলে এই বিপুলসংখ্যক শিক্ষার্থী কোথায় যাবে? অথবা ভবিষ্যতে যে শিক্ষার্থীরা উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করতে আসবে, তারা কোথায় উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করবে? এর উত্তর হলো, এসব শিক্ষার্থী তখন উচ্চশিক্ষার জন্য পাশের দেশ ভারত, মালয়েশিয়া, নেপাল কিংবা চীনে যাবে। তাতে লাভ কার আর ক্ষতি কার— সেটা সহজেই অনুমেয়। যেখানে আশির দশকে মালয়েশিয়া থেকে শিক্ষার্থীরা বাংলাদেশে এসে পড়াশোনা করতো, সেখানে বর্তমানে বাংলাদেশ থেকে বিপুলসংখ্যক শিক্ষার্থী মালয়েশিয়া গিয়ে পড়ালেখা করে। সরকারের দায়িত্বশীলদের এ ব্যাপারে গভীরভাবে ভেবে দেখা উচিত।

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের অনিয়ম দূর করার জন্য উদ্যোক্তাদের নিয়ে উদ্যোক্তাবান্ধব আইনের খসড়া প্রণয়ন করা জরুরি। পাশাপাশি ওই আইনি কাঠামোয় বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালিত হয় কি না, সেজন্য বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন, সরকার / নিয়ন্ত্রণ সংস্থার কঠোর তদারকি প্রয়োজন। শুধু আইনি সংশোধনের মাধ্যমে বা উদ্যোক্তাদের হাত-পা বেঁধে আইন প্রণয়নের মাধ্যমে বেসরকারি পর্যায়ে উচ্চশিক্ষার উন্নয়ন ঘটানো যাবে না।

এ ক্ষেত্রে উদ্যোক্তাবান্ধব আইনি কাঠামোর মাধ্যমে প্রত্যেক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের আর্থিক সক্ষমতার ভিত্তিতে উন্নয়ন পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের জন্য ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। প্রতিটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষেত্রে উদ্যোক্তাদের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়নে ৫, ১০ বা ২০ বছরমেয়াদি শিক্ষা, গবেষণা ও অবকাঠামোগত উন্নয়ন পরিকল্পনা প্রণয়ন করতে হবে। এক্ষেত্রে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সক্ষমতার ভিত্তিতে কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে।
 
দেশে বেসরকারি পর্যায়ে উচ্চশিক্ষার মানোন্নয়ন, গবেষণাধর্মী ও দক্ষতাভিত্তিক শিক্ষাব্যবস্থা প্রচলনের জন্য মঞ্জুরি কমিশন ও সরকারকে উদার মনোভাব নিয়ে এগিয়ে আসতে হবে। প্রথমে ১০-১৫টি বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে সরকার / ইউজিসি ‘প্রাইভেট ইউনিভার্সিটি উন্নয়ন পাইলটিং প্রকল্প’ গ্রহণ করতে পারে। এ ক্ষেত্রে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ৬০ শতাংশ এবং সরকার ৪০ শতাংশ বিনিয়োগের মাধ্যমে প্রকল্প বাস্তবায়ন করা যেতে পারে। সরকারি বিনিয়োগ সম্ভব না হলে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব বিনিয়োগে এ ধরনের পাইলটিং প্রকল্প গ্রহণ করা যেতে পারে। প্রকল্পের আওতায় যেসব কর্মকাণ্ড করা যেতে পারে, তা নিম্নে তুলে ধরা হলো :

১) বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব উন্নয়নের ক্ষেত্রে: ক) আন্তর্জাতিক মানের শিক্ষা, শিক্ষক প্রশিক্ষণ ও দক্ষতা উন্নয়ন কর্মসূচি, খ) অবকাঠামো উন্নয়ন, গ) ল্যাবরেটরি স্থাপন, উন্নত যন্ত্রপাতি ক্রয় ও প্রশিক্ষণ, ঘ) শিক্ষার্থীদের কর্মসংস্থান তৈরি এবং শিল্প ও কল-কারখানা স্থাপন অথবা শিল্প-কারখানার সাথে সম্পর্কোন্নয়ন, ঙ) আন্তর্জাতিক মানের গবেষণা ল্যাব স্থাপন, চ) টেকনোলজি উন্নয়ন, ছ) নিউ ইনভেনশন এবং উদ্ভাবিত পণ্য বাজারজাতকরণ ইত্যাদি। ২) সুপ্রতিষ্ঠিত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর দেশের প্রতি দায়বদ্ধতা থেকে জাতীয় উন্নয়নের ক্ষেত্রে: ক) বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়কেন্দ্রিক অঞ্চলগুলোয় গবেষণা ল্যাব স্থাপন, খ) বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়কেন্দ্রিক অঞ্চলগুলোয় প্রথমিক, মাধ্যমিক, উচ্চমাধ্যমিক, কারিগরি পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের শিক্ষা ও দক্ষতা উন্নয়নে নির্দিষ্টসংখ্যক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে নিয়ে পরিকল্পনা ও কর্মসূচি প্রণয়ন, গ) বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর অঞ্চলভিত্তিক শিক্ষায় পিছিয়ে পড়া বা শিক্ষাবঞ্চিত শিশু-কিশোরদের শিক্ষা ও দক্ষতা উন্নয়নে কর্মকাণ্ড পরিচালনার জন্য পরিকল্পনা প্রণয়ন, ঘ) বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়কেন্দ্রিক অঞ্চলগুলোয় দক্ষতা প্রশিক্ষণ কেন্দ্র স্থাপন ইত্যাদি। যেসব বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ইতোমধ্যেই প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, তারা দেশ ও জাতির কল্যাণে উল্লিখিত কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়নের মাধ্যমে ব্যাপক ভূমিকা রাখতে পারে। যাদের এখনো সক্ষমতা হয়নি, তারা দীর্ঘমেয়াদি কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করে লক্ষ্যের দিকে এগিয়ে যেতে পারে। সেজন্য বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিদ্যমান বর্তমান আইন যুগোপযোগী করে উল্লিখিত পরিকল্পনাগুলো অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো কোম্পানি রেজিস্ট্রেশন বা সংস্থার আওতায় স্থাপন ও পরিচালনার জন্য আইন সংশোধন করতে হবে। উদ্যোক্তাদের প্রস্তাবের ভিত্তিতে উপাচার্য, উপ-উপাচার্য, কোষাধ্যক্ষ নিয়োগের বিদ্যমান ব্যবস্থা ঠিক রাখতে হবে। অন্যথায় উপাচার্য, উপ-উপাচার্য, কোষাধ্যক্ষ ও উদ্যোক্তাদের মধ্যে বিবাদ-বিরোধিতা লেগেই থাকবে, যা শিক্ষার পরিবেশ ব্যাহত করবে। শুধু কঠোর আইন প্রণয়ন করে উদ্যোক্তাদের নিজ হাতে গড়া প্রতিষ্ঠান থেকে দূরে সরিয়ে রেখে বা নিষ্ক্রিয় করে বেসরকারি পর্যায়ে উচ্চশিক্ষার উন্নয়ন কোনোভাবেই সম্ভব নয়।

লেখক: চেয়ারম্যান, বোর্ড অব ট্রাস্টিজ, ইউনিভার্সিটি অব গ্লোবাল ভিলেজ, বরিশাল