Amar Sangbad
ঢাকা শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪,

ধর্ম নয়, ধর্মান্ধতাই সাম্প্রদায়িক সম্প্র্রীতি বিনষ্টের মূল

এম. রনি ইসলাম

অক্টোবর ১৯, ২০২১, ০৯:৫০ পিএম


ধর্ম নয়, ধর্মান্ধতাই সাম্প্রদায়িক সম্প্র্রীতি বিনষ্টের মূল

ভারতবর্ষের জনগণের দুর্বলতা, সাম্রাজ্যবাদী শাসকদের চক্রান্ত এবং পরস্পরের প্রতি অবিশ্বাস ও অসহিষ্ণুতাই মূলত ভারতবর্ষের বিভক্তির জন্য দায়ী ছিলো। যার পেছনে কাজ করেছে দ্বিজাতিতত্ত্ব অর্থাৎ হিন্দু ও মুসলিম জাতির পরস্পরের প্রতি বিদ্বেষী মনোভাব। কিছু মানুষের মূঢ় চেতনা এবং দাঙ্গাবাজি মনোবিকার স্বাধীনতার উষালগ্নে দেশবিভাগকে বাস্তবিক করে দিয়েছিল। তাই ভারতবর্ষের স্বাধীনতা ভারতবর্ষের মূল্যেই অর্জিত হয়েছে। এ কথা ঠিক যে, ব্রিটিশ সাম্রাজ্যভুক্তির মধ্যেই একটি রাজনৈতিক সত্তারূপে ভারতবর্ষের আত্মপ্রকাশ ঘটেছিল। আর বণিকের মানদণ্ড রাজদণ্ডরূপে দেখা দেয়ার পর জনগণের মনে স্বাধীনতার আকাঙ্ক্ষা ধীরে ধীরে রূপপরিগ্রহ করতে থাকে। 

এই আকাঙ্ঙ্কা যতই ঘনীভূত ও শক্তিশালী হতে থাকে, দেশ বিভাগের দাবিও ততই উদগ্র হয়ে ওঠে। যদিও এ কথা ঠিক, দাবি যেমনভাবে উত্থিত হয়েছিল, দেশের বিভাজন তেমনভাবে হয়নি। তবুও এ কথা অনস্বীকার্য যে, ভারতবর্ষের স্বাধীনতার সঙ্গে ভারতবর্ষের অঙ্গচ্ছেদ সমীকৃত হয়ে গিয়েছিল। স্বাধীনতার সঙ্গে দেশ বিভাগের অঙ্গাঙ্গী সম্পর্ক থাকলেও পাকিস্তান সৃষ্টিকে কোনো আকস্মিক ঘটনা বলে মনে করার হেতু নেই। এ এক বহুদিনের সঞ্চিত আকঙ্ক্ষা এবং দীর্ঘ প্রয়াসের পরিণতি। অনুরূপভাবে পাকিস্তানের জন্ম কেবল দেশ বিভাগের একটি ঘটনামাত্র নয়, তা হলো ভারতবর্ষের চিরন্তন সাধনার ওপর প্রচণ্ড আঘাত। 

তাইতো রবীন্দ্রনাথ বলেছিলেন,‘যারা একত্র হয়েছে, তাদের এক করতে হবে, এটিই ছিলো ভারতবর্ষের চিরকালের গুরুতর সমস্যা’। এ দেশে আর্যরা এসেছে বহিরাগত হয়ে, তাদের সঙ্গে সংঘাত হয়েছে অনার্যদের। তারপর উভয়ে মিলেমিশে রচনা করেছে জনজীবনের মূল স্রোত। ‘শক, হুনদল, পাঠান, মোগল’ তারাও বাইরে থেকে এদেশে এসেছে বারে বারে এবং তারা ‘এক দেহে লীন’ হয়ে  গেছে। কিন্তু ব্যতিক্রম ঘটেছে ইসলাম ও হিন্দু  ধর্মাবলম্বীদের ক্ষেত্রে। ভারতবর্ষ কেবল হিন্দুর দেশ নয়, ভারতবর্ষের কোনো অংশ কেবল মুসলমানদের দেশ হতে পারে না; সমগ্র ভারতবর্ষ হিন্দু-মুসলিম নির্বিশেষে ভারতবর্ষে বসবাসকারী সব মানুষের দেশ— এ সত্যকে যুক্তি ও আবেগনিষ্ঠভাবে জনসমাজের মধ্যে প্রতিষ্ঠিত করা যায়নি। সে কাজ করার জন্য যে কোনো প্রয়াস হয়নি তাও নয়। তার জন্য অনেকেই অত্যন্ত আন্তরিকতার সঙ্গে চেষ্টা করেছেন।

 কিন্তু সেই বন্ধন সম্পন্ন হবার আগেই ভারতবর্ষ ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের উপনিবেশে পরিণত হয়ে যায়। যে ফাটলটি ছিলো, তা শাসকদের উসকানিতে বিস্তৃত হয়, যে প্রীতির সম্পর্ক ধীরে ধীরে গড়ে উঠেছিল, শাসকদের পরস্বাপহরণের লোলুপতা তার সামনে অবিশ্বাসের প্রাচীর গড়ে তোলে। সেজন্য দেশ বিভাগের ঘটনাটি একটি ভূখণ্ডকে খণ্ডিত করার অপেক্ষা জনমানসে বিচ্ছেদ সৃষ্টির করুণতর কাহিনি। 

এক সময় হিন্দুরা মুসলমানদের অস্পৃশ্য মনে করতো আর মুসলমানরা হিন্দুদের বিজাতি ও বিধর্মী বলে তাচ্ছিল্য করতো। হিন্দু রাজত্বকালে মুসলমানদের অধিকারকে যেমন সর্বদা অবজ্ঞা করা হতো, তদ্রূপ মুসলিম রাজত্বকালেও হিন্দুরা অবহেলিত ছিলো। এই ভেদাভেদ ছিলো বলেই মধ্যযুগে দাদু, কবীর, রজ্জবের মতো সাধকরা হিন্দু-মুসলিম মিলনের কথা শুনিয়েছিলেন। কিন্তু সর্বশেষে মনের সংকীর্ণতাই প্রাধান্য পায় আর এটাকেই পুঁজি করে ইংরেজরা তাদের শাসন সুদৃঢ় করার সুযোগ পায়। সৈয়দ আহমেদ একজন অসাম্প্রদায়িক ও উদার মনোভাবাপন্ন ব্যক্তি হিসেবে সমধিক পরিচিত ছিলেন। 

১৮৮৪ সালে একটি বক্তৃতায় তিনি বলেছিলেন,‘আমি আন্তরিকভাবে আমার দেশ এবং জাতির সেবা করতে চাই। জাতি কথাটি দিয়ে আমি হিন্দু এবং মুসলমান উভয়কেই বোঝাতে চাইছি। কেননা, আমার জাতি কথাটির এটিই একমাত্র অর্থ’। অন্য এক বক্তৃতায় তিনি বলেছিলেন, ‘হিন্দু এবং মুসলমান একটি সুন্দরী রমণীর দুটি চোখের মতো। কোনো আঘাতে তার একটি চোখ নষ্ট হয়ে গেলে অপরটিও নষ্ট হয়ে যাবে’। তার এ কথার যথার্থতা পরবর্তীকালে উপলব্ধি করা গেছে। দেশ বিভাগের প্রাক্কালে ভারতবর্ষের বিভিন্ন স্থানে যেসব দাঙ্গা সংঘটিত হয়েছিল, তাতে চরিত্রভ্রষ্টের দায় থেকে হিন্দু-মুসলমান কেউই মুক্ত ছিলো না। এতদসত্ত্বেও অবিভক্ত ভারতবর্ষের সাম্প্রদায়িক দাঙ্গাকে প্রতিরোধ করা সম্ভব হয়নি। 

শাসনব্যবস্থার সংস্কার নিয়ে কথা ওঠে, বারবার সংস্কারের মধ্য দিয়ে যেমন সাম্প্রদায়িকতাকে সংগঠিত রূপ দেয়া হয়েছে, তেমনি কারণে-অকারণে হিন্দু-মুসলমান দাঙ্গার উসকানি দিয়ে তাকে সাকার করার চেষ্টাও করা হয়েছে। ১৯১৬ সালের হিন্দু-মুসলমান চুক্তি হবার পর সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার সংখ্যা বৃদ্ধি পেতে থাকে। এ চুক্তির পর মাত্র দেড় বছরের মধ্যে বিভিন্ন স্থানে মোট ২৫টি দাঙ্গা হয়। খালিকুজ্জামান অভিযোগ করেছিলেন যে, লক্ষ্নৌ শহরে শান্তি স্থাপনের জন্য ন্যূনতম চেষ্টাও করেনি তৎকালীন ব্রিটিশ সরকার। যার ফলে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গাগুলো ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধিই পেয়েছে। তুরস্ক খিলাফতকে পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করার জন্য মোপলা নামে পরিচিত মুসলমান কৃষক ও মৎস্যজীবীরা ধর্মযুদ্ধ শুরু করে দেয়। এতেও হতাহত হয়। ১৯২৪ সালের সেপ্টেম্বরে সাংঘাতিক দাঙ্গা হয় কোহাটে। 

সেখানে প্রায় ২০০ মানুষ  নিহত হয় এবং তৎকালীন সময়ের ৯ লাখ টাকার সম্পত্তির ক্ষয়ক্ষতি হয়। ১৯২৬ সালে ৩৫টি দাঙ্গা হয়। ১৯২৯ সালে বোম্বাইয়ের ভয়াবহ দাঙ্গায় প্রাণহানি ঘটে কয়েকশ মানুষের। কংগ্রেস ১৯৩৫ সালের ভারত শাসন আইনকে ভারতের স্বাধীনতা দাবির প্রতি নতুন হুমকি হিসেবে চিহ্নিত করে এবং এতে কংগ্রেস ও ব্রিটিশ রাজ্যের মধ্যকার তিক্ততা বৃদ্ধি পায়। কংগ্রেস-মুসলিম লীগ অনৈক্যকে পুঁজি করে ভারত সরকার এমন ব্যবস্থা গ্রহণ করে যাতে তারা ঐক্যবদ্ধ হয়ে জাতীয়তাবাদী আন্দোলনকে জোরদার করতে না পারে। সংগত কারণেই ১৯৩৬-পরবর্তী বাংলায় সরকারি-বেসরকারি নির্বিশেষে ইউরোপীয়রা মুসলিম লীগের নেতৃত্বে গঠিত সরকারের প্রতি সমর্থন জুগিয়ে চলে। এসব ঘটনা বাংলায় সাম্প্রদায়িক রাজনীতিকে জোরদার করে, যার প্রমাণ পাওয়া যায় সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার রূপান্তর ঘটার মধ্যে। 

১৯৪৬ সালের ১৬ আগস্ট কলকাতায় সংঘটিত হয় ভয়াবহ সাম্প্রদায়িক সংঘর্ষ। এ সহিংসতা ভারতের হিন্দু ও মুসলমান দুটি বৃহৎ সম্প্রদায়ের মধ্যে বিরাজমান ঘৃণা ও অবিশ্বাস থেকেই সৃষ্টি হয়েছিল। ১৬ আগস্ট ভোরে উত্তেজনা শুরু হয় যখন মুসলিম লীগের স্বেচ্ছাসেবকরা উত্তর কলকাতায় হিন্দু ব্যবসায়ীদের দোকানপাট বন্ধ রাখতে বাধ্য করে এবং হিন্দুরা এর সমুচিত প্রতিশোধ হিসেবে মুসলিম লীগের শোভাযাত্রার পথে বাধার সৃষ্টি করে। ওইদিন অক্টারলোনি মনুমেন্টে মুসলিম লীগের সমাবেশ এ যাবৎকালের মধ্যে মুসলমানদের সর্ববৃহৎ জমায়েত ছিলো। 

তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী তার ভাষণে সেনাবাহিনী ও পুলিশকে ‘নিয়ন্ত্রিত করা হয়েছে’— এ কথার মাধ্যমে শ্রোতামণ্ডলীকে আশ্বস্ত করেন। সমবেত জনতা এটাকে প্রতিপক্ষ সম্প্রদায়ের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়তে প্রকাশ্য আহ্বান বলে ব্যাখ্যা করে। এ হিংসাত্মক কার্যাবলি দ্বারা যে এলাকা সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হয়েছিল, তা হলো দক্ষিণে বউবাজার স্ট্রিট, পূর্বে আপার সার্কুলার রোড, উত্তরে বিবেকানন্দ রোড ও পশ্চিমে স্ট্রান্ড রোড দ্বারা বেষ্টিত রাজধানীর বহুল জনাকীর্ণ অংশটি। সরকারি হিসাবমতে এ দাঙ্গায় ৪ হাজার লোক নিহত ও এক লাখ আহত হয়। 

অতঃপর সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা, পরস্পরের প্রতি হিংসা-বিদ্বেষ থেকে মুক্তি পেতে অবিভক্ত ভারতবর্ষকে দ্বিখণ্ডিত করা হলো ১৯৪৭ সালে। সৃষ্টি হলো ভারত-পাকিস্তান নামক দুটি নতুন রাষ্ট্রের। এরপরও সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা থেমে থাকেনি। নব্য পাকিস্তানে ১৯৪৯-৫০ সালে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা হয়। অবশেষে ১৯৭১-এর মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে একটি স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠিত হয়। যার অন্যতম চেতনা ছিলো অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ। কিন্তু স্বাধীনতার ৫০ বছরেও আমরা আমাদের দেশকে অসাম্প্রদায়িক দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে পারিনি। তার বড় প্রমাণ হলো, আজও এক শ্রেণির মানুষ ধর্মের দোহাই দিয়ে নিজের স্বার্থ হাসিলের জন্য নির্যাতন করেছে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর। 

সাম্প্রদায়িকতার বিষবাষ্প যেন কিছুতেই কমানো সম্ভব হচ্ছে না। ১৯৯২ সালে ভারতে বাবরি মসজিদ ভাঙাকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশি হিন্দু পরিবারগুলোর ওপর নেমে আসে নির্যাতনের খড়গহস্ত। সে সময় ৩৫২টি মন্দির পুড়িয়ে দেয়া হয়। শুধু তা-ই নয়, এর পাশাপাশি সংখ্যালঘু পরিবারগুলোর ওপর ধর্ষণ ও লুটতরাজের ঘটনাও ঘটে। ২০০১ সালে আবারও নির্বাচন-পরবর্তী  সহিংসতার শিকার হয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়। স্বাধীনতা-উত্তরকালে এটি ছিলো সবচেয়ে ভয়ানক ঘটনা। গণহত্যা, অপহরণ, ধর্ষণ, জোর করে বিয়ে, ধর্মান্তরিত করা, চাঁদা আদায় ও সম্পত্তি দখল কোনো কিছুই যেন বাদ ছিলো না সে সময়। 

২০১৬ সালের ২৯ অক্টোবর ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরে হিন্দু বসতিতে হামলার তদন্ত প্রায় পাঁচ বছরেও শেষ হয়নি। ওই সময় যাদের আটক করা হয়েছিল, তারাও জামিনে মুক্ত। অন্যদিকে লেখাপড়া না জানা যে রসরাজের ফেসবুক পোস্টের ধর্মীয় অবমাননার কথা তুলে হামলা হয়েছিল, তাকেই উল্টো দীর্ঘদিন জেলে থাকতে হয়েছে। ২০১৭ সালের নভেম্বরে সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা হয় রংপুরের গঙ্গাচড়ার ঠাকুরপাড়ায়। ২০২০ সালে ভোলার মনপুরায় হামলা, চলতি বছরে সুনামগঞ্জের শাল্লা আলোচিত ঘটনা শেষ হতে না হতেই এর মধ্যেও ঘটে খুলনার রূপসা উপজেলার শিয়ালী গ্রামের ১০টি সংখ্যালঘুর দোকান ভাঙচুর এবং বেশ কয়েকটি বাড়িতে হামলা চালিয়ে লুটপাট করা হয়। এছাড়াও গোবিন্দ মন্দির, শিয়ালী পূর্বপাড়া হরি মন্দির, শিয়ালী পূর্বপাড়া দুর্গা মন্দির, শিয়ালী মহাশ্মশান মন্দিরের বেশিরভাগ প্রতিমা ভাঙচুর করা হয়। এ সময় কয়েকজন বাধা দিতে গেলে তাদের পিটিয়ে আহত করা হয় বলে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। 

 সম্প্রতি দুর্গাপূজায় কুমিল্লা শহরের নানুয়াদিঘির উত্তর পাড় পূজামণ্ডপে সকালবেলা সেখানে রাখা একটি হনুমান মূর্তির হাঁটুর ওপর ইসলাম ধর্মের ধর্মগ্রন্থ কুরআন রাখার খবর সামাজিকমাধ্যম ফেসবুকে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। এ খবরকে কেন্দ্র করে হিন্দুদের দায়ী করে কিছু উগ্রবাদী মুসলিম জনগোষ্ঠী উক্ত পূজামণ্ডপে হামলা করে। হামলার সময় প্রতিমা, পূজামণ্ডপ ভাঙচুর ও হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের মারধর করা হয়। হামলাকারীরা বুধবার সন্ধ্যায় কুমিল্লার নানুয়াদিঘির উত্তরপাড় পূজামণ্ডপের দুর্গা প্রতিমাটি পার্শ্ববর্তী একটি পুকুরে ফেলে দেয়। কুমিল্লায় সহিংসতার পর হামলাকারীরা চাঁদপুরের হাজীগঞ্জ, চট্টগ্রামের বাঁশখালী, কক্সবাজারের পেকুয়া ও বান্দরবানের লামা কেন্দ্রীয় মন্দিরে ভাঙচুর করে। কুরআন অবমাননার বিষয়টি সামাজিকমাধ্যমে ভাইরাল হলে কমপক্ষে ১৫ জেলায় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। 

বিবিসির মতে, এ সংঘর্ষে ৬ জন নিহত হয়। দুর্গাপূজাকে কেন্দ্র করে সংঘটিত সাম্প্রদায়িক হামলার রেশ কাটিয়ে ওঠার আগেই গত রোববার রাতে রংপুরের পীরগঞ্জে অন্তত ৩টি গ্রামের হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষের ঘরবাড়িতে আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা। জানা যায়, ফেসবুক পোস্টকে কেন্দ্র করে পীরগঞ্জ উপজেলার রামনাথপুর ইউনিয়নের মাঝিপাড়া, বটতলা ও হাতীবান্ধা গ্রামে অন্তত ২০টি বাড়িঘরে আগুন দেয়া হয়। ধর্মীয় বিষয়কে কেন্দ্র করে এসব সাম্প্রদায়িকতা সত্যিই দুঃখজনক। অথচ পৃথিবীর সব ধর্মেই মানবতা ও মানকল্যাণের কথা বলা হয়েছে। পরধর্মকে শ্রদ্ধা করতে বলা হয়েছে। কোথাও হিংসা-বিদ্বেষকে প্রাধান্য দেয়া হয়নি। সব ধর্মের মূল সুর শান্তি ও অহিংসা। যেমন ইসলাম ধর্মের প্রচারক হজরত মুহাম্মদ (সা.) -এর জীবনীতে পাওয়া যায়,‘একদা এক লোক মসজিদে ঢুকে মূত্রত্যাগ আরম্ভ করলেন। লোকজন তেড়ে মারতে যেতে লাগলো। মুহাম্মদ (সা.) সবাইকে থামালেন। লোকটাকে তার কাজ শেষ করতে দিলেন। মূত্রত্যাগ শেষে লোকটাকে জিজ্ঞেস করলেন, কেন সে এটা করলো। লোকটা বললো, সে জানতো না এটা যে মসজিদ। রাসুল (সা.) এখানে ষড়যন্ত্রের গন্ধ খোঁজেননি। লোকটার কথায় বিশ্বাস করলেন এবং তাকে মাফ করে দিলেন’। তিনি দেখালেন অবমাননাকর হলেই অবমাননা গায়ে মাখতে হয় না। কোনো এক পূজামণ্ডপে মূর্তির রানের ওপর পবিত্র কুরআন শরিফ পাওয়া গেল। এতে লোকজন রেগে গেলো। মারামারি হলো। কিন্তু এরা যদি ইসলামকে মানার চেষ্টা করতো, তাহলে ওপরের ঘটনা থেকে শিক্ষা নিতো। 

এ কাজটি বিভিন্ন কারণে অন্য কেউ করে থাকতে পারে। হতে পারে রাজনৈতিক কারণে কেউ এটা করেছে অথবা ব্যক্তিগত শত্রুতা করে কেউ এটা করেছে। নয়তো পরিস্থিতি অস্থিতিশীল করার জন্য কেউ এটা করেছে। এভাবে হাজারটা সম্ভাবনা এখানে বলা যায়। আর অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এই গ্যাঞ্জামের লাভের গুড় কোনো মুসলমানের হাতে উঠবে না। তাহলে এখানে নিজের কাঁধে অবমাননা গায়ে মাখানো কেন? যদি মনে করা হয়, এখানে বিরাট ষড়যন্ত্র আছে, তাহলে অবিবেচনাপ্রসূত প্রতিক্রিয়াই সেই ষড়যন্ত্রের মৌলিক জ্বালানি। যদি এটা শান্তিপূর্ণভাবে মিটমাট করে ফেলা যায়, তাহলেই মহাদুশ্চিন্তার বিরাট ষড়যন্ত্রটা কিন্তু জায়গাতেই ব্যর্থ হয়ে গেল! যে আল্লাহ, ইসলাম, কুরআন ও মুহাম্মদ (সা.)-কে অবমাননা করে, সে  ইসলামের উপকার ছাড়া ক্ষতি করতে পারে না। এগুলোর মধ্য দিয়েই ইসলাম অর্ধজাহান শাসন করেছে। কিন্তু যখন থেকে আমরা ক্ষমা না করে অবমাননা গায়ে মাখতে শুরু করলাম, সবাই জ্বলে উঠতে লাগলাম; সেই জ্বলে উঠাটাই ইসলামের ক্ষতি করেছে বেশি। 

লেখক : শিক্ষার্থী, ভূমি ব্যবস্থাপনা ও আইন বিভাগ, জবি, ঢাকা