Amar Sangbad
ঢাকা বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪,

অগ্রিম বিমান ভাড়ার জটিলতা কাটলো হজযাত্রীদের

ফেব্রুয়ারি ১৯, ২০১৫, ০৩:১৭ পিএম


অগ্রিম বিমান ভাড়ার জটিলতা কাটলো হজযাত্রীদের


 ইসলামের একটি অন্যতম ফরজ বিধান হচ্ছে  হজ্ব পালন করা। যা সামর্থ্যবান মুসলমানের উপর ফরজ। প্রতি বছর বিশ্বের সকল দেশের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বাংলাদেশের মুসলমানরাও শরিক হয় এই মহান কাজে। এই মহান কাজকে কেন্দ্র করে কিছু কুচক্রি মহল লিপ্ত হয় প্রতারণায়। এই প্রতারণা থেকে হাজীদের বাচাঁতে সরকার বিভিন্ন ধরনের পদক্ষেপ নিয়ে থাকে।

পদক্ষেপের অংশ হিসেবে সরকার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে ছিল মুয়াল্লিম ফির সাথে অগ্রিম বিমান ভাড়া জমা দিতে হবে। যার জন্য প্রত্যেক হাজিকে গুণতে হত ৪৮ হাজার ৩৩১ টাকা। যা এখন মুয়াল্লিম ফি ও অন্যান্য ফি সহ ২ হাজার ৮ শ’ ৭৪ টাকা জমা দিলেই হবে। আর এ ফি জমা দেয়ার শেষ তারিখ রাখা হয়েছে ১ মার্চ পযর্ন্ত। তারই সাথে হজ্ব নিবন্ধনের সময় বাড়ল ১ মার্চ পর্যন্ত। যা পূর্বে ২৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ছিল।

 বিমান ভাড়ার টাকা অগ্রিম পরিশোধ নিয়ে সৃষ্টি  হয়েছিল জটিলতা। স্থবির হয়ে পড়েছিল নিবন্ধন কার্যক্রম। হজ্বযাত্রীদের সঙ্গে প্রতারণা বন্ধ করতেই সরকার অগ্রিম মোয়াল্লেম ফি এবং বিমানের ভাড়ার টাকা সরকারি কোষাগারে জমা দেয়ার নির্দেশ দিয়ে ছিল। পরবর্তীতে হজ্ব এজেন্সিজ অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (হাব) এর দাবির প্রেক্ষিতে সরকার এ সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসে বলে দৈনিক আমার সংবাদ প্রতিবেদককে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ধর্ম মন্ত্রণালয়ের উপ সচিব ফয়জুর রহমান ফারুকী।

তিনি আরও বলেন, দেশের চলমান সমস্যার কারণে প্রত্যান্ত অঞ্চলের হাজিদের সাথে এখনও যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি বলে দাবি করেছেন হাব। তাদের এই দাবির প্রেক্ষিতে সরকার বিমান ভাড়া আগামী ১০ জুনের মধ্যে পরিষোধ করার সিদ্ধান্ত নেয়। এর পূর্বে বৃহস্পতিবার ১১ টার দিকে রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে এক সংবাদ সম্মেলনে হুঁশিয়ারি উচ্চরণ করে হাবের  সভাপতি মোহাম্মদ ইব্রাহিম বাহার বলে ছিলেন অগ্রিম বিমান ভাড়া বাতিল না করা হলে সকল হজ্ব এজেন্সি তাদের লাইসেন্স জমা দিয়ে দিবে। তার সাড়ে ৩ ঘন্টা পর বিমান ভাড়া বাতিলের ঘোষণা দেন ধর্ম মন্ত্রণালয়।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে ইব্রাহিম বাহার বলেন, চাঁদ দেখা সাপেক্ষে ২০১৫ সালের ২২ সেপ্টেম্বর (হিজরি ১৪৩৬) পবিত্র হজ অনুষ্ঠিত হবে। সৌদি সরকার ২০১৫ সালে অনুষ্ঠেয় হজকে পূর্ণাঙ্গরূপে ‘ই-হজ’ সিস্টেমে বাস্তবায়নের দৃঢ়তা পোষণ করায় জানুয়ারির শুরু (১ রবিউস সানি) থেকেই অনলাইনে এজেন্সির নিবন্ধন করণসহ আনুষঙ্গিক চুক্তি সম্পন্নের বিধান করে।

 সূত্রে জানা গেছে,বাংলাদেশ থেকে এ বছর সরকারি ও বেসরকারি ব্যবস্থাপনা মিলিয়ে মোট এক লাখ এক হাজার ৭৫৮ জন হজ্বে যাওয়ার সুযোগ রয়েছে। এরমধ্যে সরকারিভাবে ১০ হাজার মুসলিম হজ্বে যেতে পারবে। বিগত বছরের ৮ ডিসেম্বর হজ্ব প্যাকেজ অনুমোদন দেয় মন্ত্রীসভা। মন্ত্রীসভায় দুই ধরনের প্যাকেজ অনুমোদন দেওয়া হয়। এরমধ্যে বলা হয় প্রথম প্যাকেজে খরচ হবে ৩ লাখ ৫৪ হাজার ৭৪৫ টাকা, আর দ্বিতীয় প্যাকেজে খরচ হবে ২ লাখ ৯৬ হাজার ২০৬ টাকা। এর মধ্যে কোরবানী খরচ যুক্ত হবে না। মন্ত্রিসভার বৈঠকে ৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত অনলাইনে হজ্ব নিবন্ধনের তারিখ নির্ধারণ করা হয়ে ছিল কিন্তু হরতাল-অবরোধের কারণে পরবর্তীতে তা ২৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত মেয়াদ বৃদ্ধি করা হয়।

বৃহস্পতিবার সেই তারিখ বাড়িয়ে ১ মার্চ পযর্ন্ত নির্ধারণ করা হয়। নিবন্ধনের সময় সরকারি ব্যবস্থাপনার হজ্বযাত্রীদের ৫১ হাজার ৬৯০ টাকা ও বেসরকারি ব্যবস্থাপনার হজ্বযাত্রীদের ৪৮ হাজার ৩৩১ টাকা জমা দেয়ার নির্দেশনা ছিল। অবশিষ্ট টাকা ১০ জুনের মধ্যে জমা দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়। হাব ও অন্যান্য সূত্রে জানা গেছে, হরতাল-অবরোধের কারণে অনেকেই ৫ ফেব্রুয়ারি তারিখের মধ্যে নিবন্ধন করতে পারেননি। বাংলাদেশ থেকে এক লাখ এক হাজার ৭৫৮ জন মুসলিম হজ্বে যাওয়ার সুবিধা থাকলেও ওই সময় পর্যন্ত নিবন্ধন করেছিলেন মাত্র ২৫ হাজার মুসলিম। নির্ধারিত সময়ে অনেকেই নিবন্ধন করতে পারেন নাই এমন অভিযোগের প্রেক্ষিতে নিবন্ধনের তারিখ বাড়িয়ে ২৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত করা হয়। হজ্ব এজেন্সিগুলোর নিবন্ধনের সময় বিমান ভাড়া দেয়ার সিদ্ধান্ত পরিবর্তনের দাবি উঠলে সরকার এ সিদ্ধান্ত নেয়।

হাবের সভাপতি ইব্রাহিম বাহার  দৈনিক আমার সংবাদ প্রতিবেদককে বলেন,হজ্বে যেতে আগ্রহীরা  দুঃশ্চিন্তায় ও অনিশ্চয়তার পরে গিয়ে ছিল।তারা বিভিন্নভাবে আমাদের জানিয়েছিলেন ইচ্ছা থাকলেও সবাই হজ্বে যেতে পারবেন না।

 আরও জানা গেছে এজন্য হাবের প্রতিনিধিরা বিভিন্ন সময়ে ধর্মমন্ত্রী, সচিবের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন। দাবি মানা না হলে প্রয়োজনে সব এজেন্সি হজ্ব কার্যক্রম বর্জন করার হুমকিও দিয়েছিল তারা।

গত ১২ ফেব্রুয়ারি আনুষ্ঠানিকভাবে সংবাদ সম্মেলন করে এ ঘোষণা দেয় হাব। অগ্রিম বিমান ভাড়ার ব্যাপারে হাজারী হজ্ব ট্যুরস এন্ড ট্রাভেলসের পরিচালক রুহুল আমীন সাদি বলেন, সরকারের সিদ্ধান্তকে সাধুবাদ জানাই। সরকার যদি এ সিদ্ধান্ত না নিত তাহলে হয়তবা অনেকেরই হজ্বে যাওয়া সম্ভব হত না। কারণ কেউ যদি নিবন্ধন করার পর হজ্বে যেতে না চায় অথবা মৃত্যু বরণ করে তাহলে কী হবে? তা ছাড়া বিমান ভাড়াও বিভিন্ন মানের ওপর নিভর্র করে।

এ বিষয়গুলোতে স্পষ্ট  কোন নির্দেশনা ছিল না তাই আমরা জটিলতায় পরে গিয়ে ছিলাম। গতবার অনেক মানুষ হজে যেতে পারেনি নানা কারণে। তাই হজ এজেন্সির মালিকরা মনে করেন এধরনের জটিল নিয়মের প্রয়োজন নেই। সরকারের কাছে জামানত দিয়েই হজ লাইসেন্স নিয়েছে বলেও স্বচ্ছতার বিষয়টি প্রকাশ করেন হাবের সদস্যরা। তারা আরোও বলেন, আমারা যদি অপরাধ করি, সরকারের ব্যবস্থা নেওয়ার সুযোগ আছে। এজন্য জটিল নিয়মের প্রয়োজন নেই।

অন্যদিকে সর্বশেষ ১৫ ফেব্রুয়ারি ধর্ম সচিব চৌধুরী মো. বাবুল হাসানের সঙ্গে নিজেদের দাবির কথা জানিয়ে সচিবালয়ে বৈঠক করে ছিলেন হজ্ব এজেন্সিজ অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (হাব) সভাপতি মো. ইব্রাহিম বাহার। একইদিনে প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ে লিখিত আবেদনও করে ছিলেন হাব। ধর্ম মন্ত্রণালয়ের উপসচিব (হজ) ফয়জুর রহমান ফারুকী আরোও বলেন, গতবার এজেন্সিগুলোর অনিয়মের কারণে অনেকে হজে যেতে পারেননি।

এজন্য প্রধানমন্ত্রী এই নিদের্শনা দিয়েছিলেন। পরবর্তীতে হাজীদের সুবিধার কথা মাথায় রেখে এ সিদ্ধান্ত বাতিল করেছে। হাবের সভাপতি ইব্রাহিম বাহার বলেছেন,  বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় এ পর্যন্ত ৭৩ হাজার মুসলিম নিবন্ধন করেছেন। সময় বাড়ানোর কারণে হয়ত আরও অনেকেই এ কাতারে সামিল হতে পারবেন।