Amar Sangbad
ঢাকা শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪,

অমুসলিমদের দেওয়া খাবার খাওয়া কী জায়েজ?

ধর্ম ডেস্ক

অক্টোবর ২২, ২০২০, ১১:০৫ এএম


অমুসলিমদের দেওয়া খাবার খাওয়া কী জায়েজ?

অন্য ধর্মাবলম্বীদের রান্না করা খাবার যেমন, মাছ, তরকারি ইত্যাদি খাওয়া জায়েজ। তবে খাবারটি কোনোভাবেই হারাম না হয়। পাশাপাশি তাতে হারাম কোনো কিছুর সংমিশ্রণ থাকা যাবে না। (তাদের কোনো উপাস্যের জন্য উৎস্বর্গকৃত হওয়া যাবে না।) রাসুলুল্লাহ (সা.) অমুসলিমদের দাওয়াত গ্রহণ করেছেন। তাদের রান্না করা খাবার খেয়েছেন। তাদের দেয়া উপহারও গ্রহণ করেছেন। (বুখারি, হাদিস: ২৬১৫)

আবু হুমাইদ আল-সাঈদি (রা.) বলেন, ‘আমি নবী (সা.)-এর সঙ্গে তাবুক যুদ্ধ করেছি। আয়লা’র বাদশাহ নবী (সা.)-কে সাদা রঙের একটি খচ্চর এবং একটি চাদর উপহার দিয়েছেন।’ (বুখারি, হাদিস: ২৯৯০)

আল-আব্বাস বিন আবদুল মোত্তালিব হুনাইনের দিন সম্পর্কে বলেন, ‘রাসুল (সা.) সাদা রঙের একটি খচ্চরের উপর ছিলেন; যে খচ্চরটি ফারওয়া বিন নুফাছা আল-জুযামি তাকে উপহার দিয়েছিলেন।’ (মুসলিম, হাদিস: ১৭৭৫)

আলী ইবনে আবু তালেব (রা.) থেকে বর্ণিত আছে, নবী (সা.)-কে দুমাতের (একটি স্থান) রাজা একটি রেশমী কাপড় উপহার দিয়েছেন। তখন তিনি সেটা আলী (রা.)-কে দিয়ে বললেন: ‘এটাকে কেটে খিমার বানিয়ে ফাতেমাদের দাও।’ (বুখারি, হাদিস: ২৪৭২; মুসলিম, হাদিস: ২০৭১)

ইমাম শারফ আন-নববী বলেন, ‘এ হাদিসে কাফেরের হাদিয়া গ্রহণ বৈধ হওয়ার পক্ষে দলিল রয়েছে।’ (শারহু মুসলিম: ১৪/৫০) আনাস বিন মালেক (রা.) থেকে বর্ণিত আছে যে, এক ইহুদি নারী (সা.)-এর কাছে একটি বিষযুক্ত ভেড়া নিয়ে আসে। তিনি সে ভেড়া থেকে খেয়েছেন। (বুখারি, হাদিস: ২৪৭৪; মুসলিম, হাদিস: ২১৯০)

সৌদি আরবের স্থায়ী কমিটির ফতোয়াসমগ্রে এসেছে, ‘অমুসলিমেরা সাধারণ উপলক্ষগুলোতে যেমন-নতুন শিশুর জন্ম ও অন্যান্য উপলক্ষে মুসলিমদের যেসব মিষ্টান্ন দেয়, সেগুলো খাওয়া জায়েজ; তবে ধর্মীয় উপলক্ষ কেন্দ্রিক কোনো খাবার দিলে তা খাওয়া জায়েজ নয়। নবী (সা.) থেকে সাব্যস্ত হয়েছে যে, ‘তিনি মুশরিকদের দেওয়া উপহার গ্রহণ করেছেন।’ শাইখ আবদুল আজিজ ইবনে বাজ, শাইখ আবদুল আজিজ আলে শাইখ, শাইখ বকর আবু যায়েদ। (ফাতাওয়াল লাজনাদ দায়িমা, আল-মাজমুআ আস-সানিয়া: ১০/৪৭০)

শাইখ বিন উছাইমিন (রহ.)-কে জিজ্ঞেস করা হয়, ‘আমার একজন অমুসলিম প্রতিবেশী আছে। কখনও কখনও বিভিন্ন উপলক্ষে সে আমাকে খাবার ও মিষ্টান্ন পাঠায়। এ খাবার আমি খাওয়া ও আমাদের বাচ্চাদের খাওয়ানো কি জায়েজ হবে?’ জবাবে তিনি বলেন, ‘হ্যাঁ। যদি আপনি নিরাপদ মনে করেন, তাহলে কাফেরের দেওয়া হাদিয়া খাওয়া আপনার জন্য জায়েজ। কেননা নবী (সা.)-কে যে ইহুদি নারী ভেড়া হাদিয়া দিয়েছে এবং তিনি সেটা গ্রহণ করেছেন। যে ইহুদি তাকে তার ঘরে দাওয়াত করেছে, তিনি তার দাওয়াত গ্রহণ করেছেন এবং তার খাবার খেয়েছেন।’

‘তাই কাফেরদের উপহার ও তাদের বাসায় খেতে কোনো আপত্তি নেই। কিন্তু শর্ত হচ্ছে- নিরাপত্তার নিশ্চয়তা। যদি কোনো আশংকা থাকে, তাহলে তাদের দাওয়াত গ্রহণ করা যাবে না। অনুরূপভাবে আরেকটি শর্ত হচ্ছে, খাবার ও উপহারগুলো তাদের ধর্মীয় উপলক্ষ কেন্দ্রিক হওয়া যাবে না (যেমন- পূজা ও বড়দিন পালন ইত্যাদি ধরনের কোনো উপলক্ষ)। এই ধরনের অবস্থায় উপলক্ষকেন্দ্রিক তাদের উপহার গ্রহণ জায়েজ নেই।’ (ফাতাওয়া নুরুন আলাদ দারব: ২৪/২)

অমুসলিমদের দাওয়াতে অংশগ্রহণ করলে ঈমান-আমলের ক্ষতি হবার আশঙ্কা থাকলে অংশগ্রহণ করা জায়েজ হবে না। (আহকামুজ জিম্মাহ: ১/৭২৩) অনুরুপভাবে তাদের জবাইকৃত পশুর গোশত খাওয়া যাবে না। (সুরা বাকারা, আয়াত: ১৭৩)