Amar Sangbad
ঢাকা শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪,

ইসলামী সমাজে মোহরের গুরুত্ব

মার্চ ১৬, ২০১৫, ১০:০৫ এএম


ইসলামী সমাজে মোহরের গুরুত্ব

 

নারী-পুরুষ মিলেই সামাজিক পরিবেশের গোড়াপত্তন। ইসলামী পরিবার সমাজকল্যাণের কেন্দ্রবিন্দু। যাবতীয় কল্যাণকর কাজের সূত্রপাত হয় এ পরিবার থেকে। ইসলামী সমাজব্যবস্থায় সামাজিক কল্যাণের আরেক গুরুত্বপূর্ণ উপাদান দায়নুল মোহর। পরিবার গঠনের মূলে যা অপরিহার্য শর্ত। দায়নুল মোহরের শরিয়ত সাব্যস্ত মর্যাদার পাশাপাশি এর সামাজিক কল্যাণের অনেক দিক বিদ্যমান। আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপটে বর্তমানে নারী নির্যাতন প্রতিরোধ, নারীর ক্ষমতায়ন, নারীকে স্বাবলম্বীকরণসহ বহুমুখী কল্যাণকর দিক নিহিত থাকায় সামাজিক কল্যাণে দায়নুল মোহরের ভূমিকা অপরিসীম এবং সুদূরপ্রসারী।

দায়নুল মোহর এর অর্থ : ديـن الـمـهـر শব্দটি যৌগিক। ديـن দায়ন শব্দের অর্থ ঋণ। আর مـهـر মোহর শব্দের অর্থ প্রতিদান। এক্ষেত্রে দায়নুল মোহর শব্দের অর্থ দাঁড়ায় বিয়েতে বরপক্ষ কন্যাপক্ষকে বিবাহ উপলক্ষে যে প্রতিদান প্রদান করে থাকে। তবে মোহর শব্দটির আরও কিছু অর্থ প্রদান করে। যেমন—

১. صـداق الـمـرأة নারী প্রাপ্য। যেমন- পবিত্র কুরআনে বলা হয়েছে واتـوا الـنـسـاء صـدقـاتـهـن نـحـلـة

২. هـديـة বা উপঢৌকন।

৩. طـولا সামর্থ্য। যেমন مـن لـم يـسـتـطـع مـنـكـم طـولا

৪. عـقـد বন্ধন।

মোহরের পারিভাষিক অর্থ : ইসলামী শরিয়তের পরিভাষায় বিবাহের মাধ্যমে স্বামী-স্ত্রীর যৌনাঙ্গ ভোগের অধিকার লাভের বিনিময়ে যে মাল প্রদান করে তাই মোহর।

এই প্রসঙ্গে আল ফিকহুল ইসলামিতে বলা হয়েছে-

هـو الـمـال الـذى تـسـتـحـقـه الـمـرأة عـلـى زوجـهـا بـالـعـقـد عـلـيـهـا او بـالـدخـول بـهـا حـقـيـقـة ــ

অর্থাৎ, কোনো নারী তার সঙ্গে বিবাহবন্ধনের কারণে বা সহবাসের কারণে সে তার স্বামীর ওপর যে মালের হকদার হয়, তাই মোহর।

الـمـعـجـم الـوسـيـط গ্রন্থকার বলেন- الـمـهـرمـا يـدفـعـه الـزوج إلـى زوجـسـتـه بـعـقـد الـزواج

শরহে বেকায়া গ্রন্থের প্রান্তটিকায় বলা হয়েছে- الـمـهـر عـمـا يـتـاق إلـى زوجـه عـواضـا لـمـنـافـع يـضـعـهـا

মোটকথা বিবাহবন্ধন উপলক্ষে স্বামী বাধ্যতামূলকভাবে স্ত্রীকে নগদ অর্থ, সোনা-রুপা বা স্থাবর সম্পত্তির আকারে যে মাল প্রদান করে সেই মালকে মোহর বলে।

দায়নুল মোহর স্বামীর একটি বাধ্যতামূলক কর্তব্য। মহান আল্লাহতায়ালা বৈধভাবে সম্পদ ব্যয়ের জন্য যতগুলো পথের কথা বলেছেন পুরুষের জন্য দায়নুল মোহর তার একটি। এ ব্যাপারে আল্লাহর নির্দেশ হলো—

واتـوا الـنـسـاء صـدقـهـن نـحـلـة ــ

তোমরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে নারীদেরকে তাদের মোহর প্রদান কর।

এনায়া গ্রন্থে উল্লেখ করা হয়েছে—

انـه اسـم لـلـمـال الـذى يـجـب فـى عـقـد الـنـكـاح عـلـى الـزوج فـى مـقـابـلـة الـبـضـع امـا بـالـشـمـيـة او بـالـعـقـد ــ

দেনমোহর বলতে এমন অর্থ-সম্পদ বুঝায়, যা বিয়ের বন্ধনে স্ত্রীর ওপর স্বামীত্বের অধিকার লাভের বিনিময়ে স্বামীকে আদায় করতে হয়; তা বিয়ের সময়ই ধার্য হবে, নয় বিয়ে সম্পন্ন হওয়ার কারণে তা আদায় করা স্বামীর ওপর ওয়াজিব হবে।

মোহরের পরিমাণ (مـقـدار الـمـهـر) : অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে আর্থিক সামর্থ্য ও সামাজিক মর্যাদার কারণে প্রত্যেক দম্পতির মোহর নির্ধারণ সুবিবেচনার দাবি রাখে। বিবাহিত দম্পতির পারিবারিক মর্যাদা ও আর্থিক সংগতিহীন ধার্যকৃত মোহর কারও কারও জন্য অনাদায়যোগ্য হতে পারে। এসব কিছু বিবেচনা করে ইসলাম সর্বাধিক কল্যাণকর দিকটিই উৎসাহিত করেছে। সেজন্য সর্বনিম্ন পরিমাণ নির্ধারণ করেছে। সর্বোচ্চ পরিমাণ নির্ধারণ করেনি। তবে সর্বনিম্ন পরিমাণে প্রখ্যাত ফকিহ ইমামগণের মধ্যে সামান্য মতভেদ পরিলতি হয়। মোহর নির্ধারণে স্বামী-স্ত্রী উভয়ের সম্মতির ওপর নির্ভরশীল।

মোহরের সর্বনিম্ন পরিমাণে ইমামদের মতভেদ :

ক. ইমাম শাফেয়ী (র) ও ইমাম আহমদের (র) মতে মোহরের কোনো নির্দিষ্ট পরিমাণ নেই, বরং স্বামী-স্ত্রী উভয়ে যে বস্তুতে একমত হয়, তা কম হোক কিংবা বেশি হোক— সেটাই মোহর হিসেবে নির্ধারণ করা। ইমাম শাফেয়ী আরও বলেন, বিবাহ ক্রয়-বিক্রয়ের ন্যায়। ক্রয়-বিক্রয়ের যেমন মূল্যের কোনো সুনির্দিষ্ট পরিমাণ নেই, বিবাহের ক্ষেত্রেও মোহরের সুনির্দিষ্ট কোনো পরিমাণ নেই।

খ. ইমাম মালিক (র) বলেন, মোহরের সর্বনিম্ন পরিমাণ তিন দিরহাম।

গ. হযরত ইব্রাহিম নাখয়ীর (র) মতে, মোহরের সর্বনিম্ন পরিমাণ এক দিরহাম।

ঘ. সাঈদ ইবনে জুবায়েরের (রা.) মতে, ৫০ দিরহাম।

ঙ. ইমাম আযম আবু হানিফার (র) মতে মোহরের সর্বোচ্চ কোনো পরিমাণ শরিয়ত কর্তৃক নির্ধারিত হয়নি। তবে মোহরের সর্বনিম্ন পরিমাণ হলো ১০ দিরহাম, যা বাংলাদেশী টাকায় ৫ শত ৫০ টাকা।

ইসলামী শরিয়তে মোহরানা না দিয়ে স্ত্রীর নিকট গমন করা অবাঞ্ছনীয় ঘোষণা করেছে। হযরত ইবনে আব্বাস (রা.) বর্ণনা করেন, হযরত আলী যখন হযরত ফাতিমাকে (রা.) বিয়ে করলেন, তখন নবী করীম (সা.) তাকে বললেন` اعـطـهـا شـيـئـا তুমি ওকে কিছু দাও।

হযরত ইবনে উমর (রা.) বললেন- لايـحـل لـمـسـلـم ان يـدخـل عـلـى إمـرأة حـتـى يـقـدم الـيـهـا مـا قـال اوكـثـر

—কোনো মুসলমানেরই মোহরানা বাবদ কম বা বেশি কিছু অগ্রিম না দিয়ে তার স্ত্রীর নিকট গমন করা জায়েজ নয়।

মালিক ইবনে আনাস (রা.) বলেন, স্ত্রীকে তার মোহরানার কিছু না কিছু না দিয়ে স্বামী যেন তার নিকট গমন না করে। মোহরানার কম পরিমাণ হলো একটি দিনারের এক-চতুর্থাংশ কিংবা তিন দিরহাম। বিয়ের সময় এ পরিমাণ নির্দিষ্ট হোক আর না হোক, তাতে কিছু আসে যায় না।

দায়নুল মোহরের পরিমাণে সর্বনিম্ন ও সর্বোচ্চ পরিমাণ সম্পর্কে আলোচনার প্রাথমিক পর্যায়ে আলোকপাত করা হয়েছে। ইসলামী শরিয়তে এ সম্পর্কে কোনো অকাট্য নির্দেশ দেয়া হয়নি, নির্দিষ্টভাবে কোনো পরিমাণও ঠিক করে বলা হয়নি। তবে এ কথা স্পষ্ট যে, প্রত্যেক স্বামীরই কর্তব্য, তার আর্থিক সামর্থ্য ও স্ত্রীর মর্যাদার দিকে লক্ষ্য রেখে উভয় পক্ষের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ কোনো পরিমাণ নির্দিষ্ট করে নেয়া, যা উভয়ের জন্য সামঞ্জস্যপূর্ণ হয়। উভয় পক্ষের সম্মতিতে যে মোহর নির্ধারণ করা হয় তাতে মেয়ে পক্ষে সহজেই রাজি হয়ে যাওয়া উচিত। এ ব্যাপারে ইসলামী শরিয়ত উভয় পক্ষকে স্বাধীনতা দিয়েছে।

দায়নুল মোহরের পরিমাণ নির্ধারণ করার ব্যাপারে শাহ ওয়ালীউল্লাহ দেহলভী (র) বলেন, নবী করীম (সা.) মোহরানার কোনো পরিমাণ নির্দিষ্ট করে দেননি এ কারণে যে, এ ব্যাপারে লোকদের আগ্রহ উৎসাহ ও ঔদার্য প্রকাশ করার মান কখনো একত্রিত পাবে না, বরং বিভিন্ন যুগে, দুনিয়ার বিভিন্ন স্তরের লোকদের আর্থিক অবস্থা এবং লোকদের রুচি, দৃষ্টিভঙ্গি কার্পণ্য ও উদারতার ভাবধারায় আকাশছোঁয়া পার্থক্য হয়ে থাকে। এ জন্য সর্বকাল যুগ-সমাজ স্তর, অর্থনৈতিক অবস্থা, রুচি-উৎসাহ নির্বিশেষে প্রযোজ্য হিসেবে একটি পরিমাণ স্থায়ীভাবে নির্দিষ্ট করে দেয়া বাস্তবদৃষ্টিতে সম্পূর্ণ অসম্ভব। কাজেই এর পরিমাণ সমাজ, লোক ও আর্থিক মানের পার্থক্যের কারণে বেশিও হতে পারে আবার কমও হতে পারে। তবে শুধু শুধু এবং পারিবারিক আভিজাত্যের দোহাই দিয়ে এর পরিমাণ নির্ধারণে বাড়াবাড়ি করা ও দরকষাকষি করা আদৌ সমর্থনযোগ্য নয়। আবার এর পরিমাণ এমন সামান্য ও নগণ্যও হওয়া উচিত নয়, যা স্বামীর মনের ওপর কোনো শুভ প্রভাবই বিস্তার করতে সমর্থ হবে না, যা দেখে মনে হবে যে, মোহরানা আদায় করতে গিয়ে স্বামীকে কিছুমাত্র ক্ষতি স্বীকার করতে হয়নি। সে জন্য তাকে কোনো ত্যাগও স্বীকার করতে হয়নি। তিনি এও বলেন, দেনমোহরের পরিমাণ এমন হওয়া উচিত, যা আদায় করা স্বামীর পক্ষে কষ্টসাধ্য হবে এবং সে জন্য রীতিমতো চিন্তিত ও উদ্বিগ্ন হয়ে পড়বে। পক্ষান্তরে, তার পরিমাণ এমনও হওয়া উচিত নয়, যা আদায় করা স্বামীর পক্ষে অসম্ভব হয়ে দাঁড়াবে।

সামাজিক কল্যাণে মোহরের ভূমিকা : পবিত্র কুরআনে স্ত্রীকে মোহরানা আদায় করার ব্যাপারে তাগিদ দেয়া হয়েছে। কম কিছু বা বেশি। এমন কম নয় যা আত্মসম্মানবোধে আঘাত লাগে। আবার এমন বেশি নয় যা আদায় অযোগ্য হয়। এ উভয় অবস্থানের মধ্যে বৃহত্তর কল্যাণ নিহিত রয়েছে। ইসলাম একজন নারীকে মোহরানার বিনিময়ে কর্তৃত্ব লাভের যে সুযোগ সৃষ্টি করেছে, যা অন্য কোনো সমাজ ব্যবস্থায় নেই।

সর্বাধিক ও সর্বনিম্নের অবকাশ : রাসূল (সা.) গরিব সাহাবীদের ক্ষেত্রে সর্বনিম্ন পরিমাণ আদায়যোগ্য সম্পদকে মোহরের জন্য যেমন ধার্য করেছেন তেমনি সমাজে প্রচলিত সম্মানজনক পরিমাণও নির্ধারণ করেছেন। এটি এ জন্য যে, উভয় শ্রেণীর মানুষ যাতে সহজে এটিকে সর্বান্তকরণে গ্রহণ করে। যেমন রাসূল (সা.) মোহরানা বাবদ অন্তত লোহার একটি আঙুরি দিতে পারলেও সে জন্য প্রচেষ্টার কথা বলেছেন। অন্য একজন নিঃস্ব দরিদ্র সাহাবীকে নির্দেশ দিয়েছেন, কুরআন শরীফের যা কিছু তোমার জানা আছে, তা তুমি তোমার স্ত্রীকে শিক্ষা দিবে। এ বিনিময়েই আমি মেয়েটিকে তোমার নিকট বিয়ে দিলাম।

ইবনে জাওজী বলেছেন, ইসলামের প্রথম যুগে স্বাভাবিক দারিদ্র্যের কারণে প্রয়োজনবশতই এ ধরনের মোহরানা নির্দিষ্ট করা জায়েজ ছিল, যা বর্তমানে জায়েজ নেই।

অপরদিকে, সূরা নিসার এক আয়াতে বলা হয়েছে— এবং তোমরা মেয়েদের এক-একজনকে বিপুল পরিমাণ ধন-সম্পদ মোহরানা বাবদ দিয়ে দিয়েছ। এ আয়াতের আলোকে বিপুল পরিমাণ সম্পদ মোহরানা বাবদ দেয়া প্রয়োজন প্রমাণিত হয়।

হযরত উমর (রা.) উম্মে কুলসুমকে বিয়ে করেছিলেন এবং সে বিয়েতে মোহরানা বাবদ দিয়েছিলেন চল্লিশ হাজার দিরহাম। নবী করীম (সা.) স্বয়ং হযরত উম্মে হাবীবাকে মোহরানা দিয়েছিলেন চারশতটি স্বর্ণমুদ্রা, অন্য এক বর্ণনায় পাওয়া যায় তার মোহরানা ছিল আটশত দিনার।

এ উভয় পরিমাণের মধ্যে বরপক্ষ ও কন্যাপক্ষের জন্য সম্মানজনক বিবেচনার দৃষ্টিতে সেটিই নির্ধারণ করার অফুরন্ত সুযোগ রাখা হয়েছে।

দরকষাকষি নিষিদ্ধ : জাহেলিয়াত যুগে মোহরানা নির্ধারণ করার ক্ষেত্রে তিক্ত-বিরক্তিকর পরিবেশ সৃষ্টি হতো। সে যুগে বিপুল পরিমাণ মোহরানা ধার্যের ব্যাপারে কন্যাপক্ষ বরপক্ষকে চাপ দিত। এতে দু’পক্ষের মধ্যে নানারূপ দরকষাকষি ও ঝগড়াঝাটির সৃষ্টি হতো। পরিণামে দেখা দিত নানারূপ জটিলতা। বর্তমান মুসলিম সমাজেও মোহরানা ধার্যের ব্যাপারে জাহেলি সমাজের আচরণ লক্ষ্য করা যায়, যা কারোরই কাম্য নয়। এ ব্যাপারে হযরত উমর ফারুক (রা.) মোহরানা সম্পর্কে বলেন— সাবধান হে লোকেরা, স্ত্রীদের মোহরানা বাধতে গিয়ে কিছুমাত্র বাড়াবাড়ি করো না। মনে রেখো, মোহরানা যদি দুনিয়ার মানসম্মান বাড়াতো কিংবা আল্লাহর নিকট তাকওয়ার প্রমাণ হতো, তাহলে অতিরিক্ত মোহরানা বাধার কাজ করার জন্যে রাসূলে করীম (সা.) ছিলেন তোমাদের অপেক্ষাও বেশি অধিকারী ও যোগ্য। মনে রাখা আবশ্যক যে, এক-একজন লোক তার স্ত্রীকে মোহরানার দরুন বড় বিপদে পড়ে যায় এবং শেষ পর্যন্ত সে নিজের স্ত্রীকে শত্রু বলে মনে করতে শুরু করে।

সামাজিক নিরাপত্তা : দায়নুল মোহর একান্তই স্ত্রীদের ব্যক্তিগত সম্পদ। সুদূরপ্রসারী বহুমুখী সামাজিক কল্যাণের দিকে লক্ষ্য রেখে মহান আল্লাহ নারীকে স্বামীর নিকট থেকে মোহরানার এ অর্থ আদায়ের ব্যবস্থা করেছেন। এর মধ্যে অন্যতম হলো এটি সামাজিক নিরাপত্তার একটি বিশেষ দিক। বিয়ের পর কোনো কারণে বিবাহবিচ্ছেদ কিংবা দুর্ঘটনায় স্বামী নিহত হলে স্ত্রীর দেনমোহরের অর্থ বিনিয়োগ করেও সন্তান-সংসার নির্বাহ যাতে কষ্টকর না হয় তার ন্যূনতম ব্যবস্থা রয়েছে দায়নুল মোহর নির্ধারণে। এ কারণে সামাজিক ও অর্থনৈতিক পারিপার্শ্বিকতার দিক-বিবেচনা করেই বিয়েতে দায়নুল মোহর নির্ধারণ করতে বলা হয়েছে।

নারী নির্যাতন প্রতিরোধে সহায়ক : বিয়েতে দায়নুল মোহর নির্ধারণ মোহরের অর্থ পরিশোধ ও অর্থ নারীর স্বার্থরক্ষায় বিনিয়োগ সবই স্ত্রীর প্রতি স্বামীর প্রগাঢ় ভালবাসার সৃষ্টি করে। স্ত্রীর সম্পদ স্ত্রীকে, স্বামী ও স্বামীপক্ষের আত্মীয়স্বজনের নিকট সম্মানীয় করে তোলে। এতে সার্বিকভাবে সমাজে গণহারে নারী নির্যাতনের যে চিত্র তা পরিবর্তন হওয়ার সম্ভাবনা সৃষ্টি করে। তাই এটি প্রকারান্তরে সমাজে নারী নির্যাতন প্রতিরোধে সহায়ক ভূমিকা পালন করে।

নারীর প্রতি শ্রদ্ধাবোধ : দায়নুল মোহরের অর্থ আদায় করার বিষয়টি ইসলামী শরিয়ত বিয়ের ফরজ বিধান সাব্যস্ত করেছে, বিয়ে সংঘটিত হওয়ার জন্য পুরুষের ওপর দায়নুল মোহরের অর্থ আদায় বাধ্যতামূলক করে নারীকে সম্মানিত করেছে। দায়নুল মোহরের অর্থে স্বামীর কোনো নিয়ন্ত্রণ অবকাশ রাখেনি। এতে স্ত্রীকে অর্থনৈতিক নিরাপত্তা ও স্বাধীনতা প্রদান করে সামাজিক মর্যাদায় সুপ্রতিষ্ঠিত করেছে।

এ সব বিবেচনায় আমাদের উচিত দেনমোহর আদায়ে অবহেলা না করা। বরং দেনমোহর আদায়ে সবার আল্লাহ্‌ভীতি রাখতে হবে। এটা অবহেলায় আল্লাহ্‌র কঠিন শাস্তির মুখোমুখি হতে হবে— এই চেতনা সকলেরই থাকতে হবে। আমিন।