Amar Sangbad
ঢাকা বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪,

ওমরা ভিসা বন্ধ, ব্ল্যাকলিস্টে বাংলাদেশ

এপ্রিল ৩০, ২০১৫, ০৬:৫৫ এএম


ওমরা ভিসা বন্ধ, ব্ল্যাকলিস্টে বাংলাদেশ

 নানা অভিযোগে বাংলাদেশকে ব্ল্যাকলিস্টে ফেলেছে সৌদি আরব। তাই সৌদি সরকার গত এক মাস ধরে বাংলাদেশিদের ওমরা ভিসা দেয়া বন্ধ করে দিয়েছে। কবে আবার ভিসা দেয়া শুরু করবে তা নিয়ে দেখা দিয়েছে অনিশ্চিয়তা।

এদিকে, সরকারি নিয়ম মেনে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে টাকা জমা দিয়েও হজে যেতে পারছেন না সিলেটের ১হাজার ২৬২জন হজযাত্রী। ধর্মমন্ত্রণালয়ে ডাটা এন্ট্রি না হওয়ায় এই অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে বলে জানা গেছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশ থেকে ওমরা ভিসা নিয়ে হাজারো মানুষ সৌদি আরবে রয়েছে। অনেকেই নির্ধারিত সময়ের মধ্যে না এসে অবৈধভাবে সেখানে থেকে যাচ্ছে। সৌদি সরকারও অবৈধদের চিহ্নিত করতে পারছে না। গত ডিসেম্বর থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত যারা ওমরাহ পালন করতে সৌদি আরব গিয়েছিলেন তাদের একটি অংশ দেশে ফিরে আসেনি। আর বিষয়টি সৌদি সরকারের নজরে আসামাত্র তারা বাংলাদেশকে ব্ল্যাকলিস্টে ফেলেছে এবং বাংলাদেশি হজযাত্রীদের ব্যাপারে সতর্ক অবস্থান নিয়েছে।

একটি নির্ভযোগ্য সূত্র জানা গেছে , ঢাকা ও চট্টগ্রামের কয়েকটি ট্রাভেল এজেন্সি ওমরা ভিসার নামে সৌদি আরবে আদম পাচার করছে। এর মধ্যে রয়েছে সিলেটেরও বেশকিছু এজেন্সি।

জানা গেছে, সৌদি আরবের মিনিস্ট্রি অব ফরেন এফেয়ার্সের বেঁধে দেয়া নতুন নিয়মে বাংলাদেশ থেকে ওমরা হজযাত্রীদের দেশটিতে পাঠানো হয়েছে। এ নিয়মে রয়েছে যারা ওমরা ভিসায় সৌদি যাবেন তাদেরকে নির্ধারিত এজেন্ট বা কোম্পানির নিয়ন্ত্রণে থাকতে হবে। প্রতি মাসে এর সঠিক হিসাব সৌদি সরকারের কাছে প্রদান করতে হবে।

ডিসেম্বর থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত বাংলাদেশ থেকে ৪০-৫০ হাজার মানুষ ওমরা পালন করতে গেছেন সৌদি গেছেন। তাদের ১৪ থেকে ২৮ দিন মেয়াদের ভিসা ছিল। এদের বেশির ভাগ দেশে ফিরে এলেও প্রায় দেড় হাজারের মতো হাজি দেশে ফিরেননি। তারা অবৈধভাবে এখনও দেশটিতে রয়ে গেছেন।

বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, উল্লেখযোগ্য সংখ্যক বাংলাদেশিদের না ফেরার বিষয়টি জানার পর সৌদি সরকার গত ২২শে মার্চ থেকে পুরোপুরিভাবে ওমরা ভিসা প্রদান বন্ধ করে দিয়েছে।

অ্যাসোসিয়েশন এজেন্সি হজ বাংলাদেশ-হাব-এর নেতারা জানিয়েছেন, এক ভাগের নিচে যাত্রীরা অবৈধ হলে সেটি সৌদি সরকার মার্জনা করে। কিন্তু এবার অতিরিক্ত ওমরা যাত্রী দেশটিতে রয়ে গেছেন। এজন্য সে দেশের সরকার বাংলাদেশকে কালো তালিকাভুক্ত করেছে। এখন নিষেধাজ্ঞা তুলতে হলে অবৈধ হওয়া ওমরা যাত্রীদের চিহ্নিত করে ফেরত আনতে হবে। আর সেটি করাও খুবই কষ্টকর। সৌদি ইমিগ্রেশনে তালিকা চেয়েছে। সেটিও দ্রুত করা যাচ্ছে না। এ কারণে আগামী রমজান মাস নিয়ে দুশ্চিন্তা বাড়ছে।

নেতারা জানিয়েছেন, প্রতিবছর রমজান মাসেই বাংলাদেশ থেকে প্রায় ২০ হাজার মানুষ ওমরাহ পালনে সৌদি আরবে যান। পবিত্র হজের পরে রমজানই হচ্ছে ওমরাহর মওসুম। এ মৌসুমে সিলেট থেকেও ৭ থেকে ৮ হাজার মানুষ ওমরাহ পালনে সৌদি আরবে যান। কিন্তু এ ঘটনার পর বাংলাদেশ আর কোনো ভিসা পাচ্ছে না। এতে করে যেমনি বাংলাদেশের ওমরাহ পালনকারীরা হতাশ হবেন তেমনি লোকসানে পড়বেন ট্রাভেল এজেন্সির মালিকরা। ইতোমধ্যে কয়েক হাজার ওমরা ভিসা প্রাপ্তির জন্য জমা পড়ে আছে। সে ভিসাগুলোও দেয়া যাবে না বলে জানিয়ে দিয়েছে সৌদি দূতাবাস।

অ্যাসোসিয়েশন ট্রাভেলস এজেন্সি অব বাংলাদেশ-আটাব এর সিলেট জেলার সভাপতি আবদুল জব্বার জলিল  বলেন, ‘সৌদি সরকার যখনই দেখবে ওভার স্ট্রের (অবস্থানরত) সংখ্যা ১ ভাগের নিচে চলে এসেছে তখন তারা পুনরায় ওমরা ভিসা চালু করবে। অন্যথায় তাদের নিষেধাজ্ঞা বহাল থাকবে।’

হাব-এর সিলেট জেলা শাখার সাবেক সভাপতি আজহারুল ইসলাম সাজু বলেন, ‘কবে নাগাদ এ নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার হবে সেটি বলা যাচ্ছে না।’

শুধু ওমরা নয়, সরকারি নিয়ম মেনে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে টাকা জমা দিয়েও হজে যেতে পারছেন না সিলেটের ১হাজার ২৬২ জন হজযাত্রী। ধর্মমন্ত্রণালয়ে ডাটা এট্রি না হওয়ায় এই অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে বলে  একটি সূত্র নিশ্চিত করেছে।

সূত্র জানায়- সরকারি নিয়ম অনুযায়ী এ বছরের ২৬ ফেরুয়ারির মধ্যে হজে গমনেচ্ছুদের টাকা জমা দেয়ার সময়সীমা নির্ধারণ করে দেয় সরকার। কিন্তু এর ৪দিন পূর্বে ২২ ফেরুয়ারি ধর্মমন্ত্রণালয় ডাটা এণ্ট্রি বন্ধ করে দেয়। যে কারণে ২২ তারিখের পরে জমা দেয়া হজ গমনেচ্ছুদের নাম অন্তর্ভুক্ত হয়নি।

সূত্রটি আরো জানায়- অসাধু কিছু ট্রাভেলস ব্যবসায়ীর যোগসাজশে ৪দিন পূর্বে ডাটা এন্ট্রি বন্ধ করে দিয়ে অবৈধ হাজিদের নাম অন্তর্ভুক্ত করা হয়। যে কারণে বৈধ উপায়ে আবেদনকারীদের নাম বাদ পড়ে যায়। আর তাতেই সিলেটের ১হাজার ২৬২ হজযাত্রীর হজে যাওয়া নিয়ে এ অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে।