Amar Sangbad
ঢাকা মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল, ২০২৪,

মোনাফেক যদি হয় কর্মচারী

মে ১৯, ২০১৫, ০৬:৩৩ এএম


মোনাফেক যদি হয় কর্মচারী

 আল্লাহপাক পবিত্র কোরআনে স্পষ্টত: উল্লেখ করেছেন যিনি সুদখোর, ঘুষখোর, চোগলখোর এবং মোনাফেক সেই সাথে যারা সৃষ্টিকর্তার সাথে র্শিক করবে তাদের গোনাহ মাফ নেই। আখেরাতে তাদের জন্য জাহান্নামের আগুন নির্ধারিত হয়ে আছে। কোরআনে আরো বলেছেন এ ছাড়াও মিথ্যা বলা মহাপাপ। শুধু পবিত্র কোরআনের আলোকে ইসলাম ধর্মেই নহে হিন্দু, বৌদ্ধ এবং খ্রিষ্টান ধর্মেও এ ধরণের অপরাধকে মহাপাপ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। সুদ এবং ঘুষ সামাজিকভাবে মানুষকে হেয় প্রতিপন্ন করে। কোন মানুষই এ দু’শ্রেণীর মানুষকে কখনই পছন্দ করেনা। এমন লোক নেই যে সুদখোর ঘুষখোরদেরকে  ঘৃণা করেনা।

তাদের দেখলেই থুথুু দেয় লোকে। বলে রাখা ভালো ঘুষ খাওয়ার সুযোগ বেশী সরকারি বা রাষ্টায়ত্ব প্রতিষ্ঠানে । চোগলখোর লোক সমাজে, সংসারে, পাড়ায়-মহল্লায় বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে বেড়ায় এবং অশান্তি বাঁধিয়ে দিতে সদা প্রস্তুত থাকে। চোগলখোরের ভয়ানক পরিণতি আমি এ বয়সের ব্যবধানে দেখেছি। দেখেছি নিজের মলমুত্র নিজেকে খেতে। এ শাস্তি কম কিসের? মোনাফেকরা কথা দিয়ে কথা রাখেনা। উপকারের উপকার স্বীকার করেনা। পিছন দিক থেকে মালিকের পিঠে চাকু মারে। সামনে বলে এক কথা পিছনে বলে আরেকটা। সরকারি অফিসে যারা ঘুষ খায় তারা প্রকৃতপক্ষে দেশ জাতির শত্রু, এরা কখনও মানুষ হতে পারেনা। এরা যে কোন খারাপ জিনিসের চেয়েও খারাপ। ঘুষখোর আর চোরদের কারণে অধিকাংশ সরকারি প্রতিষ্ঠানের অবস্থা করুণ। বিদ্যুৎ বিভাগ, স্বাস্থ্য বিভাগ, রাজউক, গণপূর্ত বিভাগ, রেল বিভাগ, সড়ক ও জনপথ বিভাগ, শিক্ষা বিভাগ প্রভৃতি বিভাগে চোর, ঘুষখোর এবং মোনাফেকের সংখ্যা বেশী।

সামান্য বেতনের চাকরী অথচ ঢাকাতে কয়েকটি বাড়ি, দু’পাঁচটা গাড়ি, দু’পাঁচটা প্লট আর কারো না থাকলেও এসএসসি পাশ তৃতীয় শ্রেণীর কর্মচারি মিটার ইন্সপেক্টরের আছে। সে চোর এবং মোনাফেক হওয়া সত্বেও সরকার তাকে সহজে আইনের আওতায় আনতে পারেনা। তাদের ক্ষমতার কাছে সকল ক্ষমতা যেন বিকলাঙ্গ হয়ে যায়। সরকারি কর্মচারি মানে প্রজাতন্ত্রের কর্মচারি। জনগণের অর্থে তারা চলে অথচ তাদের কাছে জনগণের কোন মূল্য নাই। জনগণকে তারা মানুষ হিসেবেই গন্য করেনা। অথচ তারা জানেই না জনগণ সকল ক্ষমতার উৎস। নিজেদেরকে সবচেয়ে ক্ষতাধর মনে করে দুর্নিতিবাজরা। প্রিয় পাঠক, সরকারি অফিসের পাশাপাশি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানেও দুর্নিতি কম হচ্ছেনা। বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে শ্রমিকরা যেমন কঠোর পরিশ্রম করে তেমনি আছে অসৎ মানুষ মোনাফেক মানুষ। সেই সাথে অনেক মালিক আছেন বিশেষ করে গার্মেন্টস শিল্পে দেখা যায় মোনাফেক মালিক। শ্রমিকের ন্যায্য পাওনা পরিশোধ করতে যেয়ে অনেক গার্মেন্টস মালিক অনেক বড় বড় মোনাফেকি করেছে শ্রমিকদের সাথে। যে জন্য প্রতিবছরই প্রায়শই দেখা যায় শ্রমিকদের আন্দোলন।

 বেসরকারি অনেক প্রতিষ্ঠান আছে যেখানকার ড্রাইভাররা তেল চুরি করে মালিকের সাথে করে থাকে মোনাফেকি। অনেক কর্মচারি আছে যারা গার্মেন্টের কাপড় চুরি করে বিক্রী করে ঝুট হিসেবে। এখানে একশ্রেণীর কর্মচারিরা মালিকের সাথে করে থাকে মোনাফেকি। এদেরকে বলা হয় গাদ্দার, চোর, বেঈমান। প্রিয় পাঠক, ১৯৮৪ সালের কথা আমার পরিচিতই শুধু নয় সে একজন ভাল নার্সারিয়ান। তার একটি মুদি দোকান ছিল নার্সারি ব্যবসার পাশাপাশি। মুদি দোকন চালাতেন একজন কর্মচারিকে দিয়ে। তাকে ভালবাসতেন মালিক। কিন্তু একদিন টাকা চুরি  করাতে ধরা পড়ে যায় সেই কর্মচারি। এতে আঘাত পেয়ে মালিক বেশ অসুস্থ্য হয়ে পড়েন এবং মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেন। মালিকের একই কথা আমি তাকে এত ভালবাসি আর সে আমার দোকান থেকে চুরি করলো? একেই বলে মোনাফেক, চোর, বেঈমান। আর এক শ্রেণীর লোক আছে যাদের কাজ মালিকের কাছে ভালো থাকার জন্য, কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি অর্জনের জন্য মুহুর্তে মুহুর্তে মালিকের কাছে যেয়ে অপর কারো বদনাম করা, কুৎসা রটনা করা। সে মালিকের কাছে নিজেকে দাম বাড়াতে এসব করে থাকলেও সে জানেনা সে কত বড় অপরাধ করেছে? কত বড় পাপ করেছে!

 একে বলা হয় মোনাফেকি। যারা নিজের সহকর্মীদের নামে মালিকের কাছে গীবৎ করে, সমালোচনা করে তারা আসলেই প্রকৃত মোনাফেক, কুখ্যাত বেঈমান, চোগলখোর। অভিজ্ঞতার আলোকে বলতে পারি মালিকের চামচাগিরি করে, তোষামোদি করে, চাটুকরী করে, অপরের নামে বদনাম করে কোন সহকর্মী খুব একটা লাভবান হতে পেরেছে বলে মনে হয় না।  যারা মালিকের খেয়ে মালিকের প’রে মালিকের ক্ষতি করে, সহকর্মীদের পেটে লাথি মারে তাদের পরিণতি খুবই খারাপ হয়। মোনাফেক এবং চোগলখোররা একজনের কথা আরেকজনের কাছে লাগিয়ে সম্মানী এবং গুণী মানুষকে অহরহ অপমান অপদস্ত করে থাকে। এ জন্য আল্লাহ পাক ১৪ শত বছর আগেই পবিত্র কোরআনে বলে দিয়েছেন। যে মুসলমান এক মুসলমানের দোষ গোপন রাখবে আমি আল্লাহপাক তার দোষ হাসরের ময়দানে গোপন রাখব। অথচ আমরা তা করিনা। একজনের দোষ খুঁজে বের করতে আমরা মরিয়া হয়ে উঠি।

 মোনাফেকরা কোন গুণী ব্যক্তিকে সহ্য করতে পারেনা। প্রিয় পাঠক, কথায় কথায় অনেক কথায় বলে ফেললাম এবার আলোচনা করবো তিনজন মোনাফেক, গাদ্দার, বেঈমান, নিমক হারামদের সম্পর্কে। যে মালিক তাদের রুটি রুজির আয়োজন করে দিয়েছেন, যে মালিক বিপদে আপোদে পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন সেই মালিকের সাথে সাম্প্রতিককালে মোনাফেকি করেছে কতিপয় কর্মচারি। স্বাধীনতা পরবর্তীকালের সবচেয়ে বড় একটি অবাক এবং বিস্ময়কর ঘটনা বলে ধরে নেওয়া যায়। অপহরণের ঘটনা প্রতিনিয়ত ঘটেই চলেছে। অপহরণের মত ঘটনা ঘটিয়ে থাকে সাধারণত বাইরের কোন দুস্কৃতিকারীরা কিন্তু এবার ঘটালো টিএনজেড গ্রুপ অব কোম্পানীজের মালিক শাহাদৎ হোসেনের প্রতিষ্ঠনের নিজস্ব কর্মচারিরা। ঘটনাটি লোমহর্ষক এবং বেশ চাঞ্চল্যকর। ঘটনার বিবরণে প্রকাশ শিল্পপতি শাহাদৎ হোসেনের একমাত্র ছেলে আাবিরকে বিগত ২রা মে বনানী ফ্লাইওভার সড়ক সংলগ্ন সড়ক থেকে গাড়ি থামিয়ে বেশ নাটকিয় কায়দায় অপহরণ করে সন্ত্রাসীরা।

অপহরণ করে পল্লবীর একটি নিরিবিলি বাসায় আটকে রেখে ছেলেকে মারধর করে এবং তার বাবাকে ফোন করে বলে ছেলেকে জীবিত পেতে হলে ১০ কোটি টাকা দিতে হবে নইলে ছেলেকে মের ফেলা হবে। সন্তানের কথা ভেবে ২ কোটি টাকাতে বিষয়টি ফয়সালা হয়। চুক্তিমোতাবেক ২ কোটি টাকা অপহরণকারি মিজানুরের ১১টি ব্যাংক হিসেবে জমা করে দেন শিল্পপতি শাহাদৎ হোসেন। মিজানুর সরাসরি হোটেল রেডিসনের কাছে আবিরকে তুলে দেন শিল্পপতি শাহাদৎ হোসেনর হাতে। ঐ দিনই তথা ১৭ তারিখ রাতেই র‌্যাবের একটি দল উত্তরায় অভিযান চালিয়ে হোতা মিজানুর সহ মোট ৫ জনকে আটক করে র‌্যাব। সবচেয়ে অবাক কা- অপহরণকারীর তিনজনই শিল্পপতি শাহাদৎ হোসেনের কর্মচারি। তিনজনের মধ্যে রেজাউল করিম (৩৬) টিএনজেড কোম্পানির জিএম এর গাড়ির ড্রাইভার। নজরুল ইসলাম ঐ কোম্পানির ইলেকট্রিশিয়ান এবং জহির কোম্পানির পিয়ন।


এই তিনজনের পরিকল্পনা এবং  মিজানুর ও নজরুলের সহযোগীতায় এই লোমহর্ষক অপহরণের ঘটনা ঘটে। পাঁচ জনকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হলেও এ ঘটনায় জড়িত ছিল মোট ১৪ জন। উদ্ধার করা হয়েছে ১ কোটি ৮০ লাখ ৬৫ হাজার টাকা। প্রিয় পাঠক, মোনাফেকি কত প্রকার তা জেনে নিন। ধরা না পড়লে কখনও কি আমরা জানতে পারতাম নিজের কর্মচারি হয়ে এ কাজ করতে পারে? একেই বলে মোনাফেক, গাদ্দার, বেঈমান। এমন লোক আপনার প্রতিষ্ঠানেও থাকতে নপারে। তাই প্রয়োজন আতেল, চামচা, অতি ভক্তি, তোষামোদকারীদেরকে চিহ্নিত করে সে ভাবে চলা। নতুবা আমরাও বিপদে পড়তে পারি। চোখ-কান খোলা রেখে আসুন চলি এবং মোনাফেকদেরকে চিহ্নিত করি। আবিরকে ফিরে পাওয়া যাবে এমন আশা করা বৃথা ছিল কারণ আজ পর্যন্ত তেমন কেউ জীবিত ফিরে আসেনি। পক্ষান্তরে লোভী কর্মচারিদের পরিণতি জেলের চার দেয়াল। এরপর ঘটনা ঘটবে এমন-উকিল বলবে মহামান্য আদালত তারা যে অপহরণের সাথে জড়িত তার কোন প্রমাণ নেই........। বাদি হিংসার বশবর্তী হয়ে মিথ্যা মামলা করেছে আমার মক্কেলের বিরুদ্ধে।...........অত:পর কোন একদিন আসামীরা বেকসুর খালাস পেয়ে যাবে। আবার কারো না কারো সন্তানকে করবে অপহরণ। এবার হয়তো জীবিত ফেরৎ দেবেনা, মেরে ফেলবে। কি সাংঘাতিক সময়ের মধ্যে আমরা বসত করে যাচ্ছি। এরই নাম বুঝি রক্তের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতা!!