Amar Sangbad
ঢাকা বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪,

চেয়ারে বসে নামাজ আদায় জায়েজ নয়

জুন ৩, ২০১৫, ১২:১৯ পিএম


চেয়ারে বসে নামাজ আদায় জায়েজ নয়

চেয়ারে বসে নামাজ আদায়ের কোন বৈধতা নেই বলে ফতোয়া দিয়েছে ইসলামিক ফাউন্ডেশন। ফাউন্ডেশনের ফতোয়ায় বলা হয়েছে, যেখানে অসুস্থ ব্যক্তির জন্য খোদ শরিয়াহ আইনে অনেকগুলো বিকল্প বলে দেয়া হয়েছে, সেখানে সেসব বাদ দিয়ে অন্য বিকল্প অর্থাৎ চেয়ারে বসে নামাজ আদায়ের বৈধতা দেয়ার অবকাশ থাকে না।

ইসলামিক ফাউন্ডেশনের গবেষণা বিভাগের এ ফতোয়ায় বলা হয়েছে, অসুস্থ বা ওজর অবস্থায় নামাজ আদায়ের শরিয়তসম্মত বিবরণ আকর গ্রন্থাদিতে পাওয়া যায়। তাতে তিনটি অবস্থানের কথা বলা হয়েছে- দাঁড়িয়ে, বসে ও শায়িত অবস্থায়। গতকাল ফাউন্ডেশনের গবেষণা বিভাগের মুফতি মোহাম্মদ আবদুল্লাহ স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ কথা বলা হয়। তবে দেশের আলেম সমাজ এ ফতোয়ার ব্যাপারে ভিন্ন মত দিয়েছেন। তারা বলেন, কোরআন হাদিস না পড়ে না বুঝে এ ধরনের ফতোয়া দেয়া ঠিক না।

ফাউন্ডেশনের ফতোয়ায় বলা হয়, নামাজের সব ফরজ রোকনের মধ্যে সিজদা করা তথা মাটিতে নাক, কপাল-মাথা স্পর্শ করে সর্বোচ্চ বিনয় ও দীনতা-হীনতার স্বাক্ষর রাখা, সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ ফরজ। যে কারণে, একজন অসুস্থ রোগী যিনি দাঁড়িয়ে হোক বা বসে হোক উভয় অবস্থায় ইশারা ব্যতীত নামাজ আদায়ে সক্ষম নন। তার বেলায় বলা হয়েছে, বসে নামাজ আদায়ই তার পক্ষে উত্তম। অথচ বসে আদায়ের ক্ষেত্রে ১৩টি ফরজের অন্যতম কিয়াম বা দাঁড়ানো ফরজটি বাদ পড়ে যাচ্ছে! তবুও সেটি উত্তম কেন? উত্তম হচ্ছে, যে-সিজদা মাটিতে মাথা ঠেকিয়ে আদায় করতে হয়, বসা অবস্থায় সেই মাটির অধিক কাছাকাছি অবস্থান হয়ে থাকে, সেজন্য। চেয়ারে বসা অবস্থায় কি মাথা ঠেকিয়ে আদায় করতে হয়, বসা অবস্থায় সেই মাটির অধিক কাছাকাছি অবস্থান হয়ে থাকে, সেজন্য। চেয়ারে বসা অবস্থায় কি মাথা-কপাল মাটি থেকে দূরে সরে যাচ্ছে না?

চেয়ারে বসে নামাজ আদায়ে এবাদতের প্রাণরূপ সর্বোচ্চ দীনতা-হীনতা প্রকাশের কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য অর্জিত হয় না। তাই চেয়ারে বসে নামাজ আদায় সঠিক নয়। মসজিদে চেয়ার ঢুকিয়ে তাতে আসন গ্রহণ করা, রাজাধিরাজ, শাহানশাহ আহকামুল-হাকেমিন এর শাহী দরবারের আদব পরিপন্থি বিধায় তা বৈধ নয় এবং তাতে বসে নামাজ আদায়ও বৈধ নয়। চেয়ারদ্বারা মসজিদে জামাতের কাতারের বিঘ্ন ঘটে। তাই মসজিদে চেয়ার ঢুকানো ঠিক নয়। জামাত-কাতার ব্যতীতও তাতে মসজিদের স্বাভাবিক ও মৌলিক সৌন্দর্য, সকলের সমান বিনয়ী অবস্থানের বিঘ্ন ঘটে। তাই মসজিদে চেয়ার ঢুকানো ঠিক নয়।

একান্ত প্রয়োজন (সাময়িক বয়ান/আলোচনা, যখন বক্তা/আলোচক বৃদ্ধ-বয়স্ক হন) ব্যতীত মসজিদে চেয়ারের আসন পাতায় বিধর্মীদের সঙ্গে সাদৃশ্য হয়ে থাকে। অথচ ধর্মীয় বিষয়াদিতে অন্য ধর্মাবলম্বীদের সঙ্গে সাদৃশ্যতা ইসলামী শরীয়তে নিষেধ করা হয়েছে। সুতরাং মসজিদে চেয়ার ঢুকানো এবং চেয়ারে বসে নামাজ আদায় বৈধ নয়। নফল নামাজে ‘কিয়াম’ বা দাঁড়ানো ফরজ নয় বিধায় এবং সফর অবস্থায় বাহনে বসে বসে তা আদায়ের অনুমতির উপর ভিত্তি করে একজন রোগীর বেলায় তেমনিভাবে চেয়ারে বসে নামাজ আদায়ের বৈধতা বের করা যাবে না। তার কারণ ‘মাক্বীছ’ ও ‘মাক্বীছ আলাইহি’ এক বা সমান নয়। অর্থাৎ ফরজ/নফল/সফর অবস্থা ও বাসা বাড়িতে অবস্থানের অবস্থা ভিন্ন, তাই এসব ক্ষেত্রে বাধ্যবাধকতা ও বিধান ভিন্ন ভিন্ন।

ফিকহ-ফাতাওয়ার আকর গ্রন্থাদিতে একজন রোগীর ক্ষেত্রে চেয়ারে বসে নামাজ পড়ার কোন প্রসঙ্গ নেই। তবে আধুনিক সময়ে তথা বিংশ শতাব্দীর শেষদিকে এবং একবিংশ শতাব্দীর শুরুর দিকে ছাপানো কোন কোন উর্দু/আরবি ফাতওয়া গ্রন্থে প্রসঙ্গটি স্থান পেলেও তাতে- প্রথমত, সমস্যারটির সমাধান সুস্পষ্টভাবে আসেনি। দ্বিতীয়ত, সংশ্লিষ্টরা সমস্যার গভীরে যাননি এবং ব্যতিক্রম হিসাবে বা বিশেষ বা কারও ক্ষেত্রে আইনগত বৈধতা দানের সুযোগে, তার ভবিষ্যৎ মন্দ ফলাফল কি দাঁড়াবে (যা বর্তমানে মসজিদগুলোতে চেয়ারে সারি দেখে, বোঝা যাচ্ছে) তা তারা অনুমান করতে পারেননি।

সহীহ বুখারি ও সহীহগ মুসলিম এর বর্ণনা মতে প্রিয়নবী (সা.) ঘোড়া হতে পড়ে গিয়ে আহত হয়েছিলেন এবং বসে বসে নামাজ পড়িয়েছেন। মসজিদে একটি চেয়ার থাকা সত্ত্বেও চেয়ারে বসে নামাজ পড়েননি।

একান্ত গবেষণা-বিতর্কের খাতিরে যদি কারও বেলায় এমনটি বলা হয় যে, তিনি দাঁড়িয়েও নামাজ পড়তে পারেন না এবং চেয়ার ব্যতীত যে কোন প্রক্রিয়ায় বসেও পারেন না। তেমন কারও জন্য বৈধতার অনুমতির কথা মেনে নিলেও তা প্রযোজ্য হতে পারে বাসা- বাড়ি, অফিস-আদালত তথা মসজিদের বাইরের ক্ষেত্রে, মসজিদে নয়। কারণ, তার প্রয়োজনে মসজিদের পরিবেশ ব্যাহত করা যাবে না এবং তিনি রোগী তার পক্ষে জামাতে অংশগ্রহণও জরুরি নয়।