Amar Sangbad
ঢাকা বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪,

রোজা অবস্থায় ডাক্তারি পরীক্ষা ও ওষুধ ব্যবহারে বিধান

জুলাই ৩, ২০১৫, ০২:১৯ পিএম


রোজা অবস্থায় ডাক্তারি পরীক্ষা ও ওষুধ ব্যবহারে বিধান

ইনজেকশনের কারণে রোজা ভাঙ্গে না। এমনিভাবে একজন রোজাদার ইফতারের আগেও ইনসুলিন ইনজেকশন নিতে পারে। অবশ্য যেসকল ইনজেকশন খাদ্যের কাজ দেয় জটিল ওজর ছাড়া তা নিলে রোজা মাকরূহ হবে।

১. এন্ডোস্কপি : এ পরীক্ষা করার সময় লম্বা চিকন একটি পাইপ রোগীর মুখ দিয়ে পাকস্থলীতে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়; যার মাথায় বাল্বজাতীয় একটি বস্ত্ত থাকে। নলটির অপর প্রান্ত থাকে মনিটরের সাথে। এভাবে চিকিৎসকগণ রোগীর পেটের অবস্থা নির্ণয় করে থাকেন। যেহেতু এন্ডোস্কপিতে নল বা বাল্বের সাথে কোনো মেডিসিন লাগানো হয় না, তাই এর কারণে সাধারণ অবস্থায় রোজা ভাঙ্গার কথা নয়। কিন্তু বিশেষজ্ঞ ডাক্তার থেকে জানা গেছে এবং প্রত্যক্ষভাবে দেখা গেছে যে, এন্ডোস্কপির সময় টেস্টের প্রয়োজনে চিকিৎসকগণ কখনো কখনো নলের ভেতর দিয়ে পানি ছিটিয়ে থাকেন; যা সরাসরি রোজা ভঙ্গের কারণ। সুতরাং যদি কারো ক্ষেত্রে পানি বা ওষুধ ভেতরে প্রবেশ করানো ছাড়াই টেস্টটি সম্পন্ন হয় তাহলে তার রোজার কোনো ক্ষতি হবে না। অন্যথায় রোজা নষ্ট হয়ে যাবে।

এন্ডোস্কপি করা হয় খালি পেটে, তাহলে একজন রোজাদার রোজা অবস্থায় এ টেস্টটি না করাতে পারলে কীভাবে তা করাবে? এ প্রশ্নের জবাবে একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক বললেন, এক্ষেত্রে রোগীর পানি পান করতে বাধা নেই। তাই রোগী ইচ্ছা করলে শুধু পানি দ্বারা ইফতার করে টেস্টটি করিয়ে নিতে পারে। এন্ডোস্কপির মতোই মলদ্বার দিয়ে নল ঢুকিয়ে আরেকটি পরীক্ষা করা হয়ে থাকে। এ ক্ষেত্রেও একই হুকুম প্রযোজ্য হবে।

২. এনজিওগ্রাম : সাধারণ পদ্ধতির এনজিওগ্রামের কারণে রোজা নষ্ট হয় না।

৩. ইনজেকশন ও ইনসুলিন : ইনজেকশনের কারণে রোজা ভাঙ্গে না। এমনিভাবে একজন রোজাদার ইফতারের আগেও ইনসুলিন ইনজেকশন নিতে পারে। অবশ্য যেসকল ইনজেকশন খাদ্যের কাজ দেয় জটিল ওজর ছাড়া তা নিলে রোজা মাকরূহ হবে।

৪. স্প্রে জাতীয় ওষুধ : বর্তমানে এ্যারোসল জাতীয় বেশ কিছু ওষুধ দ্বারা বক্ষব্যাধি, হার্টএ্যাটাক ও অন্যান্য রোগের চিকিৎসা করানো হয়ে থাকে। গ্যাস জাতীয় এ সকল ওষুধ রোগীর মুখের ভেতর দিয়ে প্রবেশ করানো হয়। নিম্নে রমজানে এ ওষুধগুলো ব্যবহারের হুকুম বর্ণনা করা হল।

৫. নাইট্রোগ্লিসারিন : এ্যারোসোল জাতীয় ওষুধটি হার্টের রোগীরা ব্যবহার করে থাকে। জিহবার নিচে ২/৩ বার ওষুধ দিয়ে মুখ বন্ধ রাখা হয়। ডাক্তারদের মতে সাথে সাথে ওই ওষুধ শিরার মাধ্যমে রক্তের সাথে মিশে যায়। এ হিসেবে এ ওষুধ ব্যবহার করলে রোজা নষ্ট হবে না। তবে রোগীর কর্তব্য হল, জিহবার নিচের ওষুধটি দেওয়ার পর সাথে সাথে তা গিলে না ফেলা।

৬. ভেন্টোলিন ইনহেলার : বক্ষব্যাধির জন্য এ ওষুধ ব্যবহৃত হয়ে থাকে। রোগীদেরকে মুখের ভেতর এমনভাবে ওষুধটি স্প্রে করতে বলা হয়, যাতে তা সঙ্গে সঙ্গে ভেতরের দিকে চলে যায়। বিশেষজ্ঞদের মতে খাদ্যনালী হয়ে ওষুধটি ফুসফুসে গিয়ে কাজ করে থাকে। সংশ্লিষ্ট ডাক্তারের সচিত্র ব্যাখ্যা থেকে এ কথা সুস্পষ্টভাবে বোঝা গেছে, ওষুধটি স্প্রে করার পর এর কিছু অংশ খাদ্যনালীতেও প্রবেশ করে। সুতরাং এ ধরনের ইনহেলার প্রয়োগের কারণে রোজা নষ্ট হয়ে যাবে। চিকিৎসকগণ বলেছেন যে, মারাত্মক জটিল রোগী ছাড়া অন্য সকলেরই সাহরীতে এক ডোজ ইনহেলার নেওয়ার পর পরবর্তী ডোজ ইফতার পর্যন্ত বিলম্ব করার সুযোগ রয়েছে। সুতরাং রোগীর কর্তব্য হল বিষয়টি তার চিকিৎসক থেকে বুঝে নেওয়া এবং সম্ভব হলে রোজা অবস্থায় তা ব্যবহার না করা। অবশ্য যদি কোনো রোগীর অবস্থা এত জটিল হয় যে, ডাক্তার তাকে অবশ্যই দিনেও ওষুধটি ব্যবহারের পরামর্শ দিয়ে থাকেন, সেক্ষেত্রে ওই রোগীর এ সময়ে ইনহেলার ব্যবহার করার অবকাশ রয়েছে। পরবর্তী সময়ে রোজা কাযা করে নিবে।