Amar Sangbad
ঢাকা বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪,

যেসব কাজ আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের অন্তরায়

ধর্ম ডেস্ক

এপ্রিল ১, ২০২১, ০৯:১০ এএম


যেসব কাজ আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের অন্তরায়

জান্নাত জাহান্নাম লাভ নির্ভর করে জীবদ্দশায় মানুষের কর্মের উপর। কর্মগুণে কেউ বাস করবে জান্নাতের শীতল ছায়ায়। আবার মন্দ কর্মের কারণে অনেক মানুষকে থাকতে হবে জাহান্নামের আগুনের মধ্যে। 

মানুষের জান্নাতে যাওয়ার পথে যেসব কাজ প্রধান অন্তরায় সেসব কাজের বিবরণ তুলে ধরেছেন স্বয়ং রাসূলুল্লাহ সা., যা প্রত্যেক ঈমানদার মুমিন মুসলমানের এড়িয়ে চলা উচিত।

সেগুলো হলো:

আল্লাহকে অবিশ্বাস করা : জান্নাত লাভের প্রথম ও প্রধান শর্ত হলো মহান আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করা। কেননা রাসূলুল্লাহ সা. বলেন, ‘ঈমানদার ব্যতীত কেউ জান্নাতে প্রবেশ করবে না।’ (বুখারি ও মুসলিম) 
তিনি আরও বলেন, ‘ঈমান না আনা পর্যন্ত তোমরা জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবেন না’ (মুসলিম)

প্রতিবেশীর প্রতি সদয় না হওয়া : রাসূলুল্লাহ সা. বলেছেন, ‘যার অনিষ্ট থেকে তার প্রতিবেশী নিরাপদ থাকে না সে জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না।’ (মুসলিম)

ব্যভিচারী, মিথ্যাবাদী শাসক, অহংকারী গরিব : রাসূলুল্লাহ সা. বলেন, ‘কিয়ামতের দিন আল্লাহ ৩ শ্রেণির লোকের সঙ্গে কথা বলবেন না, তাদেরকে গোনাহ থেকে পবিত্র করবেন না এবং তাদের জন্য রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি। তারা হলো- ‘বৃদ্ধ ব্যভিচারী, মিথ্যাবাদী শাসক এবং অহংকারী গরিব।’ (মুসলিম)

কঠোরতা অবলম্বকারী ও কটূভাষী ব্যক্তি : যে ব্যক্তি মানুষের কাছে এমন বিষয় নিয়ে গর্ব-অহংকার করে বেড়ায়; প্রকৃতপক্ষে যা তার কাছে নেই। রাসূলুল্লাহ সা. বলেন, ‘কঠোর প্রকৃতি ও কটুভাষী লোক জান্নাতে প্রবেশ করবে না এবং ওই লোকও নয়, যে এমন সব বিষয়ে মানুষের কাছে গর্ব-অহংকার প্রকাশ করে বেড়ায় প্রকৃতপক্ষে যা তার কাছে নেই।’ (আবু দাউদ)

রাসূলুল্লাহ সা. বলেছেন, ‘২ শ্রেণীর মানুষ জাহান্নামে যাবে। যাদের আমি এখনো দেখিনি। (রাসূলুল্লাহ সা. এর যুগে তাদের আত্মপ্রকাশ হয়নি) তারা হল-এমন কিছু লোক যাদের হাতে থাকবে গরুর লেজের মত লাঠি। তারা তা দিয়ে জনগণকে মারধর করবে।

আর ওই সব উলঙ্গ-অর্ধ উলঙ্গ বেপর্দা নারী যারা (নিজেদের চলাফেরা ও বেশ-ভূষায়) মানুষের মনোযোগ আকর্ষণ করবে এবং নিজেরাও অন্য মানুষের প্রতি আকৃষ্ট হবে। তাদের মাথা উটের মত উঁচু হবে এবং একপাশে ঝুঁকে থাকা চূড়ার মতো কেশ রাশি শোভা পাবে। এ সব নারী জান্নাতে তো যাবেই না বরং জান্নাতের সুঘ্রাণও পাবে না অথচ বহুদূর থেকে জান্নাতের সুঘ্রাণ পাওয়া যায়।’ (মুসলিম)

হতাশা নয়, আশার বাণী হলো- আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘তোমরা আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হইও না। নিশ্চয় আল্লাহ তাআলা তোমাদের সব গোনাহ মাপ করে দিবেন। যদিও উপরোক্ত কাজগুলো কবিরাহ গোনাহের অন্তর্ভূক্ত।

যারা উল্লেখিত কাজগুলো থেকে তাওবাহ করে আল্লাহর পথে ফিরে আসবে। আশা করা যায়, আল্লাহ তাআলা তাওবাকারী বান্দাদের সব গোনাহ ক্ষমা করে দেবেন। উল্লেখিত গোনাহে জড়িত ব্যক্তি যদি এ গোনাহ থেকে ফিরে আসে এবং এর প্রতিকারমূলক কাজ করে এবং পুনরায় এসব গোনাহ না করে যথাযথভাবে তাওবাহ করে তবে আল্লাহ তাদের ক্ষমা করবেন। কেননা মহান আল্লাহ তাওবাহকারীকে ভালোবাসেন। বান্দাহকে ক্ষমা করতেও ভালোবাসেন।

উল্লেখ্য, আল্লাহ তাআলা নিজ দয়া ও ইনসাফের ভিত্তিতে এদের মধ্যে যাকে খুশি ক্ষমা করে দেবেন যদি সে শিরক থেকে দূরে থাকে। কেননা আল্লাহ তাআলা বলেন-‘নিঃসন্দেহে আল্লাহ সেই ব্যক্তিকে ক্ষমা করেন না, যে ব্যক্তি তাঁর সঙ্গে শরিক করে। তিনি ক্ষমা করেন এর নিম্ন পর্যায়ের পাপ, যার জন্য তিনি ইচ্ছা করেন।’ (সুরা নিসা : আয়াত ৪৮)

তাছাড়া রাসূলুল্লাহ সা. বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি এমন অবস্থায় মারা গেল যে, (জীবিত অবস্থায়) সে ভালো করে জানত, ‘আল্লাহ্ ছাড়া আর কোনো সত্য মাবুদ নেই, সে ব্যক্তি অবশ্যই জান্নাতে প্রবেশ করবে।’ (মুসলিম)

আবার পরকালের ফয়সালার সময় ঈমান থাকা সত্বেও আল্লাহ তাআলা যাদেরকে ক্ষমা করবেন না তাদেরকে তিনি জাহান্নামের আগুনে নিক্ষেপ করবেন। পাপের শাস্তি ভোগ করার পর আল্লাহ তাআলা তাদেরকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন।

কবিরা গোনাহে জড়িত ব্যক্তিরা প্রথম পর্যায়ে জান্নাতে প্রবেশকারীদের সঙ্গে জান্নাতে প্রবেশ করবে না বরং জাহান্নামের শাস্তি ভোগ করে পরিশেষে জান্নাতে প্রবেশ করবে। কোনো তওহীদপন্থী ব্যক্তিই কাফেরদের মতো চিরস্থায়ীভাবে জাহান্নামে অবস্থান করবে না। আর এটাই হলো আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআতের আকিদাহ।

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে হাদিসে ঘোষিত জান্নাতের অন্তরায় কাজগুলো থেকে বিরত থাকার তাওফিক দান করুন। হাদিসের ওপর যথাযথ আমল করার তাওফিক দান করুন। আল্লাহ বিধান যথাযথ বাস্তবায়ন করে জান্নাত লাভের তাওফিক দান করুন। আমিন।

আমারসংবাদ/এডি