Amar Sangbad
ঢাকা শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪,

রমজান মাস দোয়া কবুলের মাস

মো. সাইফুল মিয়া  

এপ্রিল ২০, ২০২১, ০৯:১৫ এএম


রমজান মাস দোয়া কবুলের মাস

রমজান হলো আরবি তথা হিজরি বর্ষ পঞ্জিকা অনুসারে নবম মাস। আরবি বর্ষপঞ্জিকা অনুসারে শাবান মাসের সমাপ্তির পরপরই প্রতিবছর রহমত, মাগফিরাত ও নাজাতের বার্তা নিয়ে আগমন ঘটে রমজান মাসের। রমজান মাস বিশ্ব মুসলিমদের জন্য একটি বড় নিয়ামতের মাস। রমজান মাস আগমনের সাথে সাথে এই পৃথিবীকে আল্লাহ তার নিয়ামতে ভরপুর করে দেন। প্রাপ্ত বয়স্ক প্রত্যক নারী ও পুরুষের উপর রমজান মাসের এক মাস সাওম (রোযা) পালন করা ফরজ। রোজা ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের একটি। 

রমজান মাসের সাওম (রোযা) পালন করা প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ বলেন, ?‘হে ঈমানদারগণ, তোমাদের উপর রমজানের রোযাকে ফরজ করা হয়েছে। যেমন করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তী নবীদের উম্মতদের উপর। যেন তোমরা তাকওয়া (আল্লাহ ভীতি) অর্জন করতে পার।’ (সূরা বাকারা-০২ঃ১৮৩)

হযরত আবু হুরাইয়া রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন রাসুলুল্লাহ সা. বলেছেন, ‘তোমাদের নিকট রমজান মাস উপস্থিত। এটি অত্যন্ত বরকতময় মাস। আল্লাহ তায়ালা এ মাসে তোমাদের প্রতি সাওম (রোযা) ফরজ করেছেন। এ মাসে জান্নাতের দরজাসমূহ খুলে দেওয়া হয়, জাহান্নামের দরজাসমূহ বন্ধ করে দেওয়া হয়। আর অবাধ্য শয়তানকে আটক রাখা হয়। আল্লাহর জন্য এ মাসে একটি রাত আছে যা হাজার মাসর চেয়েও উত্তম। যে ব্যক্তি এ রাতের কল্যাণ হতে বঞ্চিত হয়, সে সত্যিই বঞ্চিত ব্যক্তি।’ (নাসায়ী,যিকরুল ইখতিলা ফি আলা মামারিন ফিহিঃ২০৭৯)

উপরোক্ত আল-কুরআনের আয়াত ও প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ সা. এর হাদিস দ্বারা প্রমাণিত হয়, রমজান মাসের সাওম (রোযা) প্রত্যক প্রাপ্ত বয়স্ক মুসলমান নর-নারীর উপর ফরজ। এছাড়াও আমরা আরো একটি বিষয় বুঝতে পারি যে, রমজানের সাওম কেবল আমাদের উপর ফরজ করা হয় নি, বরং পূর্ববর্তী সকল নবী রাসূলের উম্মতের উপর ফরজ ছিল। রমজানের সাওম পালনের মাধ্যমে সাওম পালনকারী ব্যক্তির আত্মিক উৎকর্ষ সাধিত হয়। এছাড়া সাওম পালনের মাধ্যমে মানুষের মনের আল্লাহ ভীতি ও আল্লাহর প্রতি ভালোবাসা সৃষ্টি হয়।

রমজাস মাস তাকওয়া অর্জনের মাস। এ মাসে আমরা খুব সহজে আল্লাহর নৈকট্য লাভ করতে পারি। আল্লাহ সকল সৎ কাজের প্রতিদান দশগুণ থেকে সাতশত গুণ পর্যন্ত বাড়িয়ে দেন। কিন্তু রমজান মাসে সাওমের প্রতিদান সম্পর্কে হাদিসে কুদসিতে বলেন, ‘সাওম আমার জন্য আর আমি নিজেই এর প্রতিদান দেব।’ রমজানের সাওম পালনের মধ্যে দিয়ে আল্লাহ তায়ালা আমাদের পূর্বের সকল গুনাহ ক্ষমা করে দেন। 

এ প্রসঙ্গে হযরত আবু হুরাইয়া রা. থেকে বর্ণিত এক হাদিসে প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ সা. বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি রমজান মাসে ঈমান ও চেতনার সাথে রমজানের সাওম পালন করবে, আল্লাহ তার পূর্ববর্তী সকল গুনাহ ক্ষমা করে দিবেন। (বুখারী; বাবু সাত্তমি রামাদান ইহতিসাবান মিনাল ঈমান, ৩৭)

রমজান মাস অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ মাস। আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ সা. রজব শুরু হলে নিজে ও সাহাবীদের নিয়ে পুরোদমে রমজানের প্রস্তুতি শুরু করতেন। 

তিনি রজব মাসের শুরু হলে এই দোয়া পড়তেন, ‘আল্লাহুমা বারিকলানা ফি রজাবাও ওয়া শাবান, ওয়া বাললিগনা ইলা শাহরির রমাদান।’ এর অর্থ হচ্ছে, ‘হে আল্লাহ আমাদের জন্য রজব ও শাবান মাসকে বরকতময় করে দিন। আর আমাদের রমজান মাস পর্যন্ত পৌছে দিন। 

প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) এর এই দোয়ার থেকে আমরা বুঝতে পারি যে, একদিন ঈমানদারের জীবনে মাহে রমজানের গুরুত্ব কত অপরিসীম। কিন্তু বর্তমানে আমাদের দেশে রমজানের আগমন প্রস্তুতি সম্পর্কে মানুষের ধ্যান-ধারণা পাল্টে গেছে। আমাদের দেশে রমজান মাসরে প্রস্তুতি হিসেবে খাদ্য দ্রবের সংকট দেখা দেয়। আমাদের বাইরের দেশ থেকে খাদ্য দ্রব উচ্চ দামে আমদানি করতে হয়। আমরা এ মাসকে ভালো খাবার-দাবার, পান-পানীয়, মিষ্টি-মিষ্টান্নের মৌসুমে পরিণত করছি। কিন্তু একজন মুমিন মানুষ যে রমজান মাসের তাৎপর্য সম্পর্কে সচেতন, সে রজব মাস থেকেই রমজানের প্রস্তুতি শুরু করে।

রমজান মাস সহানুভূতির মাস। এ মাসে সাওম পালনের মাধ্যমে পারস্পরিক সহানুভূতি ও সহমর্মিতা সৃষ্টি হয়। সাওম পালনের মাধ্যমে ব্যক্তি একজন অনাহারীর ক্ষুধার জ্বালা সহজে  বুঝতে পারে। ক্ষুধা ও পিপাসার যন্ত্রণা যে কীরূপ পীড়াদায়ক হতে পারে তা সে উপলব্ধি করতে পারে। এতে মানুষের মনে অসহায় নিরন্ন মানুষের প্রতি সহানুভূতি ও সহমর্মিতা ভাব জাগ্রত হয়। এছাড়া সাওমের সামাজিক অনেক গুরুত্ব রয়েছে। সাত্তম পালনকারী ব্যক্তি অন্যায়-অশ্লীল কথাবার্তা পরিহার করে চলে। বিভিন্ন হানাহানির থেকে দূরে থাকে। ফলে সমাজে শান্তি প্রতিষ্ঠিত হয়। এছাড়া সাওম পালনকারী ব্যক্তি অধিক সাওয়াব পাওয়ার আশায় একে অপরকে সেহরি-ইফতার করায় এবং অভাবীকে আর্থিকভাবে সহযোগিতা করে। এতে পরস্পরের মধ্যে ভ্রাতৃত্ববোধ সৃষ্টি হয় এবং সামাজিক বন্ধন আরো মজবুত ও শক্তিশালী হয়।

পরিশেষে বলতে চাই, প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ সা. রজব মাস থেকে রমজানের প্রস্তুতি নিতেন। রমজান মাস ইবাদতের বসন্ত মাস। এ মাসে প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ সা. বেশি বেশি দান করতেন এবং পূর্বের গুনাহের জন্য সাহাবিদের আল্লাহর নিকট তওবা করার আদেশ করতেন। তাই আমাদেরও কর্তব্য তার সুন্নাহ অনুসরণ করে রমজানের হক আদায় করা এবং বেশি বেশি নফল ইবাদত করা। আল্লাহ তা’আলা সবাইকে সুস্থ স্বাভাবিক ভাবে সঠিক নিয়ম মেনে রমজান মাসের সবগুলো রোজা রাখার তাওফিক দান করুক।

(লেখক : শিক্ষার্থী, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, সদস, বাংলাদেশ তরুণ কলাম লেখক ফোরাম, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়)

আমারসংবাদ/এডি